আপনি যদি অনেকদিন ধরে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন এবং অ্যান্ড্রয়েড ও গুগল সম্পর্কে অনেক বেশি খোঁজ খবর রেখে থাকেন, তাহলে আপনি এতদিনে অবশ্যই অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান এবং অ্যান্ড্রয়েড গো নামের দুইটি টার্ম শুনেছেন। এই দুইটি হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে গুগলের দুইটি প্রোজেক্ট। প্রথম প্রজেক্টটি গুগল আরও কয়েক বছর আগে চালু রাখলেও দ্বিতীয় প্রোজেক্টটি প্রায় নতুন এখনো। দ্বিতীয় প্রজেক্টটি গুগল ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের দিকে অ্যান্ড্রয়েড অরিওর পাশাপাশি এনাউন্স করে। আজকে গুগলের এই দুটি প্রজেক্ট, অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান এবং এন্ড্রোইড গো নিয়েই আলোচনা করবো।
অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান
আপনি যদি গুগলের নেক্সাস লাইনআপের ফোনগুলোর সাথে পরিচিত হন, তাহলে আপনি গুগলের এই অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রজেক্টটিও ভালোভাবে বুঝবেন। বর্তমানে গুগল আর কোনো নেক্সাস স্মার্টফোন রিলিজ করছে না। নেক্সাস লাইনআপের স্মার্টফোনগুলোর পরিবর্তে গুগল তাদের নতুন পিক্সেল লাইনআপে শিফট করেছে, যে লাইনআপের স্মার্টফোনগুলোর হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার সম্পূর্ণ গুগলের নিজের তৈরী। কিন্তু গুগল পিক্সেল স্মার্টফোন রিলিজ করার পূর্বে যেসব স্মার্টফোন রিলিজ করতো সেগুলোই ছিল নেক্সাস স্মার্টফোন। নেক্সাস লাইনআপের স্মার্টফোনগুলোর সফটওয়্যার সাইড সম্পূর্ণ গুগল নিজে তৈরী করতো। কিন্তু স্মার্টফোনটির হার্ডওয়্যার তৈরী করতো ওই স্মার্টফোনটির ম্যানুফ্যাকচারার। যেমন, গুগলের তৈরী সর্বশেষ নেক্সাস স্মার্টফোন ছিল নেক্সাস ৬পি (Nexus 6P) যেটির সফটওয়্যার সেকশন সম্পূর্ণটি গুগলের নিজের তৈরী। তবে স্মার্টফোনটির হার্ডওয়্যার তৈরী করেছিল হুয়াওয়ে (Huawei)। তবে ফোনটি সেল করতো গুগল নিজেই।
গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রজেক্টটি প্রায় একেবারেই সেম। এক্ষেত্রেও গুগল তাদের আগের নেক্সাস লাইনআপের স্মার্টফোনগুলোর মতো ব্যবস্থা করেছে। এক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রজেক্টের আন্ডারে থাকা স্মার্টফোনগুলোর সফটওয়্যার সেকশন গুগল তৈরী করবে। অর্থাৎ, ফোনের ওএস তৈরী করবে গুগল এবং কন্ট্রোলও করবে গুগল। কিন্তু ফোনটির হার্ডওয়্যার সেকশন তৈরী করবে ফোনটির ম্যানুফ্যাকচারার এবং কন্ট্রোলও করবে ফোনটির ম্যানুফ্যাকচারার। গত বছর শেষের দিকে রিলিজ হওয়া শাওমি মি এ১ (Xiaomi Mi A1) স্মার্টফোনটিও গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রজেক্টের আন্ডারে ছিল। শাওমি এবং গুগলের পার্টনারশিপের মধ্যে দিয়েই এই স্মার্টফোনটি শাওমি বাজারে রিলিজ করে। প্রজেক্ট অনুযায়ী এই স্মার্টফোনটির সফটওয়্যার সেকশনও সম্পূর্ণ গুগলের তৈরী এবং হার্ডওয়্যার সেকশন শাওমির তৈরী। এর ফলে ইউজাররা যে সুবিধাটি পাবেন তা হচ্ছে কোনো রকম থার্ড পার্টি অ্যান্ড্রয়েড স্কিন ব্যবহার না করে গুগলের নিজের তৈরী পিওর স্টক এন্ড্রোয়েড এক্সপেরিয়েন্স এবং একইসাথে গুগলের অপটিমাইজেশনের কারণে তুলনামূলকভাবে প্রাইস-পারফর্মেন্স রেশিও অনুযায়ী তুলনামূলকভাবে আরো ভালো পারফর্মেন্স ও ফাস্ট আপডেটস এবং একটি অপার মিডরেঞ্জ প্রাইসের স্মার্টফোন যেটি তুলনামূলকভাবে বেশি মানুষের জন্য আফোর্ডেবল। আর, এটিই মূলত গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রজেক্টের প্রধান লক্ষ্য। এখানে শুধুমাত্র শাওমি মি এ১ স্মার্টফোনটির উদাহরণ দিলাম কারণ, মি এ১ ছাড়াও মটোরোলারও একটি স্মার্টফোন আছে যেটি অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রজেক্টের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু সেটি গ্লোবালি এভেইলেবল নয়।
অ্যান্ড্রয়েড গো
গুগলের এই প্রজেক্টটি এন্ড্রোয়েড ওয়ানের তুলনায় বেশ নতুন। কারণ এটি গুগল গত বছরই এনাউন্স করেছে অ্যান্ড্রয়েড অরিওর সাথে। কিন্তু এই ফিচারটি বা এন্ড্রোয়েড এর এই কাস্টমাইজড ভার্সনটি এখনো কোনজিউমারদের কাছে ব্যাবহারযোগ্য হয়ে আসেনি। এটিকে এন্ড্রোয়েড গো না বলে অ্যান্ড্রয়েড অরিও গো এডিসন বললে আরো বেশি সঠিক হবে। এই কাস্টমাইজড অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনটি মূলত এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোনগুলোর জন্য তৈরী। এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোনগুলো বলতে বোঝানো হয়েছে যেসব স্মার্টফোনে রিসোর্স অনেক কম আছে বা যেসব স্মার্টফোনের হার্ডওয়্যার খুব বেশি পাওয়ারফুল নয়। যেমন, যেসব স্মার্টফোনের প্রোসেসর মিডিয়াটেক কিংবা যেসব স্মার্টফোনের র্যাম ৫১২ এমবি বা ১ জিবি এবং যেসব স্মার্টফোনে অনেক কম স্টোরেজ রয়েছে। এতক্ষনে নিশ্চয়ই বুঝেছেন এখানে এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোন বলতে কি ধরণের স্মার্টফোনকে বোঝানো হয়েছে। এসব স্মার্টফোনে অ্যান্ড্রয়েড এর ফুল ভার্সন ভালোভাবে চলবে না। ল্যাগ করবে অথবা র্যাম ম্যানেজমেন্ট ভালো হবেনা এবং ব্যাটারি লাইফও খারাপ হবে, সর্বোপরি একটি বাজে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স পাবেন। এই সমস্যার কথা চিন্তা করেই গুগল অ্যান্ড্রয়েড গো প্রজেক্টটি হাতে নেয়।
অ্যান্ড্রয়েড গো প্রজেক্টটিতে গুগলের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড অরিওর একটি কাস্টমাইজড লাইটওয়েট ভার্সন তৈরী করা যেটি এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোনগুলোর অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এই কাস্টমাইজড অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন হবে অনেক কম রিসোর্স হাংরি। অর্থাৎ, এটিকে স্মুথলি চলার জন্য অনেক হাই এন্ড হার্ডওয়্যার দরকার হবেনা। এই অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনে গুগলের প্রত্যেকটি ফার্স্ট পার্টি এপ্লিকেশনগুলোর একটি কাস্টমাইজড লাইট ভার্সন থাকবে যেগুলো অনেক কম রিসোর্স ইউজ করবে এবং সাইজে অনেক ছোট হবে। গুগলের নিজের এপ্লিকেশনগুলো ছাড়াও আরও অনেক থার্ড পার্টি ডেভেলপাররাও তাদের এপ্লিকেশনগুলোর লাইট ভার্সন তৈরী করতে পারবে যেগুলো এসব এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোনে আরো ভালোভাবে রান করবে। ইতোমধ্যেই আপনি এমন অনেক পপুলার এপ্লিকেশনের লাইটওয়েট ভার্সন প্লে স্টোরে দেখতে পাবেন। যেমন, ইউটিউব লাইট, ফেসবুক লাইট, মেসেঞ্জার লাইট, স্কাইপ লাইট ইত্যাদি। এই সকল লাইট এপ্লিকেশনগুলোই অ্যান্ড্রয়েড গো প্রজেক্টের অন্তর্ভুক্ত এবং এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোনগুলোতে রান করার জন্য বিশেষভাবে তৈরী করা। এছাড়া এন্ডয়েড গো ভার্সনে এমন আরো অনেক ফিচারস আছে যেগুলো এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোন ব্যাবহারকারীদের জন্য খুব বেশি দরকার হবে। যেমন- বিল্ট ইন স্টোরেজ ক্লিনার, ডেটা ম্যানেজার, ডেটা সেভার ইত্যাদি।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝেছেন যে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান এবং অ্যান্ড্রয়েড গো প্রজেক্টটি মূলত কি এবং এদের মধ্যে পার্থক্য কি। সহজ ভাষায় এই দুটি প্রজেক্টটির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রজেক্টটিতে গুগল থার্ড পার্টি স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারার এর সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে একটি মিড রেঞ্জের স্মার্টফোন তৈরী করে যেটির হার্ডওয়্যার সেকশন গুগল নিজে তৈরী করে এবং হার্ডওয়্যার সেকশন ওই স্মার্টফোনের ম্যানুফ্যাকচারার তৈরী করে। এর ফলে ইউজাররা যে সুবিধাটি পাবেন তা হচ্ছে কোনো রকম থার্ড পার্টি অ্যান্ড্রয়েড স্কিন ব্যবহার না করে গুগলের নিজের তৈরী পিওর স্টক এন্ড্রোয়েড এক্সপেরিয়েন্স এবং একইসাথে গুগলের অপটিমাইজেশনের কারণে তুলনামূলকভাবে প্রাইস-পারফর্মেন্স রেশিও অনুযায়ী তুলনামূলকভাবে আরো ভালো পারফর্মেন্স এবং ফাস্ট আপডেটস।
আর অ্যান্ড্রয়েড গো হচ্ছে এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোনগুলোর জন্য গুগলের তৈরী একটি কাস্টমাইজড অ্যান্ড্রয়েড অরিও ভার্সন যেটিতে থাকবে সব পপুলার এপ্লিকেশনগুলোর লাইটওয়েট ভার্সন যেগুলো অনেক কম রিসোর্স ইউজ করবে এবং সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেমটি লাইটওয়েট হওয়ায় এটি লো এন্ড হার্ডওয়্যারযুক্ত ফোনেও ভালো পারফর্মেন্স এবং ব্যাটারি লাইফ নিশ্চিত করবে।
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
Image Credit : Pixabay
Oh. Now that’s clear. Awesome article. Thanks dude.
You’re welcome. 🙂
Ey prosno mone mone vabchilam. thanks apni clear kore delen.
You’re welcome ! 🙂
খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনাকেও ধন্যবাদ। 🙂
Xoss Boss.
Thanks vai. vai windows + linux Dual boot korte cai, but setup process paci na. jodi ekta bangla article likhe felten onek help hoto. asole khube dorkari ekta artikel. I hope oneker kaje lagbe. SO TH team ke request korci ekta Tuto likhe felte. Thanks!
সাজেশনের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি যদি নাও লিখি, তাহমিদ ভাইয়া লিখবে। এই বিষয়ে টিউটোরিয়াল টেকহাবসে খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবেন আশা করি। 🙂
Also KaliLinux installation Guide..plzz
thanks in advance via.
Thanks for suggestion. 🙂
খারাব না