ফাইললেস ম্যালওয়্যার : যে ম্যালওয়্যারের কোন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু ধ্বংস করতে পারে সবকিছু!

যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনার কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার কিভাবে প্রবেশ করতে পারে, এখন আপনি যদি সিকিউরিটি সম্পর্কে সামান্য একটুও বুঝে থাকেন বা ওয়্যারবিডি নিয়মিত অনুসরণ করেন তাহলে অবশ্যই জানবেন যে, ম্যালওয়্যার একটি ফিজিক্যাল ফাইল যেটা কোন না কোনভাবে আপনার কম্পিউটার ফাইল সিস্টেমের মধ্যে প্রবেশ করে এবং ফাইল সিস্টেমে ইনফেকশন ছরায় বা ডাটা চুরি সহ অনেক নাশকতা চালাতে পারে। অনেক ম্যালওয়্যার জাস্ট এক্সিকিউটেবল ফাইল হয়ে থাকে, যেটা আপনার সিস্টেমে ইন্সটল হয়ে যায় এবং কাজ করতে থাকে। কিন্তু আপনাকে যদি বলা হয়, এমন এক টাইপের ম্যালওয়্যার রয়েছে যেটার নিজের কোন ফাইলই নেই বা ফাইললেস ম্যালওয়্যার (Fileless Malware) — কিন্তু আপনার সিস্টেমে ততোটাই ক্ষতি করতে পারে, যতোটা আলাদা ম্যালওয়্যার গুলো করে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে?

জানি ব্যাপারটা শুনতে একটু আশ্চর্যকর বটে, ফাইল ছাড়া আবার কিভাবে কোন ম্যালওয়্যার হতে পারে, আজকের দিনে প্রত্যেকটি কম্পিউটারে অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম রয়েছে তাই সাধারণ ম্যালওয়্যার গুলো যতোই চালাক হোক না কেন অ্যান্টিভাইরাস এর হাতে ধরা পড়ার সুযোগ থেকেই যায়, কিন্তু যদি সেটা কোন ফাইলই না হয় তাহলে কিভাবে ভাইরাস হিসেবে সনাক্ত করা সম্ভব হবে?

ঠিক আছে, শতাধিক কল্পনা করার কোন প্রয়োজন নেই, এই আর্টিকেলে আমি বর্ণনা করেছি ফাইললেস ম্যালওয়্যার কি, এটি কিভাবে আপনার কম্পিউটারে আক্রমন চালাতে পারে, এটি কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে এ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এখন আপনাকে যা করতে হবে, চুপচাপ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে ফেলুন!

ফাইললেস ম্যালওয়্যার কি?

দারুণ প্রশ্ন, “ফাইললেস” আবার কেমন জিনিষ, মানে ম্যালওয়্যার কিভাবে ফাইললেস হতে পারে বা ফাইল ছাড়া কম্পিউটার ওয়ার্ল্ডে কোন কিছুর অস্তিত্বই কিভাবে থাকতে পারে? — হ্যাঁ, অবশ্যই কোন ম্যালওয়্যার সম্পূর্ণ ফাইললেস হতে পারে না। ফাইললেস ম্যালওয়্যারও ফাইললেস নয়, কিন্তু এর এরকম নাম হওয়ার পেছনে কারণ রয়েছে। আপনি যদি জানেন, কিভাবে অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম গুলো কাজ করে থাকে তাহলে এই টার্মটি বুঝতে সুবিধা হয়ে যাবে।

অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম গুলো আপনার কম্পিউটার ফাইল সিস্টেম স্ক্যানিং করার মাধ্যমে কাজ করে। কোন ম্যালওয়্যার আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করলে সেটা ফাইল সিস্টেমে থাকবেই, আর শেখান থেকে প্রসেস ক্রিয়েট করবে বা আলাদা ফাইল গুলোকেও নষ্ট করার চেষ্টা চালাবে। অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম আপনার কম্পিউটারের সম্পূর্ণ ফাইল সিস্টেম তন্নতন্ন ভাবে স্ক্যান করবে এবং ম্যালওয়্যার খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। অ্যাডভান্সড অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার গুলো আর্কাইভ ফাইল গুলোর ভেতরের ফাইল গুলোও স্ক্যান করে ম্যালওয়্যার খুঁজে পাওয়ার জন্য।

এখন চিন্তা করে দেখুন, যদি কোন ম্যালওয়্যারের ফাইল হওয়ার কোন ট্রেস না থাকে বা সে যদি কম্পিউটার ফাইল সিস্টেমেই অবস্থান না করে সেক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাস কিভাবে তা খুঁজে বের করবে? যদি সেটাকে খুঁজেই না পাওয়া যায় তাহলে রি-মুভ করা যাবে কিভাবে? ফাইললেস ম্যালওয়্যার এর ও ফাইল রয়েছে, কিন্তু সেটা কম্পিউটার ফাইল সিস্টেমে থাকে না, তাই এর এরকম নামকরন করা হয়েছে।

ফাইললেস ম্যালওয়্যার থাকে কোথায়?

এ আবার কেমন কথা, যদি কোন ফাইল ফাইল সিস্টেমেই না থাকে তাহলে সিস্টেমে কাজ করে কিভাবে? বা সিস্টেমে ইনফেকশন ছড়ায়ই বা কিভাবে? — ফাইললেস ম্যালওয়্যার অনেক চালাক টাইপের, আর এটি আপনার কম্পিউটারের ফাইল সিস্টেম থেকে নয় বরং কম্পিউটার র‍্যামের মধ্যে বসে থাকে এবং সকল ঝামেলা পাকীয়ে থাকে। আপনি নিশ্চয় জানেন, র‍্যাম কোন কম্পিউটারের প্রধান মেমোরি হয়ে থাকে, যখন কোন সফটওয়্যার কম্পিউটারে রান করানো হয় সেটা র‍্যামের মধ্যে লোড হয়ে রান হয়। আপনার সিস্টেমে এমন কোন সফটওয়্যার রয়েছে হয়তো সেটাতে ত্রুটি রয়েছে, ব্যাকডেটেড সফটওয়্যার যেটাতে সিকিউরিটি হোল রয়েছে, বা ওয়েব ব্রাউজারের কোন প্লাগিনে ত্রুটি রয়েছে কিংবা অপারেটিং সিস্টেমেই ব্যাকডোর রয়েছে, আর এগুলোর সুযোগ নিয়েই ফাইললেস ম্যালওয়্যার সিস্টেমে প্রবেশ করে এবং র‍্যামের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।

এখন যেহেতু র‍্যামের মধ্যে এর বসবাস তাই সহজেই অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম গুলোকে চকমা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই বিশেষ টাইপের ম্যালওয়্যারটি, অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম গুলো মূলত কম্পিউটার ফাইল সিস্টেম স্ক্যান করে, র‍্যাম ভুলেও স্ক্যান করে না। মানে ভূতটা শর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে।

তবে এই টাইপের ম্যালওয়্যারকে অনেক দ্রুত নিজের কাজ সারতে হয়, যেহেতু র‍্যাম একটি অস্থায়ী মেমোরি, মানে কম্পিউটারে পাওয়ার অফ করলেই র‍্যাম ফাঁকা হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারও রিমুভ হয়ে যায়, তাই অল্প সময়েই একে কাজ করতে হয়। পাওয়ার চলে যাওয়ার পরেও প্রধান ফাইল সিস্টেমের ফাইল গুলোকে কম্পিউটার মনে রাখে, তাই সাধারণ ম্যালওয়্যার গুলো কম্পিউটার অন হওয়ার পরে আবার কাজ শুরু করতে পারে। বাট ফাইললেস ম্যালওয়্যারকে কম্পিউটার অফ করার পূর্বেই সকল কাজ শেষ করতে হয়।

এই ম্যালওয়্যার থেকে প্রতিকার

এখন বাঁচার উপায় গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, প্রথমত না জেনে শুনে অবশ্যই যেকোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করবেন না, যদিও এর মান “ফাইললেস” কিন্তু উপরের প্যারাগ্রাফ গুলো থেকে জেনেছেন এরও ফাইল রয়েছে, তাই যেকোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করার আগে নিশ্চিত করুণ। যেহেতু এই টাইপের ম্যালওয়্যার আপনার যেকোনো সফটওয়্যারের ত্রুটি খুঁজে সেদিক দিয়ে সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে, তাই অবশ্যই প্রত্যেকটি সফটওয়্যার লেটেস্ট আপটুডেটেড করে রাখুন। এমনকি অপারেটিং সিস্টেমেরও লেটেস্ট আপডেট অ্যাপ্লাই করে রাখুন, যেকোনো সফটওয়্যার লেটেস্ট সিকিউরিটি প্যাচ সবার আগে অ্যাপ্লাই করে নিন।

সাথে অবশ্যই একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করুণ, ফ্রী অ্যান্টিভাইরাস গুলো শুধু ফাইল সিস্টেম স্ক্যান করে, কিন্তু অনেক অ্যাডভান্স অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম রয়েছে যারা র‍্যামও স্ক্যান করেন, তাদের ব্যাবহার করুণ, উইন্ডোজ ডিফেন্ডার বেসিক প্রোটেকশনের জন্য ভালো কিন্তু এরকম আজব টাইপের ম্যালওয়্যারের জন্য অবশ্যই তৃতীয়পক্ষ ভালো এবং পেইড ভার্শন অ্যান্টিভাইরাস প্রয়োজনীয়। সাথে একটি অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার প্রোগ্রামও ব্যাবহার করেন। এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন, কেন একটি সেকেন্ডারি অ্যান্টিম্যালওয়্যার ইউজ করা প্রয়োজনীয়।

আশা করছি, এতক্ষণে ফাইললেস ম্যালওয়্যার সম্পর্কে জানতে আর বাকী নেই আপনার, সাথে জানলেন কিভাবে এটি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। তবে কমপ্লিট সিকিউরিটির জন্য আমি রেকমেন্ড করবো ওয়্যারবিডি সিকিউরিটি ক্যাটাগরি থেকে সকল আর্টিকেল গুলোর উপর চোখ বুলিয়ে নিতে — এতে সাইবার সিকিউরিটি এবং নানান টাইপের ম্যালওয়্যার সম্পর্কে আপনার ভালো পরিমাণে জ্ঞান অর্জিত হবে। তাছাড়া এই আর্টিকেল নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই নিচের কমেন্ট সেকশন সর্বদা খোলা রয়েছে।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories