আপনার ফোন 4G+ সাপোর্ট করার পরেও আপনি 4G+ পাচ্ছেন না?

আপনার ফোন এবং অপারেটর দুটোই 4G+ সাপোর্ট করে কিন্তু তাও আপনি 4G+ পাচ্ছেন না? — 4G+ (৪জি+) বা ক্যারিয়ার এগ্রিগেশন চতুর্থ প্রজন্ম মোবাইল নেটওয়ার্ক টেকনোলজি বা 4G এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একসাথে কতিপয় ব্যান্ড ব্যবহার করে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করানো হয়। জিনিসটা অনেকটা কতিপয় নল ব্যবহার করার সাথে উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে। একটি নল ব্যবহার করে যা পানি সরবরাহ করানো যাবে একই সাথে যদি ২/৩ টা নল ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে আরো বেশি পানি সরবরাহ করানো যাবে, রাইট? ৪জি+ টেকনোলজি ঠিক এই একই কাজটি করিয়ে থাকে। যদিও আমি এই আর্টিকেলে সবকিছু বর্ণনা করেছি।

তো এটা নিশ্চিততে বেটার সিগন্যাল কোয়ালিটি, বেটার কভারেজ ও সর্বাধিক ইন্টারনেট স্পীড পাওয়ার জন্য ফোর জি প্লাস নেটওয়ার্ক এর কোন জুড়ি হয় না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনার মোবাইল অপারেটর এটাকে সাপোর্ট করে এবং আপনার ফোনেও ৪জি+ সাপোর্ট রয়েছে কিন্তু তারপরেও দেখা জায় কিছু ফোনে ৪জি+ শো করছে আবার কিছু ফোনে এটা কাজ করছে না, কিন্তু কেন? চলুন, এই আর্টিকেলটি থেকে ব্যাপারটি খুজে বের করার চেস্টা করা হোক…


4G+ সাপোর্ট

প্রথমেই বলে রাখছি, এটা একটু টেকনিক্যাল সাইডের পোস্ট, বাংলাদেশের সকল অপারেটর চেক করে এবং বিভিন্ন লোকেশনে 4G+ এর ডেপ্লয়মেন্ট চেক করে বুঝলাম, বেশ কিছু টাইপের 4G+ ইমপ্লিমেন্ট করা হয়েছে, যেগুলো কিন্তু একে ওপরের থেকে আলাদা। এখন মোবাইল অপারেটর কোন টাইপের 4G+ প্রদান করছে এবং আপনার ফোন সেই টাইপ সাপোর্ট করে কিনা, সেই অনুসারে কিন্তু আপনি 4G+ সেবা পাবেন এবং স্পীড এর তারতম্য লক্ষ্য করতে পারবেন।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশে রবি সবচাইতে বেশি 4G+ টেকনোলজি ইমপ্লিমেন্ট করছে এবং তাদের কাছে লভ্য ব্যান্ড গুলো দ্বারা তারা নানান টাইপের 4G+ এনাবল করেছে। 4G+ সাপোর্ট এর দিক থেকে দ্বিতীয় গ্রামীনফোন এবং বাংলালিংক হাতে গোনা সাইটে 4G+ দেওয়া শুরু করেছে। (এই রিপোর্ট সম্পূর্ণ আমার এক্সপেরিয়েন্স অনুসারে তৈরি করা)
আমাদের দেশে সকল অপারেটর গুলোর কাছে তিনটি ব্যান্ড রয়েছে; 2100Mhz (B1), 1800Mhz (B3), এবং 900Mhz (B8) — এবং এই ব্যান্ড গুলোর আলাদা আলাদা ব্লক শেয়ার করে সকল অপারেটর গুলো একই ব্যান্ড এ তাদের সকল সেবা প্রদান করছে।

বলে রাখি, ব্যান্ড অনুসারে এবং ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ অনুসারে 4G+ এর ক্যাটাগরি কিন্তু বিভক্ত হয়ে যায়। আলাদা আলাদা ব্যান্ড একসাথে একত্র করে যেমন 4G+ দেওয়া হয় তেমনি একই ব্যান্ড এর আলাদা আলাদা ব্লক ব্যাবহার করেও 4G+ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথমে অপারেটর দের নির্বাচিত ইমপ্লিমেন্টেশন গুলো দেখে নেওয়া যাক…

4G+ কনফিগারেশন

1800Mhz (B3) + 900Mhz (B8) — CA_3A-8A (B3+B8) — 30MHz B/W Max — 2CC

বেশির ভাগ সাইটে বিশেষ করে রবি 1800Mhz (B3) + 900Mhz (B9) একত্র করার মাধ্যমে 4G+ ইমপ্লিমেন্ট করেছে। এখানে দুইটি কম্পোনেন্ট ক্যারিয়ার রয়েছে, তাই এই টাইপের এগ্রিগেশন কে 2CC বলা হয়। এর কনফিগারেশন এর নাম CA_3A-8A। এই কনফিগারেশন এ সর্বোচ্চ 30 মেগাহার্টজ পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করানো যেতে পারে। তো আশা করছি সব সাংকেতিক চিহ্ন গুলো এবার বুঝে গেছেন, পরবর্তী ইমপ্লিমেন্টেশন গুলো আর এক্সপ্লেইন করলাম না।

2100Mhz (B1) + 1800Mhz (B3) — CA_1A-3A — (B1+B3) — 40MHz B/W Max — 2CC

এই কনফিগারেশন জিপিকে বেশি ব্যাবহার করতে দেখেছি, তবে রবি ও ব্যাবহার করছে পাশাপাশি। যেহেতু জিপির B1 এ ব্যান্ডউইথ হালকা বেশি রয়েছে, তাই এই কনফিগারেশনে তারা বেটার স্পীড প্রদান করতে পারবে। বাংলালিংক ও দেখলাম এই দুইটা সাইটে এই কনফিগারেশন ব্যাবহার করছে।

2100Mhz (B1) + 1800Mhz (B3) + 900 (B8) — CA_1A-3A-8A — (B1+B3+B8) — 50MHz B/W Max — 3CC

এই পর্যন্ত আমি কেবল রবিকেই এই কনফিগারেশন ব্যাবহার করতে দেখেছি, এই কনফিগারেশন এর ব্যান্ডউইথ সবচেয়ে বেশি, তাই বাংলাদেশের জন্য এইটা বেস্ট কনফিগারেশন।

1800Mhz (B3) + 1800 (B3) — CA_3C/CA_3B — (B3+B3) — 40MHz/10MHz B/W Max — 2CC

এই কনফিগারেশন দুই টাইপের হয়, CA_3C আরেকটা CA_3B — প্রথমটায় 40Mhz ব্যান্ডউইথ সাপোর্ট করে ম্যাক্স আর দ্বিতীয় টায় 10Mhz ম্যাক্স। এই কনফিগারেশন আমি শুধু রবিকে ব্যাবহার করতে দেখেছি, এরা CA_3C সাপোর্ট করে। তো এই হচ্ছে আমার দেখা কমন কিছু ক্যারিয়ার এগ্রিগেশন টাইপ, তবে আরো কিছু ইমপ্লিমেন্টেশন নজরে এসেছিলো, কিন্তু খুবই কম ইমপ্লিমেন্ট করা হয়েছে এবং ইয়েস সেগুলোও রবির ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গেছে। যেমন: 2100+900, 2100+2100, 900+900 ইত্যাদি। তবে এগুলোর কোন টারই স্পীড তেমন ভালো না।

আমার ফোন ৪জি+ সাপোর্ট করে কিনা কিভাবে বুঝবো?

এই বিষয়টা বোঝা ডিভাইজ ভেদে খানিকটা ট্রিকি আবার একেবারেই সহজ হতে পারে! যদি আপনার মোবাইল অপারেটর সঠিক ৪জি+ কনফিগারেশনটি ব্যবহার করে যেটা আপনার ফোন দ্বারা সমর্থিত তাহলে সহজেই ফোনের নেটওয়ার্ক বারের কাছে 4G+ সাইন দেখতে পারবেন। তাছাড়া নেট মনস্টার অ্যাপ ব্যবহার করেও সহজেই দেখতে পারবেন আপনার ফোন একই সাথে কয়টি ব্যান্ড কানেক্ট করে রেখেছে। তো এটা হচ্ছে সেরা অবস্থা, মানে আপনি তখন জানতে পারছেন যখন আপনি অলরেডি এটা উপভোগই করছেন।

netmonster robi 4g+

কিন্তু এ ব্যাতিত কিভাবে বুঝবেন আপনার ফোন ৪জি+ সাপোর্ট করে কিনা? অনেক ফোনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বর্ণনা দেওয়া থাকে যে আপনার ফোন ৪জি+ সাপোর্টেড কিনা সাথে কোন কোন ব্যান্ড একত্র করার মাধ্যমে এটি কাজ করে সবকিছু দেওয়া থাকে। কিন্তু অফিশিয়াল ভাবে বলা না থাকলে জিনিসটা বোঝা একটু মুশকিল। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রবি/এয়ারটেল যেহেতু সর্বাধিক কম্বিনেশন এর ৪জি+ নেটওয়ার্ক ডেপ্লয় করেছে তাই আশা করা যাচ্ছে আপনার ফোনটি আলাদা অপারেটরে ৪জি+ সমর্থন না দেখাতে পারলেও রবিতে ঠিকঠাক মত কাজ করবে। তবে আপনার ফোন যতো বেশি কনফিগারেশন সমর্থন করবে ততো ভালো ৪জি+ নেটওয়ার্ক কভারেজ পেতে পারবেন!

কিন্তু আমার ফোনে ফোর জি প্লাস পাচ্ছে না কেন?

এখন অনেকের ডিভাইস 4G+ সাপোর্টেড হওয়ার পরেও দেখি 4G+ পান না, কিন্তু কেন? কারণ খুব সোজা, উপরে দেখলেন 4G+ কোন সোজাসাপটা জিনিস নয় এর নানান কনফিগারেশন রয়েছে। আপনার ফোন 4G+ সাপোর্ট করে ঠিক ই, কিন্তু আপনার মোবাইল অপারেটর এর ইমপ্লিমেন্ট করা কনফিগারেশন সাপোর্ট করে না বলে আপনি 4G+ পাচ্ছেন না।

4G+ নেটওয়ার্ক রবি

যেমনঃ আমি OnePlus 9 Pro এবং Poco F2 Pro ডিভাইস দুটোতে সর্বদা 4G+ পেয়েছি। সেখানে Mi 11x এ কখনো 4G+ পায় আবার কখনো পায় না, Redmi Note 10 Pro Max 4G+ সাপোর্ট করে কিন্তু তাও কখনো এই ডিভাইস এ 4G+ দেখি নি। এর কারণ হচ্ছে, আমার OnePlus এবং Poco অলমোস্ট সব 4G+ কনফিগারেশন সাপোর্ট করে। অপরদিকে, Mi 11x (2100+1800) (CA_1A_3A) সাপোর্ট করলেও (1800+900) (CA_3A-8A) কনফিগারেশন সাপোর্ট করে না। ফলে 4G+ কখনো কখনো মেলে মোস্ট অফ টাইম খুঁজে পাওয়া যায় না। আর Redmi Note 10 Pro/Max কেবল (1800+1800) (CA_3C) সাপোর্ট করে, ফলে 4G+ দেখাই যায় না। রবির কিছু সাইটে CA_3C সাপোর্ট রয়েছে, কিন্তু খুবই কম।


আশা করছি আর্টিকেলের এই পর্যায়ে এসে আপনার মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব গুলো দূর হয়েছে। আপনার কাছে এখন উত্তর রয়েছে, আপনার ফোন 4G+ সাপোর্ট করার পরেও আপনি কেন 4G+ পাচ্ছেন না? — এই ব্যাপারে আরো যেকোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Image: WiREBD

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

4 comments

  • অনেক ভালো লাগলো, তাহমিদ বোরহান ভাই! আপনি ফিরে এসেছেন! আশা করি ভালো ভালো আর্টিকেল পাবো।

  • ধন্যবাদ তাহমিদ বোরহান ভাই। তথ্যমূলক আর্টিকেল উপহার দেয়ার জন্য।

Categories