কম্পিউটার বা প্রায় সকল প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইজের দুইটি প্রধান অংশ রয়েছে, হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার, রাইট? — হার্ডওয়্যার হচ্ছে কোন ডিভাইজের ফিজিক্যাল যন্ত্রপাতি আর সফটওয়্যার বা ফার্মওয়্যার হচ্ছে ভার্চুয়াল কন্ট্রোলার, যেগুলো সাধারণত হার্ডওয়্যার গুলোকে কন্ট্রোল করার জন্য তৈরি বা ব্যবহার করা হয়। আমরা জানি, সফটওয়্যার শুধু মেশিন কন্ট্রোল করে, কিন্তু আরেক টাইপের সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার রয়েছে, যেগুলো আসলে জীবন্ত প্রাণীদের কন্ট্রোল করতে পারে, আর একেই ওয়েটওয়্যার (Wetware) বা লাইভওয়্যার (Livewire) বা মিটওয়্যার (Meatware) বা অনেক সময় একে বায়োহ্যাকিং (BioHacking) বলা হয়ে থাকে।
তবে, সত্যিই কি কোন সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার জীবন্ত প্রাণীদের কন্ট্রোল করতে পারে? যদি করতে পারে, তাহলে কিভাবে? বা এর প্র্যাক্টিক্যাল উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে? — ওয়েটওয়্যার নিয়ে বেসিক সকল বিষয় গুলোর উপর এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ওয়েটওয়্যার
কোন সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার যখন কোন জীবন্ত প্রাণীর দেহে ফিট করা থাকবে, সেটাকেই ওয়েটওয়্যার হিসেবে গণ্য করা হবে। আপনি অনেকটা ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি এবং অগমেন্টেড রিয়্যালিটির উদাহরণ নিতে পারেন, এখানে সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার মিলে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড তৈরি করে, কিন্তু এখানে আপনি সেই ভার্চুয়াল দুনিয়াকে ফিজিক্যাল মনে করেন। মানে এখানে ভার্চুয়াল এবং ফিজিক্যাল দুই বিষয়ই একত্রে জড়িত রয়েছে।
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার যখন আমাদের ব্রেইন, কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, বা চামড়ার নিচে ফিট করিয়ে দেওয়া হয়, এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার যখন আমাদের চিন্তাভাবনা বা ডিএনএ এর উপর কন্ট্রোল নেয়, সেক্ষেত্রে সেটাকে ওয়েটওয়্যার বলা হয়। একে বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও বলা হয়ে থাকে, বিশেষ করে এই ধরনের ডিভাইজ রোগব্যাধি থেকে আরোগ্য বা মস্তিষ্ক কন্ট্রোল করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আমাদের ব্রেইনের মধ্যে সর্বদা লাখো কোটি প্রসেস চলতে থাকে যেগুলো সম্পর্কে আমরা আমরা কখনই জানতে বা বুঝতে পারি না। আপনি যখন চোখে কিছু দেখেন বা কানে কিছু শোনের সেক্ষেত্রে আপনার চোখ বা কান অনেক কম ভূমিকা পালন করে, বাকী প্রসেসিং গুলো আপনার মস্তিষ্কই সম্পূর্ণ করে, কিন্তু আপনি সেই প্রসেসিং সম্পর্কে কখনই জানতে পারেন না। ওয়েটওয়্যার সেই অজানা প্রসেসিং গুলোর উপর কন্ট্রোল নিতে পারে এবং আমাদের জন্য নতুন নতুন সম্ভবনার সৃষ্টি করতে পারে।
ওয়েটওয়্যারের ব্যবহার
ওয়েটওয়্যারের নানান প্রকারের ব্যবহার এবং এর অনেক সম্ভবনা কল্পনা করা যেতে পারে। কল্পনা করে দেখুন, আপনার চোখের কথা, আসলে চোখ কিন্তু কোন কিছু দেখে না, মস্তিস্কের সাহায্য ছাড়া আপনি কিছুই দেখতে পাবেন না। যখন আপনি কিছু দেখেন, আপনার মস্তিষ্কে প্রত্যেকবারে ইউনিক ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল তৈরি হয়, আর সেই সিগন্যাল গুলো প্রসেস করেই ব্রেইনে ইমেজ তৈরি হয়। এখন চিন্তা করে দেখুন, কোনভাবে আমরা সেই ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালকে ডিকোড করে ফেললাম এবং একই স্ট্র্যাকচারের হুবহু নকল সিগন্যাল তৈরি করলাম, এখন যদি সেই সিগন্যালের মধ্যে কোন ইমেজ এনকোড করে মস্তিষ্কে সেন্ড করে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের সিগন্যালে এনকোড করা ইমেজ অবশ্যই মস্তিষ্ক দেখতে পাবে।
এভাবে ক্যামেরা ব্যবহার করে ইমেজ তৈরি করা যেতে পারে এবং নির্দিষ্ট হার্ডওয়্যার মাথায় মধ্যে ফিট করে দেওয়া যেতে পারে যেখানে বিশেষ টাইপের সফটওয়্যার থাকবে যেটা মস্তিষ্কের হুবহু ইলেকট্রিক সিগন্যাল জেনারেট করে মস্তিষ্কে সেন্ড করে দেবে, এতে অন্ধ ব্যাক্তি চোখের সাহায্য ছাড়ায় দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতে পারবে। আমার চিন্তা করে দেখুন কোন প্যারালাইসিস রোগীর কথা, যখন কারো কোন অঙ্গে প্যারালাইসিস হয়, আসলে সেই অঙ্গ কিন্তু নস্ট হয়ে যায় না, বরং মস্তিষ্ক থেকে ঐ অঙ্গের কন্ট্রোল নষ্ট হয়ে যায়। এখন কোন ডিভাইজ ব্যবহার করে, সেটাকে ফিজিক্যালভাবে মস্তিষ্কে ফিট করে যদি ঐ অঙ্গকে নির্দেশ করে কাজ করানো যায়, সেটা হবে ওয়েটওয়্যারের ব্যবহার।
আমাদের মস্তিষ্ক অনেক ক্রিটিক্যাল একটি জিনিষ, আমাদের প্রত্যেকটি অনুভূতিতে মস্তিষ্কে ইউনিক ওয়েভ তৈরি হয়, প্রত্যেকটি কাজে মস্তিষ্কে ইউনিক পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়। মানুষের রাগ, খুশি, চিন্তা, ভয় পাওয়া সকলের উপর ভিত্তি করে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদাভাবে রিয়াক্ট করে থাকে। যদি কোন ডিভাইজ লাগিয়ে সেই ওয়েভ গুলোকে ক্যাপচার করে কম্পিউটারে এনালাইসিস করা হয়, সেক্ষেত্রে আমরা সহজেই বুঝে যেতে পারবো কোন বিষয়কে কন্ট্রোল করলে ঠিক কি করতে হবে। এমনকি এখনই আমাদের কাছে এমন ডিভাইজ রয়েছে যেগুলো শুধু মস্তিষ্ক স্ক্যান করা নয়, বরং মস্তিষ্ক থেকে কম্যান্ড গ্রহণ করে কম্পিউটার কন্ট্রোল করা যেতে পারে। ব্রেইন প্রিন্ট আর্টিকেলটিতে আমি এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
শুধু তাই নয়, সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে বায়োলজিক্যাল দেহের জিনস এডিট করা যেতে পারে, ডিএনএ স্ট্র্যাকচার পরিবর্তন করা যেতে পারে এবং কোন রোগব্যাধিকে রিমুভ করা যেতে পারে, আর এটিও ওয়েটওয়্যারের উদাহরণ। ওয়েটওয়্যার ব্যবহার করে ডিএনএ এর মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন ফিচার যুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। মস্তিষ্কের মধ্যে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার যুক্ত করে ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস বানানো যেতে পারে, যেটা আর্টিফিশিয়াল অঙ্গ গুলোকে পরিচালনা করতে পারে। শুধু এই নয়, বর্তমানে মানুষের ডিএনএ এর মধ্যে কম্পিউটার ডাটা স্টোর করার পদ্ধতি আবিস্কার করে ফেলা হয়েছে, এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ওয়েটওয়্যারকে মূলত ম্যান-মিডল-অবজেক্ট বলতে পারেন, যেখানে মানুষ বা বায়োলোজিক্যাল শরীরের সাথে সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের সম্পর্ক থাকে আর কি। আপনি ন্যানোটেকনোলজির উদাহরণ নিতে পারেন, যেখানে ন্যানোবটকে মানুষের শরীরের সেলের মধ্যে প্ল্যান্ট করিয়ে দেওয়া যায় এবং এদের আকার ব্যাকটেরিয়া থেকেও ছোট হতে পারে। ন্যানোবট ব্যবহার করে নানান প্রকারের অসুখের নিরাময় করা যেতে পারে।
আবার এমন ডিভাইজের কথা কল্পনা করে দেখুন, যেটা আপনার চামড়ার নিচে না আঙুলের ভেতরে প্ল্যান্ট করা থাকতে পারে, তারপরে কোন কিছু আনলক করতে, আইডি ভেরিফাই করতে, বা পেমেন্ট করতে আর কিছুই করতে হবে না, সবকিছু কন্টাক্টলেস হয়ে যাবে। আপনার শরীরের মধ্যে রিমোট ড্রাগ ডেলিভারি ডিভাইজ লাগিয়ে নেওয়া যাবে, যেতে ডাক্তারেরা দূর থেকেই যখন প্রয়োজন আপনাকে ঔষধ প্রদান করতে পারবে।
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
ইমেজ ক্রেডিটঃ By YAKOBCHUK VIACHESLAV Via Shutterstock | By chombosan Via Shutterstock | By Volodymyr Horbovyy Via Shutterstock
তাহমিদ ভাইকে অনেক ধন্যবাদ এরকম জ্ঞান সমৃদ্ধ একটি আর্টিকেল পাব্লিশ করার জন্য। সত্যি অনেক জানলাম। অনেক সিখলাম। ধন্যবাদ ভাই।
Thank you for always writing such as great article.
Nice Vai….
Thanks… Very much informative 🙂
আপনার অনেক আর্টিকেল আমাকে কমেন্ট করাতে বাধ্য করেছিল। তাদের মধ্যে এই আর্টিকেলটি সেরা। আপনার আগের ব্রেন প্রিন্ট, ব্রেন কম্পিউটার ইন্টাফেস, সিঙ্গুলারিটি, সকল আর্টিকেল পড়ে নিয়েছি। বিশেষ করে আজকের আর্টিকেল এবং ইন্টারনেট বনাম ব্রেন আর্টিকেলটি অনেক ভালো লেগেছে।
আপনার বোঝানোর ধরনে আমি সত্যিই মুগ্ধ ভাইয়া। ভালো থাকবেন।…
অসাধরন ছিল ভাইয়া। এরকম টেক রিলেটেড পোস্ট আরো চাই আপনার কাছে। অনেক মজা এবং জ্ঞানের পরিপূর্ণ প্যাকেজ পেলাম। সম্পূর্ণ নতুন কিছু নেইয়ে জানতে অনেক ভালো লাগে।
আর দুনিয়ার বেস্ট গুরু থেকে সিখতে তো অন্য রকম প্রশান্তি পাওয়া যায় 😀
❤❤❤❤????????????????
এতো টুকু জানি …………………… ” আপনি একজন BOSS”
ধন্যবাদ বস ????
কতো সালের মধ্যে এই টেক গুলা দেখা যাবে? আপনি বলসিলেন ২০৩০ সালের মধ্যে ব্রেন কম্পিউটারে কপি করবে বিজ্ঞানি এটা কি সত্য হবে? মার্সে যাওয়া মিশন তো এখনো শেষ করতে পারল না। আমরা কি বেঁচে থাকতে দেখতে পাব এগুলো? নাকি শুধু সায়েন্স ফিক্সন????
We’re all computers and we don’t even know it.
WOW. Surprise 2 know all that stuff. thanks.
Nice vai…… Awesome Explained.. onak janchi aj.
Many many thanks vaiya.
vai.. manus cokh kaj korar je bornona diyesen.. tar ektavbistarito article kamona korsi… Thanks in advance vai..
Stti bhai…apnar ei sb post er jnnoi apni TECH GOD. Thanks dile choto kra hbe tai SALUTE boss!
thats why I always n always love techubs
That was an awesome article. really interesting to read.
bhai ekta request chilo “virtual window” niye article chai.
ধন্যবাদ আপনাকে সময় করে এতো সুন্দর একটি টপিক পরিষ্কার ভাবে বোঝানোর জন্য।
ওয়াও ভাই!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
অসম্ভব ভালো পোস্ট।
Valo legese. Thanks.
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া।