যদি বলা হয় প্রযুক্তি বিশ্বে বিপ্লবের সূচনা করেছে কোন কোন কোম্পানি? তবে তাদের ভেতর স্যামসাং থাকবে নিঃসন্দেহে। স্যামসাঙ যুগে যুগে তাদের যুগান্তকারী প্রোডাক্টস এর মাধ্যমে মানুষের মন কেড়ে নিয়েছে, অর্জন করে নিয়েছে কোটি মানুষের ভরসা।
এখনও মানুষ ভালো জিনিস কিনতে চাইলে প্রথমে ভাবে স্যামসাং এর কথা, তারপর না হয় অন্য কোম্পানির কথা ভাবে। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টস নির্মানের ক্ষেত্রে নিজস্ব ধারা এবং কোয়ালিটি বজার রাখার জন্য এখনও স্যামসাং বিশ্বের সেরা।স্যামসাঙ কোটি মানুষের হৃদয়ে তাদের স্হান করে নিয়েছে। স্যামসাংকে মানুষ ইলেকট্রনিক্স নির্মান শিল্পের আইকন হিসেবে দেখে। বহু নামি-দামি থেকে শুরু করে নাম না জানা কোম্পানি তাদের অনুকরনও করার চেষ্টা করে।
একজন মানুষ যে স্যামসাঙ এর প্রোডাক্টস ব্যবহার করে না, সেও একনজরে স্যামসাংকে পছন্দ করে। সব মিলিয়ে স্যামসাং কোটি মানুষের ভালবাসার একটি লিজেন্ডারি কোম্পানি। আজ হয়ত টাকার জন্য অনেকে স্যামসাং এর প্রোডাক্টস ; যেমনঃ স্মার্টফোন কেনে না – তবে বন্ধুরা, এই কথা আপনাকে মানতে হবে “আমরা মনে মনে আশা করেই রাখি যে – একদিন টাকা হলে স্যামসাং এর গ্যালাক্সি বা নোট সিরিজের একটা ডিভাইস কিনে ফেলব”,অনেকে কেনেনও। স্যামসাং যে কেবল একটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তা নয়, এটি হল একটি আস্হায় প্রতীক।
আজ আমরা জানব, বহু মানুষের প্রিয় এই প্রযুক্তি সৃষ্টিকারী কোম্পানি স্যামসাং শুরু থেকে আজকের যাত্রা সম্পর্কে।তো স্যামসাং প্রেমীরা শক্ত করে বসুন এবং মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন। আজ আপনি জানতে চলেছেন স্যামসাং এর সাফল্য সম্পর্কে, পৃথিবীতে ইলেকট্রনিক্স শিল্পের বিপল্বের পথপ্রদর্শক সম্পর্কে।
স্যামসাং এর সূচনাঃ
পহেলা মার্চ, ১৯৩৮ সালে লি বাইয়াং বর্তমান হিসেবে মাত্র ২৭$ ডলার খরচ করে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন,এর নাম দিয়েছিলেন স্যামসাং । শুরুর দিকে স্যামসাং কিন্তু কোন ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি ছিল না। এটি ছিল দক্ষিন কোরিয়ার ১৯ শতকের অন্যসব সাধারন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর মত একটি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান। সমুদ্রতীরবর্তী অবস্হিত একটি শহর তেইগু’তে তারা ৪০ জন কর্মচারী নিয়ে বড় একটি মুদি দোকান এর মত ঘর নিয়ে স্হানীয় পন্য এবং বিদেশি পন্য আমদানি-রপ্তানি করার কাজ করত। তারা প্রধানত কোরিয়ান শুটকি মাছ, কোরিয়ান নুডুলস,কোরিয়ান শাক-সবজি এসব রপ্তানি করত।

এভাবে প্রতিষ্ঠানটি বড় হতে শুরু করে, ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিজ শহরের বাইরে রাজধানী শিউল’য়ে বিস্তৃত লাভ করে। তবে বিশ্বযুদ্ধের কারনে তাদের রাজধানী শিউলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তবে যুদ্ধের পরবর্তীতে স্যামসাং প্রতিষ্ঠাতা চিনি কল ও তাত শিল্পে বিনিয়োগ করে, আর এতে করে তারা ব্যাপক লাভের সম্মুখীন হয়। স্যামসাং এর তৈরি ততকালীন তাত কারখানা ছিল কোরিয়ার সবচেয়ে বড় তাত বা কাপড় তৈরির কারখানা। এটি স্যামসাঙ এর মোড় ঘুরিয়ে দেয়। স্যামসাং এর হাতে নতুন কিছুতে বিনিয়োগ করার জন্য হাতে ব্যাপক অর্থ আসে।
স্যামসাং এর ইলেকট্রনিক্সে প্রবেশঃ

১৯৬০ সালে স্যামসাং কোরিয়ায় ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি এর উন্নয়নের জন্য মনোনিবেশ করে। স্যামসাং ইলেকট্রনিক ডিভাইস, স্যামসাং ইলেকট্রো-মেকানিক্স,স্যামসাং করনিং,স্যামসাং সেমিকন্ডাক্টর ও টেলিকমিউনিকেশন এসব নিয়ে দক্ষিন কোরিয়ায়, সুয়োন শহরে তারা ১৯৭০ সালে যাত্রা শুরু করে। আর সেখানে তারা প্রথম প্রথম সাদা-কালো টেলিভিশন উৎপাদন শুরু করে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে তারা ১ মিলিয়ন সাদা কালো টেলিভিশন বিক্রির মাইলফলক অর্জন করে নেয়।
এর ভেতর তারা ওয়াশিং মেশিন উৎপাদন ও বিক্রির কার্যক্রমও শুরু করে। ১৯৭৭ সাল থেকে তারা তিনটি ইলেকট্রন গান যুক্ত কালার টেলিভিশন উৎপাদন শুরু করে। একই বছর তারা কোরিয়ায় কনস্ট্রাকটিভ ও কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিতেও প্রবেশ করে। ১৯৭৮ সালে তারা সাদা-কালো এবং কালার মিলে প্রায় ৪ মিলিয়ন টেলিভিশন বিক্রির মাইলফলক অর্জন করে। তারা ১৯৭৮ থেকে মাইক্রো ওভেন,রেফ্রিজারেটর এসব এর বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে।
উন্নত প্রযুক্তিশিল্পে স্যামসাংঃ
স্হানীয় একটি টেলিফোন নির্মাতা কোম্পানি কিনে নেওয়ার মাধ্যমে, স্যামসাং টেলিকমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করে। এর মধ্য দিয়ে তারা বানিজ্যিকভাবে টেলিফোন সার্টিট বোর্ড ও টেলিফোন সেট নির্মানের কাজ শুরু করে। মূলত এই ডিভিশন থেকে স্যামসাং পরবর্তীতে ফোন নির্মানে কাজ অগ্রসর হয়, আর এখন কি কি দানব তৈরি করছে তা সম্পর্কে নিশ্চয়ই আমারা অনাবগত নই।
এর মধ্যে ১৯৮০ সাল থেকে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস নামক একটি স্বতন্ত্র শাখায় স্যামসাং R&D তথা রিসার্চ ও ডেভেলেপমেন্টে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করে। আর এইসময় স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স পর্তুগাল, টোকিও,নিউ ইয়র্ক,অস্টিন,টেক্সাসে তাদের শাখা বিস্তার করে।
১৯৮৭ সালে লি বাইয়াং এর মৃত্যু হলে, স্যামসাং ৪ টি মেজর বিজনেস গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে স্যামসাং নামক একটি গ্রুপে মূলত ইলেকট্রনিক্স, কনস্ট্রাকশন,ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কিত সবকিছুকে স্হানান্তর করা হয়। তখন থেকে স্যামসাং কেবল ইলেকট্রনিক্স এর ওপর নতুনভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তাদের কনস্ট্রাকশন ডিভিশনটি ব্রুজ খলিফার মত সর্ব বৃহৎ দালান এর কাজ করেছে। স্যামসাং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিসনটি স্যামসাং টেকউইন নামে পরিচিত। তারা এরোপ্লেন ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং এবং এর উন্নয়ন এর মত কার্যক্রমের সাথে জড়িত।

১৯৮০ সাল থেকে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স কালার টিভি, ভিসিআর,পার্সোনাল কম্পিউটার,টেপ রেকর্ডার উৎপাদন শুরু করে। এটি ছিল তাদের উত্তর আমেরিকায় রপ্তানি করার শুরু। ১৯৮৯ সালে স্যমসাং BP এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কোরিয়ায় স্যামসাং BP কেমিল্যালস নামে কেমিকেল প্রোডাক্টস বিক্রি শুরু করে। ১৯৯০ এর শুরু থেকে স্যামসাং মেমোরি কার্ড এবং হার্ড ড্রাইভ উৎপাদন শুরু করে, যা এখনও স্যামসাং এর মূখ্য ব্যবসা। ১৯৯৯ সালে স্যামসাং তাদের প্রথম ইন্টারনেট রেডি মোবাইল ফোন উৎপাদনের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রীতে প্রবেশ করে, যা এখন তাদের অন্যতম লাভের একটি খাত।
২০০০ সালের শুরু থেকে তারা HD টেলিভিশন উৎপাদন শুরু করে, তখন থেকে এলসিডি প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে। সনি স্যামসাং এর সাথে মিলে শেয়ারে কিছুদিন এলসিডি মনিটর উৎপাদনে কাজ করলে, কিছুদিনের ভেতর স্যামসাং এর সাথে তারা আর্থিকভাবে টিকতে পারে না, এতে তখন সনির বাজারে টাকা এলসিডি মনিটর এর ওপর সকল স্টেক স্যামসাং এর হয়ে যায়। স্যামসাং এখনও বাজারের সেরা মনিটর তথা টেলিভিশন শিল্পের উন্নতি এবং উৎপাদন সাধন করে আসছে।
২০১০ সালের মোবাইল ওয়াল্ড কনগ্রেসে স্যামসাং তাদের ফ্লাগশীপ স্মার্টফোন সিরিজ এস সিরিজ এর যাত্রা শুরু করে, একই বছরের শেষের দিকে তারা প্রথম সম্পূর্ণ কার্যকর এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর ট্যাবলেট বাজারজাত শুরু করে।

পরিশেষে
স্যামসাং হল পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একটি সাক্সেসর কোম্পানি। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের পদছাপ ফেলে ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখেছে। স্যামসাং এর দক্ষ ম্যানেজমেন্ট টিম এবং মার্কেটিং এর প্রভাবে তারা আজ এত বড় স্যামসাং। কোরিয়ার ৫ ভাগের ১ ভাগ রপ্তানি পন্য হল কেবল স্যামসাং এরই। ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্রে এর অবদান সবচেয়ে বেশি। বেশ কিছু জনপ্রিয় গ্যাজেটস তথা ইলেকট্রনিক্স পন্যের নকশাই বদলে দিয়ে নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে স্যামসাং। এন্ড্রয়েড নির্ভর ফোনের পথিকৃথ হল এই স্যামসাং। অ্যাপেল এর মত কোম্পানি তাদের বিভিন্ন ডিভাইসে নানা কম্পোনেন্ট এর জন্য স্যামসাং এর ওপর নির্ভরশীল।
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
Images: Shutterstock
Awesome bolleo khub kom bola hobe bhai!!
Great!!
Thanks a lot!!
২০১৫ সালে জে৭ ব্যবহার করেছি সত্যি কথা ভাই তেমন মজা পাই নি। শুধু ডিসপ্লে ভালো মনে হতো। কিন্তু আপনার আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলো। এখন রেডমি ইউজার তারপরেও স্যালুট স্যামসাং!!!!!
nice post buddy.
Thanks 🙂
ONEKEI BOLEC MID RENGE SAMSUNG PHONE KHARAP. ONEKE EKHON XIAOMI PREMI. BUT TAHOLE SAMSUNG J SERIES ETOKIVABE COLE? APNAR KASE JANTE CHAI SOTTI SAMSUNG MID RENGE KHARAP?
খারাপ না। তবে আমার হিসেবে তারা তাদের স্পেসিফিকেশনে যে দামটা রাখে, সে হিসেবে শাওমি সাশ্রয়ী। তবে স্যামসাং খারাপ কম্পোনেন্ট দেয় তা না, তবে সার্বিকভাবে স্পেসিফিকেশন এর তুলনায় দামটা একটু বেশি রাখে। তাছাড়াও স্যামসাং এর কোয়ালিটি সবসময়ই ভালো যে দামেই হোক, তাই মানুষ নিঃসন্দেহে ভরসা করে স্যামসাং কেনে, এবং কিনছেই।
Proud to be s7 edge user via. thanks for the post.
Welcome 🙂
kub valo lagce.
পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
joss ekta likha likhcen.
সাথেই থাকুন 🙂
What a post here. Just super nicee.
আরো ভালো ভালো পোস্ট পাবেন।
অনেক সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
সালাম রাতুল ভাইয়া এভাবেই আমাদের সাথেই থাকুন। আপনাদের ভালবাসায় টেকহাবস অনেকদূর যাবে ইনসাআল্লাহ!
খুব ভালো হয়েছে ভাই!!!! এই সিরিজটা কন্টিনিউ করবেন প্লিজ। অনেক এঞ্জয় করছি। নেক্সট অ্যাপেল নিয়ে লিখতে পারেন অথবা মাইক্রোসফট নিয়ে লিখতে পারেন।
অনেক ধন্যবাদ!!!!
জ্বি এই সিরিজটা চালিয়ে যাব ইনসাআল্লাহ,নিয়মিত সাথে থাকার জন্য তুলিন ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকে ও ধন্যবাদ ভাই। টেকহাবস আমাদের প্রান আমাদের প্রতিদিনের প্রযুক্তি অক্সিজেন আর টেকহাবস ছেড়ে থাকার কথা আমরা কল্পনা করি না। প্রতিদিন অসাধারণ সব আর্টিকেল উপহার দেবার জন্য। টেকহাবস টিমের প্রতি মন থেকে কৃতজ্ঞ ভাইয়া।
Great Post
Thanks
ভাইয়া গেমিং নিয়ে কোন পোস্ট করতে দেখি না। গেমিং পিসি বিল্ড করতে চাচ্ছি। যদি স্পেক বানাতে হেল্প করতেন একটু। বাজেট ৮০ হাজার। এর মধ্যে মনিটর সহকারে একটু বিস্তারিত লিস্ট দিলে ভালো হয়। ধন্যবাদ।
PC Builder BD নামক একটি ইউটিউব চ্যানেল আপনাকে এ বিষয়ে ব্যাপক সাহায্য করতে পারে।
@তুলিন
Processor; Core i7 8700K
RAM; 8GB (4×2) DDR4
Graphics; GTX 1050Ti (4GB) (DDR5)
SSD; Must Needed (120GB at least)
HDD; 1TB WD
Mobo; Asus ROG Series
PSU; 650W+
Thanks for the mention bro, you can link our website pcbuilderbd.com as well for PC building references. Love your site.
ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাদের চ্যানেল এর একটা ভিডিও মিছ করি না।