উইন্ডোজ ১০ ও ARM নামের এই প্রজেক্টটি ছিল মাইক্রোসফট এর কাছে আক্ষরিক অর্থেই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যদিও এই প্রজেক্টটি গত ২০১৬ সালের শেষের দিকে মাইক্রোসফট এনাউন্স করে, তবে এই প্রজেক্টটির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয় তার প্রায় আরো ১ বছর পরে। আমার মতে, এই প্রজেক্টটি মাইক্রোসফট এর এখন পর্যন্ত নেওয়া সবথেকে বেশি ইনোভেটিভ প্রজেক্ট। কেন ইনোভেটিভ বলেছি সেটা উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে মাইক্রোসফট এর ট্রাক রেকর্ড দেখলেই বোঝা যাবে। প্রথমত, উইন্ডোজ ফোন ৮/৮.১ বা উইন্ডোজ ফোন ১০ অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত স্মার্টফোন রিলিজ করা মাইক্রোসফট এর কতটা খারাপ ডিসিশন ছিল সেটা কারোরই অজানা নয়।
মাইক্রোসফট এর এই প্রজেক্টটি মূলত তাদের উইন্ডোজ ফোন ১০ রিলিজ করার প্রজেক্টটির ঠিক বিপরীত বলা যায়। উইন্ডোজ ফোন রিলিজ করার সময় মাইক্রোসফট চেয়েছিল এন্ড্রয়েড এবং আইওএস এর মতো তাদের নিজেদের একটি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম তৈরী করতে যেটি এন্ড্রয়েড এবং আইওএস এর অল্টারনেটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারবে। আর এবার উইন্ডোজ ১০ অন ARM প্রজেক্টটির সাহায্যে মাইক্রোসফট চেয়েছে ইউজারদেরকে ফুল উইন্ডোজ ১০ এক্সপেরিয়েন্স দিতে, তবে স্মার্টফোন প্রোসেসরের উপরে ভিত্তি করে, যেটি কয়েক বছর আগেও প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার ছিল। তবে, মোবাইল প্রোসেসরে ফুল উইন্ডোজ ১০ রান করার কিছু অ্যাডভান্টেজ এবং কিছু ডিজঅ্যাডভান্টেজও আছে। এই বিষয়গুলো নিয়েই মূলত আজকে আলোচনা করবো।
উইন্ডোজ ১০ অন ARM
গত অনেক বছর ধরে মাইক্রোসফট শুধুমাত্র তাদের অপারেটিং সিস্টেমকে রান করার জন্য ইন্টেল এবং এএমডির প্রোসেসরের ওপরেই ভরসা করে আসছিলো। গত বছর পর্যন্তও উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমের নাম শুনলেই ইন্টেল বা এএমডি এর কথা মাথায় আসতো। কারণ, এখন পর্যন্ত উইন্ডোজ ১০ শুধুমাত্র এদের তৈরী প্রোসেসরের ওপরেই রান করেছে। কিন্তু যখন এই প্রজেক্টটি মাইক্রোসফট হাতে নেয়, তখন মাইক্রোসফট কোয়ালকমের (Qualcomm) সাথে পার্টনারশিপ করে কোয়ালকমের তৈরী বহুল পরিচিত স্মার্টফোন প্রোসেসর স্ন্যাপড্রাগন এর ওপরে ফুল উইন্ডোজ ১০ ডেস্কটপ ভার্শন রান করার বিষয়ে চিন্তা করে। এটি অবশ্যই মাইক্রোসফট এবং কোয়ালকম দুজনের জন্যই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। গত বছর এই প্রজেক্টের অন্তর্গত একটি ডেমো উইন্ডোজ ১০ ডিভাইসও মাইক্রোসফট ইউজারদেরকে দেখায়, যেটি কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮২০ প্রোসেসরের ওপরে চলছিল, যেটি একটি পপুলার মোবাইল প্রোসেসর। কিন্তু তখনো এই সম্পূর্ণ প্রজেক্টটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ছিল। তাই মাইক্রোসফট তখনো ডেমো ডিভাইসটিকে কনজিউমারদের কাছে নিয়ে আসেনি বা সেল করেনি। এই প্রজেক্টটি নিয়ে মাইক্রোসফট গত বছর (২০১৭) আরো এক্সপেরিমেন্ট করে এবং খুব দ্রুত এই প্রজেক্টটির বাস্তবায়ন করতে সম্ভব হয় নতুন দুটি ল্যাপটপ এর রিলিজের মধ্যে দিয়ে।
এই প্রজেক্টটির সুবিধা ও অসুবিধা
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন এর মতো মোবাইল গ্রেড প্রোসেসরে উইন্ডোজ ১০ রান করার কিছু অসাধারণ সুবিধাও রয়েছে যেগুলো আপনি অন্যান্য সাধারণ উইন্ডোজ ১০ ডিভাইসে পাবেন না, তেমন কিছু অসুবিধাও রয়েছে। অসুবিধার কথাই প্রথমে বলা যাক। প্রথমত, উইন্ডোজ ১০ এর ডেস্কটপ ভার্সন কখনোই মোবাইল প্রোসেসরে রান করার জন্য তৈরী করা হয়নি। এটি সবসময়ই ডেস্কটপ গ্রেড প্রোসেসর যেমন, ইন্টেল বা এএমডি প্রোসেসরের জন্য তৈরী করা হয়েছে। তাই উইন্ডোজ ১০ কে মোবাইল গ্রেড প্রসেসরে চালাতে হলে দরকার হবে একটি ইমুলেশন প্রযুক্তির। যার মানে হচ্ছে, প্রোসেসর এবং ওএস সরাসরি একে অপরের সাথে ইন্টার্র্যাক্ট করতে পারবে না। সবকিছুই ঘটবে একটি ইমুলেশন টেকনোলজির মাধ্যমে যেটিকে মাইক্রোসফট নাম দিয়েছে তাদের নিজেদের তৈরী “ম্যাজিকাল ইমুলেশন টেকনোলজি”। যার মাধ্যমে, মোবাইল প্রসেসরের ওপরে রান করা উইন্ডোজ ১০ একেবারেই ডেস্কটপ গ্রেড প্রোসেসরে রান করা উইন্ডোজ ১০ এর মতো পারফর্ম করতে পারবে। এখানে উল্লেখ্য, এটি শুধুমাত্র ডে টু ডে টাস্ক এবং লাইট গেমিং এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই এই প্রজেক্টটির ওপরে রান করা উইন্ডোজ ১০ ডিভাইসগুলো হাই এন্ড গেমিং এবং ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি ভারী কাজ করতে পারবেনা। এবং এই ডিভাইসগুলো যেহেতু টেকনোলজির মাধ্যমে উইন্ডোজ ১০ রান করবে, তাই এটি হাই এন্ড উইন্ডোজ ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ এর মতো পাওয়ারফুলও হবেনা। তবে মাইক্রোসফট ১ বছর আগে এই প্রজেক্টটির জন্য যে ডেমো ডিভাইসটি প্রদর্শন করেছিল, সেটি মোটামোটি প্রত্যেকদিনের কাজ যেমন মাইক্রোসফট অফিস, ফটোশপ, নেট ব্রাউজিং ,মাল্টিমিডিয়া কনজিউমিং এবং লাইট গেমিং ইত্যাদি করার জন্য যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল।
এবার বলি এই প্রজেক্টটির কয়েকটি সুবিধা নিয়ে। সত্যি কথা বলতে, আমার মতে এই প্রজেক্টটির ডিসঅ্যাডভান্টেজ এর তুলনায় অ্যাডভান্টেজ অনেক অনেক বেশি। প্রথমত এই ডিভাইসগুলো মোবাইল গ্রেড প্রোসেসরে রান করে এই ডিভাইসগুলো অনেক বেশি ব্যাটারী এফিশিয়েন্ট। তাই এসব ডিভাইসের ব্যাটারি লাইফ অন্যান্য উইন্ডোজ ১০ ডিভাইসের থেকে অনেক ভালো হবে। এই প্রজেক্টের আওতায় এইচপি (HP) এবং আসুস (Asus) দুটি ল্যাপটপ রিলিজ করেছে ( HP Envy X2, Asus NovaGo) যেদুটি রান করছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ প্রোসেসরের ওপরে। মাইক্রোসফট এবং এই ডিভাইসদুটির ম্যানুফ্যাকচারার সবাই ক্লেইম করছে যে, এই দুটি ডিভাইসে প্রায় ২০ ঘণ্টারও বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া সম্ভব হবে, যেটি এখনও পর্যন্ত অন্য কোন উইন্ডোজ ডিভাইসে পাওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া, এই প্রজেক্টটির আওতায় যেসব উইন্ডোজ ডিভাইস আছে, সেগুলোকে মাইক্রোসফট বলছে Always Connected PC। যার মানে, এসব ডিভাইস কখনো শাট ডাউন করার দরকার পড়বে না। ঠিক যেমন আমরা আমাদের স্মার্টফোন সবসময় অন রাখি, ঠিক তেমনি এই ডিভাইসগুলো সবসময় অন করে রাখা যাবে। এছাড়াও এসব ল্যাপটপে থাকবে বিল্ট ইন সিম কার্ড স্লট, যার ফলে এসব ল্যাপটপে খুব সহজেই থ্রিজি/ফোরজি মোবাইল ডেটা ব্যবহার করা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, মোবাইল গ্রেড প্রোসেসর থাকার ফলে, এসব ল্যাপটপ হবে সাধারন ল্যাপটপের থেকে অনেক বেশি লাইটওয়েট এবং স্লিম।
তো এই ছিল মাইক্রোসফট এর নতুন উইন্ডোজ ১০ অন ARM প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টটি অনেক আগেই এনাউন্স করলেও সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয় কয়েক মাস আগে। উইন্ডোজ ১০ অন ARM প্রজেক্ট এর অন্তর্গত দুটি ল্যাপটপ HP Envy X2 ও Asus Nova Go কয়েক মাস আগেই এনাউন্স করে এইচপি এবং আসুস। এই ল্যাপটপদুটি অন্যান্য সাধারন ল্যাপটপ এর মত হলেও এই ল্যাপটপ দুটিই রান করছে স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ প্রোসেসরের ওপরে। এছাড়া এই ল্যাপটপ দুটি অন্যান্য যেকোনো উইন্ডোজ ল্যাপটপ এর থেকে অনেক বেশি ব্যাটারি এফিশিয়েন্ট এবং এগুলোতে থাকছে সিম কার্ড স্লটও।
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
ইমেজ ক্রেডিটঃ By yougoigo Via Shutterstock
Existing device gulo te ki possible hobe?
আপাতত, না। শুধুমাত্র নতুন যেসব উইন্ডোজ ডিভাইস স্ন্যাপড্রাগন প্রোসেসরের সাথে রিলিজ হবে সেগুলোই এই প্রজেক্টে থাকবে। কিন্তু ভবিষ্যতে কি হবে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত কিছু বলতে পারবো না। 🙂
মাইক্রোসফট এর এই প্রোজেক্টকে খুবই সাধুবাদ জানাই। ডিউরেবিলিটি, ব্যাটারি অনটাইম, নতুন ধাচের ডিজাইনে উইন্ডোজ ডিভাইস পাওয়া যাবে এতে করে।
হ্যা। নতুন ডিভাইস তো পাওয়া যাবেই। ইতোমধ্যেই দুটি নতুন ডিভাইস চলে এসেছে। কিন্তু ডিভাইসগুলো খুব বেশি আফোর্ডবল হবেনা সম্ভবত।
.exe colbe via?/
হ্যা অবশ্যই ! 🙂
খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
😀
mobile e install hobe naki laptop e mobo proccesor use korbe?
ল্যাপটপে মোবাইল প্রোসেসর ইউজ করবে।
vhaiya NVDIA gsync and freesync Tech niya expained type koren. thanks for this post
খুব দ্রুত লিখবো এই বিষয়ে ভাইয়া। থ্যাংকস ফর সাজেশন। 🙂
মোবাইলে অ্যান্ড্রয়েড অনেক ভালো। পিসি ওএস বড় স্ক্রীন ভালো লাগবে। তাছাড়া ঐ শুধু সাপোর্ট করবে ব্যাট ইনটেল প্রসেসর মতো পারফর্মেন্স দেওয়া মুখের কথা নয়।
যদি হাই এন্ড গেমিং বা ৪কে ভিডিও এডিটিং এর মত ইনটেনসিভ কাজ করার চিন্তাভাবনা করেন, তাহলে অবশ্যই মোবাইল প্রোসেসরে ভালো পারফরমেন্স পাবেন না। তবে লাইট টাস্ক যেমন, মাল্টিমিডিয়া স্ট্রিমিং,নেট সার্ফিং, লাইট গেমিং ইত্যাদি ডে টু ডে টাস্কে যথেষ্ট ভালো পারফর্ম করবে এসব প্রোসেসর। 🙂
nice!!!!
Thanks ! 😀
Thanks for the awesome post.
🙂
OK…!
But Sd proccessor ke windows graphics handle korta parba?
হ্যা অবশ্যই পারবে। কিন্তু হাই এন্ড গেমিং বা ভিডিও এডিটিং এই ধরনের ভারী কাজ স্মুথলি করতে পারবে না।
thanks 4 share dis quick update.
plz tell me da name of current theme. How can a site be so fast? plz share that tricks.
ThanX a lot to The Techubs Team.
We are using Google’s Material Styled theme (Developed by third party) as our current site theme. Also we are using Google’s Cloud server. Maybe that’s why our website is fast. Thank You 🙂
thanks
🙂
মোবাইল ডীভাইজ কি বানানো হবে নাকি শুধু ল্যাপটপ আর ট্যাবলেট গুলোতে এই সুবিধা পাবে? উইন্ডোজ ১০ কি সম্পূর্ণ মোবাইল রেস্পন্সিভ? মানে পিসি ভার্সন উইন্ডোজ ১০। নাকি মোবাইলে উইন্ডোজ ১০ মোবাইলের (উইন্ডোজ ফোন) মতো কাজ করবে, ব্যাট শুধু EXE চলবে?
খুব সম্ভবত এরপরে মাইক্রোসফট আর কোনো মোবাইল ডিভাইস বা উইন্ডোজ ফোন করবেনা। উইন্ডোজ ১০ অন ARM প্রজেক্টটি শুধুমাত্র ল্যাপটপ এবং উইন্ডোজ কনভার্টেবল ল্যাপটপ/ট্যাবলেট এর জন্য প্রযোজ্য। আর এসব ডিভাইসে সম্পূর্ণ ফুল ভার্সন উইন্ডোজ ১০ চলবে যেটি আমরা বর্তমানে পিসি এবং ল্যাপটপে ব্যবহার করে থাকি। এটি কোনোভাবেই কয়েকবছর আগের উইন্ডোজ ফোনগুলোর হবেনা।
“তাহমিদ ভাই” আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল জ্জউপহার দেওয়ার জন্য। শাওমি ফোনগুলি কেমন হবে,, এদের ফোনগুলি কি টেকসই হবে? ১৫-২০ হাজার টাকার ফোনগুলি কি ২-৩ ব্যবহার করা যাবে? মোটকথা শাওমি ফোনগুলোর গুনগত মান সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। আর হ্যাঁ “তাহমিদ ভাই” একই দামে শাওমি নাকি স্যামসাং বেটার হবে? আমি “টেকহাবস” এর নিয়মিত পাঠক এবং বেশ পুরোনো। যাই হোক ভাই, আপনার আর্টিকেল গুলো প্রসংসার দাবীদার। ভাল থাকবেন।