ডিস্ক ফরম্যাট করা বলতে আসলে কি বোঝায়?

আমরা যারা ডেক্সটপ বা স্মার্টফোন ব্যবহার করি, তারা অবশ্যই ড্রাইভ ফরম্যাট করার ব্যাপারটির সাথে খুব ভালোভাবেই পরিচিত। একজন অ্যাভারেজ ইউজার হিসেবে আমাদের কাছে ড্রাইভ ফরম্যাট করার মানে হচ্ছে জাস্ট ড্রাইভের ভেতরে থাকা সব ডাটা একবারে ডিলিট করে দিয়ে ড্রাইভটি ফাঁকা করে দেওয়া। এই ধারনাটি ভুল না হলেও একেবারে সঠিকও নয়। ড্রাইভ ফরম্যাট করা ড্রাইভের ফাইল ডিলিট করার থেকে অনেকটাই আলাদা। ফরম্যাট কিভাবে ফাইল ডিলিট করার থেকে আলাদা এবং ফরম্যাট করা বলতে আসলে টেকনিক্যালি কি করা হয়, এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করা যাক।


প্রথমত, ড্রাইভ ফরম্যাট করার ক্ষেত্রে যে টেকনিকটির সাথে আমরা সবাই পরিচত, তা দিয়েই শুরু করা যাক। ফরম্যাট করা বলতে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে উইন্ডোজ এক্সপ্লোরারে কোনো ড্রাইভের নামের ওপরে রাইট ক্লিক করে কন্টেক্সট মেনু ওপেন করে সেখানে Format অপশনটি সিলেক্ট করা। এই অপশনটিতে যাওয়ার পরে আমরা খুব সহজেই এক ক্লিকেই যেকোনো ড্রাইভ ফরম্যাট করে ফেলতে পারি। তবে এক ক্লিকে ফরম্যাটের পাশাপাশি এখানে আরও কিছু অপশন থাকে, যেগুলোর ব্যাপারে হয়তো আমরা বেশি কিছু জানিনা।

তবে যে অপশনটির সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত, তা হচ্ছে ফাইলসিস্টেম। যেকোনো ড্রাইভ ফরম্যাট করার সময় সেটির ফাইলসিস্টেম সিলেক্ট করতে হয়। Fat32, NTFS, exFAT এমন কয়েকটি ফাইল সিস্টেম আছে, যেগুলোতে আমরা কোন ড্রাইভকে ফরম্যাট করতে পারি। এই ফাইল সিস্টেমগুলো মুলত কোন ড্রাইভে ডাটা স্টোর করার এবং অর্গানাইজ করার বিভিন্ন রুলস। আপনি যখন কোন ড্রাইভ এমন কোন একটি ফাইলসিস্টেমে ফরম্যাট করছেন, আপনি মূলত ড্রাইভটিতে এই ফাইলসিস্টেমের নিজস্ব ফাইলগুলো অ্যাড করছেন। প্রত্যেকটি ফাইল সিস্টেমেরই এই কিছু স্পেসিফিক সিস্টেম ফাইলস থাকে, যেগুলোকে বলা হত “মেটাডাটা ফাইল”।

এই মেটাডাটা ফাইলসগুলো আপনার অপারেটিং সিস্টেমের দরকার হয় যখন তার ট্র্যাক করার দরকার হয় যে কোন ড্রাইভে কি কি ডাটা আছে এবং ডাটাগুলো কিধরনের স্ট্রাকচারে সাজানো আছে। আর এই মেটাডাটা ফাইলগুলো কি হবে এবং ড্রাইভে ফাইল রিড এবং রাইট করার ক্ষেত্রে কি কি রুলস অ্যাপ্লাই করা হবে, সবকিছুই নির্ধারন করে ড্রাইভটির ফাইলসিস্টেম। কোন ড্রাইভ যেকোনো ফাইলসিস্টেমে ফরম্যাট করার পরে ড্রাইভটিতে কি কি মেটাডাটা ফাইল অ্যাড করা হলো, এসব কিন্তু আপনি নিজে দেখতে পাবেন না।

এই মেটাডাটা ফাইলগুলো ইভেন কোন ট্রেডিশনাল হিডেন ফাইলও না, যা আপনি উইন্ডোজ এক্সপ্লোরারে হিডেন ফাইলস এনাবল করলেই দেখতে পাবেন। এই ফাইলগুলো ইভেন উইন্ডোজ এর ডিফল্ট এপিআইও অ্যাক্সেস করতে পারেনা। এই মেটাডাটা ফাইলগুলো দেখার জন্য দরকার হয় স্পেশাল ফরেনসিকস সফটওয়্যার। আর এই ধরনের কোন সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করে কোন ড্রাইভে মেটাডাটা ফাইলসগুলো চেক করলেও আপনি বা আমি বা আমাদের মতো অ্যাভারেজ ইউজাররা তেমন কিছুই বুঝতে পারবে না।

যাইহোক, এবার মেইন টপিকে আসা যাক। আপনি যখন উইন্ডোজের কনটেক্সট মেনু থেকে ফরম্যাট অপশন সিলেক্ট করে কুইক ফরম্যাট করছেন, তখন আপনি শুধুমাত্র আপনার ড্রাইভটির ফাইলসিস্টেমটি নতুন করে রাইট বা রিরাইট করছেন। অর্থাৎ, ফাইলসিস্টেমের ভেতরে থাকা মেটাডাটা ফাইলসগুলোই আপনি নতুন করে জেনারেট করছেন। এটা সিমপ্লি কোন একটি ফাইল বা সবগুলো ফাইল একবারে ডিলিট করে দেওয়ার মত হলেও, ব্যাপারটা ১০০% এমন না।

যেহেতু ফাইল ডিলিট করার ব্যাপার চলেই আসলো, আপনি হয়তো জানেন না যে, কোন ড্রাইভ থেকে কোন ফাইল ডিলিট করে দেওয়া মানে কিন্তু টেকনিক্যালি ফাইলটি ধ্বংস করে দেওয়া নয়। কোন ড্রাইভ থেকে ফাইল ডিলিট করার টেকনিকটা অনেকটা কোন বই থেকে কিছু পৃষ্ঠা ডিলিটেড হিসেবে মার্ক করে রাখার মতো, পৃষ্ঠাগুলো বই থেকে একেবারে ছিঁড়ে ফেলা নয়। অর্থাৎ, আপনি যখন কোন ড্রাইভ থেকে কোন ফাইল ডিলিট করছেন, আপনি শুধুমাত্র ড্রাইভকে বলে দিচ্ছেন যে এই ফাইলটির আর কোন প্রয়োজন নেই। এবং আপনার কথামত ড্রাইভটি ওই ফাইলটির জায়গা ফ্রি হিসেবে মার্ক করে দিচ্ছে যাতে আপনি সেখানে অন্য কিছু স্টোর করতে পারেন।

কুইক ফরম্যাট বা ফাইলসিস্টেম মেটাডাটা নতুন করে রিরাইট করাও অনেকটা এভাবেই কাজ করে। আপনি ফাইলসিস্টেম রিরাইট করার মানে হচ্ছে আপনি সম্পূর্ণ ড্রাইভকে ফাঁকা হিসেবে মার্ক করছেন। এর ফলে আপনি ড্রাইভটিকে ফাঁকা হিসেবেই দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু যতক্ষন না পর্যন্ত আপনি ড্রাইভটিতে নতুন কোন ডাটা ইন্টার করছেন, ততক্ষন পর্যন্ত ড্রাইভের আগের সব ডাটা সেখানেই আছে, জাস্ট আপনি সেটা দেখতে পাচ্ছেন না।

তবে এই প্রোসেসটা তখনই হয়, যখন আপনি ফরম্যাট অপশনের ভেতরে Quick Format অপশনটিতে টিক মার্ক দিয়ে রাখেন। এখন আপনি হয়তো ভাবছেন যে, কুইক ফরম্যাটের ক্ষেত্রে যদি ব্যাপারটা এমন হয়, তাহলে কুইক ফরম্যাট ডিজেবল করে ড্রাইভ ফরম্যাট করলে কিভাবে কি হয়? আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি, আপনি যখন কুইক ফরম্যাট করছেন, তখন আপনি শুধুমাত্র আপনার ড্রাইভটি আপনার কাঙ্খিত ফাইলসিস্টেমে নতুন করে রিরাইট করছেন এবং ফাইলসিস্টেমের ডিফল্ট মেটাডাটাগুলো নতুন করে সেটাপ করছেন।

কিন্তু আপনি যখন কুইক ফরম্যাটের পরিবর্তে রেগুলার ফরম্যাট বা ফুল ফরম্যাট করছেন, তখন আপনার ড্রাইভের মেটাডাটা তো রিরাইট করা হচ্ছেই, একইসাথে আপনার সম্পূর্ণ ড্রাইভটি অনেকগুলো ০ (জিরো) লিখে ফিলআপ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ড্রাইভে পরপর ০ লিখে যাওয়ার সময় আপনার সম্পূর্ণ ড্রাইভটি যেকোনো পসিবল এররের জন্য চেক করা হচ্ছে। কারণ, ড্রাইভের প্রত্যেকটি বিটে ০ লিখে রিরাইট করার সময় আপনার অপারেটিং সিস্টেম বুঝতেই পারছে যে ড্রাইভটিতে কোন সমস্যা আছে কিনা। ড্রাইভের কোন একটা পার্টে ০ লিখতে না পারলে তখন আপনার সিস্টেম অটোমেটিক্যালি বুঝতে পারছে যে, ড্রাইভটির এই পার্টে ০ লেখা সম্ভব হচ্ছে না, অর্থাৎ এখানে অবশ্যই কোন এরর আছে।

অর্থাৎ, যখন আপনি ফুল ফরম্যাট করছেন, তখন যেহেতু আপনার ফাইলসিস্টেম নতুন করে রিরাইট করার পাশাপাশি একইসাথে আপনার আগের সব ডাটা জিরো দিয়ে রিপ্লেস করে দেওয়া হচ্ছে, তাই এক্ষেত্রে আপনার ড্রাইভটি সত্যিকারেই ইরেজ করা হয়েছে। তবে তবুও কিছু উপায় আছে যেগুলো ব্যাবহার করে ০ দিয়ে ইরেজ করা ডাটা থেকেও আগের ডাটা ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তবে তা আমাদের আলোচনার বিষয় না। ফুল ফরম্যাট যেহেতু আপনার সম্পূর্ণ ড্রাইভটি স্ক্যান করে এবং প্রত্যেকটি বিট ০ দিয়ে রিরাইট করে, তাই কুইক ফরম্যাটের তুলনায় এটি অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ। বেশি সময় লাগে বলেই অধিকাংশ ইউজাররাই ফুল ফরম্যাট না করে কুইক ফরম্যাট করে থাকেন।

এতক্ষন যে ফুল ফরম্যাটের কথা বললাম, এটাকে টেকনিক্যাল ভাষায় বলা হয়, “হাই লেভেল ফরম্যাটিং”। যেমনটা ধারনা করেছেন, হাই লেভেল ফরম্যাটিং এর পাশাপাশি আরো একধরনের ফরম্যাট আছে যার নাম “লো লেভেল ফরম্যাটিং”। লো লেভেল ফরম্যাটিং অন্য সব ফরম্যাটিং টেকনিকের থেকে একেবারেই আলাদা এবং একজন এন্ড কনজিউমার হিসেবে আপনি নিজে আপনার কোন ড্রাইভ লো লেভেল ফরম্যাট করতেই পারবেন না। লো লেভেল ফরম্যাট সরাসরি ড্রাইভের হার্ডওয়্যার রিলেটেড, তাই লো লেভেল ফরম্যাট করার জন্য আপনাকে হার্ডওয়্যার আর্কিটেকচার জানতে হবে এবং এর জন্য দরকারী স্পেশাল টুলসও দরকার হবে। তাই লো লেভেল ফরম্যাটিং সাধারনত ড্রাইভের ফ্যাক্টরিতে করা হয়ে থাকে। একজন এন্ড ইউজার হিসেবে আপনার লো লেভেল ফরম্যাটিং এর বাপারে সবকিছু না জানলেও চলবে!


 

About the author

সিয়াম

2 comments

  • অনেক ধন্যবাদ। সুন্দরভাবে বিষয়টা বুঝানোর জন্য। uefi এর সাথে GPT ফাইল সিস্টেমের কি সম্পর্ক আবার legacy সাথে MBR এর কি সম্পর্ক এই বিষয় যদি একটা লিখা লিখতেন। এবং লিনেক্সের সাথে GPT , MBR এর সাথে আর কি আছে?

Categories