পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক এবং ফাইল শেয়ারিং কি? এটি কি অবৈধ?

আমাদের সামনে যখন নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কিং টার্মটি চলে আসে, আমরা সহজেই বুঝতে পারি নিশ্চয় এখানে একাধিক কম্পিউটার একত্রে কানেক্ট করার কথা বলা হচ্ছে। তবে নেটওয়ার্কিং এর রয়েছে নানান ধরন, পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক বা পিটুপি; হচ্ছে এমন এক ধরণের নেটওয়ার্ক যেখানে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার কোন সার্ভারের সাহায্য ছাড়ায় একে অপরের সাথে কানেক্টেড হতে পারে। আর এই নেটওয়ার্কে কানেক্টেড থেকে যদি ডিভাইজ গুলো একে অপরের সাথে ডিজিটাল ফাইল আদান প্রদান করে, সেক্ষেত্রে এটিকে পিয়ার টু পিয়ার ফাইল শেয়ারিং বলা হয়। এই আর্টিকেলে এই নেটওয়ার্কিং সিস্টেম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, কিন্তু এখানেই বলে রাখি, এই কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বিশেষ করে পাইরেসি করার জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়।


পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক

 

পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক’কে বিশেষভাবে ফাইল শেয়ারিং করার জন্যই ব্যবহার করা হয়। এখানে কানেক্টেড থাকা কম্পিউটার গুলো, কেউ শুধু সার্ভার বা কেউ শুধু ক্লায়েন্ট এভাবে আচরন করে না। প্রত্যেকটি কানেক্টেড কম্পিউটার সবার সাথে ফাইল শেয়ার এবং ফাইল ডাউনলোড করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু সাধারণ ইন্টারনেটে কিছু কম্পিউটার রয়েছে যারা শুধু ফাইল সার্ভ করে আর এদের সার্ভার বলা হয়, সার্ভার থেকে ফাইল রিসিভকারী কম্পিউটারকে ক্লায়েন্ট বলা হয়।

পিয়ার-টু-পেয়ার নেটওয়ার্ক অনেকটা আপনার বাড়ির ল্যানের মতোই। যেখানে আপনার বাড়ির দুই তিনটি কম্পিউটার একসাথে কানেক্টেড থাকে এবং সকলের সাথে সকলের ফাইল শেয়ার করা যায়। আপনার হোম নেটওয়ার্কে রাউটারের সাথে কানেক্টেড থাকা কম্পিউটার গুলো এক ধরণের হাইব্রিড পিটুপি নেটওয়ার্ক তৈরি করে। যেখানে রাউটার, কম্পিউটার গুলোকে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস প্রদান করে এবং ফাইল শেয়ারিং বা প্রিন্ট করার সময় কম্পিউটার গুলো সরাসরি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে।

পিয়ার টু পেয়ার নেটওয়ার্কের অনেক সুবিধা রয়েছে, যেমন এই নেটওয়ার্কে কানেক্টেড থাকা কোন একটি ডিভাইজ ডাউন বা অফলাইন অয়ে যাওয়ার পরেও নেটওয়ার্কটি ওয়ার্কিং থাকে। কিন্তু ক্লায়েন্ট-সার্ভার টাইপ নেটওয়ার্কে সার্ভার ডাউন হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক ডাউন হয়ে যায়। তাছাড়া আপনি যদি কম্পিউটার গুলোতে পিয়ার টু পেয়ার ওয়ার্কগ্রুপকে কনফিগার করেন, তো কম্পিউটার গুলো সরাসরি একে অপরের সাথে ফাইল আদান প্রদান, প্রিন্ট করা ইত্যাদি কাজ গুলো করতে পারবে। ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড থাকা পিটুপি নেটওয়ার্ক গুলোর কম্পিউটার শেয়ারিং সিস্টেম বিশাল বিস্তর হয়ে থাকে, কেনোনা এখানে কোন মাঝখানের সার্ভার থাকে না, যেটার সাথে কানেক্টেড থাকতেই হবে। ক্লায়েন্ট-সার্ভার টাইপ নেটওয়ার্কের সাথে যতো কম্পিউটার যুক্ত হবে, নেটওয়ার্ক ততো দুর্বল হয়ে যাবে, এবং এক সময় ক্র্যাস করবে। কেনোনা এই টাইপ নেটওয়ার্কে সব কম্পিউটার গুলো সার্ভারের সাথে কানেক্টেড থাকে, তাই বেশি কম্পিউটার কানেক্ট হওয়া মানে সার্ভারের চাপ বেড়ে যাওয়া। কিন্তু পিটুপি নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণই আলাদা স্টাইলে কাজ করে। এই নেটওয়ার্কে যতো কম্পিউটারের সংখ্যা বাড়ে, নেটওয়ার্কটি ততো শক্তিশালী হয়ে উঠে। বিট-টরেন্ট পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্কের উপর কাজ করে। এই নেটওয়ার্কে নতুন নতুন কম্পিউটার এড হওয়ার মানে, প্রসিং করার জন্য আরেকটি কম্পিউটার বৃদ্ধি পাওয়া।

পিটুপি সিকিউরিটি

ক্লায়েন্ট-সার্ভার টাইপ নেটওয়ার্কের মতো এটিও হ্যাকারের কাছে ত্রুটিপূর্ণ একটি নেটওয়ার্ক। যেহেতু প্রত্যেকটি কম্পিউটার সবার সাথে ট্র্যাফিক শেয়ার করে, তাই সহজেই নেটওয়ার্কে কানেক্ট থাকা যেকোনো কম্পিউটারের উপর ডিডস অ্যাটাক চালানো সম্ভব। পিটুপি নেটওয়ার্কে কানেক্টেড থাকা সফটওয়্যার গুলো সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট উভয় আকারে আচরন করে, কেনোনা সেই কম্পিউটারটি আরেক কম্পিউটারকে ফাইল পাঠিয়ে দিয়ে পারে, যেটা সার্ভারের কাজ এবং অন্য কম্পিউটারের কাছে ফাইলের জন্য রিকোয়েস্টও করতে পারে যেটা ক্লায়েন্টের কাজ। সার্ভার আর ক্লায়েন্ট একসাথে আচরন করার জন্য এটি হ্যাকারের কাছে হ্যাক হওয়াতে আরো সহজ হয়ে যায়। হ্যাকার যেকোনো কম্পিউটারে ডাটা সেন্ড বা রিসিভ করতে পারে, যেখানে শুধু টাইপ ক্লায়েন্ট কম্পিউটার কখনোই ডাটা সেন্ড করে না। আবার পিটুপি নেটওয়ার্কে শেয়ার করা যেকোনো ফাইলকে ক্যাপচার করে ফাইলটিকে মডিফাই করে সেন্ড করা অনেক সহজ ব্যাপার হয়ে পরে।

সাথে এই নেটওয়ার্কে সহজেই আপনার কম্পিউটার থেকে আপনার পার্সোনাল ডাটা গুলো চুরি হয়ে যেতে পারে। যদিও ফাইল শেয়ারিং করা অবৈধ নয়, কিন্তু কপিরাইট ফাইল শেয়ার করা অবৈধ। আর পিটুপি’কে কপিরাইট ফাইল গুলো শেয়ারিং করার জন্যই বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়, যেটা অবৈধ ব্যাপার হয়ে পরে। তাছাড়া এই নেটওয়ার্কে কানেক্টেড থাকা কম্পিউটার গুলো সহজেই ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পরে, কেনোনা এখানে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। তাই ট্রোজান গুলো খুব সহজেই আপনার কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে।

কিভাবে পিটুপি নেটওয়ার্ক নিরাপদ রাখবেন?

আপনি যদি বিট-টরেন্ট সহ যেকোনো পিটুপি ফাইল শেয়ারিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকেন, তবে অবশ্যই আপনি বিশাল প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি রিস্কের মধ্যে রয়েছেন। আগেই বলেছি, ফাইল শেয়ারিং কোন অবৈধ কাজ নয়, কিন্তু আপনি যদি কপি রাইটেড ফাইল শেয়ার করেন, সেটা অবশ্যই আইনের বিরুদ্ধে। এখন সরকার থেকে পিটুপির উপর নজরদারি করা হয়। এখানে আপনি কপিরাইট ফাইল শেয়ার বা ডাউনলোড করার মাধ্যমে বিপাকে পড়ে যেতে পারেন, কেনোনা এই নেটওয়ার্কে থাকা আইপি অ্যাড্রেস গুলোকে স্ক্যান করা হয়, সকলের একটিভিটি গুলোর লগ রাখা হয়।

এই নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড রেখে নিজের কম্পিউটারকে সুরক্ষিত রাখতে চাইলে  আপনার ফায়ারওয়াল‘কে ঠিকঠাক মতো কনফিগ করা প্রয়োজনীয় হবে। তাছাড়া আইপি ফিল্টার সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করেও আপনার কম্পিউটারকে নিরাপদ করতে পারবেন। এই টাইপের সফটওয়্যার গুলোর কাছে সরকারের কম্পিউটার গুলোর আইপি অ্যাড্রেস ডাটাবেজ থাকে এবং এই ডাটাবেজ প্রতিনিয়ত আপডেট হয়। সকল রিস্কি আইপি অ্যাড্রেস গুলোকে এই সফটওয়্যারটি ব্ল্যাকলিস্ট করে রাখে। যখন কোন ব্ল্যাকলিস্টে থাকা কম্পিউটার আপনার কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে চাইবে, সফটওয়্যারটি কানেকশনকে নাকোজ করে দেবে। তবে এই ধরনের সফটওয়্যার আপনাকে যে ১০০% সুরক্ষা প্রদান করতে পারবে এরকম কোনই নিশ্চয়তা নেই। যদি আপনার উপর যে নজরদারি করছে, তার আইপি অ্যাড্রেস যদি ব্ল্যাকলিস্টে না থাকে, সফটওয়্যারটি কোন কাজেই আসবে না। আপনি আইপি ফিল্টার করুণ বা আইপি মাস্কিং করুণ, কোনটিই আপনাকে ১০০% সুরক্ষা প্রদান করতে পারবে না।

আশা করছি, পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো আপনি জানলেন। লোকাল ফাইল শেয়ারিং করার জন্য পিটুপি বেশ ভালো পদ্ধতি, তাছাড়া বিভিন্ন অফিস এবং বিজনেসের ক্ষেত্রে এই নেটওয়ার্ক’কে বিস্তরভাবে ব্যবহার করা হয়। আমি বলবো, কপিরাইট ফাইল ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন, পারলে ক্র্যাক সফটওয়্যার ইউজ করা থেকেও বিরত থাকুন, এগুলো সত্যিই অনেক বড় সিকিউরিটি সমস্যা তৈরি করতে পারে।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories