৫টি বেস্ট ফ্রি অনলাইন ফটো ব্যাকআপ সার্ভিস! [ওয়্যারবিডি চয়েজ]

ক্লাউড স্টোরেজ আমরা সবাই ব্যবহার করি। তবে বিশেষ করে যারা আনলিমিটেড ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং যাদের ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ খুবই সীমিত এবং এসডি কার্ড সাপোর্টও নেই কিংবা ব্যবহার করেনা, তাদের কাছে ক্লাউড স্টোরেজ এবং অনলাইন ফটো ব্যাকআপ সার্ভিস খুবই জনপ্রিয়। কারন, আমরা কেউই আমাদের কোন মেমরি হারিয়ে ফেলতে চাই না। আর বর্তমান সময়ে মেমরি রাখা মানেই আমাদের স্মার্টফোনে তোলা সব ফটোগুলোকে সেভ করে রাখা যাতে আমরা যেকোনো সময় সেগুলোকে আবার দেখতে পারি এমনকি সেগুলো ডিলিট হয়ে গেলেও।

আর এর সবথেকে উপযোগী উপায় হচ্ছে একটি অনলাইন ফটো ব্যাকআপ সার্ভিস এবং অ্যাপ ব্যবহার করা যেগুলো অটোমেটিক আপনার ফোনে তোলা সব ফটো ব্যাকআপ করে রাখবে যাতে সেগুলো আপনি যেকোনো ডিভাইস থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করে দেখতে পারেন এবং দরকার হলে ডাউনলোড করতে পারেন। আজকে এই ধরনের বেস্ট কয়েকটি ফ্রি ফটো ব্যাকআপ সার্ভিস নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

Google Photos

অনলাইন ফটো ব্যাকআপ সার্ভিসের কথা বলতে হলে প্রথমে গুগল ফটোস-এর কথা বলতেই হয়। কারন, অনেক দিক থেকেই এটি ওভারঅল বেস্ট এবং সবথেকে জনপ্রিয় ফটো ব্যাকআপ সার্ভিস। গুগল  ফটোস মুলত গুগল ড্রাইভেরই আরেকটি পার্ট। তবে গুগল ফটোসে আপনি আপনার ফোনের যেসব ফটো ব্যাকআপ করবেন, সেগুলোর রেজুলেশন এবং কোয়ালিটি যদি কিছুটা কমিয়ে ব্যাকআপ করতে রাজী থাকেন, তাহলে এখানে আপনি আনলিমিটেড ফটো ব্যাকআপ করতে পারবেন।

এখানে আপনি যতগুলোই ফটো ব্যাকআপ করুন, এই ফটোগুলোর কোনটিই আপনার অ্যাকচুয়াল গুগল ড্রাইভের ফ্রি ১৫ জিবির থেকে কোন স্পেসই কনজিউম করবে না। তবে যদি সাইজ এবং রেজুলেশন না কমিয়ে একেবারে অরিজিনাল রেজুলেশনেই আপলোড করতে চান, তাহলে আপনার গুগল ড্রাইভে যতটুকু স্পেস আছে সেটা কনজিউম হবে এবং ততটুকু পর্যন্তই ফটো আপলোড করতে পারবেন। এছাড়া গুগলের কমপ্রেশনও বেশ ভালো মানের।

তাই ছবিগুলোর সাইজ, রেজুলেশন এবং কোয়ালিটি কিছুটা কমানোর পরেও ছবিটি যেকোনো জায়গায় আপলোড করার জন্য যথেষ্ট ইউজেবল থাকে। এছাড়া Google Drive উইন্ডোজ সফটওয়্যারের সাহায্যে আপনার ফোনে তোলা যেকোনো ছবি অনলাইনে ব্যাকআপ করার সাথে সাথে আপনার পিসিতেও অটোমেটিক ডাউনলোড করতে পারবেন।

এছাড়া আপনার ব্যাকআপ করা সব ছবি যেকোনো ডিভাইস থেকে আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট লগইন করে গুগল ফটোস ওয়েবসাইট/ওয়েপ অ্যাপের সাহায্যে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এছাড়া গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্টাগ্রেশন, গুগল লেন্স ইন্টাগ্রেশন, বিল্ট ইন ইমেজ এডিটর, ফেস রিকগনিশন/গ্রুপিং ইত্যাদি সব ফিচার মিলিয়ে এটি অনলাইন ফ্রি ফটো ব্যাকআপ সার্ভিসের একটি কমপ্লিট প্যাকেজ বলা যায়।

ShoeBox

অন;লাইনে ফটো ব্যাকআপ করার জন্য এই সার্ভিসটিও মোটামোটি জনপ্রিয় এবং বেশ ভালো। এখানেও আপনি আপনার ফোনের ক্যামেরা রোলে যতগুলো ইমেজ থাকবে সবকিছুই ব্যাকআপ করতে পারবেন তবে কিছুটা রেজুলেশন কমিয়ে যাতে ইমেজের সাইজ কিছুটা কমে যায়। গুগল ফটোসের মতোই এটিতেও আপনি ফোনে নতুন কোন ছবি তোলার সাথে সাথেই সেটি ব্যাকআপ হয়ে যাবে এবং আপনি সেই ফটোটি আপনার যেকোনো ডিভাইস থেকে ShoeBox এর ওয়েবসাইটটি কিংবা অ্যাপ কিংবা ওয়েব অ্যাপ যেকোনো জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন।

গুগল ফটোস এর মতো এখানেও আপনি কাস্টম অ্যালবাম করে ফটোগুলো সাজিয়ে রাখতে পারবেন, ডুপ্লিকেট ফটো খুঁজে বের করতে পারবেন এবং ডিলিট করতে পারবেন, ফটো শেয়ার করতে পারবেন এবং যা যা করার কথা তার প্রায় সবকিছুই করতে পারবেন। তবে এটিকে প্রাইসিং এর দিক থেকে আমি গুগলের থেকে ভালো বলবো।

কারন, গুগল কখনোই আপনাকে আনলিমিটেড ফটো স্টোরেজ দেবে না যদি আপনি ফটোগুলো অরিজিনাল রেজুলেশনে এবং অরিজিনাল কোয়ালিটিতে ব্যাকআপ করতে চান। সেক্ষেত্রে আপনাকে এক্সট্রা স্টোরেজ কিনতে হবে। ১০০ জিবি স্টোরেজের জন্য আপনাকে প্রায় ২ ডলার খরচ করতে হবে প্রতি মাসে। আর ১০ ডলার খরচ করতে হবে প্রতি মাসে যদি ১ টেরাবাইট স্টোরেজ চান। কিন্তু কোনটাই আনলিমিটেড নয়।

তবে Shoebox ব্যবহার করলে আপনি ৫ ডলার প্রত্যেক মাসে খরচ করলেই আনলিমিটেড ফটো স্টোরেজ পাবেন এবং প্রত্যেকটি ফটো অরিজিনাল রেজুলেশনে কোনরকম কমপ্রেস না করে ব্যাকআপ করতে পারবেন। এছাড়া কোয়ালিটি কমিয়ে ফ্রি আনলিমিটেড স্টোরেজ তো আছেই। তার জন্য ১ টাকাও খরচ করতে হচ্ছেনা আপনাকে।

Flickr

Flickr বর্তমানে Yahoo এর একটি সার্ভিস। এটিকে অনলাইন ফটো ব্যাকআপ সার্ভিস না বলে ইন্সটাগ্রামের মতো একটি ইমেজ বেজড সোশ্যাল মিডিয়া বলাই ভালো। কারন, এখানে শুধুমাত্র আপনি আপনার ক্যামেরা রোলে থাকা সব ফটো ব্যাকআপই করতে পারবেন তা নয়, বরং আপনি চাইলে আপনার বেস্ট ফটোগুলো পাবলিক করে রাখতে পারবেন যাতে সেগুলো Flickr এর যেকোনো ইউজার আপনার প্রোফাইলে ঢুকে দেখতে পারে এবং লাইক/কমেন্টও করতে পারে। এছাড়া সাধারন পার্সোনাল ফটো ব্যাকআপ করে রাখার সুবিধা তো থাকছেই। তাই এটিকে ফটো শেয়ারিং, ফটো ব্যাকআপ, যেকোনো দরকারেই আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

এখানে ব্যাকআপ করা বা আপলোড করা ইমেজগুলোকে কোনরকম কম্প্রেস করা হয়না। অরিজিনাল সাইজ এবং অরিজিনাল রেজুলেশনেই এখানে ইমেজ ব্যাকআপ করা হয়। আপনি এটি ব্যবহার করলে ফ্রি ইউজার হিসেবে ১ টেরাবাইট স্পেস ফ্রি পাবেন যেখানে আপনি ইমেজ ব্যাকআপ করতে পারবেন। আমাদের মতো একজন সাধারন ইন্টারনেট ইউজারের কাছে ১ টেরাবাইট ইমেজ স্টোরেজ আমাদের দরকারের থেকেও অনেক বেশি বলে মনে করি আমি। তাই আমার মনেও হয়না এর থেকে বেশি স্টোরেজ কারো দরকার হবে। তবে যদি দরকার হয়, তবে তার জন্য পেইড সাবসক্রিপশনও আছে যেখানে আরও বেশি স্টোরেজের সুযোগ থাকছে।

EverAlbum

এই ফটো ব্যাকআপ সার্ভিসটিও ShoeBox এর মতো যা একটি স্ট্যান্ডঅ্যালোন ফটো ব্যাকআপ সার্ভিস যা কোন মেইন ইন্ডাস্ট্রির আন্ডারে নয়। এটির ফিচারসও একেবারেই Shoebox এর মতো। আপনি এখানে আনলিমিটেড ফটো ব্যাকআপ করতে পারবেন, তবে প্রত্যেকটি ফটোর রেজুলেশন এবং সাইজ কিছুটা কমিয়ে। যদি ফুল রেজুলেশনে অরিজিনাল সাইজে ফটো ব্যাকআপ করতে চান, তাহলে আপনাকে EverAlbum এর প্রো প্ল্যান নিতে হবে যা প্রায় ১০ ডলার প্রতি মাস হিসেবে।

তবে এটিকেও প্রাইসিং এর দিক থেকে আমি গুগল ফটোস এর থেকে বেটার বলবো। কারন, ১০ ডলার প্রতি মাসে খরচ করলে গুগল আপনাকে ১ টেরাবাইট স্টোরেজ স্পেস দেবে যা আনলিমিটেড না। তবে EverAlbum এ ১০ ডলার খরচ করলে আপনি আনলিমিটেড স্টোরেজ পাচ্ছেন যেখানে আপনি চাইলে ১০০ টেরাবাইট ইমেজও ব্যাকআপ করতে পারবেন। এছাড়া EverAlbum এ বেসিক ইমজে এডিটিং, ইমেজ অ্যালবাম, ইমেজ শেয়ারিং ইত্যাদি সবধরনের ফিচারসই আছে।

Yandex.Disk

অনলাইন ফটো ব্যাকআপ সার্ভিসগুলোর মধ্যে এটা আমার পার্সোনাল ফেভারিট। রাশিয়ান টেক ইন্ডাস্ট্রি Yandex কে চেনে না এমন  ইন্টারনেট ইউজার খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে গুগলের মতোই Yandex শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিনেই সীমাবদ্ধ নয়। Yandex.Disk হচ্ছে Yandex এর ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। Yandex.Disk এর অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোন অ্যাপের সাহায্যে আপনি এখানে আপনার ক্যামেরা রোলের সব ফটো ব্যাকআপ করতে পারবেন এবং তাও অরিজিনাল রেজুলেশনে কোনরকম সাইজ না কমিয়েই।

আপনি নরমালি ফ্রি ১০ জিবি স্টোরেজ স্পেস পাবেন, তবে আপনার ফোনের ক্যামেরা রোল থেকে ব্যাকআপ করা ফুল রেজুলেশনের কোন ইমেজই আপনার এই ১০ জিবি স্পেস কনজিউম করবে না। এছাড়া আপনি আপনার ফোনের ক্যামেরা রোলে থাকা যেকোনো ভিডিও ফাইলও এখানে ব্যাকআপ করতে পারবেন এবং এই ভিডিও ফাইলগুলোও আপনার ওই ১০ জিবির থেকে কোন স্পেস কনজিউম করবে না।

অর্থাৎ, সত্যি কথা বলতে, ওপরের লিস্টের চারটি ফটো ব্যাকআপ সার্ভিসের পেইড সাবসক্রিপশনে আপনি যে সুবিধা পাবেন, সেই সুবিধা Yandex.Disk এর ফ্রি ভার্সনেই পেয়ে যাবেন। আপনি চাইলে Yandex.Disk এর ফ্রি ভার্সনে ১০০ টেরাবাইট ইমেজ এবং ভিডিও ব্যাকআপ করতে পারবেন সম্পূর্ণ ফ্রি। এছাড়া Yandex.Disk এর ওয়েব অ্যাপ এবং অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ব্যবহার করে বেসিক ইমেজ এডিটিং, ইমেজ শেয়ারিং, অ্যালবাম তৈরি ইত্যাদি সবকিছুই করতে পারবেন। যদি ফুল রেজুলেশন এবং ফুল সাইজে সব ইমেজ এবং ভিডিও ব্যাকআপ করতে চান, তাহলে আমি বলবো Yandex.Disk এর জন্য বেস্ট চয়েজ।

এগুলোই ছিলো ৫ টি বেস্ট ফ্রি অনলাইন ফটো ব্যাকআপ সার্ভিস যেগুলো আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন যদি আপনার আনলিমিটেড ইন্টারনেট বা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট থেকে থাকে। এইসবগুলো সার্ভিসের পেইড প্ল্যান থাকলেও সবগুলোরই ফ্রি ভার্সনও আছে যা অধিকাংশ ইন্টারনেট ইউজারের জন্যই যথেষ্ট। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।
Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories