কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যেটা ভার্চুয়ালি প্রায় যেকোনো কাজ করতে সক্ষম। এই অসাধারণ ইলেকট্রনিক ডিভাইজ আমাদের সমস্ত কিছু সম্পূর্ণ নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। কিন্তু সকল ইলেকট্রনিকের একটি আয়ুকাল রয়েছে, নির্দিষ্ট সময় পরে অবশ্যই আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন ইত্যাদি সহ যতো ইলেকট্রনিক ডিভাইজ রয়েছে, ডেড হয়ে যাবে। আর এই ডিভাইজ গুলোর আয়ুকাল শেষ হলে এরা আর পরিবেশ বান্ধব থাকে না, তৈরি করে বিশাল পরিমানে ই-আবর্জনা, তাছাড়া কম্পিউটিং করতে প্রয়োজনীয় হয় অনেক ইলেক্ট্রিসিটি, আর সেই ইলেক্ট্রিসিটি উৎপাদন করতে আমাদের পরিবেশকে অনেকটা মূল চোকাতে হয়। গ্রিন কম্পিউটিং (Green Computing) বা গ্রিন আইটি (Green IT) বা গ্রিন টেকনোলজি (Green Technology) — দ্বারা এমন এক প্রযুক্তিকে ইঙ্গিত করে যেটা অনেকবেশি পরিবেশ বান্ধব এবং আরোবেশি দক্ষ। এই আর্টিকেলে আমি গ্রিন প্রযুক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং এর ব্যবহার গুলো তুলে ধরেছি। যদি গ্রিন কম্পিউটিং’কে ফিউচার না করা হয়, সেক্ষেত্রে পৃথিবী আর আমাদের পরিবেশ অনেকটা বাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।
গ্রিন কম্পিউটিং
গ্রিন কম্পিউটিং মূলত একটি টার্ম যেখানে কম্পিউটিং প্রোডাক্ট তৈরি শুরু থেকে, চলাকালীন সময় এবং আয়ুকাল শেষ পর্যন্ত এমন টেকনোলজির সাহায্য নেওয়া সেটা বেশি পরিবেশ বান্ধব। আর কম্পিউটিংকে ইকো-ফ্রেন্ডলি করে তোলা অনেক সহজ কাজ। কম্পিউটিং পাওয়ার মানেই ইলেক্ট্রিসিটি প্রয়োজনীয় হয়। আপনার বাড়ির পার্সোনাল কম্পিউটারের কোথা হয় বাদ দিলাম, কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, গুগল বা ফেসবুক বা অ্যামাজন কম্পিউটিং সার্ভার গুলোর কথা, সেগুলো কতোটা বিশাল, পৃথিবীর কতো স্থান জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এবং কতোটা বিদ্যুৎ খরচ করে। “ফেসবুক কতো বড়?” — এই আর্টিকেলটি থেকে সহজেই বুঝতে পাড়বেন, এরকম বড় কোম্পানিদের কতোটা কম্পিউটিং ডিম্যান্ড থাকে। এখন চিন্তা করে দেখুন, যদি এই বিশাল পরিমাণের কম্পিউটিং পরিচালনা করতে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ ব্যবহৃত করা হয়, সেটা পরিবেশের জন্য কতোটা হানীকারক হয়ে পারে।
গ্রিন আইটি বা গ্রিন টেকনোলজি এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নবায়নযোগ্য এনার্জি ব্যবহার করা। কোন জীবাশ্ম জ্বালানী পুরিয়ে নয়, বরং যে উপাদান গুলো আমাদের মাঝে ফ্রী’তে প্রাপ্য রয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে এনার্জি উৎপাদন করা, যাতে বেশি দক্ষ এনার্জিও পাওয়া যায় সাথে কম আবর্জনা, যেটা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করবে। কয়লা পুরিয়ে বিদ্যুৎ বা নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ না উৎপাদিত করে, হাওয়া থেকে বা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কাজে লাগানো বেশি ইকো-ফ্রেন্ডলি। গুগল ইতিমধ্যে বাতাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ডাটা সেন্টার পরিচালনা করার প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে এবং তারা ঐভাবেই কাজ করছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিরা বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও, সোলার এনার্জি আরেকটি গ্রেট গ্রিন টেকনোলজি, যেটা শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্ষেত্রে নয় আপনি চাইলে বাড়িতেও ব্যবহার করতে পারেন।
ভার্চুয়াল অফিস
ফিজিক্যাল অফিস গুলোতে অনেক বিদ্যুৎ খরচ হয় সাথে অনেক আবর্জনার সৃষ্টি হয়, যেগুলো মোটেও পরিবেশ বান্ধব নয়। এই অসুবিধা দুর করার জন্য বর্তমানে ভার্চুয়াল অফিসের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ গুলো ব্যবহার করে বাড়ি থেকে সকল অফিসের কর্মকর্তারা তাদের কাজ করতে পাড়বেন, এক জায়গায় না থেকেও মিটিং করা সম্ভব এবং যেকোনো প্রজেক্ট ম্যানেজ করা ও সম্ভব।
যখন অফিসের সকল মেম্বার’রা একই অ্যাপ ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে ভিওআইপি কলিং এবং ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং সম্ভব হয়, এতে দুনিয়ার যেকোনো প্রান্ত থেকে মেম্বার’রা টিমে জয়েন থেকে কলাব করতে পারে। অপরদিকে কর্পোরেট আইটি’তে গ্রিন আইটি সার্ভার এবং স্টোরেজ ভার্চুয়ালাইজেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাটা সেন্টারের এনার্জি কনজিউম লেভেল কম করা এবং হার্ডওয়্যার গুলোকে আরো দক্ষ বানানো হয়। ডাটা সেন্টার গুলো শুধু বিশাল বিদ্যুৎ ই খরচ করে না, সাথে বিশাল পরিমানে তাপ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে, সাথে ডাটা সেন্টার গুলোর অনেক ই-আবর্জনাও তৈরি হয়। গ্রিন সার্ভার টেকনলজি ব্যবহার করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় পরিবেশ বান্ধব ভাবে, বিদ্যুতের কস্ট কমে যায়, বেটার হার্ডওয়্যার থেকে বেটার পারফর্মেন্স পাওয়া এবং ই-আবর্জনা বিশাল অংশে কমে যায়।
টেক প্রোডাক্ট রিসাইকেলিং
টেক প্রোডাক্ট গুলোর ক্ষেত্রে রিসাইকেলিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতি বছর লাখো কোটি সেলফোন আর ল্যাপটপ আর নানান প্রোডাক্ট ই-আবর্জনাতে পরিনত হয়ে যায়, যেটা কখনোই পরিবেশের সাথে মানানসই নয়, এগুলো গলে বা পোঁচে মাটির সাথে মিশে যায় না, আবার এই আবর্জনা গুলোকে পোড়ালে বিশাল পরিমানে কার্বন উৎপন্ন হয়, যেটা পরিবেশের জন্য আরো ক্ষতিকর। কিছু ডিভাইজ তো আয়ুশেষে এমন কিছু ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসৃত করে, যেটার প্রভাব সরাসরি পরিবেশের উপর পরে।
অনেক ফোন এবং ইলেকট্রনিক কোম্পানি রয়েছে, যারা তাদের পুরাতন প্রোডাক্ট গুলোকে গ্রহন করে এবং আপনি নতুন প্রোডাক্ট কিনতে পারেন। যেমন অ্যাপেল তাদের পুরাতন স্মার্টফোন গুলোকে ফিরিয়ে নেয়, এভাবে দেখুন আপনার ইলেকট্রনিক কোম্পানিটি রিসাইকেলিং অফার করছে কিনা।
ভবিষ্যৎ গ্রিন টেকনোলজি (ন্যানো টেকনোলজি)
বর্তমানে অলরেডি আমাদের কাছে গ্রিন টেকনোলজির যানবাহন রয়েছে যেগুলো তেল না পুরিয়ে বিদ্যুৎ এর সাহায্যে চলে, ভবিষ্যতে এই প্রচলন আরো বাড়বে, সেলফ ড্রাইভিং কার গুলো বিদ্যুৎ চালিতই হবে, আর ভবিষ্যতে গ্যারেন্টি দিয়ে বলতে পারি, মানুষ কার চালানোর কথা ভুলেই যাবে। গ্রিন টেকনোলজি শুধু কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে বা অটোমোবাইলের ক্ষেত্রে নয়, বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল এবং রসায়নের ক্ষেত্রেও স্থান দখল করে নেবে। ন্যানো টেকনোলজিতেও গ্রিন টেক ব্যবহার করতে দেখতে পাওয়া যাবে, যদি ন্যানো টেকনোলজি এখনো অনেকটা সায়েন্স ফিক্সনের মতোই রয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতে অবশ্যই বিস্তরভাবে ব্যবহৃত হতে আরম্ভ করবে।
গ্রিন কম্পিউটিং বা গ্রিন টেকনোলজি সত্যিই ভবিষ্যৎ এবং পরিবেশ বান্ধব, শুধু কোম্পানি লেভেলে নয়, পার্সোনাল কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রেও গ্রিন আইটি ব্যবহার করে অনেক এনার্জি সেভ করা সম্ভব। অনেক কম্পিউটার মনিটরে দেখবেন এনার্জি স্টার রেটিং করা থাকে, আসলে এগুলো গ্রিন টেক দিয়ে তৈরি, যেগুলো ট্র্যাডিশনাল মনিটর থেকে ৩০-৪০% কম এনার্জিতে চলতে পারে। এরকম প্রত্যেকটি কম্পিউটিং হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে গ্রিন টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে, যেমন কিছু হার্ড ড্রাইভ গ্রিন টেক ব্যবহার করে ৪-৫ ওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করে। আনটেকের কম্পিউটার পাওয়ার সাপ্লাই এবং এমএসআই কিছু মডেল মাদারবোর্ড এগুলো অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কম্পিউটার হার্ডওয়্যার।
তো বুঝতেই পাড়ছেন, আমাদের জন্য, বিশেষ করে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য গ্রিন টেকনোলজি এবং গ্রিন কম্পিউটিং কতোটা বেশি প্রয়োজনীয়। তাহলে আপনি কি আপনার নেক্সট কম্পিউটার কেনার ক্ষেত্রে এনার্জি স্টার রেটেড কম্পিউটার কিনবেন? গ্রিন কম্পিউটিংকে আপনি কোন নজরে দেখছেন? আমাদের নিচে কমেন্ট করে সবকিছু জানিয়ে দিন!
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
ইমেজ ক্রেডিটঃ By Wichy Via Shutterstock | Pixabay.Com
Osadharon vai. Salute vai. Salute. Eto kaj kivbae eka manush korte pare.. sodhra roilo. Valobasa roilo apnar jonno..
🙂
Lots of love vaiya. For this Premium article!!!
😀
Amar monitor lg enargy ???? logo ace. Tahole ki green tech?
হ্যাঁ, ভাই তাহলে অবশ্যই গ্রিন টেকের মধ্যে পড়ে 😀
Nice
ধন্যবাদ ভাই
আগে কমেন্ট!!!!!!!!!! তারপরে পড়া!!! হাহা…… জানি “অসাধারণ” এটাই কমেন্ট করতে হবে!!
ভালোবাসা রইল ভাই।
ওকে… এখন পড়ি!!
ধন্যবাদ ভাই
এতো অসাধারণ পোস্ট ফেলে কিভাবে ঘুমাতে যাই ভাইয়া 😀
ধন্যবাদ ভাই
খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।