নিজের ওয়েবসাইট নিজের কম্পিউটারে হোস্ট করলে কি হবে?

যারা কোন ব্লগ বা কোন ওয়েবসাইট রান করেন, তারা অবশ্যই ওয়েব হোস্টিং এর সাথে ভালোভাবেই পরিচিত। ইন্টারনেটের যেকোনো ওয়েবসাইটের একটি ওয়েব হোস্টিং তথা ওয়েব সার্ভার না থাকলে কোন ওয়েবসাইটই ইন্টারনেটে লাইভ থাকতে পারে না এবং  কোন ভিজিটরই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারে না। সহজ কথায় বলতে হলে, ওয়েব হোস্টিং বা ওয়েব সার্ভার ছাড়া কোন ওয়েবসাইটই তৈরি করা সম্ভব হয়না।

আপনারা অনেকেই হয়তো আগ্রহের কারনেও অনেকসময় ভেবেছেন যে, ওয়েব হোস্টিং এর জন্য কেন থার্ড পার্টি সার্ভিস ব্যাবহার করতে হবে এবং থার্ড পার্টি হোস্টিং প্রোভাইডারকে টাকা দিতে হবে? আমার নিজের কম্পিউটার এবং নিজের ইন্টারনেট কানেকশন ব্যাবহার করে কি আমার ওয়েবসাইটের জন্য সার্ভার তৈরি করতে পারবো না? না পারলে ঠিক কি কি কারনে পারবো না? আজকে এই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করতে চলেছি।

বিঃদ্রঃ আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করবো যে নিজের ইন্টারনেট এবং ডিভাইসে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করা সম্ভব কি না এবং এর সুবিধা-অসুবিধাগুলো নিয়ে। কিন্তু ওয়েব সার্ভার কিভাবে হোস্ট করবেন এবং এর প্রোসেসগুলো কি কি সেগুলো পাবেন না এখানে।


নিজের কম্পিউটারে ওয়েব সার্ভার

আপনার নিজের কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটকে আপনার ওয়েবসাইটের সার্ভার হিসেবে ব্যাবহার করার কাজটি খুব বেশি প্র্যাকটিকাল না হলেও বলা যায়, অনেকটা মজার এবং চ্যালেঞ্জিং। কারন, নিজের ডিভাইসটিকে ওয়েব সার্ভার হিসেবে ব্যাবহার করে আপনি অন্তত মানুষের কাছে বলতেও পারবেন যে, আপনি নিজের পিসিতে একটি সম্পূর্ণ ওয়েব সার্ভার রান করেন! এইটুকু বলতে পারাটাই অনেকের কাছে নিজের কম্পিউটারে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করার চেষ্টা করার সবথেকে বড় কারন।

যাইহোক, আপনি যদি আপনার ইন্টারনেট কানেকশন ব্যাবহার করে নিজের কম্পিউটারে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করতে চান, তাহলে সবার প্রথমে আপনাকে জানতে হবে যে, আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) এটি অ্যালাউ করে কিনা। আর হ্যা, এতক্ষনে অবশ্যই এইটুকু বুঝে গিয়েছেন যে নিজের ইন্টারনেট ব্যাবহার করে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করতে চাইলে অবশ্যই আপনার একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন দরকার হবে। মোবাইল ডেটা বা থ্রিজি বা ফোরজি ইন্টারনেট ব্যাবহার করে অবশ্যই এটা করতে পারবেন না।

আপনার একটি স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেসের দরকার হবে!

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের পাশাপাশি আপনার আরও যা দরকার হবে তা হচ্ছে আপনার আইএসপির দেওয়া একটি স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস। ডায়নামিক আইপি অ্যাড্রেস ব্যাবহার করেও সার্ভার হোস্ট করা সম্ভব হবে, তবে তা আপনার আইএসপির জন্য সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে যেহেতু ডায়নামিক আইপি অ্যাড্রেস তারা একাধিক ইউজারকে অ্যাসাইন করে থাকে। ঠিক এই কারনেই অনেক আইএসপি ইউজারদেরকে তাদের ইন্টারনেট কানেকশন ব্যাবহার করে কোন ওয়েব সার্ভার কিংবা এফটিপি সার্ভার হোস্ট করতে অ্যালাউ করে না।

যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ ইন্টারনেট ইউজার লোকাল কিছু আইএসপির ইন্টারনেট ব্যাবহার করে, তাই আপনার আইএসপি এটি অ্যালাউ করতেই পারে। কিন্তু প্রধান সমস্যাটি হচ্ছে অধিকাংশ আইএসপি হোম ইন্টারনেট ইউজারদেরকে স্ট্যাটিক আইপি অ্যাসাইন করে না (করার দরকারও পড়ে না)। আপনি একটি ডায়নামিক আইপিকে স্ট্যাটিক হোস্টনেমে রাউট করে সার্ভার হোস্ট করতে পারেন, তবে এটা কখনোই বেস্ট সল্যুশন নয় এবং এটা অধিকাংশ আইএসপির নীতিমালা ভঙ্গ করে।

তাই আপনাকে প্রথমে জানতে হবে যে আপনার আইএসপি এটি অ্যালাউ করে কিনা এবং যদি অ্যালাউ করে, এরপরে আপনাকে জানতে হবে যে আপনার আইএসপি ইউজারদেরকে স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস অফার করে কিনা। যদি করে, তবে আপনাকে একটি স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস ম্যানেজ করতে হবে, যেটিকে বাংলাদেশের অনেক আইএসপি রিয়াল আইপিও বলে থাকে। আইএসপির কাছে অ্যাপ্লিকেশন করে হোক, আর যেভাবেই হোক, আপনাকে নিজের ডিভাইসগুলোর জন্য একটি স্ট্যাটিক আইপি ম্যানেজ করতে হবে যেটি আইএসপি আপনাকে অ্যাসাইন করে দেবে এবং আপনি সেটিকে আপনার সার্ভারের আইপি অ্যাড্রেস হিসেবে ব্যাবহার করতে পারবেন।

একটি বিজনেস ব্রডব্যান্ড লাইনেরও দরকার হতে পারে!

আর তারা যদি আপনাকে হোম ইন্টারনেটের জন্য স্ট্যাটিক আইপি অফার করতে না পারে, তাহলে আপনাকে একটি বিজনেস ব্রডব্যান্ড লাইন নিতে হতে পারে স্ট্যাটিক আইপি এর জন্য। বিজনেস লাইন সাধারনত হোম ইন্টারনেট লাইনের থেকে অনেক বেশি এক্সপেনসিভ। তবে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করতে চাইলে বিজনেস লাইন অবশ্যই দরকার, যদি আপনি হোম ইন্টারনেটে স্ট্যাটিক আইপি না পান। বিজনেস লাইনে আপনি সবসময়ই স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস পাবেন যা সার্ভার হোস্ট করার জন্য আবশ্যক। তো এগুলোই হচ্ছে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করার আগের সমস্যাগুলো যেগুলো আপনাকে কাজ শুরু আগেই ফেস করতে হবে!

অন্যান্য অসুবিধা (স্পিড, ব্যান্ডউইথ, আপটাইম)

আপনার আইএসপি অ্যালাউ করবে কিনা এবং আপনাকে স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস অ্যাসাইন করা হচ্ছে কিনা, আপনার একটি বিজনেস লাইনের দরকার হবে কিনা, এগুলো কিছু মাইনর সমস্যা যেগুলো আপনাকে সার্ভার হোস্ট করার আগেই ভেবে নিতে হবে। তবে আপনাকে রিয়াল প্রবলেমগুলো ফেস করতে হবে আপনার সার্ভার হোস্ট করার পরে। প্রথমত, আপনার নিজের ওয়েব সার্ভারে ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য মোটামুটি ভালো স্পিডের একটি স্ট্যাবল ইন্টারনেট কানেকশন অবশ্যই দরকারে হবে।

আপনার ইন্টারনেট স্পিড যদি সব মিলিয়ে ১ বা ২ এমবিপিএস হয়, তাহলে নিশ্চয় আপনি এটা ব্যাবহার করে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করবেন না। এমনকি আপনার ইন্টারনেট স্পিড যদি ৫০ এমবিপিএস ডাউনলোড এবং ৫ এমবিপিএস আপলোড স্পিডের হয়ে থাকে, তাহলেও আপনার ওয়েব সার্ভারটি ভালো পারফর্ম করবে না, যদি আপনার ওয়েবসাইটটি প্রত্যেকদিন বেশ ভালো পরিমান ট্রাফিক পায়। ওয়েব সার্ভার হোস্ট করার ক্ষেত্রে ভালো স্পিডের স্ট্যাবল ইন্টারনেট কানেকশন থাকা আবশ্যক।

আর হ্যা, আপনার ইন্টারনেট কানেকশনটি যদি লিমিটেড হয়, অর্থাৎ এই ধরনের কোন লিমিট থাকে যে আপনি প্রত্যেক মাসে কোন নির্দিষ্ট পরিমান ব্যান্ডউইথের বেশি কনজিউম করতে পারবেন না, তাহলে অবশ্যই আপনি ওয়েব সার্ভার হোস্ট করার চিন্তা মাথা থেকে বের করে দেবেন।

কারন, লিমিটেড ব্যান্ডউইথের ইন্টারনেট কানেকশনে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করলে আপনি খুব দ্রুত আপনার লিমিট ক্রস করে ফেলবেন এবং আপনার সার্ভারটি অফলাইন হয়ে যাবে। তাই আপনার ইন্টারনেট কানেকশন যদি খুবই ভালো স্পিডের হয় এবং আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ কনজিউম করার সুযোগ থাকে, তবেই আপনি নিজের ইন্টারনেট কানেকশনের সাহায্যে নিজের ওয়েব সার্ভার হোস্ট করার চিন্তা করতে পারেন।

আপনার ডিভাইস এবং ইন্টারনেটকে ২৪/৭ রানিং থাকতে হবে!

নিজের ইন্টারনেট এবং ডিভাইসে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করার আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে সার্ভার আপটাইম। আপনি যে ডিভাইস এবং ইন্টারনেট কানেকশন ব্যাবহার করে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করবেন, সেই ডিভাইসটিকে ২৪/৭ রানিং থাকতে হবে এবং ইন্টারনেট কানেকশনটিকেও ২৪/৭ অ্যাক্টিভ থাকতে হবে আপনার ওয়েব সার্ভারটি তথা ওয়েব সার্ভারে হোস্ট করা ওয়েবসাইটটিকে রানিং রাখার জন্য। আপনি যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করেন, তাহলে এটা সবথেকে বড় সমস্যা।

বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকায় ইলেকট্রিসিটির খুব প্রবলেম আছে। প্রত্যেকদিন যতবার ইলেকট্রিসিটি চলে যাবে, ততবারই আপনার ওয়েব সার্ভারটি এবং সেখানে হোস্ট করা ওয়েবসাইটটি ডাউন হয়ে যাবে। এছাড়া বাংলাদেশের লোকাল আইএসপিগুলোর ইন্টারনেট কানেকশন কখন থাকে আর কখন থাকে না, তারও কোন ঠিক নেই। তাই বাংলাদেশের মত দেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে নিজের ওয়েব সার্ভার হোস্ট করলে সেটির আপটাইমের কোন গ্যারান্টি নেই। তাই আমাদের দেশে নিজের ওয়েব সার্ভারে ওয়েবসাইট হোস্ট করাটা কখনোই উপযোগী কোন সল্যুশন নয়।


যেমনটা প্রথমেই বলেছি, নিজের কম্পিউটারে এবং নিজের ইন্টারনেট কানেকশন ব্যাবহার করে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করা যতটা না উপযোগী এবং যুক্তিযুক্ত, তার থেকে বেশি মজার এবং চ্যালেঞ্জিং। এক্ষেত্রে নিজে সার্ভার ব্যাবহার করে আপনি যতটুকু টাকা সেভ করছেন সেটা সত্যি বলতে একেবারেই পারফেক্ট নয়। তাই যদি শুধুমাত্র কস্ট সেভিং এর জন্য, অর্থাৎ হোস্টিং বিল থেকে বাঁচতে আপনি এটা করতে চান, তাহলে অবশ্যই এটি একটি ব্যাড আইডিয়া।

কারন, আপনি যদি একটি বেসিক ওয়েবসাইটের জন্য ওয়েব হোস্টিং নেওয়ার কথা ভাবেন, আপনি মাসিক ৫ ডলারের মধ্যেই ভালো শেয়ারড হোস্টিং নিতে পারবেন, যেটির স্পিড, ব্যান্ডউইথ এবং আপটাইম গ্যারান্টি অবশ্যই আপনার ডিভাইস এবং আপনার ইন্টারনেট কানেকশনের থেকে বেটার হবে। তাছাড়া নিজের ডিভাইস ২৪/৭ রানিং রাখা এবং ফাস্ট ইন্টারনেট কানেকশনের পাশাপাশি একটি স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস ম্যানেজ করা কিছুটা এক্সপেনসিভ, যার তুলনায় মাসিক ৫ ডলার বা ৪২৫ টাকা দামের শেয়ারড হোস্টিং নেওয়া অনেক বেটার। কারন, নিজের ওয়েব হোস্টিং তৈরি করতে হলে এইসবকিছু ম্যানেজ করতেই আপনার একটি শেয়ারড হোস্টিং এর দামের প্রায় ২-৩ গুন বেশি খরচ হয়ে যাবে।

এতক্ষনে নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে নিজের ইন্টারনেট এবং নিজের ডিভাইসে ওয়েব সার্ভার হোস্ট করার অসুবিধা কি কি এবং কেন সেগুলোর তুলনায় একটি ভালো শেয়ারড হোস্টিং কিংবা ভিপিএস হোস্টিং নেওয়া অনেক বেশি উপযোগী এবং কস্ট সেভিং। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Image: Shutterstock

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories