৩.৫এমএম জ্যাক বনাম টাইপ সি পোর্ট ইয়ারফোনস | কে হতে পারে ভবিষ্যৎ?

বন্ধুরা আমরা প্রায় পেছনের কয়েক বছর যাবত আমাদের স্মার্টফোনে ৩.৫এমএম জ্যাক ওয়ালা ইয়ারফোনস ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু কয়েকদিন আগে থেকে শুনছি যে, আইফোন ৭ এ নাকি ৩.৫এমএম জ্যাক ব্যবহার করা হবে না। বরং সেখানে থাকবে লাইটেনিং পোর্ট ওয়ালা ডিজিটাল ইয়ারফোনস। তো এই অবস্থায় আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আজকের দিনে ৩.৫এমএম জ্যাকের তুলনায় ডিজিটাল ইয়ারফোনস কি বেশিভালো কোয়ালিটি দিতে পারে। এবং কি হতে পারে এই ইয়ারফোনস এর ভবিষ্যৎ? তো চলুন এসকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় ডুব দেওয়া যাক।

আরো কিছু চমৎকার পোস্ট

  • গুগল প্রোজেক্ট আরা | Google Project ARA | ভবিষ্যৎ স্মার্টফোন
  • ডিডিআর২ বনাম ডিডিআর৩ বনাম ডিডিআর৪ র‍্যাম | কোনটি উপযুক্ত?
  • নন-রিমুভেবল ব্যাটারি বনাম রিমুভেবল ব্যাটারি

স্মার্টফোনে অডিও প্রসেসিং

বন্ধুরা স্মার্টফোন ইয়ারফোনস নিয়ে আলোচনায় পড়ার আগে প্রথমে আপনার অবশ্যয় জানা প্রয়োজন যে স্মার্টফোন অডিওকে প্রসেস করে কীভাবে তার সম্পর্কে। আর এখানেই কথা চলে আসে অ্যানালগ এবং ডিজিটাল সম্পর্কে। আপনি যদি এব্যাপারে না জেনে থাকেন তবে আমার লেটেস্ট পোস্টটি পড়ে নিতে পারেন। যাই হোক, স্মার্টফোনে একটি অডিও কোডেক আইসি লাগানো থাকে। যেখানে একটি ড্যাক (DAC) থাকে, একটি এডিসি (ADC) থাকে, এবং একটি এমপ্লিফায়ার (এমপ্লিফায়ার অডিওকে বাড়াতে সাহায্য করে) থাকে।

ড্যাক (DAC) এর মানে হলো ডিজিটাল টু অ্যানালগ কনভার্টার। আপনার ফোনের ভেতর যতোগুলো অডিও প্রসেসিং হয়ে থাকে তা সকল সম্পূর্ণ হয় ডিজিটাল ফরম্যাটে। এমনকি আপনি ফোনের মেমোরিতে যে এমপিথ্রী গান সংরক্ষন করে রাখেন সেটিও থাকে ডিজিটাল ফরম্যাটে। কিন্তু আপনার ইয়ারফোনসের ভেতর লাগানো স্পীকারস বা যেকোনো প্রকারের স্পীকারস কখনোয় সরাসরি ডিজিটাল ফরম্যাটের উপর কাজ করতে পারে না। স্পীকারস রান হতে অবশ্যয় প্রয়োজন হয় অ্যানালগ সিগন্যালের। তাই আপনার ফোনের ভেতরের লাগানো ড্যাক ডিজিটাল অডিওকে অ্যানালগ অডিওতে পরিবর্তন করে। এবং আপনার ৩.৫এমএম জ্যাক সে অ্যানালগ অডিও বহন করে নিয়ে যায় স্পীকারস পর্যন্ত এবং এভাবে অডিও প্লে করে।

অপর দিকে এডিসি (ADC) এর মানে হলো অ্যানালগ টু ডিজিটাল কনভার্টার। আমি আগেই বলেছি আপনার ফোনের ভেতর যতোগুলো অডিও থাকে তা প্রসেস হয়ে থাকে শুধু ডিজিটাল ফরম্যাটে। কিন্তু আপনি যখন কথা বলেন, বা কোন অডিও রেকর্ড করেন বা আপনার ফোনের মাইক যখন নইজ কান্সেলেশনের কাজ করে তখন এই সকল প্রসেস হয়ে থাকে অ্যানালগ ফরম্যাটে। আর এই অ্যানালগ অডিও গুলোকে ডিজিটালে রুপান্তর করার জন্য কাজ করে থাকে এডিসি।

৩.৫এমএম জ্যাক

তো বন্ধুরা এই অবস্থায় আপনার ফোনের ড্যাক (DAC) যতোভালো কোয়ালিটির হয়ে থাকে ততো ভালো অডিও আউটপুট একটি ৩.৫এমএম জ্যাকের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব হয়। কিছু কিছু ফোনে বন্ধুরা ডেডিকেটেড ড্যাক লাগানো থাকে অনেক হাই কোয়ালিটি অডিও সরবরাহ করার জন্য। তো সেসকল ফোনে আপনার ইয়ারফোনস থেকে বড়ই উন্নত অডিও আউটপুট পাওয়া সম্ভব।

কিন্তু লাইটেনিং পোর্ট ওয়ালা বা টাইপ সি পোর্ট ওয়ালা সেসকল ইয়ারফোনস থাকে সেখানে অডিও অ্যানালগ ভাবে আসে না। আপনার ফোন সরাসরি ইয়ারফোনে ডিজিটাল অডিও সেন্ড করে। কিন্তু এসকল ইয়ারফোনের পোর্টের মধ্যে একটি ড্যাক লাগানো থাকে। যা ফোন থেকে সরাসরি আসা ডিজিটাল অডিওকে কনভার্ট করে অ্যানালগ অডিও তৈরি করে এবং স্পীকারস পর্যন্ত তা পাঠিয়ে দেয়। যেহেতু এই ইয়ারফোনস গুলো সরাসরি ডিজিটাল অডিও পিক করে তাই এগুলকে বলা হয় লস লেস অডিও। যদিও কথাতি সম্পূর্ণ ঠিক নয়। অডিও লস হয়তো ফোনে হচ্ছে না কিন্তু ইয়ারফোনসে অবশ্যয় হবে।

কিন্তু এখন যদি কথা বলি ৩.৫এমএম জ্যাক নিয়ে তবে এই ইয়ারফোনসে কোন অডিও রুপান্তর ঘটে না। এটি আপনার ফোন থেকে আসা সরাসরি অ্যানালগ সিগন্যাল ক্যাঁচ করে এবং অডিও প্লে করে। এক্ষেত্রে আপনার ফোনের ড্যাক যতো বেশি ভালো হবে আপনি অডিও ততো উন্নত পাবেন।

বন্ধুরা এখন পয়েন্ট হলো অডিও রুপান্তর আপনার ফোনে হোক আর সরাসরি ইয়ারফোনসে, স্পীকারে অডিও প্লে করতে চাইলে অডিওকে অবশ্যই অ্যানালগ ফরম্যাটে থাকতে হবে। কিন্তু আমরা প্রায়ই ভেবে থাকি যে লাইটেনিং পোর্ট ওয়ালা বা টাইপ সি পোর্ট ওয়ালা ইয়ারফোনস সবচেয়ে ভালো মানের হয়ে থাকে। এগুলো একদম মারাত্মক অডিও কোয়ালিটি দিতে সক্ষম। আর ৩.৫এমএম জ্যাক ওয়ালা ইয়ারফোনস তো একদম বেকার। আসলে এই রকম বিচার তৈরি করার আগে আমাদের কিছু বিষয় খুবভালো ভাবে ভাবা প্রয়োজন।

লাইটেনিং পোর্ট, টাইপ সি পোর্ট ইয়ারফোনস

বন্ধুরা সত্যি কথা বলতে ডিজিটাল ইয়ারফোনস যে কোন নতুন প্রযুক্তি বা আমরা আজ ব্যবহার করছি বা করবো তা কিন্তু নয়। আপনাদের কি মনে আছে আগের সনি ফোন গুলোর কথা বা নোকিয়া এন৭০, এন৭৩ ইত্যাদি ফোন গুলোর কথা? ঐ ফোন গুলোতে চ্যাপ্টা পোর্ট ওয়ালা ইয়ারফোনস দেখতে পাওয়া যেতো। তো সেগুলো ছিল ডিজিটাল ইয়ারফোনস, অ্যানালগ নয়। ঐ পোর্টের মধ্যে অবস্থান করতো একটি ড্যাক যা ফোন থেকে আসা ডিজিটাল অডিওকে অ্যানালগে রুপান্তর করতো।

তারপরে আমরা ৩.৫এমএম জ্যাক ওয়ালা ইয়ারফোনস ব্যবহার করতে আরম্ভ করেছিলাম। যেটি ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে লাগানো যায় ফোনের সাথে এবং এটি ইউনিভার্সাল একটি ইয়ারফোনস। কিন্তু এখন আমরা ভাবছি যে ফোন থেকে এই ইয়ারফোন জ্যাক পোর্ট সরিয়ে দিয়ে সরাসরি চার্জিং বা ডাটা পোর্টেই ইয়ারফোনস লাগাবো এবং একটি ভালো কোয়ালিটি পাবো। আসলে এটা ভাবাটা ভরসা যোগ্য নয়। কেন ভাবা উচিৎ নয় চলুন আলোচনা করি।

কে হবে ভবিষ্যৎ?

বন্ধুরা এখন খুব ভালো ভাবে আমার কথা গুলো শুনুন। দেখুন মনে করুন আপনার কাছে একটি ভালো ফোন রয়েছে অথবা একটি সস্তা ফোন রয়েছে, তো সেখানে এটা ভরসা যোগ্য যে সেখানে লাগানো থাকা ড্যাক ভালো কোয়ালিটির হবে। কেনোনা সেখানে হয়তো কোয়ালকম ড্যাক লাগানো থাকবে বা অন্য ভালো কোম্পানির যা আপনাকে একটি উন্নত কোয়ালিটি প্রভাইড করবে।

কিন্তু মনে করুন আপনার কাছে একটি সস্তা টাইপ সি ওয়ালা ইয়ারফোনস রয়েছে তো এর মানে এর ভেতরের যে ড্যাক লাগানো আছে তা একদম বেকার কোয়ালিটির হবে। ইয়ারফোনস যতই টাইপ সি হোক না কেন আপনি কখনোই ভালো আউটপুট দেখতে পাবেন না। আবার লাইটেনিং পোর্ট, টাইপ সি পোর্ট ওয়ালা ফোনে আমরা যদি ৩.৫এমএম জ্যাক ইয়ারফোনস ব্যবহার করতে চাই তবে প্রয়োজন পড়বে একটি কনভার্টার। আর ঐ কনভার্টারের ভেতর লাগানো থাকবে একটি ড্যাক, যা অডিও অ্যানালগে কনভার্ট করবে। বন্ধুরা একটু ভেবে দেখুন তো ২০-৫০ টাকার কনভার্টারে কত ভালো ড্যাক লাগানো থাকতে পারে? আপনার ফোন যতই ভালো হোক এবং আপনি চান তো যতো ভালো ৩.৫এমএম জ্যাক ওয়ালা ইয়ারফোনস ব্যবহার করুন কিন্তু আপনি কখনোই উচ্চ কোয়ালিটির অডিও পাবেন না। কেনোনা ঐ কনভার্টারে যে ড্যাক লাগানো আছে তা ততোটা ভালো নয় বন্ধুরা।

তো ডিজিটাল ইয়ারফোনস সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণা, এটি ভবিষ্যৎ তৈরি করবে ইত্যাদি ইত্যাদি এগুলো একদম বেকার মন্তব্য। আজকের দিনেও আইফনে লাইটেনিং পোর্ট ইয়ারফোনস ব্যবহার করা যায় এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ২.০ ইউএসবিতেও ইয়ারফোনস ব্যবহার করা যায়। তো আইফোন ৭ অবশ্যয় নতুন কিছু আনতে চলছে না।

ব্লুটুথ ইয়ারফোনস

বন্ধুরা হতে পারে সামনের দিনে সকল ফোন গুলোতে ৩.৫এমএম পোর্ট উঠিয়ে দেওয়া হবে। এবং কনভার্টার ব্যবহার করে ৩.৫এমএম ইয়ারফোনস ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু কি ফায়দা? অডিও তো বেকার পাওয়া যাবে কনভার্টারের মাধ্যমে। আবার টাইপ সি ইয়ারফোনস সরাসরিও তেমন বেস্ট কোয়ালিটির নয়। তাহলে কে হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি। এখানে চলে আসে ব্লুটুথ ইয়ারফোনসের কথা। যেহেতু এটি ব্লুটুথ প্রযুক্তির উপর কাজ করে তাই যেকোনো ফোনে সমর্থন করবে। এবং ব্লুটুথ ইয়ারফোনসেও কিন্তু অডিও ডিজিটাল ফরম্যাটে পাঠানো হয়। এবং ইয়ারফোনসের ভেতর একটি ড্যাক লাগানো থাকে যা অনেক ভালো কোয়ালিটির হয়ে থাকে, যদি আপনি একটি ভালো ব্লুটুথ ইয়ারফোনস কেনেন।

আপনার ফোন যেমনি হোক না কেন সকল ফোনে একই অডিও কোয়ালিটি পাওয়া যেতে পারে। তাই যদি আপনি একটি ভালো ব্লুটুথ ইয়ারফোনস কেনে ফেলেন তবে সেটি একটি বেস্ট পসিবল অপশন হতে পারে। আপনি ল্যাপটপে ব্যবহার করুন, স্মার্টফোনে ব্যবহার করুন, অথবা যেকোনো অডিও ডিভাইজে ব্যবহার করুন, ব্লুটুথ ইয়ারফোনস ডিসেন্ট অডিও কোয়ালিটি দিতে সক্ষম হবে। আজকের দিনে ৩.৫এমএম জ্যাক ইয়ারফোনস অনেক ভালো কোয়ালিটি দেয় সমর্থনকারী ফোনের সাথে। কিন্তু আমরা তো ভবিষ্যৎ তার ছাড়া বানাব তাই না?

শেষ কথা

ব্যাটারি লাইফের কথা বাদ দিলে ব্লুটুথ ইয়ারফোনসই একমাত্র ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিকে প্রসার ঘটাতে সক্ষম। এতে আপনি ডিজিটাল ফরম্যাটেই ভালো কোয়ালিটি অডিও পেতে পারেন। যাই হোক, আশা করছি আজকের পোস্টতি আপনাদের জন্য অনেক চমৎকার ছিল এবং আপনারা অনেক ছিল জানতে পেরেছেন। তাই দয়া করে পোস্টটি শেয়ার করুন এবং আপনার যেকোনো মতামত আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানান।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories