হেডফোন ড্রাইভার কি?

আপনি হয়তো ভালমানের একটি হেডফোন কেনার কথা চিন্তা করছেন, হয়তো হেডফোনের পেছনে মোটামুটি বাজেট লাগানোর চিন্তাও করছেন। কিন্তু মার্কেটে গিয়ে যদি হেডফোনের স্পেসিফিকেশন দেখতে আরম্ভ করেন, সেক্ষেত্রে সহজেই বুঝে যাবেন আপনার প্রয়োজনের সঠিক হেডফোনটি খুঁজে বের করা মোটেও সহজ কাজ নয়, বিশেষ করে শুধু স্পেসিফিকেশনের দিকে নজর রেখে। সত্যি বলতে হেডফোন বা ইয়ারফনের স্পেসিফিকেশন অনেক জটিল এবং টেকনিক্যাল, আপনি যদি বেসিক ইউজার হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে স্পেক দেখে কিছুই বুঝতে পারবেন না।

এই আর্টিকেলে, আমি হেডফোনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ হেডফোন ড্রাইভার নিয়ে আলোচনা করেছি, এতে আপনার অনেকটা বুঝতে সুবিধা হবে, “কোন হেডফোনটি আপনার জন্য বেস্ট হতে পারে!” আর্টিকেল পড়ার পরেও যদি কোন প্রশ্ন থাকে সেক্ষেত্রে আমাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন। তো চলুন, জেনে নেওয়া যাক, হেডফোন ড্রাইভার সাউন্ড কোয়ালিটিতে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে!


হেডফোন ড্রাইভার কি?

ইয়ারফোন ড্রাইভার বা হেডফোন ড্রাইভার, একটি হেডফোনের সবচাইতে কমন যন্ত্রাংশ। যদি টেকনিক্যাল ভাবে বলতে যাই, সেক্ষেত্রে — হেডফোনের মধ্যের যে যন্ত্রাংশ ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল থেকে শব্দ রুপান্তর করে তাকেই ড্রাইভার ইউনিট বলা হয়। আর সহজ মানুষের ভাষায় বলতে, হেডফনের মধ্যের ছোট্ট ক্ষুদ্র লাউড স্পীকার গুলোকেই ড্রাইভার ইউনিট বলা হয়। ড্রাইভার ইউনিট যেকোনো লাউড স্পীকারের মতোই তিনটি প্রধান অংশে গঠিত — (১) একটি চম্বুক, যেটা চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে (২) একটি কয়েল, যেটা হেডফোনের উপরের পর্দার মধ্যে কম্পনের সৃষ্টি করে এবং সাউন্ড জেনারেট হয় (৩) একটি ডায়াফ্রাম, যেটা শব্দ উতপন্ন, করে এটা মূলত একটি পাতলা পর্দা হয়ে থাকে।

হেডফোন ড্রাইভার সাইজ একটি গোলাকার ডিস্কের মতো হয়ে থাকে আর সাধারণভাবে এটা অনুমান করা হয় যতোবড় ড্রাইভার সাইজ ততো হাই কোয়ালিটি সাউন্ড হবে এবং ততোবেশি বেস (BASS) পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, কথাটি সত্য, কিন্তু সর্বদা সত্য নয়। ইয়ারফোনের ড্রাইভার সাইজ ৮মিমি-১৫মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং হেডফোনের ড্রাইভার সাইজ ২০মিমি-৫০মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে — এখানে বড় ড্রাইভার সাইজ বলতে হেডফোনের লাউডনেস নির্ণয় করা যায়।

কিন্তু বড় সাইজের ড্রাইভার মানেই বেস্ট অডিও কোয়ালিটি দেবে এমনটা নয়, কেননা এখানে অনেক টাইপের ড্রাইভার রয়েছে, মিউজিক কোয়ালিটি শুধু ড্রাইভার সাইজ নয় বরং ড্রাইভার টাইপের উপরও নির্ভর করে থাকে। বড় ড্রাইভারের ডায়াফ্রাম সাইজে বড় হয়ে থাকে, ফলে বেস একটু বেশি পাওয়া যেতে পারে কিন্তু বড় ডায়াফ্রাম থেকে হাই ফিকয়েন্সি তৈরি হতে সমস্যা হয় (treble)। হ্যাঁ, বড় ড্রাইভার হাই আউটপুট দিতে সক্ষম কিন্তু এর মানে এটা নয় এতে সাউন্ড কোয়ালিটিও পাওয়া যেতে পারে। তাই হেডফোনের ড্রাইভার সাইজ থেকে সরাসরি এর কোয়ালিটি নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

বিভিন্ন ড্রাইভার টাইপ

আগেই বলেছি শুধু ড্রাইভার সাইজ থেকে সবকিছু নির্ণয় করা সম্ভব নয়, অবশ্যই আগে এটি কোন ক্যাটাগরির ড্রাইভার সেটা জানাও গুরুত্বপূর্ণ, কেননা প্রত্যেকটি ক্যাটাগরির আলাদা আলাদা বিশিষ্ট রয়েছে। হেডফোন এবং ইয়ারফোনের অনেক ড্রাইভার ক্যাটাগরি রয়েছে নিচে সেগুলো সম্পর্কে বেসিক আলোচনা করা হলো;

ডাইন্যামিক ড্রাইভারঃ — এই ড্রাইভার গুলোর সাইজ আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে, মানে এতে বড় আকারের ডায়াফ্রাম রয়েছে, বিশেষ করে আপনার যদি মোটা বেস প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এই টাইপের ড্রাইভার বেস্ট হয়ে থাকে। যেহেতু এই টাইপের ড্রাইভারের ডায়াফ্রাম বড় হয়ে থাকে সেজন্য এগুলো বিশেষ করে হেডফোনে দেখতে পাওয়া যায়। কম পাওয়ার কনজিউম করে এই টাইপের ড্রাইভার ভালো মানের বেস জেনারেট করতে পারে।

প্ল্যানার ম্যাগনেটিক ড্রাইভারঃ — এই টাইপের ড্রাইভার বিশেষ করে হাই-এন্ড হেডফোন বা ইয়ারফোন গুলোর ক্ষেত্রে দেখতে পাওয়া যায়। এই ড্রাইভারের প্রধান টেক হলো, ডায়াফ্রাম গুলো ম্যাগনেটের সাথে সান্ডউইজ হয়ে থাকে। এই টাইপের ড্রাইভার অনেক হাই কোয়ালিটি সাউন্ড তৈরি করে থাকে, প্রত্যেকটি সাউন্ড ইফেক্ট একেবারে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হয়ে থাকে, এই জন্যই অনেক হাই এন্ড ইয়ারফোনে এই ড্রাইভার ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ব্যাল্যান্সেড অ্যার্মাচার ড্রাইভারঃ — এই টাইপের ড্রাইভার গুলো সাইজে অনেক ছোট হয়ে থাকে এবং বিশেষ করে ইন-ইয়ার হেডফোন গুলোতে এগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এখন আপনি হয়তো বলবেন এতো ছোট সাইজের ড্রাইভার থেকে কিভাবে ভালো বেস বা সাউন্ড কোয়ালিটি পাওয়া যেতে পারে। আসলে এই হেডফোন গুলো ভেতরে একাধিক ড্রাইভার লাগানো থাকে। একটি সিঙ্গেল ইয়ারফোনে একটি থেকে চারটি পর্যন্ত ড্রাইভার লাগানো থাকে এবং আলাদা আলাদা ড্রাইভার আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সির সাউন্ড ম্যানেজ করে থাকে।

ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক ড্রাইভারঃ — এই টাইপের ড্রাইভার গুলো শুধু মাত্র প্রিমিয়াম কোয়ালিটির হেডফোন গুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। এর ডায়াফ্রাম গুলো ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক ভাবে চার্জড হয়ে থাকে, এই ড্রাইভার গুলো থেকে উৎপন্ন সাউন্ড কোয়ালিটি মারাত্মকভাবে একিউরেট হয়ে থাকে। কিন্তু এই টেকনোলোজি একটি জটিল হওয়াতে এই হেডফোন গুলো পোর্টেবল হয় না। তবে এই টেকনোলোজির হেডফোন গুলোর আকাশ চোঁয়া দাম, এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নাই।


আপনি কোনটি কিনবেন?

তো এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কোন হেডফোন ড্রাইভারটি পছন্দ করবেন? — ওয়েল, আপনার যদি বাজেট এভারেজ হয় এবং হাই কোয়ালিটি বেস প্রয়োজনীয় হয় মানে আপনি যদি পার্টি লাভার হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে ডাইন্যামিক ড্রাইভার আপনার জন্য বেস্ট হতে পারে। বিশেষ করে গেমিং ফোকাস হেডফোন কিনতে চাইলে আমার মতে ব্যাল্যান্সেড অ্যার্মাচার ড্রাইভার বেস্ট হবে। যদি কোয়ালিটি ম্যাটার করে সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্ল্যানার ম্যাগনেটিক ড্রাইভার এবং যদি আপনার অগুন্তি টাকা থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক ড্রাইভার আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ হতে পারে।


তো আপনি জানলেন, হেডফোন ড্রাইভার কিভাবে সাউন্ড কোয়ালিটিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এবার থেকে নতুন হেডফোন কেনার সময় নিশ্চয় শুধু ড্রাইভার সাইজ নয় কোন টাইপের ড্রাইভার সেটার দিকেও বিশেষ নজর রাখবেন। তাছাড়া বর্তমানের লেটেস্ট হেডফোন গুলোতে নয়েজ কান্সেলেশন টেকনোলোজি থাকে, তাই বাজেট অনুসারে এটাও মাথায় রাখতে হবে। আশা করছি এই আর্টিকেলটি থেকে হেডফোন কেনার মামলায় কিছু হলেও উপকৃত হতে পারবেন!

তো আপনি কোন টাইপের ড্রাইভার যুক্ত হেডফোন ব্যবহার করেন, আমাদের কমেন্ট করে নিচে জানান!

Image: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

1 comment

  • জানার জন্য কি আর শেষ আছে। অনেক ভালো লাগলো আপনার পোস্ট টা. জানার মতো একটি আর্টিকেল এইটি. এই আর্টিকেলের আরেকটা ভার্শন আনতে পারেন চাইলে. যাতে একটি হেডফোনের সকল ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে.

Categories