কয়েকটি ওয়েব অ্যাপস যেগুলো আপনার পিসি সফটওয়্যারকে রিপ্লেস করতে পারে!

প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট যেভাব উন্নত হচ্ছে সেভাবেই ইম্প্রুভ হচ্ছে ইন্টারনেটের কন্টেন্টগুলো। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন অনেক মজার মজার ইন্টারেস্টিং ওয়েবসাইট এবং অনেক অনেক কাজের ওয়েব অ্যাপস। আপনি যদি না জেনে থাকেন যে ওয়েব অ্যাপস কি এবং কিভাবে কাজ করে তাহলে আপনি নিচের আর্টিকেলটি একবার পড়ে আসতে পারেন।

→ ওয়েব অ্যাপ কি এবং কিভাবে কাজ করে? এর উপকারিতা কি?

এমনকি এখনকার সময়ে এমন অনেক ওয়েবসাইট এবং ওয়েব অ্যাপস আছে যেগুলো সত্যিকার অর্থেই আপনার পিসির কিছু কিছু সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামকে রিপ্লেস করে ফেলতে পারে। অর্থাৎ এই ওয়েব অ্যাপসগুলো আপনার পিসির কিছু কিছু সফটওয়্যারের কাজ ওয়েবেই আরও সহজে এবং আরও ভালোভাবে করে ফেলতে পারে। যার ফলে এই ওয়েব অ্যাপগুলো ব্যবহার করলে আপনাকে এক্সট্রা কোন উইন্ডোজ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবেনা। আজকে এমন কয়েকটি ওয়েব অ্যাপস নিয়েই আলোচনা করবো।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

Pixlr Editor

সহজে ইমেজ এডিট করার জন্য Pixlr Editor

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এটি একটি ইমেজ এডিটর। অন্যান্য ইমেজ এডিটরের সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে, এটির ইউজার ইন্টারফেস একেবারেই ফটোশপের মতো। ফাংশনালিটির দিক থেকে ফটোশপের মতো না এবং তা হওয়ারও কথা না। তবে অন্যান্য অধিকাংশ ইমেজ এডিটরের থেকে এটিতে অনেক বেশি ফিচারস পাবেন। আপনি যদি ইমেজ এডিটিং এর ক্ষেত্রে ফটোশপেই অভ্যস্ত হন, তাহলে আপনার কাছে এই ইমেজ এডিটরটিও ভালো লাগবে কারন এটি এবং ফটোশপের মধ্যে অনেকটাই সিমিলারিটি আছে। এমনকি ফটোশপের কয়েকটি অ্যাডভান্সড টুলসও আপনি পাবেন এই ইমেজ এডিটরে।

এই ইমেজ এডিটরটিকে F11 চেপে ক্রোম থেকে ফুলস্ক্রিন মোড করে নিলে একেবারেই ফটোশপের মতো একটি স্ট্যান্ডঅ্যালোন পিসি সফটওয়্যারের মতো বিহেভ করে। এমনকি ফটোশপের ওপরে যে ছোট ছোট ট্যাবগুলো থাকে সেগুলোও আছে এই ইমেজ এডিটরে। এছাড়া নিজের ইচ্ছামত ব্ল্যাংক ক্যানভাস থেকে এডিট শুরু করা এবং নিজের পিসি থেকে ইমেজ সিলেক্ট করে এডিট করা এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ইমেজ ইমপোর্ট করে এডিট করার সুযোগও থাকছে এই ইমেজ এডিটরে। এছাড়া ফটোশপের মতো লেয়ার তৈরি করার সুবিধাও থাকছে। এই ইমেজ এডিটরটি সম্পূর্ণ বিনামুল্যে উপভোগ করা যাবে, তবে ছোট ছোট কয়েকটি অ্যাডস আছে, যদিও সেগুলো খুব একটা বিরক্তির কারন হয়না।

ভিজিট Pixlr Editor

TinyPNG

ইমেজ কম্প্রেস করে সাইজ কমানোর জন্য TinyPNG

এটি একটি ইমেজ কনভার্টার বলতে পারেন। ইমেজ কনভার্টার বলতে এটি শুধুমাত্র একটি কাজই করতে পারে, তা হচ্ছে ইমেজের সাইজ ছোট করা। অনেকসময় আমাদের সবারই কোন একটি ইমেজের সাইজ ছোট করার দরকার পড়ে। আপনার যদি একটি ব্লগ বা একটি ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে আপনি ভালো বুঝবেন যে ইমেজের সাইজ কেন ছোট করার দরকার। ছোট সাইজের ইমেজ ব্যবহার করলে আপনার ওয়েবসাইটটি অনেক দ্রুত লোড হতে পারবে। এছাড়া অনেকসময় অনেক জায়গায় প্রোফাইল পিকচার কিংবা অ্যাভাটার আপলোড করার জন্যও আমাদের ছোট সাইজের ইমেজের দরকার পড়ে।

ইমেজ এডিট করার জন্য হয়তো আপনি অনেক ভারি ভারি সফটওয়্যারের সাহায্য নিয়ে থাকেন। তবে ইমেজ সাইজ ছোট করার জন্য আপনি আলাদা কোন সফটওয়্যারের সাহায্য না নিয়ে TinyPNG নামের এই ওয়েব অ্যাপটির বা ওয়েবসাইটটির সাহায্য নিতে পারেন। এখানে শুধুমাত্র আপনার JPG অথবা PNG ইমেজটি আপলোড করে দেবেন এবং এটি আপনার ইমেজটির সাইজ ৫-৬ ভাগ কমিয়ে দেবে। যেমন- একটি ৪ মেগাবাইটের ইমেজকে কম্প্রেস করে এটি ৫০০ কেবিও করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে ছবির কোয়ালিটি কিছুটা কমে যায় ঠিকই, তবে দুটি ছবি পাশাপাশি ধরে খুব ভালোভাবে খেয়াল না করলে আপনি সহজে কোয়ালিটির কোন পার্থক্যই খুঁজে পাবেন না।

ভিজিট TinyPNG

Online-Convert

মিডিয়া কন্টেন্ট একটি ফরম্যাট থেকে আরেকটি ফরম্যাটে কনভার্ট করতে Online-Convert

আমাদের সবারই অনেকসময় অনেক মিডিয়া কন্টেন্ট কনভার্ট করার দরকার হয় একটি ফরম্যাট থেকে আরেকটি ফরম্যাটে। যেমন একটি ইমেজকে JPG থেকে PNG, অনেকসময় কোন ভিডিও কন্টেন্টকে MP4 থেকে AVI ইত্যাদি এমন অনেক মিডিয়া কন্টেন্টকে আমাদের কনভার্ট করার দরকার পড়ে। এক্ষেত্রে আমরা সবাই প্রায় থার্ড পার্টি সফটওয়্যার যেমন Format Factory, HandBrake ইত্যাদি। তবে আপনি যদি এই কাজের জন্য আলাদা কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে না চান, তাহলে এই ওয়েবসাইটটি বা ওয়েব অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। এখানে এককথায় বলতে হলে আপনি যেকোনো ফরম্যাটের যেকোনো মিডিয়া কন্টেন্ট যেকোনো এভেইলেবল ফরম্যাটে কনভার্ট করে নিতে পারবেন।

তবে আমি বলবো এই ওয়েবসাইটটি তখনই ব্যবহার করবেন যখন আপনার হাই স্পিড ইন্টারনেট কানেকশন এবং আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ থাকবে। কারন, এখানে কোন কন্টেন্ট কনভার্ট করার জন্য আপনাকে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করে আপলোড করতে হবে এবং কনভার্ট করা হয়ে গেলেও আপনাকে আপনার ব্যান্ডউইথ কনজিউম করেই ডাউনলোড করতে হবে মিডিয়া কন্টেন্টটি। তাই যদি ব্যান্ডউইথ এবং ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে কোনরকম সমস্যা না থাকে, তাহলে এই ওয়েব অ্যাপস টি আপনি ব্যবহার করে দেখতেই পারেন।

ভিজিট Online-Convert

Sejda PDF Editor

সহজে যেকোনো পিডিএফ ফাইল এডিট করতে Sejda PDF Editor

আমি জানি এটার নাম শুনেই আপনি বুঝে গিয়েছেন যে এটি কি ধরনের ওয়েব অ্যাপ এবং এটির কাজ কি। আমরা অনেকেই পিডিএফ ফাইল এডিট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভারি ভারি প্রোগ্রাম ইন্সটল করে রাখি পিসিতে। তবে শুধুমাত্র পিডিএফ এডিট করার জন্য এত ভারি ভারি প্রোগ্রাম ইন্সটল করে রাখার কোন দরকারই নেই, যেখানে এই সিম্পল কাজটি আপনি আপনার ওয়েব ব্রাউজারে একটি ওয়েব অ্যাপ ব্যবহার করেই করে ফেলতে পারেন। এই ওয়েবসাইটটিতে আপনাকে জাস্ট একটি পিডিএফ ফাইল আপলোড করতে হবে যেটি আপনি এডিট করতে চান।

এই ওয়েব অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেসও যথেষ্ট মিনিমাল এবং খুবই সহজ। আপলোড করেই আপনার পিডিএফ এর এডিটেবল অংশগুলো আপনাকে দেখানো হবে এবং সেখানে আপনি ইচ্ছামত এডিট করতে পারবেন। যেমন আপনি নিজের ইচ্ছামত যেকোনো ফর্ম পূরণ করতে পারবেন, ছবি অ্যাড করতে পারবেন, আইকন অ্যাড করতে পারবেন, যেকোনো লেখা মুছে দিতে পারবেন, পিডিএফ সাইন করতে পারবেন এবং আপনি চাইলে একটি ব্ল্যাংক পেজ থেকে নিজের ইচ্ছামত পিডিএফ তৈরিও করতে পারবেন। এছাড়া এখানে আপনি যেকোনো বড় সাইজের পিডিএফ আপলোড করে সেটি কম্প্রেস করে সাইজও কমিয়ে ফেলতে পারবেন।

ভিজিট Sejda PDF Editor

Skype WEB

স্কাইপের আনরেসপনসিভ ডেক্সটপ অ্যাপ ব্যবহার করতে না চাইলে Skype WEB

যারা ভিডিও কলিং এর জন্য স্কাইপ ব্যবহার করেন এখনো এবং উইন্ডোজ ১০ এর ডিফল্ট স্কাইপ অ্যাপ নিয়ে পড়ে আছেন, তাদের জন্য এই ওয়েব অ্যাপটি। আপনি যদি মাইক্রোসফটের তৈরি অফিশিয়াল উইন্ডোজ ১০ এর স্কাইপ অ্যাপটি ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি জানেন যে এই অ্যাপটি খুবই আনরেস্পন্সিভ এবং অনেক সময় ব্যবহার করারই অযোগ্য হয়ে পড়ে। এছাড়া স্কাইপের যে Win32 অ্যাপটি আছে সেটির ডিজাইন খুব বেশি আপডেটেড নয় এবং সেটি খুবই ভারি একটি অ্যাপ। তাই স্কাইপের কোন ডেস্কটপ ক্লায়েন্টই যাদের পছন্দ হয়না, তারা স্কাইপের অফিশিয়াল ওয়েব অ্যাপস টি ব্যবহার করতে পারেন।

স্কাইপ ওয়েব অ্যাপটি ব্যবহার করতে আপনার শুধুমাত্র দরকার হবে একটি মডার্ন ওয়েব ব্রাউজার, একটি স্কাইপ অ্যাকাউন্ট বা মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট এবং মোটামুটি ফাস্ট একটি ইন্টারনেট কানেকশন। আপনি স্কাইপ ওয়েব গুগল ক্রোম, মাইক্রোসফট এজ, মজিলা ফায়ারফক্স ইত্যাদি সবজায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। স্কাইপের ওয়েব অ্যাপটির সাহায্যে আপনি ভয়েস কল, ভিডিও কল, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট সেন্ড এবং রিসিভ এবং এমনকি স্কাইপ- ল্যান্ডলাইন বা স্কাইপ ডাইরেক্ট কলও করতে পারবেন যেগুলো স্কাইপ ক্রেডিটের সাহায্যে করতে হয়। স্কাইপের ডেক্সটপ ক্লায়েন্টে যেসব ফিচারস আছে, তার প্রায় সবগুলোই পাবেন স্কাইপ ওয়েবে এবং সবথেকে ভালো ব্যাপারটি হচ্ছে, স্কাইপের ওয়েব অ্যাপটি স্কাইপের অফিশিয়াল উইন্ডোজ ১০ অ্যাপের থেকে অনেক বেশি স্ট্যাবল এবং রেসপনসিভ।

ভিজিট Skype WEB

তো এই ছিলো কয়েকটি ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপস যেগুলো আপনার রেগুলার কয়েকটি পিসি সফটওয়্যারকে রিপ্লেস করতে পারে বা পিসি সফটওয়্যারের অলটারনেটিভ হিসেবে কাজ করতে পারে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। আপনার জানামতে এমন যদি আরও কোন ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ থাকে যেগুলো কোন পিসি সফটওয়্যারকে রিপ্লেস করতে পারে, তাহলে সেগুলোও কমেন্ট সেকশনে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories