ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার অনেক সুবিধা থাকলেই এর বিরাট একটি অসুবিধা হচ্ছে সিগন্যাল প্রবলেম। আর আপনার বাড়িতে যদি ডেড স্পট থাকে, তবে তো আপনার জ্বালার আর শেষ থাকবে না। যদিও ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার ব্যবহার করে সিগন্যাল বাড়ানো যায়, কিন্তু কয়েক বছর ধরে আরেকটি সিস্টেম অনেক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, মেস ওয়াইফাই সিস্টেম (Mesh Wi-Fi Systems)। এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো, ওয়াইফাই মেস সিস্টেম কি, এটি কীভাবে কাজ করে এবং ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার থেকে এটি কীভাবে বা কতোটা আলাদা। তো চলুন এই নতুন প্রযুক্তিকে এক্সপ্লোর করতে শুরু করে দেওয়া যাক…
মেস ওয়াইফাই কি?
ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার অনেক জনপ্রিয় একটি সলিউশন। অফিস ডেড জোন বা বাড়িতে ডেড জোনে সিগন্যাল পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার অনেক আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু ওয়াইফাই এক্সটেন্ডারের সাথে অনেক সমস্যা রয়েছে, প্রধান সমস্যাটি হচ্ছে, এটি সেটআপ করা অনেক কঠিন, আর মোটেও কোন সাধারণ ব্যাক্তি বা বিগেনার এটি কনফিগার করতে পাড়বে না। কিন্তু যদি কথা বলা হয়, মেস ওয়াইফাই সিস্টেম নিয়ে, তো এটা এক্সটেন্ডারের মতোই কাজ করে কিন্তু আরেকটু অ্যাডভান্সভাবে এবং সেটআপ করার কোনই ঝামেলা নেই।
ওয়াইফাই এক্সটেন্ডারের ক্ষেত্রে কি হয়, এটি কিন্তু আলাদা রাউটারের ন্যায় আচরণ করে না, বরং রাউটার থেকে সিগন্যাল নিয়ে আবার সেটাকে রিপিট করে। ধরুন, রাউটার থেকে এক্সটেন্ডার একটু দুর্বল সিগন্যাল পাচ্ছে, তাহলে এক্সটেন্ডার কিন্তু ঐ দুর্বল সিগন্যালকেই ট্র্যান্সমিট করে দেবে। অপরদিকে মেস ওয়াইফাই সিস্টেম বলতে অনেকটা একাধিক ফিজিক্যাল রাউটার ব্যবহার করার মতো, যেগুলো একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং আপনার সম্পূর্ণ বাড়ি বা অফিসকে বেটার সিগন্যালের চাদরে ঢেকে দিতে পারে। সাথে ওয়াইফাই মেস সেটআপ করা একেবারেই সহজ কাজ, আপনাকে জাস্ট নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে আর স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ সিস্টেমটি কনফিগার করতে পাড়বেন। যেখানে এক্সটেন্ডার কনফিগার করতে রাউটার অ্যাডমিন পেজ ওপেন করতে আর আর ক্রিটিক্যাল সব নেটওয়ার্কিং টার্ম মাথায় রাখতে হয়।
মেস ওয়াইফাই Vs. এক্সটেন্ডার
ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার আপনার কারেন্ট ওয়াইফাই রাউটার সিগন্যাল বুস্ট করে মাত্র, কিন্তু মেস ওয়াইফাই সম্পূর্ণ আলাদা ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক তৈরি করে, বলতে পারেন প্রত্যেকটি মেস ডিভাইজ নিজে একেকটি আলাদা আলাদা রাউটারের মতো আচরণ করে থাকে। সম্পূর্ণ মেস সিতেম কন্ট্রোল করা অনেক সহজ, জাস্ট স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করেই সকল কাজ সমাধান করে নিতে পাড়বেন। এক্সটেন্ডার কখনোই আরেকটি এক্সটেন্ডারের সাথে কথা বলতে পারে না, মানে আপনার যদি বাড়িতে একাধিক এক্সটেন্ডার ইন্সটল করতে হয়, সেটাকে ওয়াইফাই রাউটারের কাছেই রাখতে হবে। কিন্তু মেস ওয়াইফাই সিস্টেম প্রত্যেকটি পয়েট একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং সম্পূর্ণ আলাদা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে। ধরুন আপনি রাউটার থেকে পয়েন্ট এ পর্যন্ত একটি মেস ডিভাইজ সেট করলেন, এখন আপনি পয়েন্ট বি তে আরেকটি মেস ডিভাইজ লাগাতে চান, সেক্ষেত্রে পয়েন্ট বি এর ডিভাইজটি রাউটারের কাছে রাখতে হবে না, বি ডিভাইজটি এ ডিভাইজ থেকেই সিগন্যাল নিয়ে কাজ করতে পাড়বে।
রিপিটার বা এক্সটেন্ডার কেবল সিগন্যাল রিপিট করে, মানে যেখানে এক্সটেন্ডার সেট করেছেন সেখানে যদি রাউটার থেকে ইউক সিগন্যাল আসে, এক্সটেন্ডার সেই ইউক সিগন্যালকেই রিপিট করবে, এতে ব্যস্তবিক তেমন লাভ হবে না। কিন্তু মেস সিস্টেম শুধু সিগন্যাল রিপিট করে না, বরং নতুন এবং আলাদা ওয়াইফাই সিগন্যাল তৈরি করে, এর মানে আপনি সর্বদা ভালো ব্যান্ডউইথের সিগন্যাল রিসিভ করতে পাড়বেন। রিপিটারের সাথে যখন অনেক ডিভাইজ কানেক্টেড হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে রিপিটার এবং রাউটারের মধ্যে অনেক লেটেন্সি দেখা দিতে আরম্ভ করে দেয়। কিন্তু অপরদিকে মেস সিস্টেমে একাধিক রেডিও ট্র্যান্সমিটার লাগানো থাকে, কোন ট্র্যান্সমিটার হয়তো মেস সিস্টেম হান্ডেল করে আর কোনটা হয়তো ডিভাইজ গুলোকে সাপোর্ট দেয়, এতে নেটওয়ার্ক বটলনেক তৈরি হয় না।
ওয়াইফাই মেস সিস্টেমের অসুবিধা
এতক্ষণের সুবিধা গুলো দেখে নিশ্চয় ভেবে নিয়েছেন, মেস ওয়াইফাই সিস্টেম ওয়াইফাই রিপিটার সিস্টেম থেকে বেস্ট, কিন্তু সত্যি বলতে মেস সিস্টেমটি সকলের জন্য নয়। আর এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে আপনার জানা প্রয়োজনীয়। প্রথম সমস্যাটি হচ্ছে, টাকা, মানে ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার থেকে মেস সিস্টেমের ডিভাইজ গুলোর দাম অনেক বেশি। যেমন ধরুন ওয়াইফাই এক্সটেন্ডারের সম্পূর্ণ সেট কিনতে হয়তো ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে, কিন্তু মেস সিস্টেমের একটি ডিভাইজ কিনতেই এই খরচ পড়ে যেতে পারে। যদি তিনটি মেস ডিভাইজ কিনে সম্পূর্ণ বাড়ি সিগন্যালের আয়তায় নিয়ে আসতে চান, সেক্ষেত্রে মোটামুটি ৫০০ ডলার বা তার চেয়েও বেশি খরচ পড়ে যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, নর্মাল রাউটার আপনাকে অনেক কুল ফিচার প্রদান করে থাকে, যেমন- ম্যাক অ্যাড্রেস ফিল্টারিং, ফায়ারওয়াল, পারেন্টাল কন্ট্রোল ইত্যাদি আর অনেক কিছু যেখানে খুব কম মেস ওয়াইফাই সিস্টেমে এ সুবিধা গুলোকে অফার করা হয়। তবে আপনি আপনার বর্তমান ওয়াইফাই রাউটারকে মেস সিস্টেমের সাথে জুড়ে দিতে পারেন এবং ওয়াইফাই ব্রিজ তৈরি করতে পারেন, যেটা ওয়াইফাই এক্সটেন্ডারেরই একটি বেটার ভার্সন তৈরি করবে। যাই হোক, এর আরেকটি সমস্যা হচ্ছে যেহেতু এই প্রযুক্তি এক্সটেন্ডার থেকে অনেক নতুন, তাই এর জনপ্রিয়তা পেতে কিছুটা সময় দেরি লাগতে পারে। আর যদি কোন কারণে এই প্রযুক্তি তেমন জনপ্রিয়তা না পেতে পারে, সেক্ষেত্রে প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা নতুন ডিভাইজ বানানো এবং পুরাতন ডিভাইজ সাপোর্ট বন্ধ করে দিতে পারে। যদি ডিভাইজ সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়, আপনি কোনই টেকনিক্যাল সাপোর্ট পাবেন না, সাথে কোন ফার্মওয়্যার আপডেটও আসবে না, ফলে কোন ভালনেরাবিলিটি বেড় হলেও সেটা ফিক্স করতে পাড়বেন না, এতে আপনার নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি হুমকির মুখে পড়ে যাবে। আর সাপোর্ট বন্ধ করার পরে, ডিভাইজে কোন সমস্যা হলে সেটা ভাঙ্গির দোকানে বিক্রি করা ছাড়া আর কোন উপায় হাতে থাকবে না।
হয়তো বা এই প্রযুক্তি সম্পূর্ণ গায়েব হয়ে যাবে না, হয়তো বা এক্সটেন্ডার থেকেও ভালো জনপ্রিয়তা পাবে, কিন্তু নর্মাল ইউজের ক্ষেত্রে ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার ব্যবহারই আদর্শ হবে। তবে আপনি যদি নতুন টেক ব্যবহার করে দেখতে চান এবং ঝামেলা ফ্রী এক্সপেরিয়েন্স চান অবশ্যই মেস ওয়াইফাই সিস্টেম ট্র্যায় করে দেখতে পারেন, এর ইউনিক ফিচার গুলো আপনার টাকার মর্যাদা রাখবে বলে আশা করা যায়।
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
ইমেজ ক্রেডিটঃ By Prasit Rodphan Via Shutterstock
awesome explained as always vai.
mesh networking ki ekoi jinis? wifi mesh system er moto? networking niye kono article royece ki?
নেটওয়ার্কিং নিয়ে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল রয়েছে,
https://bn.wirebd.com/article/2278
পকেটে সেভ করে নিলাম।
আগেই কমেন্ট মারি…… “” অসাধারণ “”
🙂
well explained bro.
bro. duita smartphone use kore ki wifi brize toiri kora jabe? mane wifi hotspot and wifi eksathe kivabe calu kora somvob? pls janaben.
grtt post..
Nice post sir….
নতুনকিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।