৭টি জিনিস যেগুলো কখনো ফেসবুকে পোস্ট করা উচিৎ নয়

সোশ্যাল মিডিয়া গুলো, বিশেষ করে ফেসবুক আমাদের প্রত্যেকদিনের জীবনের একটি বিশেষ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে দুনিয়ার যেকোনো ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা পান্তাভাতে পরিণত হয়েছে। শুধু যোগাযোগ করায় নয়, কারো সম্পর্কে অনেক গভীর তথ্য গুলোও জানতে পারবেন যদি সঠিক দৃষ্টিতে কারো প্রোফাইল ভিজিট করেন, কেননা জেনে বা অজান্তে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের প্রত্যেকদিনের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো শেয়ার করি।

কিন্তু ফেসবুক বা যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে কি আমাদের নিজেদের, পরিবারের বা বন্ধুদের সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খোলাভাবে পোস্ট করা উচিৎ? — আমার মতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেগুলো কখনোই ফেসবুক বা যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা উচিৎ নয়। এই আর্টিকেলে এমনই ৭টি জিনিস নিয়ে আলোচনা করেছি।

আর হ্যাঁ, এরকম অনেক ব্যাপারই রয়েছে যেগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে নেই, তবে এই আর্টিকেল শুধু মাত্র সিকিউরিটির দিকে বিশেষ ফোকাস দিয়ে লেখা হয়েছে!


আপনার সঠিক জন্ম তারিখ

জন্মদিনে সকলেই ফেসবুক বন্ধুদের থেকে উইশ পেতে ভালোবাসেন, মিথ্যা বলবো না, আমি নিজেও এটা অনেক উপভোগ করি। জন্মদিনে প্রায় সকলের টাইমলাইন বন্ধুদের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। কিন্তু ফেসবুক সহ যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার সঠিক জন্ম তারিখ স্ক্যামারদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য। তারা এই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে আপনার নামে ফেক প্রোফাইল তৈরি করতে পারবে এবং আপনার নামে স্ক্যামিং করতে পারবে। হ্যাঁ, যে কেউই যে কারো ফেক আইডি তৈরি করতে পারে, কিন্তু সঠিক জন্ম তারিখ ব্যাবহারে ফেক আইডি অনেক শক্ত হয়ে যায়।

তাই নিরাপত্তার খাতিরে আমি ফেসবুকে বা যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার আসল জন্ম তারিখ ব্যবহার করতে রেকমেন্ড করবো না। তবে এখানে একটি প্রশ্ন রয়েছে, অনেক সময় কোন কারণে ফেসবুক লক হয়ে গেলে তারা ইউজার আইডি কার্ড চেয়ে থাকে প্রোফাইল ভেরিফাই করার জন্য। তখন আইডি কার্ড একটু ফটোশপ করার প্রয়োজন পড়বে, এছাড়া আর কোনই সমস্যা নেই!

সোশ্যাল প্ল্যান

আপনার যেকোনো সোশ্যাল প্ল্যান সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা উচিৎ নয়। যদি সোশ্যাল প্ল্যান্টি অনেক বড় মাপের না হয়, যেমন বড় কোন পার্টি — তাছাড়া সেটাকে পোস্ট করার দরকার নেই। এতে অনেক রকমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। প্রথমত আপনার ছোট অনুষ্ঠানে যে বন্ধুরা ই-ভাইট পাবেন না, তারা মন খারাপ করতে পারেন এবং এর কিছু সিকিউরিটি সমস্যাও রয়েছে।

মনে করুণ, আপনার এক্স-বয়ফ্রেন্ড আপনার নতুন ডেট সম্পর্কে জেনে যেতে পারবে, তারপরে সে উক্ত সময়ে আপনার ডেট খারাপ করে দিতে পারে বা যেকোনো সিন-ক্রিয়েট করতে পারে। এটা জাস্ট একটা উদাহরণ, এরকম অনেক টাইপের সোশ্যাল সিকিউরিটি জনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে। যদি আপনার ইভেন্টে কাউকে ইনভাইট করতে চান, সেক্ষেত্রে প্রাইভেট ম্যাসেজ সেন্ড করে ই-ভাইট করতে পারেন। তাছাড়া যদি টাইম লাইনে পোস্ট করতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার পোস্ট কে দেখতে পাচ্ছে।

লোকেশন শেয়ার

আমার ফ্রেন্ড লিস্টের অনেকেই দেখেছি তারা নিজের পোস্টের সাথে সবসময় লোকেশন ট্যাগ করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই নিজের লোকেশন শেয়ার করার ভয়াবহতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন না। কেউ আপনার প্রোফাইল অনুসরণ করলে সহজেই আপনার সর্বদা লোকেশন জানতে পারবে আর এটা অনেক ভয়াবহ ব্যাপার হতে পারে। ধরুন কোন চোর আপনার বাড়ি চুরি করার প্যান করছে সেক্ষেত্রে সে সহজেই জানতে পারবে আপনি কখন কোথায় রয়েছেন।

তাছাড়া আপনার ক্ষতি করার জন্য কেউ যদি টারগেট করে সেক্ষেত্রে সহজেই আপনাকে খুঁজে পেতে পারবে। তাই আপনার টাইম-টু-টাইম লোকেশন ট্যাগ করার পূর্বে অবশ্যই কতিপয় বার ভেবে চিনতে কাজ করুণ। আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনাকে আবার কে ফলো করছে, আসলে কখন যে কার সাথে শত্রুতা হয়ে যায় বলায় মুশকিল ভাই! কে আপনার প্রোফাইল কি উদ্দেশে দেখছে আপনি কখনোই বলতে পারবেন না, তাই অত্যন্ত সাবধান!

হতবুদ্ধিকর জিনিস শেয়ার

ফেসবুকে কোন কিছু শেয়ার করার পূর্বে ভালোভাবে ভেবে দেখুন যেটা শেয়ার করছেন সেটা আপনার পরিবার, চেনা মানুষ, বা অফিসের কর্মচারীদের দেখাতে চান কিনা। যদি দেখাতে না চান, সেক্ষেত্রে কোনভাবেই এমনকিছু জিনিসশেয়ার করবেন না। হয়তো আপনি ভুল করে শেয়ার করে ফেললেন তারপরে আবার ডিলিট করে দিলেন, “এমনটাও করা যাবে না!” — হতে পারে আপনি ডিলিট করার আগেই কেউ সেটার স্ক্রীনশট নিয়ে রেখেছে। তাই ভুল করেও এমন ভুল করবেন না।

অনেকেই দেখি নিজের চ্যাট হিস্টোরির স্ক্রীনশট পোস্ট করে দেন, এটা মোটেও উচিৎ নয়। হয়তো এগুলো পোস্ট করে আপনি সাময়িক কিছু লাইক বা কমেন্ট পাবেন, কিন্তু মানুষ আপনার উপর বিশ্বাস হারাবে, আপনার সাথে আর কেউ গোপন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইবে না। আপনার চ্যাট হিস্টোরি প্রাইভেট জিনিষ, আর এগুলোকে প্রাইভেট রাখাই বেটার হবে।

জবকে আলাদা রাখা

অনেকেই ফেসবুকের সাথে একাধিক সোশ্যাল প্রোফাইল লিংক করে থাকেন। বাট এর অনেক ক্ষতিকর দিক দেখতে পাওয়া গেছে। উদাহরণ সরূপ মনে করুণ, আপনি আপনার লিঙ্কডইন লিংক আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে অ্যাড করে রেখেছেন, এখন আপনার অফিস বস সহজেই আপনার ফেসবুক আইডি পেয়ে যেতে পারবে। এখন ধরুন আপনি কোন মিথ্যা নাম করে অফিস থেকে ছুটি গ্রহণ করলেন তারপরে সেই ছুটিতে পার্টি, হলিডে ইত্যাদি শুরু করলেন।

আর আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার এই আইডি তো কেউই জানে না, তাই মনের আনন্দে সকল পিকচার গুলো ফেসবুকে পোস্ট করে দিলেন, এক্ষেত্রে আপনার চাকুরি নিয়ে টানাটানি পরে যেতে পারে, তাই নিরাপত্তার খ্যাতিতে জব আর পার্সোনাল লাইফকে আলদা রাখা বেটার।

আপনার বাচ্চাদের ছবি ট্যাগিং

আমি জানি, বাচ্চারা আপনাদের কাছে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, আপনি কখনোই চাইবেন না আপনার বাচ্চার কোন ক্ষতি হোক — সেটা যেকোনো ভাবেই হোক। অনেকেই নিজের বাচ্চাদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করে এবং বাচ্চাদের নাম ব্যবহার করে ফটো ট্যাগ করে, যেটা অনেকের কাছে কোন ব্যাপার না মনে হলেও আপনার বাচ্চাদের বিরাট সিকিউরিটি সমস্যা তৈরি করতে পারে।

আপনি কখনোই জানেন না, আপনার আইডি কে ভিজিট করছে বা কে ঘোঁচর চক্ষু লাগিয়ে বসে রয়েছে, তাই এটা সর্বদাই ভালো আইডিয়া নিরাপদ থাকার চেষ্টা করা। আপনার সাথে কারো শত্রুতা থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চারা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। বাচ্চাদের ছবি আপলোড করতেই হলে, তাদের নাম ট্যাগ করবেন না, যারা আপনার আসল বন্ধু এমনিতেই তাদের চিনে নেবে বা প্রয়োজনীয় ফটো গুলো ডাইরেক্ট ম্যাসেজ করুণ, এটা বেশি বেটার হবে।

আসল ফোন নাম্বার

রিয়াল ফোন নাম্বার ব্যবহার করার অনেক সুবিধা রয়েছে, আপনার বন্ধুরা আপনাকে সহজেই খুঁজে পেতে পারবে, কিন্তু এর সাথে রিস্কও রয়েছে। আপনার ফোন নামার ভুল হাতে পরে গেলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার ফোন নাম্বার থাকলে, যে কেউই রিভার্স ফোন নাম্বার ম্যাথড ইউজ করে আপনার নাম ঠিকানা বের করে ফেলতে পারে।

ফেসবুকে রিয়াল ফোন নাম্বার ইউজ না করায় বেটার, যদি সিকিউরিটির জন্য করেন সেক্ষেত্রে ফোন নাম্বার প্রাইভেসি হাইড করে রাখা প্রয়োজনীয়। তবে আমি রেকমেন্ড করবো ভার্চুয়াল ফোন নাম্বার ইউজ করার জন্য, আপনি অনলাইনে সহজেই অনেক ভার্চুয়াল ফোন নাম্বার পেয়ে যাবেন। আপনি যদি চান সেক্ষেত্রে আমি রিভার্স ফোন নাম্বার ম্যাথড এবং কিভাবে অনলাইনে ভার্চুয়াল ফোন নাম্বার পাবেন সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত পোস্ট লিখে ফেলতে পারি।


সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এক প্রকারের আসক্তি, আর আমরা এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যায়িত করে থাকি। খুব বেশি পরিমাণে ইউজ না করলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং খারাপ কোন ব্যাপার নয়, কিন্তু সাবধান থাকা ভালো, কেননা লাইফের যতো পার্সোনাল বিষয় সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যবহার করবেন, সেটা অন্যকেউ ততোবেশি আপনার খেলাপ ব্যবহার করার সুযোগ পাবে। তাই একটু সতর্কের সাথেই সোশ্যাল মিডিয়া ইউজ করা ভালো। আর আজ আপনি জানলেন, ৭টি জিনিসযেগুলো কখনো ফেসবুকে পোস্ট করা উচিৎ নয়!

Image Credit : Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

1 comment

  • ভাইয়া, ethical hacking নিয়ে কয়েক পর্বের যে জরুরি আলোচনা গুলো ছিলে, সেগুলো কোথায়?
    ‘ইথিক্যাল হ্যাকিং’ এ ক্লিক করে ত কোনোরুপই পোস্ট পাইনা!!!

    আলহামদুলিল্লাহ্‌! অনেক ভালো লেগেছিলে যে ২-৩ টার মত পর্ব পড়েছিলাম।। আশায় ছিলাম সুযোগ করে বাদবাকিগুলোও পড়ে নেব; কয়েক মাস পর আপনার সাইটে এলাম! এসে আপডেট দেখে ভালো লাগলেও কাঙ্ক্ষিত পোস্ট গুলো নাক পাওয়ায় কষ্ট লাগছে! অথচ আমি এই খাতে মারাত্মকভাবে আগ্রহী।…
    এখন কী করব ভাইয়া!?

Categories