ক্লাউড কম্পিউটিং কি? [সাধারণ পরিচিতি]

আমার পুরো বিশ্বাস যে আপনারা কোথাও না কোথাও ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যাপারে নিশ্চয় শুনেছেন। ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে শুনছেন তো ঠিকই কিন্তু আপনার মনে অবশ্যই অনেক প্রশ্ন জমে আছে। আসলে এটা কি জিনিস বা মেঘে কীভাবে কম্পিউটার থাকতে পারে? ক্লাউড কম্পিউটিং কেনো ব্যবহার করবো? ইত্যাদি ইত্যাদি। তো চলুন এক নিশ্বাস এ জেনে ফেলি সব কিছু।

ক্লাউড কম্পিউটিং নামকরন করার কারন

এই নাম শুনে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে কেনো এর নাম এই রকম রাখা হল। দেখুন এমন কিছু ভাবার একদমই দরকার নেই যে উপরে আকাশে বা মেঘে কোনো কম্পিউটার আছে। আকাশ একেবারেই পরিষ্কার, আর বৃষ্টি হওয়ারও কোনো সম্ভবনা নাই, আর কোনো কম্পিউটার ও আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে না যে আপনি অপেক্ষা করবেন কখন মাটিতে কম্পিউটার খুলে পড়বে আর আপনি বাড়ি নিয়ে যাবেন 😛 ।

তাহলে এই কম্পিউটার এর নাম ক্লাউড কেনো রাখা হল? আপনি যদি মেঘ এর কথা ভাবেন অর্থাৎ এর গঠনের কথা তাহলে আমরা জানি যে পানির অণু গুলো একত্রিত হয়ে মেঘ এর সৃষ্টি হয়। এবং এই মেঘ থেকে যখন বৃষ্টি হয় তখন তা চারিদিকে বিস্তৃত হয়ে যায়। বৃষ্টি কিন্তু এক জাইগায় নির্দিষ্ট হয়ে পরে না। এবং একই মেঘ তার অবস্থানের পরিবর্তন করে সব যায়গায় বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকে। এখন এই ক্লাউড কম্পিউটার ও অনেকটা মেঘ এর গঠনে তৈরি এবং এর কাজ ও প্রায় একই রকম। দেখুন ক্লাউড কম্পিউটার গুলো হাজার হাজার কম্পিউটার একত্রিত করে বানানো হয় এবং এটি দুনিয়ার যেখান থেকে ইচ্ছা সেখান থেকে ব্যবহার করা সম্ভব।

আপনার টেবিলে পরে থাকা কম্পিউটারটির মতো নয় যে আপনি শুধু একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে একে ব্যবহার করতে পারেন। তো মুটামুটি এই ধারনার উপর ভিত্তি করে এই প্রযুক্তিটিকে ক্লাউড কম্পিউটিং নামকরন দেওয়া হয়েছে। এবার চলুন কিছু বাস্তব উদাহরণ দিয়ে ক্লাউড কম্পিউটিং এর বিষয়টা পরিপূর্ণ ভাবে পরিষ্কার করার চেষ্টা করা যাক।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর বাস্তব উদাহরন

মনে করুন আপনার ঘরে একটি কম্পিউটার আছে। এবং আপনি আপনার কম্পিউটার দিয়ে সকল প্রকার শাআধারন কাজকর্ম করে থাকেন, যেমন আপনি হয়তো কিছু ফাইল তৈরি করেন কিংবা কোনো ডাটা স্টোর করে রাখেন।এখন ধরুন আপনার প্রয়োজন পড়লো কোনো উচ্চমান কাজ এর যেমন আপনি উচ্চমান এর গেম খেলতে চাচ্ছেন কিংবা ভিডিও রেন্ডার করতে কিংবা অনেক ডাটা স্টোর করতে চাচ্ছেন।

তো এই কাজ গুলো কিন্তু আপনি একটি সাধারন কম্পিউটার দিয়ে আরামে করতে পারবেন না। আর যদি করতেও চান তবে আপনাকে আপনার কম্পিউটার টি আপগ্রেড করাতে হবে, আর এতে অনেক টাকা খরচ হতে পারে। কিন্তু এমন করলে কেমন হয় বলুন তো? যে আপনি এটি উচ্চমান এর কম্পিউটার ভাড়া নিলেন তাও আবার খুব কম খরচে। যাতে আপনি সকল উচ্চমানের কাজ করতে পারবেন আর সবচেয়ে সুবিধার কথা হলো আপনার কম্পিউটার বা যেকোনো কম্পিউটিং ডিভাইজ থেকে সেই ভাড়াকৃত কম্পিউটারটি নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।

হাঁ বন্ধুরা এটাই হলো ক্লাউড কম্পিউটিং। এটি একটি ভার্চুয়াল কম্পিউটার। অর্থাৎ কম্পিউটার এর যন্ত্রাংশ আপনি দেখতে পাবেন না কিন্তু যেকোনো স্থান থেকে এবং যেকোনো কম্পিউটিং ডিভাইজ থেকে একে রিমোট কন্ট্রোল এর মতো করে ব্যবহার করতে পারবেন। যেখানে আপনি ইচ্ছা মতো কনফিগারেশন করতে পারবেন এবং সকল উচ্চ মান এর কাজ করতে পারেন ইন্টারনেট সংযোগ এর মাধ্যমে। এখানে আপনি হাজার হাজার দাতাআ সংরক্ষন করতে পারবেন। এবং এমন সব কিছুই করতে পারবেন যা আপনার টেবিলে থাকে কম্পিউটার টি দিয়ে আপনি করেন। আপনার শুধু দরকার হবে একটি ভালো গতি সম্পূর্ণ ইন্টারনেট সংযোগ।

অনেকে মনে করেন যে ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে শুধু ডাটা সংরক্ষন করা যায়। যেমন ওয়ান ড্রাইভ, গুগল ড্রাইভ বা ড্রপ বাক্স দিয়ে আমরা যেভাবে ডাটা সংরক্ষন করে রাখি। আসলে ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে যে শুধু ডাটা সংরক্ষন করা হয় তা না একে সম্পূর্ণ একটি বাস্তব কম্পিউটার এর মতোই ব্যবহার করা যায়। এবং আপনার ইচ্ছা মতো কনফিগার করতে পারবেন।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা

মনে করুন একটি কোম্পানিতে এক হাজার কর্মকর্তা কাজ করেন। তারা বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষন করে রাখেন এবং তা পরবর্তীতে ব্যবহার করেন। এখন এই বিষয়টি যদি কোম্পানি নিজে থেকে করার চেষ্টা করে তবে কোম্পানিটিকে একটি নির্দিষ্ট সার্ভার স্থাপন করতে হবে।

এতে অনেক খরচ পরে যেতে পারে। কিন্তু সেই কোম্পানিটি যদি কোনো একটি ক্লাউড কোম্পানি থেকে ক্লাউড কম্পিউটার ভাড়া করে তবে সে অনেক সহজেই সকল ডাটা সংরক্ষন করতে পারবে। এবং তারা যে সফটওয়্যার ব্যবহার করে কাজ করে তাও ব্যবহার করতে পারবে। এবং এতে খরচ ও কম পড়বে। এখানে সবচাইতে আরেকটি বিষয় আছে। তা হলো ক্লাউড কম্পিউটিং এ ইচ্ছা মতো আপগ্রেসন করা যায়।

মনে করুন কোম্পানিটির আরো ৫০০ জন কর্মকর্তা বৃদ্ধি পেয়ে গেলো। এতে আগের চেয়ে কাজ ও বেড়ে যাবে এবং বেশি ডাটা সংরক্ষন করার জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়বে। বাস্তবিক ভাবে এটি করতে চাইলে বেশি কম্পিউটার এর প্রয়োজন পড়বে অথবা সিস্টেম আপগ্রেড করার দরকার হবে। কিন্তু ক্লাউড কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে এই কাজটি অনেক সহজেই করা সম্ভব। এখানে আপনি ইচ্ছা মতো RAM বা CPU CORE বা STORAGE বারাতে পারবেন।

তাহলে আমারা ক্লাউড কম্পিউটিং এর কি কি সুবিধা দেখতে পেলাম?

  • ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে পাওয়া সম্ভব।
  • ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে অনেক উচ্চমান সম্পূর্ণ কাজ করা সম্ভব। এবং প্রয়োজনীয় সকল সফটওয়্যার ব্যবহার করা সম্ভব যা হয়তো আপনাকে আলাদা টাকা দিয়ে কিনতে হতে পারত।
  • একসাথে অনেক ডাটা সংরক্ষন করা সম্ভব। এবং সেই ডাটা কখনই হারিয়ে যাবে না বা নষ্ট হয়ে যাবে না। ক্লাউড কম্পিউটিং কোম্পানি গুলোর অনেক ডাটা সেন্টার থাকে। তাই আপনার ডাটা নিয়ে আপনাকে কনো চিন্তা করতে হবে না।
  • ইচ্ছা মতো আপগ্রেড করা সম্ভব।
  • ক্লাউড কম্পিউটিং সেবার তুলনা মূলক ভাবে খরচ অনেক কম। আপনি বিভিন্ন মেয়াদে আপনার প্রয়োজন অনুসারে এই সেবাটি কিনতে পারেন। সেটা ১ মাস বা ৬ মাস বা ১ বছর কিংবা আজীবন হতে পারে।
  • প্রায় সকল প্রকারের কম্পিউটিং ডিভাইজ দ্বারা ক্লাউড কম্পিউটিং সেবাটি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। মনে করুন আপনি একটি প্রোজেক্ট আপনার ঘরের কম্পিউটার দিয়ে ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে করছিলেন, তারপর আপনাকে অফিসে যেতে হলো আপনি রাস্তায় সেটা আপনার ট্যাবলেট বা ফোন থেকেও করতে পারবেন। এবং অফিস এ পৌঁছে আপনি অফিস এর কম্পিউটার এর সাথে ক্লাউড কম্পিউটিং সংযোগ করে সেই কাজটি অফিসে বসে করতে পারবেন।

আশা করি ক্লাউড কম্পিউটিং কি, এটি কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এর ব্যবহারের সুবিধা সমূহ নিয়ে আপনাদের মনের সকল প্রশ্নের উত্তর এতক্ষণে দিতে সক্ষম হয়েছি। উচ্চমান এর কাজ করার জন্য আপনার উচ্চমান এর কম্পিউটার থাকার প্রয়োজন পরবেনা। শুধু দরকার পড়বে ভালো ইন্টারনেট সংযোগের এবং আপনি ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাহায্যে আপনার সকল প্রকার কাজ করতে পারবেন। বন্ধুরা কামন লাগলো আজকের এই পোস্টটি তা আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন। এবং আজকের পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে মোটে ভুলবেন না।

Image: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories