কেন লিনাক্স মিন্ট আপনার প্রথম পছন্দ হতে পারে?

যারা লিনাক্সে নতুন, তাদের প্রধান প্রশ্নটি হচ্ছে “কোন ডিস্ট্রটি আমার জন্য বেস্ট হবে?” বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, অনেক কেই দেখেছি মুড নেওয়ার জন্য কালি-লিনাক্স ইন্সটল দেয় (যাতে নিজেকে হ্যাকার বলে দাবি করতে পারে), কিন্তু লিনাক্স সম্পূর্ণ সামান্য জ্ঞানঈ না থাকার কারণে অবশেষে কালি-লিনাক্স আনইন্সটল করে দেয়। যাই হোক, লিনাক্স অবশ্যই উইন্ডোজ বা ম্যাক ওএস এর মতো নয়, এতে অগুন্তি ফ্লেভার রয়েছে, কোন কোন ফ্লেভার একই সফটওয়্যার সমর্থন করে আবার কোন গুলো সম্পূর্ণই আলাদা টাইপের। (অবশ্যই পড়ুনঃ লিনাক্স ব্যবহার শুরুর পূর্বে এই বিষয় গুলো জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়!)

আমার কাছে যখন এমন কোন ইউজার এসে জিজ্ঞেস করে সে লিনাক্সের কোন ডিস্ট্রিবিউশন ইউজ করবে, আমি আগে জানার চেষ্টা করি তিনি কোন টাইপের ইউজার। যদি দেখি তিনি নর্মাল ইউজার, সেক্ষেত্রে সর্বদাই আমি লিনাক্স মিন্ট ইউজ করতে রেকমেন্ড করি এবং একটু অ্যাডভান্স ইউজার হলে আমি উবুন্টু ইন্সটল করতে বলি। এখন সাধারণ ইউজারদের আমি কেন লিনাক্স মিন্ট ইন্সটল করতে বলি, এই টপিকের উপরই আজকের আর্টিকেল।


কেন লিনাক্স মিন্ট?

আপনি হয়তো উইন্ডোজ ইউজার ছিলেন আর এখন লিনাক্সে সুইচ করতে চাচ্ছেন, এখন কেন লিনাক্স? – হ্যাঁ অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারন রয়েছে এর পেছনে। অবশ্যই উইন্ডোজ একটি পেইড অপারেটিং সিস্টেম যেখানে লিনাক্সের বেশিরভাগ ডিট্র ফ্রী ইউজ করতে পারবেন, তাছাড়া সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসির দিক থেকে লিনাক্স সর্বদায় বেটার ছিল এবং এখনো রয়েছে। এখন একেবারে নতুন লিনাক্স ইউজারদের আমি লিনাক্স মিন্ট ইউজ করতে রেকমেন্ড করি, বিশেষ করে যারা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম থেকে লিনাক্সে আসতে চায়। এর প্রধান কারণটি হচ্ছে লিনাক্স মিন্ট এবং এর সাথের সিনামন (Cinnamon) ডেক্সটপ ইন্টারফেসটি সম্পূর্ণই উইন্ডোজের মতো। মানে আপনি উইন্ডোজ ইউজ করার আন্দাজেই আরামসে লিনাক্স ইউজ করতে পারবেন এই ক্ষেত্রে।

যদি উবুন্টুর কথা বলি, সেক্ষেত্রে উবুন্টুর ইউজার ইন্টারফেস মোটেও উইন্ডোজ লাইক ফিল প্রদান করবে না, উবুন্টু অনেকটা ম্যাক ওএস এর মতো মনে হয় আমার কাছে। তাছাড়া মিন্টের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আপনি যদি যেকোনো কম্পিউটার চালিয়ে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, হোক সেটা যেকোনো ওএস অবশ্যই আপনি মিন্টও ইউজ করতে পারবেন, আপনার নতুন করে কিছুই শেখার প্রয়োজন পড়বে না।

তাছাড়া উইন্ডোজের যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমের মতো মিন্টে পাবেন একই পজিশনে অ্যাপ বাটন, যেটাকে উইন্ডোজে স্মার্ট মেন্যু বাটন বলা হয়। মিন্টের অ্যাপ লিস্ট খোলার স্টাইলও উইন্ডোজ স্টার্ট মেন্যুর মতো। তবে লিনাক্স আর উইন্ডোজ অবশ্যই আলাদা জিনিষ। লিনাক্সে আলাদা টাইপের সফটওয়্যার বাবিহার করতে হবে আলাদা ফাইল ফরম্যাট নিয়ে কাজ করতে হবে এবং প্রয়োজনে কিছু কম্যান্ড লাইনও শিখতে হতে পারে, কিন্তু মিন্টের ইউজার ইন্টারফেস কখনোই নতুন করে শিখতে হবে না।

প্রয়োজনীয় অ্যাপ গুলো আগে থেকেই ইন্সটল করা থাকে

এটাই লিনাক্স ডিট্র গুলোর সবচাইতে মজার ব্যাপার লাগে আমার কাছে, অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করার পরে যেখানে উইন্ডোজে একেকটি করে কাজের সফটওয়্যার আলাদা ডাউনলোড করে বা কিনে তারপরে ইন্সটল করতে হয় আর তখনই সেগুলো ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠে। কিন্তু লিনাক্সের অনেক ডিস্ট্রতে অনেক কাজের সফটওয়্যার গুলো প্রি-ইন্সটল করা থাকে, আপনাকে আলাদা করে ইন্সটল করতে হবে না, অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করলেই সাথে সফটওয়্যার গুলোও ব্যবহার করা শুরু করতে পারবেন, তাও আবার সম্পূর্ণ ফ্রীতে।

উবুন্টু আর মিন্ট দুই ডিস্ট্রতেই প্রায় সিমিলার সফটওয়্যার গুলো রান করানো যায় কিন্তু বিগেনারদের কাছে লিনাক্সে সফটওয়্যার ইন্সটল করা বিশেষ চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে, সাথে বিগেনাররা লিনাক্সের সফটওয়্যার গুলো নামও জানেন না, সেক্ষেত্রে লিনাক্স মিন্টের আগে থেকেই ইন্সটল থাকা সফটওয়্যার গুলো অনেক কাজের এবং আরো বেশি বিগেনার ফ্রেন্ডলি হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।

লিনাক্সের আলাদা ডিস্ট্র গুলোর মতোই মিন্টেও ইন্টারনেট ব্রাউজার মোজিলা ফায়ারফক্স, লিব্রা অফিস, ফটো এডিটিং সফটওয়্যার গিম্ফ আগে থেকেই ইন্সটল করা থাকে। যেখানে উইন্ডোজ কম্পিউটারে মিলিয়ন ইউজার সফটওয়্যার গুলোকে ডাউনলোড করে কাজ করতে হয়। তাছাড়া মিন্টে আরো অনেক অ্যাপলিকেশন জাস্ট প্রথম বুটেই হাতের নাগালে পেয়ে যাবেন।

লিনাক্স মিন্ট সুপার ফাস্ট

আপনার হয়তো পিসি পুরাতন মডেলের বা আপনার ল্যাপটপ হার্ডওয়্যার পুরাতন হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে উইন্ডোজ ১০ ইন্সটল করলেই বুঝবেন, কতো ধানে কতো চাল। যদি লিনাক্স মিন্ট ইন্সটল করেন সেক্ষেত্রে আপনার পুরাতন পিসিতেও পুরাতন হার্ডওয়্যারের সাথে লিনাক্স মিন্ট ডিসেন্ট পারফর্মেন্স প্রদান করবে, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আপনি বুট টাইম পেতে পারবেন। সত্যিই বলতে আপনি বিশ্বাসই করতে পারবেন না আপনার পুরাতন পিসি এতো ভালো পারফর্ম করছে।

এখন অনেকে হয়তো পুরাতন পিসিতে উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করার চিন্তা করেন, কিন্তু ভালো করেই জানেন বর্তমানে উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করা কতটা বিপদজনক হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। লিনাক্স মিন্ট ইন্সটল করলে আপনি সর্বদা সকল লেটেস্ট ভার্সন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবেন এবং সেগুলোর নিয়মিত আপডেটও পেতে পারবেন। আর হাই পারফর্মেন্স তো ফ্রী থাকছেই থাকে।

লিনাক্স মিন্ট সফটওয়্যার ম্যানেজার

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অগুন্তি অ্যাপ রয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু এর একটি ডাউন সাইড হচ্ছে অ্যাপ গুলো নানান ওয়েবসাইট থেকে সাইড লোড করতে হয় তার ফলে সহজেই ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক হয়ে যায়। অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস এর অ্যাপ স্টোরের মতো সকল অ্যাপ উইন্ডোজ স্টোর থেকে পাওয়া যায় না, সেক্ষেত্রে লিনাক্স মিন্টের সফটওয়্যার ম্যানেজার বা যেটাকে গুগল প্লে স্টোরের সাথে তুলনা করতে পারেন, ডিসেন্ট জব করে থাকে।

মিন্টের সফটওয়্যার ম্যানেজারের ইন্টারফেস অনেক ক্লিন এবং মডার্ন, সাথে বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় অ্যাপ গুলো আপনি এক স্থান থেকেই পেয়ে যাবেন আর সিম্পল কয়েক ক্লিকে তা ডাউনলোডও করতে পারবেন। হ্যাঁ, অনেক সফটওয়্যার সাইড লোড করতে হতে পারে কিন্তু বিগেনারদের তা দরকারই পড়বে না। আপনি যদি কখনোও কম্পিউটারে সফটওয়্যার ইন্সটল না করে থাকেন সেক্ষেত্রেও মিন্টে আরামে সফটওয়্যার ইন্সটল করতে পারবেন, কেননা এটা পানি পান করার চাইতেও সহজ কাজ।

সহজ কাস্টমাইজেশন সুবিধা

প্রায় লিনাক্সের সকল ডিস্ট্র গুলোই অনেক কাস্টম করা যায়, যেকোনো ইচ্ছা মতো ইন্টারফেস দেওয়া যায়, কিন্তু বিগেনারদের জন্য সবকিছু নয়। উবুন্টু, ফেডোরা, এবং আলাদা লিনাক্স ডিস্ট্র গুলোকে জিনোম ডেস্কটপ ইন্টারফেস থাকে, যেটাকে ক্যাস্টম করা একটু ঝামেলার কাজ। কিন্তু মিন্টের সাথে সেটা মোটেও ঘটবে না, মিন্টে মাত্র মাউস রাইট ক্লিক করার মাধ্যমেই অনেক কাস্টমাইজেশন অপশন পেয়ে যাবেন।

সহজেই থিম বদলাতে পারবেন, উইন্ডো বর্ডার, আইকন ইত্যাদি কাস্টম করতে পারবেন, আর এর জন্য কোন তৃতীয়পক্ষ অ্যাপ ইন্সটল করারও প্রয়োজন পড়বে না। আপনি যদি আগে উইন্ডোজ ব্যবহার করে থাকেন, সেক্ষেত্রে মিন্ট কাস্টম করা আপনার বাম হাতের খেল হতে পারে।

লিনাক্স মিন্ট অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ডিট্র

যাই হোক, যদিও জনপ্রিয়তা কোন ব্যাপার না, কিন্তু যখন আপনার কম্পিউটারের কোন সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে যে অপারেটিং সিস্টেম যতোবেশি জনপ্রিয় তার ইউজার কমিউনিটিও ততোবড় হয়ে থাকে, মানে যেকোনো সমস্যার সমাধান কমিউনিটি থেকে নিমিষের মধ্যেই পাওয়া সম্ভব হতে পারে। ধরুন আপনি একটি ইউনিক প্রবলেমে পড়েছেন, হতে পারে আগে থেকেই অন্য কেউ সেই একই প্রবলেমে পড়েছিল এবং তার সমাধানও খুঁজে বের করে অনলাইনে পোস্ট করেছে, এভাবেই আপনি অল্মোস্ট যেকোনো সমস্যার সমাধান পেয়ে যেতে পারবেন।

যেহেতু মিন্ট উবুন্টুর উপর তৈরি করা একটি ডিস্ট্র তাই উবুন্টু কমিউনিটি থেকে অনেক সমস্যার সমাধান মিন্টে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। আর উবুন্টুর ইউজার কমিউনিটি একটু বেশিই বড়!

লিনাক্স মিন্ট সত্যি অসাধারণ! যদি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে নিশ্চয় বুঝবেন আমি কি বুঝাতে চেয়েছি। আমি জানি না, আপনি কোন টাইপের ডেস্কটপ ইউজার এবং আপনার পিসির অপারেটিং সিস্টেম থেকে আপনি কি কামনা করেন, কিন্তু আমার জন্য মিন্ট একটি বেস্ট ওএস, সাথে যেকোনো বিগেনারদের জন্য এটি একটি বেস্ট ওএস হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। অবশ্যই উবুন্টু একটি পাওয়ারফুল ডিস্ট্র, কিন্তু মিন্ট আরো বেশি বিগেনার ফ্রেন্ডলি!

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories