ভিপিএন ও প্রক্সির মধ্যে পার্থক্য : সিকিউরিটির জন্য কোনটি বেস্ট?

আপনি যদি ইন্টারনেট ইউজার হয়ে থাকেন এবং নিজের অনলাইন সিকিউরিটির ব্যাপারে সতর্ক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই ভিপিএন এর নাম শুনেছেন এবং হয়তো ভিপিএন প্রায়ই  ব্যবহারও করেন। তবে আমাদের দেশের সাধারন মানুষ ঠিক তখনই ভিপিএন এর ব্যাপারে অবগত হয় যখনই বাংলাদেশ সরকার সাময়িকভাবে ফেসবুক বন্ধ করে দেয়। এছাড়া সাধারন মানুষ কখনো জানতেই পারেনা যে ভিপিএন নামে কিছু আছে। যাইহোক, কাজের কথায় আসি।

নিজের আইপি হাইড করার জন্য মানুষ আরো একটি জিনিস ব্যবহার করে থাকে যার নাম হচ্ছে প্রক্সি বা প্রক্সি সার্ভার। অনেকে প্রক্সি এবং ভিপিএনকে একই জিনিস মনে করে থাকে। কারন দুটি জিনিসই একটি কমন কাজ করে থাকে, তা হচ্ছে আইপি হাইড করা এবং ব্লকড ওয়েবসাইট আনব্লক করা। তবে সত্যি কথা বলতে ঠিক সেখানেই ভিপিএন এবং প্রক্সি সার্ভারের সিমিলারিটি শেষ হয়ে যায়। আজকে এই ভিপিএন এবং প্রক্সির পার্থক্যগুলো নিয়েই আলোচনা করবো এবং দেখবো যে কোনটি আপনার সিকিউরিটির জন্য বেশি ভালো।


ভিপিএন

ভিপিএন প্রোভাইডার এবং আপনি ছাড়া আর কেউই আপনার রিয়াল আইপি জানবে না!

আপনি হয়তো ভালোভাবেই জানেন যে ভিপিএন কি এবং কি কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে যদি না জেনে থাকেন এখনো, তাহলে বলি, ভিপিএন হচ্ছে আপনার এবং আপনি যে ওয়েবসাইটটিতে বা যে সার্ভারটিকে কানেক্ট করার চেষ্টা করছেন, তার মধ্যে একটি মিডল-ম্যান হিসেবে কাজ করে। আপনি ভিপিএন ব্যবহার করলে আপনি যে সার্ভারটিতে কানেক্ট করবেন, তার আগে আপনার ডিভাইসটি ভিপিএন প্রোভাইডারের নিজের সার্ভারে আগে কানেক্ট হবে এবং এরপরে আপনার কাঙ্খিত ওয়েবসাইটটির সার্ভারে কানেক্ট হবে। এর ফলে, আপনার আইপি অ্যাড্রেস হাইড হয়ে থাকবে এবং ওয়েব সার্ভারটির কাছে যে রিকুয়েস্টটি যাবে সেটি আপনার ভিপিএন প্রোভাইডারের  আইপি অ্যাড্রেস থেকে যাবে।

এর ফলে আপনার নিজের আইপি অ্যাড্রেস সুরক্ষিত এবং গোপন থাকবে। সহজ কথায় বলতে পারেন, ভিপিএন ব্যবহার করলে আপনার সম্পূর্ণ ডিভাইসটি ভিপিএন প্রোভাইডারের তৈরি একটি এনক্রিপটেড টানেলের মধ্যে দিয়ে ইন্টারনেটে সবধরনের রিকুয়েস্ট যাওয়া-আসা করে, যেখানে যেখানে ভিপিএন প্রোভাইডার এবং আপনি ছাড়া আর কেউই আপনার রিয়াল আইপি এবং লোকেশন সম্পর্কে জানতে পারেনা। এর ফলে জিয়োগ্রাফিক্যালি রেসট্রিকটেড সাইটগুলো অর্থাৎ এককথায় আপনার দেশে ব্লকড থাকা ওয়েবসাইট কিংবা ওয়েব সার্ভিসগুলোও আপনি অ্যাক্সেস করতে পারেন।

প্রক্সি সার্ভার

প্রক্সি এবং ভিপিএনের কাজ অনেকটা একই!

যদি সহজ কথায় বলতে হয়, তাহলে প্রক্সি সার্ভার এবং ভিপিএনের কাজ অনেকটাই একই। প্রক্সি সার্ভারটিও আপনার এবং আপনি যে ওয়েব সার্ভারটিতে কানেক্ট করতে চাচ্ছেন, তার মধ্যে একটি মিডল-ম্যান হিসেবে কাজ করে। আপনার ডিভাইস থেকে ইন্টারনেটে যাওয়া যাওয়া এবং আসা সবধরনের রিকুয়েস্ট প্রথমে আপনার কানেক্ট করা প্রক্সি সার্ভারে আসে এবং তারপরে আপনার কাঙ্খিত ওয়েব সার্ভারে যায় কিংবা আপনার ডিভাইসে আসে। এর ফলে ওয়েব সার্ভারটি ধরে নেয় যে রিকুয়েস্টগুলো ওই প্রক্সি সার্ভারটির আইপি অ্যাড্রেস থেকে আসছে, আপনার অ্যাকচুয়াল আইপি অ্যাড্রেস থেকে নয়। তবে ভিপিএন এবং প্রক্সির মধ্যে সিমিলারিটি এই পর্যন্তই।

ভিপিএন এবং প্রক্সির পার্থক্য

ভিপিএন এবং প্রক্সি কিভাবে কাজ করে এবং কি ধরনের সিকিউরিটি নিশ্চিত করে, তার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। প্রথমত, ভিপিএন আপনার কানেকশনটিকে এনক্রিপ্ট করে একেবারে আপনার ডিভাইসের সিস্টেম লেভেল থেকে যার ফলে আপনার পিসির সব অ্যাপস এবং সব সার্ভিস এবং সবধরনের ইনকামিং এবং আউটগোয়িং কানেকশনগুলো ভিপিএন সার্ভারের সাহায্যে এনক্রিপ্ট হয়ে যায়। আপনি চাইলে অনেকসময় আপনার ভিপিএন সফটওয়্যার থেকে কিছু কিছু অ্যাপস এক্সক্লুড করে দিতে পারবেন তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রক্সি আপনার ডিভাইসের সিস্টেম লেভেল থেকে কানেকশনকে এনক্রিপ্ট করেনা। প্রক্সি অ্যাক্টিভেট করার জন্য আপনাকে ইন্ডিভিজুয়্যাল অ্যাপস বা সফটওয়্যারের সেটিংস থেকে প্রক্সি সার্ভার চেঞ্জ করতে হয় এবং তার ফলে শুধুমাত্র ওই অ্যাপসটি বা ওই সার্ভিসটিই প্রক্সি ব্যবহার করে।

HTTP প্রক্সি সার্ভারগুলোতে কোনরকম এনক্রিপশন থাকেনা!

প্রক্সি সার্ভারগুলোর মধ্যে সবথেকে কমন হচ্ছে HTTP প্রক্সি যেগুলো আপনি ওয়েব ব্রাউজারের সেটিংস থেকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন অথবা কোন ফ্রি প্রক্সি ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার কাঙ্খিত ওয়েবসাইট অ্যাড্রেসটি টাইপ করে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে HTTP প্রক্সি ব্যবহার করে সেখানে আপনার আইপি অ্যাড্রেস হাইড করতে পারবেন। তবে নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে HTTP মানে হচ্ছে নন-সিকিওরড কানেকশন এবং HTTPS মানে হচ্ছে সিকিওরড কানেকশন। তাই আপনি HTTP প্রক্সি ব্যবহার করছেন, এর মানে হচ্ছে আপনার কানেকশনটিতে কোনরকম এনক্রিপশন নেই। অর্থাৎ প্রক্সি সার্ভারটি শুধুমাত্র আপনার আইপিটিকেই হাইড করছে, আপনার কানেকশনটিকে এনক্রিপ্ট করছে না! যা একেবারেই হাস্যকর। কারন, আপনার কানেকশনটি যদি এনক্রিপ্টই না হলো, তাহলে কেনই বা আপনি একটি প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করতে চাইবেন?

আর ভিপিএন এর কথা বলতে হলে, আপনি চাইলে আপনার নিজের কোন সার্ভার ব্যবহার করে নিজের মতো করে কনফিগার করে একটি নন-এনক্রিপ্টেড ভিপিএন সার্ভার তৈরি করতে পারবেন, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি যে ভিপিএন সার্ভিসই ব্যবহার করুন না কেন, সেটি আপনার কানেকশনকে এনক্রিপটেড করবেই। এছাড়া নিজের ইচ্ছামত কনফিগার করে নন-এনক্রিপ্টেড ভিপিএন সার্ভার তৈরি করার কোন প্র্যাক্টিকাল কারনও নেই।

ফ্রি প্রক্সি থেকে সবসময় দূরে থাকার চেষ্টা করবেন!

আর প্রক্সির কথা বললে, HTTP প্রক্সি ছাড়াও এমনও অনেক প্রক্সি আছে যেগুলো HTTPS কানেকশন সাপোর্ট করে। তবে আপনি ইন্টারনেটে যত ধরনের ফ্রি প্রক্সি ওয়েবসাইট পাবেন এবং ব্যবহার করবেন, তার সবগুলোই প্রায় HTTP কানেকশন ব্যবহার করে। অর্থাৎ, এটি শুধুমাত্র আপনার আইপিই হাইড করবে। তবে আপনার কানেকশনটি আন-এনক্রিপ্টেড হওয়ায়, আপনি ইন্টারনেটে কোথায় কি করছেন সবকিছুই আপনার প্রক্সি প্রোভাইডার এবং ওয়েব সার্ভারের কাছে ভিজিবল হবে। এর  ফলে প্রক্সি সার্ভারটি আপনাকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবে। যেমন- আপনার কানেকশনটি এনক্রিপ্টেড না হওয়ায়, এরা নিজের ইচ্ছামত অ্যাডসও ইঞ্জেক্ট করে দিতে পারবে। কারন- আপনার কানেকশনটি এনক্রিপ্টেড নয় এবং তারা আপনার কানেকশনটি মোডিফাইও করতে পারছে, যেহেতু আপনি তাদের প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করছেন। এবার নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে কেন এবং কিভাবে এসব ফ্রি প্রক্সি ওয়েবসাইটগুলো ফ্রি সার্ভিস অফার করতে পারে। তাই ফ্রি প্রক্সি থেকে সবসময় দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।

এই ছিলো ভিপিএন এবং প্রক্সি সার্ভারের মধ্যে প্রধান কিছু পার্থক্য। আশা করি কিছুটা হলেও বোঝাতে পেরেছি যে ভিপিএন এবং প্রক্সির মধ্যে কোনটি বেশি সিকিওর এবং কোনটি আপনার বা আমার ব্যবহার করা উচিত। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।
Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories