ওয়্যারলেস চার্জিং বা তারবিহীন চার্জিং সম্প্রতিক সময়ে স্মার্টফোন এর মত ডিভাইসে এই প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার ছাড়াই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে বিদ্যুত প্রদান করা যাবে কিছুদিন আগেও ব্যাপারটা অনেক কল্পনার মত ছিল। তবে তারবিহীন বিদ্যুত পরিবহনের এই সেবাটি আমরা বাস্তবে দেখছি বিগত কয়েক বছর হল। ওয়্যারলেস চার্জিং মূলত প্রযুক্তির এক নতুন দ্বার খুলে দিল। তারবিহীন বিদ্যুত ব্যবহার করে চার্জিং ছাড়াও আরও নানা কাজ এখন শুধু সময়ের বাকি।
যদিও ওয়্যারলেস চার্জিং এখন নতুনভাবে ও ব্যাপক পরিসরে দেখা যাচ্ছে, মূলত এন্ড্রয়েড ও আইওএস অপারেটিং সিস্টেম ভিত্তিক স্মার্টফোনে, তবুও ওয়্যারললেস চার্জিং বা তারবিহীন চার্জিং যে একেবারে নতুন তা কিন্তু বলা যাবে না। উদাহরন হিসেবে, কয়েক বছর আগের প্যানাসনিক ব্র্যান্ডের হেয়ার ট্রিমারে এই ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি দেখা গিয়েছিল।
ওয়্যারলেস চার্জিং কি?
বর্তমানে প্রচলিত স্মার্টফোনের ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তিকে কিন্তু একেবারে তারহীন বলা যায় না। এখানে কেবল পাওয়ার এডাপ্টার থেকে তার ফোনে না গিয়ে যুক্ত হয় একটি চার্জিং বেস বা চার্জিং ডক এর সাথে, যার ওপর আমরা মূলত চার্জ হওয়ার জন্য ফোনটি রাখি। তাই আপনারা যদি একে যাদুর মত মনে করেও থাকেন, এটি মোটেও সেরকম নয়। এখানে ওয়্যারলেস চার্জিং এর ডকটি বা চার্জিং বেসটি যেকোন আকার আকৃতির হতে পারে, জরুরী নয় যে কেবল একটি নির্দিষ্ঠ আকৃতিতেই হতে হবে। চার্জিং ডকটি এখানে পাওয়ার সেন্ডার হিসেবে কাজ করে। আর আপনার ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্টেড ডিভাইসটি কাজ করে রিসিভার হিসেবে।
ওয়্যারলেস চার্জিং বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, আর ক্ষেত্র বিশেষে এই নানারকম ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রধানত ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি তিন প্রকার। এগুলো হলঃ
- ইন্ডাকটিভ চার্জিংঃ এটিই বর্তমান সময়কার প্রচলিত ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি। এটি তৈরি খরচ কম বলে সাশ্রয়ী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। খুবই সহজেই তার ছাড়া কার্যকরভাবে ওয়্যারলেস চার্জিং করা সম্ভব হয়। আরই এই ইন্ডাকটিভ চার্জিং প্রযুক্তিতে যে ডক বা চার্জিং বেস থাকে তাকে বলা হয় “কনডাকটিভ প্যাড ” বা কনডাকটিভ চার্জিং প্যাড। যেটা পাওয়ার এডাপ্টার তথা মূল পাওয়ার কানেকশন এর সাথে সংযুক্ত থাকে। রেসোনেন্স ও ইন্ডাকটিভ চার্জিং এর সংমিশ্রনে একটি মিশ্র প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় বর্তমান সময়ের স্মার্টডিভাইস গুলো চার্জ দেয়ার ক্ষেত্রে।
- রেডিও চার্জিংঃ ইনডাকটিভ চার্জিং এর মত এটিও ছোট ডিভাইসের জন্য ব্যবহার করা হয়। আর এখানে ছোট রেডিও তড়ঙ্গের মাধ্যমে পাওয়ার তথা এনার্জি গ্রাহক যন্ত্রে পাঠানো হয়। ট্রান্সমিটার এর ব্যবহারে রেডিও ওয়েভে এনার্জি প্রাপক যন্ত্রে প্রেরন করা হয়। এটি তুলনামূলক ঝামেলা ও ব্যয়বহুল প্রযুক্তি।
- রেসোনেন্স চার্জিংঃ বলতে গেলে ভবিষ্যতের যন্ত্রপাতি ও ডিভাইসে আমরা এই প্রযুক্তি ব্যাপকহারে দেখতে পারব আশা করি। এটা ইন্ডাকটিভ এর মত,তবে বড় পরিসরে। বড় জিনিস, যেমনঃ গাড়ি,বৈদ্যুতিক মোটরবাইক ইত্যাদি তারবিহীন চার্জ দেয়ার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এখানে গ্রাহক যন্ত্রে ও প্রেরক যন্ত্রে প্যাচানো বড় তামার তারের কয়েল থাকে। আর এখানে এর মধ্য দিয়ে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফ্রিকোয়েন্সি প্রেরনের মাধ্যমে, ইলেকট্রিক এনার্জি প্রেরন করা হয়।
প্রচলিত ওয়্যারলেস চার্জিং
বর্তমানে প্রচলিত ওয়্যারলেস চার্জিং বলতে আমি কথা বলব স্মার্টফোন,স্মার্টওয়াচে যে ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তা নিয়ে।
উপরের চিত্রে আমরা এর ডায়াগ্রামটি দেখতে পাচ্ছি, একে বলা হয় রেসোনেন্ট ইনডাকটিভ কাপলিং (কাপলিং=সংযোজন)। আর এর মাধ্যমেই দুটি ডিভাইস এর ভেতর লো পাওয়ার সিংনাল তৈরি হয়। এখানে একটি ডক বা চার্জিং বেস থাকে, যা মূল বিদ্যুত সংযোগের সাথে যুক্ত থাকে। পাওয়ার সাপ্লাই করার জন্য এতে একটি ট্রান্সমিটার কয়েল থাকে, আর যে ডিভাইসটিকে চার্জ করা হবে – তার ভেতর রিসিভার হিসেবে একটি রিসিভার কয়েল থাকে। ডক বা মূল চার্জিং বেসটি সবসময়ই একটি একটু সিংনাল ছাড়তে থাকে, তবে যখন আসল ডিভাইসটি এর ওপর রাখা হয় ; তখন এর রেসোনেন্স পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং বেশি বেশি ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সিংনাল প্রেরন করতে শুরু করে।
চার্জিং বেস এর ট্রান্সমিটার কয়েল যেমন মূল পাওয়ার সংযোগ এর সাথে সংযুক্ত থাকে ; তেমনই চার্জিং হওয়া ডিভাইসের রিসিভার কয়েল ব্যাটারি চার্জিং সার্কিট এর সাথে কানেক্টেড থাকে। এভাবে ট্রান্সমিটার থেকে উৎপন্ন হওয়া ইলেক্টো ম্যাগনেটিক এনার্জি রিসিভারে গিয়ে ব্যাটারিকে চার্জ করে।
বন্ধুরা চলুন, ব্যাপারটি আরেকটু সহজভাবে বোঝার চেষ্টা করি। প্রথমত,আপনার স্মার্টফোন এবং চার্জিং স্টেশন বা বেস যখন কাছাকাছি হয়, তখন এদের ভেতরকার কয়েলও পরস্পর কাছাকাছি চলে আসে। আর যখন কয়েল দুটি কাছাকাছি চলে আসে এদের ভেতর একটি কম্পন ক্রিয়া তৈরি হয়, যা কয়েল দুটির ভেতর EMF বা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফ্রিকুয়েন্সি সৃষ্টি করে। এই EMF ছোট মাত্রার ইলেকট্রো এনার্জি রিসিভার কয়েলে পাঠায় – আর এতে করে ব্যাটারি চার্জ হয়।
পরিশেষে
এখন যে ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করা হল, এটিই বর্তমানে প্রচলিত ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি। তবে ওয়্যারয়েবল তথা তারযুক্ত চার্জিং এর তুলনায় এই ওয়্যারলেস চার্জিং এ ডিভাইস চার্জ হতে সময় বেশি নেয়, কেননা এখানে একটু এনার্জি লস হয়। যদি ওয়্যারলেস চার্জিং দিন দিন উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে। তবুও এটি ওয়্যারয়েবল চার্জিং এর মত এত ফাস্ট ও কার্যকর হতে পারেনি। আশা করা হচ্ছে প্রযুক্তির অগ্রগতিতে অতিসত্তর এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠবে।
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
ইমেজ ক্রেডিট; By Wisanu Boonrawd Via Shutterstock
techubs e ki all explained ace? ami jetai search kori dekhi sektai post ace.! eto post kivabe lekhe somvob korcen? kivabe eto mathay vabte parcen? eto idea kivabe ase? ami mughdho vai.
Aro bohu explained baki ase vai. And amra all time research korei jacci…
অসাধারণ বরনয়া দিয়েছেন ভাই। খুব ভালো লাগে আপনার লেখা পড়তে। খুব দ্রুত দেশের ১ নং সাইট হয়ে যাবেন আপনারা। এত বেস্ট কনটেন্ট আর কোথাও নেই।
Enjoyed and learn many things.
তৌহিদুর রহমান মাহিন ভাইয়া খুবই ভালো লাগলো আর্টিকেলটি। খুবই মজার একটা টপিক ছিল। অনেক কষ্ট করে আমাদের এমন মজার মজার আর্টিকেল উপহার দেয়ার জন্য আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
Thanks. Well Explained!!
অসাধারণ
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ 🙂