ড্যাক (DAC) কি? স্মার্টফোন/ল্যাপটপের অডিও কোয়ালিটি বাড়াতে এক্সটারনাল AMP/DAC ইউজ করুণ!

আজকের দিনে এমন একটি পার্সনও খুঁজে পাওয়া দুর্লভ যিনি ডিজিটাল মিউজিক উপভোগ করেন না। অবশ্যই আপনার স্মার্টফোন বা ল্যাপটপেও হাজারো বা লাখো ডিজিটাল মিউজিক স্টোরড রয়েছে। যখন আপনি স্মার্টফোনে বা ল্যাপটপে কোন ডিজিটাল মিউজিক প্লে করেন, প্রত্যেক সময় ডিজিটাল-টু-এনালগ কনভার্টার (Digital-To-Analog Converter) বা ড্যাক (DAC) কাজ করে। ড্যাক যেকোনো ডিজিটাল অডিওকে এনালগ সিগন্যালে পরিণত করে এবং অ্যামপ্লিফায়ার সেই অ্যানালগ সিগন্যাল আপনার হেডফোন বা যেকোনো স্পিকারে সেন্ড করে আর অডিওটি শুনতে পাওয়া যায়।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বেশিরভাগ ডিভাইজে বিল্ডইন-ভাবে ভালো অ্যাম্প (অ্যামপ্লিফায়ার) এবং ড্যাক লাগানো থাকে না, আর এই জন্যই অডিও কোয়ালিটি ইম্প্রুভ করার জন্য এক্সটারনাল ড্যাক ইউজ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পরে। আপনার হেডফোনে ভালো সাউন্ড পাচ্ছেন না, এর জন্য আপনার স্মার্টফোন বা ল্যাপটপই প্রধান দায়ী হতে পারে। এই আর্টিকেলে এক্সটারনাল ড্যাক নিয়ে বেসিক আলোচনা গুলো করা হয়েছে, যেগুলো ডিজিটাল-টু-এনালগ কনভার্টার সম্পর্কে এবং অডিও কোয়ালিটি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান লাভ করতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।


ড্যাক কোথায় কাজে আসে?

আসলে ডিজিটাল-টু-এনালগ কনভার্টার বা ড্যাক ছাড়া কখনোই ডিজিটাল মিউজিক স্পিকারে বাজিয়ে শুনতে পাবেন না। আগের অ্যানালগ ক্যাসেট ফিচার প্লেয়ার গুলোর কথা আলাদা, সেখানে ড্যাক দরকারি ছিল না, কেননা মিউজিক গুলো ফিতাতে অ্যানালগ ফরম্যাটে স্টোরড থাকতো, জাস্ট অ্যাপ্লিফায়ার দিয়ে অ্যানালগ সিগন্যাল স্পিকারে সেন্ড করে মিউজিক শোনা যেতো। কিন্তু ডিজিটাল অডিও আলাদা ব্যাপার।

আপনি যখন কথা বলেন, আপনার গলা থেকে আওয়াজ বাতাসের মধ্যে কম্পনের সৃষ্টি করে আর এই কম্পন আপ-ডাউন করতে করতে মাইকের মধ্যে চলে যায়। মাইকের মধ্যে সেম কম্পনের একটি স্পেকট্র্যাম তৈরি হয়। এখন এই স্পেকট্র্যাম থেকে স্যাম্পলিং করা হয় এবং অ্যানালগ এই কম্পনকে 0,1 এর একটি ইউনিক প্যাটার্নে সাজিয়ে ডিজিটাল মিউজিকে পরিণত করা হয়। এর মানে হচ্ছে টেকনিক্যালি আপনার ডিজিটাল মিউজিক ফাইলে কোন মিউজিকই নেই, আছে শুধু এনকোড করা মিউজিক বা 0,1 সংখ্যার প্যাটার্ন।

এখন ডিজিটাল মিউজিক যখন প্লে করা হয়, রেকর্ডিং করার সময় যে প্রসেস চালু করা হয়েছিল, ঠিক তার উলটা প্রসেস এখানে চালাতে হয়। প্রথমে কোন ডিকোডার (মিউজিক প্লেয়ার) মিউজিক ফাইল গুলোকে ডিকোড করে এর মধ্যের অ্যানালগ সিগন্যাল গুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে, ড্যাক আসলে হার্ডওয়্যার লেভেলে কাজ করে, এটি ডিজিটাল ভার্চুয়াল সিগন্যাল থেকে ফিজিক্যাল অ্যানালগ সিগন্যাল তৈরি করে। আর সেই অ্যানালগ সিগন্যাল অ্যামপ্লিফায়ারে গিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি কাজে লাগিয়ে সেই স্পেকট্র্যাম তৈরি করে সেটা আপনার গলা থেকে বের হয়ে মাইকে প্রবেশ করেছিল। এখন স্পিকারে থাকা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক টেকনোলোজি সাহায্যে অডিও ফাইলটি প্লে হয়ে যায়। বাতাসে আবার সেম প্যাটার্ন তৈরি করে যেটা আপনার কানে এসে বাজতে শুরু করে।

উপরের প্যারাগ্রাফ গুলো থেকে আরো স্পষ্ট ধারণা নিতে বা আমি ঠিক কি বুঝাতে চেয়েছি সেটা আরো পরিস্কার বুঝতে আপনাকে আমার ডিজিটাল Vs অ্যানালগ টেকনোলোজি — এই আর্টিকেলটি পড়তে হবে।

বিল্ড-ইন ড্যাক

তো বুজতেই পাড়ছেন, ড্যাক আপনার প্রয়োজন পড়বেই, না হলে ডিজিটাল অডিও কোন স্পিকারে স্প্লে করতে পারবেন না। অবশ্যই আপনার ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা যতো প্রকারের ডিজিটাল মিউজিক প্লেয়ার রয়েছে প্রত্যেকের মধ্যে বিল্ড-ইন ডিজিটাল টু অ্যানালগ কনভার্টার রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষের কাছে অডিও কোয়ালিটি তেমন মেটার করে না। অনেকে তেমন বুঝতেই পারে না কোনটি বেটার অডিও কোয়ালিটি এবং কোনটি এভারেজ কোয়ালিটি। তবে এটাও সত্য, অনেক ডিভাইজের বিল্ড-ইন ড্যাকই অনেক ভালো হয়ে থাকে, তবে কনজিউমার ডিভাইজ গুলোর সাথে কোম্পানিকে অনেক স্যাক্রিফাইস করতে হয়। তাদের ডিভাইজের ডিজাইন ঠিক রাখতে হয়, দাম সাধ্যের মধ্যে রাখতে হয়, আলাদা হার্ডওয়্যার গুলো ঠিক রাখতে হয়, পাওয়ার কম কনজিউম করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, আর এই জন্যই অনেক ডিভাইজে ভালো বিল্ড-ইন ড্যাক লাগানো থাকে না।

আমি দেখেছি, অনেক লো এন্ড ডিভাইজ গুলোর লো এন্ড ড্যাক থেকেও ভালো অডিও কোয়ালিটি পাওয়া যায়। আপনি যদি ২০০৮-১০ এর দিকে ৭০০-৮০০ টাকার ডিজিটাল এম্পিথ্রি প্লেয়ার গুলো কিনে থাকেন, তো জেনে থাকবেন এতকম দামের ডিভাইজ গুলোতেও অসাধারণ অডিও কোয়ালিটি পাওয়া যেতো হেডফোন থেকে। ব্যাট লো এন্ড অন-চিপ ড্যাক গুলোর সাথে প্রবলেম হচ্ছে এতে ইলেকট্রনিক নয়েজ শুনতে পাওয়া যায়। আপনি কোন ফাঁকা অডিও রেকর্ড করুণ, মানে যেখানে কোন ভয়েজ বা মিউজিক নেই, তারপরে সেটা প্লে করুণ, এবার লক্ষ্য করে দেখবেন স্পীকার বা হেডফোন থেকে পিরপির, পিকপিক এক টাইপের নয়েজ শোনা যাচ্ছে। এই নয়েজ ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন ড্যাক থেকেও আসতে পারে, যা অডিও কোয়ালিটি নষ্ট করে দেয়।

এক্সটারনাল ড্যাক

এখন আপনি অবশ্যই ডেডিকেটেড এক্সটার্নাল ড্যাক এবং অ্যাম্প কিনতে পারেন, আবার অনেক ড্যাক, অ্যাম্প কম্ব স্টাইলে পাওয়া যায় সেগুলোও কিনতে পারেন, আর বিশ্বাস করুণ এগুলো ডিভাইজ আপনার অডিও কোয়ালিটি নাটকীয় রুপে পরিবর্তন করে দিতে পারে। ডেডিকেটেড ড্যাক আপনার ডিভাইজের ইলেকট্রনিক নয়েজ দুর করে দিয়ে হাই কোয়ালিটি অডিও জেনারেট করে। সাধারণত ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনে হেডফোন কানেক্ট করলে কেমন যেন এক টাইপের নয়েজ শুনতে পাওয়া যায়, সেটা এই এক্সটারনাল ডিজিটাল-টু-এনালগ কনভার্টার দুর করতে সাহায্য করে।

অনেক ড্যাকের সাথে ডেডিকেটেড অ্যাম্প লাগানো থাকে, আর ডিডিকেটেড অ্যাম্প মিউজিক ভলিউম বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে আমি লক্ষ্য করে দেখেছি হুওয়ায়ে স্মার্টফোন গুলোকে হেডফোন আউটপুট সাউন্ড লো হয়ে থাকে (কিছু মডেলে) সেক্ষেত্রে এক্সটারনাল ড্যাক কাজের ডিভাইজ হতে পারে, সাথে অনেক হাই এন্ড হেডফোনে অনেক বেশি পাওয়ারের আউটপুট জরুরী হয় (32Ω উপরের হেডফোন) সেক্ষেত্রেও এটি অনেক দরকারি হবে।

তাছাড়া অ্যামপ্লিফায়ার শুধু ভলিউমই বারায় না, আরো ডিসেন্ট কাজ করতে পারে। যেমন- বেস বুস্ট করতে পারে, আলাদা ইকুয়ালাইজার ফাংশন গুলোর উপর কাজ করতে পারে, তাছাড়া সাউন্ড কোয়ালিটি সম্পূর্ণ পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে।

কিছু প্রয়োজনীয় ফ্যাক্টর

ডেডিকেটেড অ্যাম্প এবং ড্যাক শুধু ল্যাপটপ এবং পিসির ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে, এবং অবশ্যই আপনাকে ইউএসবি দিয়ে AMP/DAC কানেক্ট করতে হবে, না হলে লাভ নাই তেমন। DAC এ সরাসরি ডিজিটাল সিগন্যাল সেন্ড করতে হবে, তারপরে DAC সেটাকে অ্যানালগ বানাবে। যদি ৩.৫এমএম জ্যাক দিয়ে ড্যাকে সিগন্যাল সেন্ড করেন সেখানে কাজ হবে না, কেননা ৩.৫ এমএম জ্যাক দিয়ে যেকোনো ডিভাইজ আগে থেকেই সিগন্যাল অ্যানালগ বানিয়ে সেন্ড করে। তাই মোবাইল ডিভাইজের ক্ষেত্রে এক্সটারনাল ড্যাক কাজে দেবে না, তবে অ্যাম্প কাজে দেবে মানে ভলিউম বুস্ট করার কাজে লাগবে আর কি।

যেসকল ডিভাইজ সরাসরি ডিজিটাল অডিও সেন্ড করে, যেমন আইফোন ১০, বা মি এ২ বা এরকম অনেক স্মার্টফোন এখন বাজারে বের হচ্ছে যেগুলোর ৩.৫এমএম জ্যাক নেই, এগুলো ডিজিটাল অডিও মানে ইউএসবি টাইপ-সি দ্বারা আইডিও সেন্ড করে, এগুলো ডিভাইজে এক্সটারনাল DAC কাজ করতে পারবে।

আশা করছি, এই আর্টিকেল থেকে ডেডিকেটেড AMP/DAC নিয়ে আপনার অনেকটা ভালো ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আপনার এক্সটারনাল AMP/DAC এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা সেটা নির্ভর করে আপনার পার্সোনাল মিউজিক টেস্ট এর উপরে। যদি আপনি সত্যিই হাই কোয়ালিটি অডিও উপভোগ করতে চান, বা হাই কোয়ালিটি হেডফোন থেকে ম্যাক্সিমাম আউটপুট পেতে চান সেক্ষেত্রে এক্সটারনাল AMP/DAC অনেক কাজের জিনিষ প্রমাণিত হতে পারে। তবে এভারেজ ইউজারের কাছে বিল্ডইন AMP/DAC নিয়েই কোন প্রবলেম নাই।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories