ক্র্যাপওয়্যার কি?

উইন্ডোজ ১০ এর ডিফল্ট অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম, উইন্ডোজ ডিফেন্ডার সাধারন পিসি ইউজারদের জন্য যথেষ্ট ভালো, তবে কয়েকটি দিক থেকে উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের কিছুটা কমতি থেকেই যায়। এইজন্যই মুলত আমরা উইন্ডোজ ডিফেন্ডার থাকা সত্ত্বেও থার্ড পার্টি বেটার অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যাবহার করে থাকি। উইন্ডোজ ডিফেন্ডার পিসিকে ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার থেকে যে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে, তা খুবই বেসিক লেভেলের।

থার্ড পার্টি অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টি ম্যালওয়্যার অনেক এক্সট্রা ফিচারস এবং এক্সট্রা কিছু ফাংশনালিটি থাকে যা উইন্ডোজ ১০ এর ডিফল্ট উইন্ডোজ ডিফেন্ডারে নেই। উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের তেমনই একটি বড় ড্র-ব্যাক হচ্ছে সাধারন অবস্থায় এটি ক্র্যাপওয়্যার ডিটেক্ট করতে পারেনা এবং ক্র্যাপওয়্যার ব্লক করতে পারে না। তবে পিসিকে ক্র্যাপওয়্যার থেকে সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। আজকে এই ক্র্যাপওয়্যার কি এবং কিভাবে পিসিকে এর থেকে সুরক্ষিত রাখবেন সে বিষয়েই আলোচনা করবো।


ক্র্যাপওয়্যার কি?

আপনি যখন ইন্টারনেট থেকে কোন প্রোগ্রাম সার্চ করেন এবং সেটির ইন্সটলেশন ফাইল ডাউনলোড করে ইন্সটলারটি রান করেন প্রোগ্রামটি ইন্সটল করার জন্য, তখন অনেক প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেই হয়তো খেয়াল করেছেন যে আপনার অজান্তেই আপনার পিসিতে আপনার কাঙ্খিত প্রোগ্রামটি ছাড়াও আরও এক্সট্রা একটি বা একাধিক সফটওয়্যার বা অন্য কোন প্রোগ্রাম ইন্সটল হয়ে গিয়েছে যা আপনি নিজে থেকে ইন্সটল করেন নি এবং আপনার সেই প্রোগ্রামটির কোন দরকারই নেই। আপনার অজান্তে অন্যান্য সফটওয়্যার ইন্সটল করার সময় এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম যেগুলো অটোমেটিক্যালি আপনার পিসিতে ইন্সটল হয়ে যায় এগুলোকেই মুলত বলা হয় ক্র্যাপওয়্যার।

কেন ক্র্যাপওয়্যার ব্লক করা উচিৎ?

ক্র্যাপওয়্যার যে সবসময় ক্ষতিকর হবে বা ভাইরাস হবে, এমনটা নয়। তবে ক্র্যাপওয়্যারগুলোকে সবসময় ব্লক করা উচিত। কারন, প্রথমত সেটির কোন প্রয়োজনীয়তা আপনার বা আপনার পিসির নেই। যদি প্রয়োজন হতো, তাহলে সেটিকে আপনি নিজেই আলাদাভাবে ডাউনলোড এবং ইন্সটল করে নিতেন।

আর এছাড়া এসব ক্র্যাপওয়্যার আপনার পিসির সাথে কেমন বিহেভ করবে আপনি জানেন না। হয়তো দেখা যাবে এই ধরনের কোন ক্র্যাপওয়্যারে সফটওয়্যার অন্য কোন সফটওয়্যারের ইন্সটলারের সাথে ইন্সটল হয়ে আপনার পিসির হার্ডওয়্যার ব্যাবহার করে ক্রিপ্টোজ্যাকিং করছে, কিংবা আপনার অন্য অনেক ধরনের ডেটা কালেক্ট করছে, কিংবা সবসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং থেকে আপনার পিসির পারফরমেন্সকে স্লো করে দিচ্ছে, কিংবা স্টার্টআপ প্রোগ্রামে অ্যাড হয়ে আপনার বুট টাইমকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, অথবা অযথাই আপনার হার্ডড্রাইভের ভালো পরিমান জায়গা দখল করে রেখেছে।

তাই যে কারনেই হোক, আপনার পিসিকে এসব ক্র্যাপওয়্যারে থেকে সুরক্ষিত রাখা উচিত। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করার সময় সেটির ইন্সটলারের ভেতরে থাকা এক্সট্রা ক্র্যাপওয়্যারটিকে আপনি আপনার পিসিতে ইন্সটল করতে রাজী কি না সেটা সিলেক্ট করার অপশন আপনাকে দেওয়া হয়।

সেখানে যদি আপনি একটু কেয়ারফুল ভাবে পড়েন তাহলেই অনেক ক্ষেত্রে আপনি ক্র্যাপওয়্যারগুলো ডিজেবল করে শুধুমাত্র আপনার কাঙ্খিত সফটওয়্যারটি ইন্সটল করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। তাই ক্র্যাপওয়্যারের শিকার সেই ধরনের পিসি ইউজাররাই বেশি হয় যারা কোন প্রোগ্রাম ইন্সটল করার সময় কিছু না পড়েই Next ক্লিক করতেই থাকে। আপনারও যদি এই অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে আপনিও নিশ্চিতভাবেই ক্র্যাপওয়্যারের শিকার হয়েছেন এবং এখনও পর্যন্ত না হয়ে থাকে ভবিষ্যতে অবশ্যই হবেন।

কিভাবে ক্র্যাপওয়্যার ব্লক করবেন?

উইন্ডোজ ১০ এ আগে থেকেই অ্যান্টি-ক্র্যাপওয়্যার ফিচার আছে, তবে সেটি আগে থেকে এনাবল করা থাকে না। এই ফিচারটিকে এনাবল করা একটু কঠিন। এর জন্য আপনাকে Windows PowerShell এর সাহায্য নিতে হবে। প্রথমত আপনার Windows PowerShell ওপেন করতে হবে Administrator মোডে। এর জন্য আপনাকে প্রথমে স্ক্রিনের বাম দিকে একেবারে নিচের কর্নারে থাকা উইন্ডোজ আইকনে মাউস নিয়ে গিয়ে রাইট-ক্লিক করতে হবে এবং Windows PowerShell (Admin) অপশনটি ক্লিক করে ওপেন করতে হবে।

ব্লু ব্যাকগ্রাউন্ডের পাওয়ারশেল উইন্ডোটি ওপেন হলে নিচে দেওয়া এই সম্পূর্ণ কমান্ডটি কপি করে সেখানে পেস্ট করে দিন এবং ইন্টার প্রেস করুন-

Set-MpPreference -PUAProtection 1

এইটুকু করলেই মূলত উইন্ডোজ ১০ এর ডিফল্ট ক্র্যাপওয়্যার ব্লকারটি এনাবল হয়ে যাবে। আর আপনি চাইলে এই ফিচারটি আবার ডিজেবলও করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একইভাবে পাওয়ারশেল উইন্ডো ওপেন করে ওই একই কমান্ডটি ইন্টার করতে হবে, তবে এবার কমান্ডটির শেষের 1 এর জায়গায় 0 বসাবেন। নিচের মতো করে-

Set-MpPreference -PUAProtection 0

আর, আপনার পিসিতে ক্র্যাপওয়্যারে ব্লকার এনাবল করা আছে নাকি নেই সেটাও আপনি চেক করতে পারবেন খুব সহজে। এর জন্য আপনাকে আবারও অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মোডে পাওয়ারশেল ওপেন করতে হবে এবং নিচের দুটি কমান্ড পরপর ইন্টার করতে হবে। প্রথম কমান্ডটি পেস্ট করে ইন্টার প্রেস করতে হবে  এবং এরপর দ্বিতীয় কমান্ডটি পেস্ট করে ইন্টার প্রেস করতে হবে। এরপরের লাইনে যদি আপনাকে রেজাল্ট 0 দেখানো হয়, তাহলে আপনার পিসিতে ক্র্যাপওয়্যার ব্লকার এনাবল করা নেই। আর যদি রেজাল্ট 1 দেখানো হয়, তাহলে আপনার পিসিতে সফলভাবে ক্র্যাপওয়্যার ব্লকার এনাবল করা হয়েছে। কমান্ডদুটি হচ্ছে-

$Preferences = Get-MpPreference

$Preferences.PUAProtection

এভাবেই আপনি উইন্ডোজ ১০ এর তথা উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের ডিফল্ট ক্র্যাপওয়্যার ব্লকার এনাবল করতে পারবেন। অ্যান্টি-ক্র্যাপওয়্যার ফিচারটি এনাবল করার পরে আপনি যখনই কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করবেন, তখন সফটওয়্যারটির ইন্সটলারের ভেতরে যদি কোন ক্র্যাপওয়্যার থেকে থাকে তাহলে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার সেটিকে Potentially Unwanted Application হিসেবে ডিটেক্ট করবে এবং ব্লক করবে। এছাড়া কখন কয়টি ক্র্যাপওয়্যার ব্লক করা হয়েছে তার হিস্টোরিও আপনি দেখতে পারবেন সেটিংস থেকে। হিস্টোরি দেখার জন্য-

Settings > Update & Security > Windows Security > Open Windows Defender Security Center > Virus & Threat Protection > Threat History


এই ছিলো ক্র্যাপওয়্যার এবং ক্র্যাপওয়্যার থেকে আপনার পিসিকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখবেন তার একটি ছোট টিউটোরিয়াল। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Image: Shutterstock

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories