একবার ভেবে দেখুন তো, আপনার জানামতে পৃথিবীর সবথেকে দামী (মূল্যবান) ম্যাটেরিয়াল কি? সোনা, রুপা, প্লাটিনাম নাকি ডায়মন্ড? যদি ভেবে থাকেন যে এগুলোই সবথেকে দামী ম্যাটেরিয়াল, তাহলে আপনি ভুল ভেবেছেন বা জেনেছেন। ম্যাটেরিয়ালের কথা বলতে হলে, এমন অনেক নেশাদ্রব্যও আছে যেগুলো সোনার থেকে অনেক বেশি দামী। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন বা জানার চেষ্টা করেছেন যে সবথেকে দামী ম্যটেরিয়াল কি থাকতে পারে দ্রব্যমুল্যের হিসাবে? উত্তরটি হচ্ছে অ্যান্টিম্যাটার। এটার দামের ধারনা দিতে চাইলে বলা যায়, এই ম্যাটেরিয়ালের ১ গ্রাম পরিমানের দাম প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এইটুকু শোনার পরেই যদি আপনার মাথা না ঘুরে গিয়ে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চই প্রশ্ন করবেন, কেন? কি এমন আছে এই ম্যাটেরিয়ালে যে এটার এত দাম? কি কাজেই বা দরকার হতে পারে এই ম্যাটেরিয়াল? কিভাবেই বা তৈরি করে এটি? এইসব বিষয় নিয়েই আজকে আলোচনা করবো। তো প্রথমেই যেটা জানতে হবে তা হচ্ছে,
অ্যান্টিম্যাটার কি?
একেবারে সহজ কথায় বলতে হলে বলা যায়, অ্যান্টিম্যাটার হচ্ছে সাধারণ ম্যাটেরিয়ালের বিপরীত ম্যাটেরিয়াল। গভিরে গিয়ে চিন্তা করতে হলে, অ্যান্টিম্যাটার সাধারণ সব ম্যাটেরিয়ালের মতই অনু এবং পরমানু দিয়ে তৈরি। গঠনের দিক থেকে সাধারণ যেকোনো ম্যাটেরিয়ালের সাথে এর তেমন কোন পার্থক্যই নেই। তবে এদের মধ্যে প্রধান পার্থক্যটি হচ্ছে, অ্যান্টিম্যাটারে বিপরীতধর্মী চার্জ থাকে। প্রোটন এবং অ্যান্টিম্যাটার একে অপরের বিপরীত এবং একটিকে আরেকটির অ্যান্টিপ্রোটন বলা হয়ে থাকে। আপনি যদি বিজ্ঞানের স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি জানেন যে ইলেকট্রন সবসময়ই নেগেটিভ (-) চার্জজুক্ত হয়। প্রতিপদার্থ(Antimatter) , প্রতিইলেকট্রন(Positron) এবং প্রতিপ্রোটন দ্বারা গঠিত। প্রতিইলেকট্রনকে পজিট্রন বলা হয়, যা প্রোটনের মত পজিটিভ (+) চার্জযুক্ত এবং প্রতিপ্রোটন ইলেকট্রনের মত নেগেটিভ (-) চার্জযুক্ত।প্রতিপদার্থ(Antimatter) এবং পদার্থ(Matter) যেহেতু সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী কণা দ্বারা গঠিত, তাই পরস্পরের সংস্পর্শে আসলে ধ্বংস হয়ে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়।
আপনি যদি সবথেকে বিপদজনক নিউক্লিয়ার অস্ত্রের কথা চিন্তা করেন, তাহলে সেগুলো তাদের সম্পূর্ণ মাস এনার্জির মাত্র ৭ থেকে ১০% এনার্জিকে রিলিজ করে ধ্বংসের কাজে। বাকিটুকু এনার্জি রিলিজ করতে পারেনা বা ওয়েস্ট এনার্জিতে রুপান্তর করে। কিন্তু অ্যান্টিম্যাটার তার সম্পূর্ণ এনার্জির ১০০% এনার্জিই রিলিজ করবে যখন সেটি একটি সাধারণ ম্যাটারের সংস্পর্শে আসবে। এবার নিশ্চই কিছুটা হলেও ধারনা করতে পারছেন যে অ্যান্টিম্যাটার আসলে কতটা বিপদজনক ম্যাটেরিয়াল।
এখনো ধারনা করতে পারছেন না? আচ্ছা, বিষয়টিকে আরেকটু সহজ করা যাক। ধরুন, কোনভাবে আপনার কাছে একটি ১ গ্রাম পরিমান অ্যান্টিম্যাটার আছে। শুধুমাত্র কল্পনা করতে বলেছি, কারণ আপনি কখনোই ১ গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার রাখতে পারবেন না নিজের কাছে। যাইহোক, ধারনা করুন আপনার কাছে আছে। এবার যদি ভুলক্রমেও আপনি ঐ ১ গ্রাম পরিমান অ্যান্টিম্যাটার মাটিতে ফেলে দেন, তাহলে ঐ অ্যান্টিম্যাটারটি এত বড় একটি বিস্ফোরণ তৈরি করবে যেটি আক্ষরিক অর্থেই হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যে বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেই দুটি বিস্ফোরণ একসাথে যোগ করলে যা হবে, তার থেকেও অনেক বড়। এই ১ গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার একটি বড়সড় শহরকে একেবারে ধূলিসাৎ করে দিতে যথেষ্ট। সেই হিসেবে আপনি যদি একটি অ্যান্টিম্যাটার বুলেটের কথা চিন্তা করেন, অর্থাৎ সাধারণ একটি বুলেট যার মাথায় খুবই সামান্য পরিমান অ্যান্টিম্যাটার বসানো আছে, ধরুন, একটি বুলেটের মাথায় যদি ১ গ্রামের ১০ কোটি ভাগের এক ভাগ পরিমান অ্যান্টিম্যাটার যুক্ত করে বুলেটটি ফায়ার করা হয়, তাহলে ঐ সিঙ্গেল একটি বুলেট একটি সম্পূর্ণ বাড়িকে ধ্বংস করে দেওয়ার মত যথেষ্ট শক্তিশালী হবে। এমনও ধারনা করা হয় যে, অ্যান্টিম্যাটারকে যদি মহাকাশযানের জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যেত তাহলে অ্যান্টিম্যাটারটি রকেটকে প্রায় আলোর গতির ৫০% এর সমান গতিতে চালাতে পারতো। এবার নিশ্চই ধারনা করতে পারছেন যে অ্যান্টিম্যাটার কি এবং কেন এত দাম এটার। এবার যে প্রশ্নটি চলে আসে তা হচ্ছে, এই অ্যান্টিম্যাটার যদি এতই ইউজফুল হয়ে থাকে, তাহলে কেন আমরা বিপুল পরিমান অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করছিনা এবং সেগুলো ব্যবহার করে এমন মহাকাশযান চালানোর মত অবিশ্বাস্যরকম কাজ করছিনা? কারণ অ্যান্টিম্যাটার তৈরির অনেক অসুবিধা আছে।
অ্যান্টিম্যাটার তৈরির অসুবিধা
প্রথমত অ্যান্টিম্যাটার তৈরির অসুবিধাগুলো হচ্ছে, এটি অনেক বেশি রেয়ার এবং তৈরি করা অনেক বেশি কঠিন এবং একইসাথে অবিশ্বাস্যরকম এক্সপেনসিভ। আমরা আমাদের চোখের সামনে যা কিছু দেখি সবকিছুই সাধারণ ম্যাটারের তৈরি। আমাদের পৃথিবী, চন্দ্র-সূর্য-নক্ষত্র, এই সম্পূর্ণ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এবং এই বিশ্বজগতে মহাকাশে যা যা কিছুর সাথে আমরা পরিচিত হতে পেরেছি সবকিছুই রেগুলার ম্যাটারের তৈরি। যদিও এটা ধারনা করা হয় যে আমাদের দৃষ্টির বাইরে হয়তো অ্যান্টিম্যাটারের তৈরি একটি সম্পূর্ণ গ্যালাক্সিও থাকতে পারে, কিন্তু লাভ নেই। কারণ, সেখানে আমরা পৌছাতে পারবো না এবং সেগুলো নিয়েও আসতে পারবোনা। আর এই অ্যান্টিম্যাটারের তৈরি গ্যালাক্সির ব্যাপারটি শুধুমাত্র একটি অনুমান।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, অ্যান্টিম্যাটার প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয় আমাদের পৃথিবীর বাইরের অ্যাটমোসফিয়ারে যখন হাই এনার্জিটিক কসমিক রশ্মি পৃথিবীর অ্যাটমোসফিয়ারে প্রবেশ করে। কিন্তু যে পরিমান অ্যান্টিম্যাটার এর ফলে তৈরি হয় তার পরিমান খুবই সামান্য এবং এটি বেশিক্ষন স্থায়ীও হয়না। পৃথিবীর বাইরের অ্যাটমোসফিয়ারে যখন এটি প্রবেশ করে তখনই সাধারণ ম্যাটারের সংস্পর্শে এসে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। তাই এখানেও আমাদের কোন লাভ নেই।
আর তাই অ্যান্টিম্যাটার তৈরির একমাত্র উপায় হচ্ছে আমাদের পৃথিবীতেই এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা এবং সংরক্ষন করা। কিন্তু অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করার প্রোসেসটি এবং তৈরি করার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি দরকার হবে সেগুলো অপারেট করা এবং সেখান থেকে অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করা অবিশ্বাস্য রকম এক্সপেনসিভ এবং ডিফিক্যাল্ট। এতটাই এক্সপেনসিভ যে একটি ধনী দেশের সরকারও এতটা বাজেট রাখতে পারবেনা এর পেছনে। আপনি হয়তো এখন বলতে পারেন যে, অ্যান্টিম্যাটার তৈরির জন্য এত টাকা খরচ করে কি হবে? একদিন তো… ????
তবে জেনে রাখা ভালো, অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করার জন্য দরকার হয় হাইড্রন কোলাইডার নামের একটি যন্ত্র যেটি পৃথিবীতে আছে এবং কয়েক জায়গায় ব্যাবহারও করা হয় অ্যান্টিম্যাটার তৈরির কাজে। যেমন, সুইজারল্যান্ডে একটি হাইড্রোন কোলাইডার স্টেশন আছে যেখানে অ্যান্টিম্যাটার তৈরির কাজ করা হয়। এই সুইজারল্যান্ডের হাইড্রোন কোলাইডার পৃথিবীর অন্যতম একটি কমপ্লিকেটেড ফ্যাসিলিটি। এই হাইড্রোন কোলাইডারটি প্রতি মিনিটে প্রায় ১০ মিলিয়ন অ্যান্টিপ্রোটন তৈরি করতে সক্ষম। ১০ মিলিয়ন? অনেক বেশি তো! এত বেশি অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করার পরেও বলে যে এটা এত রেয়ার? এ কেমন বিচার? আসলে ১০ মিলিয়ন অ্যান্টিপ্রোটন শুনতে অনেক বেশি মনে হলেও এটা আসলে হাস্যকর রকমের কম। প্রতি মিনিটে ১০ মিলিয়ন অ্যান্টিপ্রোটন প্রোডিউস করতে থাকলে এভাবে ১ গ্রাম পরিমান অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করতে সর্বমোট কত সময় লাগবে জানেন? প্রায় ১০০ বিলিয়ন বছরেরও বেশি। Welcome, Now you can rest in peace ????
আচ্ছা ধরলাম ১০০ বিলিয়ন বছর ধরে ১ গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার তৈরিও করা হল। এরপরের সমস্যাটি হচ্ছে এটি স্টোর করা। যেহেতু অ্যান্টিম্যাটার সাধারণ ম্যাটারের সংস্পর্শে আসলেই ভয়ানকভাবে এক্সপ্লোড করবে, তাই আপনি চাইলেই অ্যান্টিম্যাটারকে সাধারণ কোন কন্টেইনারে সংরক্ষন করতে পারবেন না। এটিকে স্টোর করতে হলে আপনাকে এমনভাবে স্টোর করতে হবে যে এটি জেন স্টোর করার সময় অন্য কোনকিছুরই সংস্পর্শে না আসে। সুইজারল্যান্ডে যেখানে অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করা হয়, তারা এখন পর্যন্ত অ্যান্টিম্যাটারের একটি অনুকে বিস্ফোরিত হওয়ার আগে মাত্র ১৭ মিনিট পর্যন্ত স্টোর করে রাখতে পেরেছে। যেহেতু ১ গ্রাম পরিমান অ্যান্টিম্যাটার একটি সম্পূর্ণ শহরকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে, তাই বুঝতেই পারছেন, এটিকে স্টোর করতে হলে এতটাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যতটা সতর্কতার সাথে হয়তো লাদেনও টুইন টাওয়ার ধ্বংস করেনি ????
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
তো এই ছিল অ্যান্টিম্যাটার নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা। আশা করি এতক্ষনে আপনি অ্যান্টিম্যাটার কি এবং কেন দরকার আর কেন এত দামী তা কিছুটা হলেও বুঝেছেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।
Nice
Thanks! 🙂
Valo legeche onek via. Thanks a lot.
Welcome. ????
You guys are soo much talented… God bless..
Thank you brother. 🙂
WOW guru ja post diyechen na…… wow
????????
Jio boss! puro fatiye die6en! Woooooooooooow! Aaro emn lekha chai….
Thanks. 🙂
ভাই অ্যান্টিম্যাটার এর ব্যাস্তবিক ব্যবহার কি? এটা কি গ্রাফাইন থেকেও বেশি ভালো?
জী ভাইয়া। আর অ্যান্টিম্যাটারের বাস্তবিক ব্যবহার কি কি হতে পারে সেগুলো তো পোস্টেই বলেছি ভাইয়া। এর বাইরে কোন ব্যবহার আছে কিনা আমার জানা নেই। 🙂
Awesome BOSS…. FATAFATI >>>><<<<<
Thanks Boss. 🙂
জাতি এরকম আরো আর্টিকেল কামনা করছে আপনাদের কাছে… এগিয়ে যান ভাইয়া
টেকহাবস বেস্ট!!!!!!!!!!!
Thanks ????
Osombov valo lagasa article ti.
Thanks bhaiya. East or west you are always best ????????????
Haha. Thank you so much bro. 🙂
মোটামুটি বুঝলাম, শুধু ইলেকট্রন প্রোটন বুঝি নাই ????
তবে ইন্টারেস্টিং জিনিষ…… ????????????
কোয়ালিটি টাইম সপেন্ড হইলো!!????
থ্যাংক ইউ ভাইয়া। 🙂
❤❤❤❤
❤
Sekhar jinis ganer jinis.
Nice.
🙂
Is this most the expensive article? .. yeah…!!
থ্যাংকস ! 🙂
comment publish hoy na kn
হয়েছে তো। আসলে অনেকসময় অনেক কমেন্ট বিভিন্ন কারণে আমাদের স্প্যাম লিস্টে চলে যায়। সেই কমেন্টগুলোকে আমাদেরকে ম্যানুয়ালি অ্যাপ্রুভ করতে হয়। এই কারণে অনেকসময় অনেক কমেন্ট পাবলিশ করার পরেও শো করেনা। 🙂
অনেক ইনফরমেশন জানলাম দাদা!!! দারুণ!!! ????????????
Yes Bro, You are right. Electron in -e.
@Siam Bhai Plz Fix the info.
সত্যিই অসাধারণ । অনেক কিছু জানতে পারলাম
ভাইয়া অত্তাধিক মজা পাইলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।
অসাধারণ বর্ণনা করেছেন