শক প্রুফ মানে কি? — ঝাঁকি খাওয়ার পরে বা উঁচু থেকে পরে যাওয়ার পরেও ডিভাইজ রক্ষা পেতে পারে!

এখন বাজারে নতুন পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ কেনার সময় বা স্মার্টফোন কেস, স্মার্টওয়াচ, বা অনেক টাইপ গ্যাজেটের গায়ে শক প্রুফ (Shockproof) টার্মটি উল্লেখিত থাকে, আসলে এর মানেটা কি? বিশেষ করে যে ডিভাইজ বা গ্যাজেট গুলোকে এই টার্মে অন্তর্ভুক্ত করা থাকে, সেগুলোর উপরে মোটা রাবারের আস্তরণ দেওয়া থাকে, যাতে ডিভাইজটি বা গ্যাজেটটি নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পরে যাওয়ার পরে বা নির্দিষ্ট পরিমাণে ঝাঁকি বা যেকোনো টাইপের নির্যাতন (নির্দিষ্ট পরিমাণে) সহ্য করতে পারে। অনেক কোম্পানি ড্রপ-প্রুফ (Drop-Proof) বলেও এই টার্মটি বর্ণিত করে, তবে দুইটি টার্মই মূলত একটি বিষয়কেই নির্দেশ করে।

তবে শকপ্রুফ বলতে যে শুধু ডিভাইজটি উঁচু থেকে পরে বা ঝাঁকুনি থেকে রক্ষা পেতে পারে, এতোটুকুতেই বিষয়টি শেষ হয়ে যায় না। এখানে অনেক বিষয় জানার রয়েছে, কিছু টার্ম রয়েছে যেগুলো জানা দরকারি এবং কিছু ভুল ধারণাও রয়েছে সেগুলোকেও দূর করা দরকারি। তো বুজতেই পাড়ছেন, বরাবরের মতো এই আর্টিকেলেও সকল ব্যাপার গুলোকে পানির মতো পরিস্কার করেছি!

শক প্রুফ

প্রথমেই খোলাসা করে নেওয়া ভালো যে শক প্রুফ বলে কিছু নাই, বলতে পারেন শক রেজিস্টান্ট। উপরের প্যারাগ্রাফেই বর্ণিত করেছি, রেটিং করা ডিভাইজের গায়ে রাবারের আস্তরণ লাগানো থাকে আর ডিভাইজটি মোটামুটি উচ্চতা থেকে ফেলে দিলেও বা চাপ প্রয়োগ করলেও সেটা ডিভাইজের কোন ক্ষতি না করে সহ্য করে নিতে পারবে। আজকাল বাজারে অনেক গ্যাজেট শক রেজিস্টান্ট রেটিং করা থাকে, বিশেষ করে মোবাইল কেসিং গুলো বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

তবে প্রত্যেকটি রেটিং এর একটি আলাদা আলাদা ক্ষমতা থাকে, যেমন ধরুন কোন ডিভাইজ ১ মিটার উঁচু থেকে পড়লে সেটা সহ্য করতে পারবে আবার কোন ডিভাইজে ২মিটার উচ্চতাতেও সমস্যা হবে না। তবে এই ব্যাপারে অনেক বিশেষ একটি ভুল ধারণা রয়েছে। শক বলতে কিন্তু অনেক সময় বৈদ্যুতিক শকও বুঝানো হয়। অনেকে মনে করেন শক রেজিস্টান্ট মানে বৈদ্যুতিক গোলযোগ হলেও ডিভাইজটির কোন সমস্যা হবে  না, কিন্তু আসলে ব্যাপারটি ভুল ধারণা। হঠাৎ করে বিজলী চমকানোর ফলে যদি ডিভাইজের সার্কিট শর্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে শক প্রুফ হওয়া কোন কাজে আসবে না, কেননা এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি টার্ম।

আরেকটি কথা আগেই উল্লেখ্য করে নিয়েছি, সেটা হচ্ছে সকল ডিভাইজের রেটিং কিন্তু এক নয়। এক্ষেত্রে আপনার ডিভাইজটি কতটা শক নিতে পারবে সেটা ডিভাইজটির প্যাকেজিং এর গায়ে লেখা রয়েছে না হলে কোম্পানি ওয়েবসাইট থেকে চেক করে নিন। তবে কিছু স্ট্যান্ডার্ড রয়েছে, আমি নিচে সেগুলোকে বর্ণিত করলাম;

শক প্রুফ স্ট্যান্ডার্ড

কোন ডিভাইজ যখন শক রেজিস্টান্ট হিসেবে রেটিং করা থাকে, সেক্ষেত্রে Military Standard 810G – 516.6 — এরকম রেটিং দেখতে পাওয়া যেতে পারে। নিচে কয়েক প্রকারের শক স্ট্যান্ডার্ড এর লিস্ট প্রদান করা হলো;

  • 503.5 Temperature Shock
  • 516.6: Shock
  • 517.1 Pyroshock (from an explosion)
  • 519.6: Gunfire Shock
  • 522.1: Ballistic Shock

আপনার ডিভাইজটি শক রেজিস্টান্ট হিসেবে রেটিং করা রয়েছে, এর মানে কিন্তু আবার এই নয় যে ডিভাইজটি বারবার কোন শক সহ্য করতে পারবে। যদি আপনার ডিভাইজটি 516.6 এ রেটিং করা থাকে, এর মানে হচ্ছে এটি একবার বা কয়েকবার শক বিরোধ করতে পারবে, কিন্তু লাগাতার শক বিরোধী ক্ষমতা নেই এতে। হয়তো ডিভাইজটি আনায়ন করার ক্ষেত্রে বা আলাদা হালকা শক থেকে বেঁচে যাবে কিংবা আপনার হাত থেকে মাটিতে পরে গেলেও কিছু হবে না, কিন্তু এই নয় যে ডিভাইজটি বিস্ফরন, গোলাগুলির শক থেকেও বেঁচে যাবে।

ঘড়ির ক্ষেত্রে শক প্রুফিং স্ট্যান্ডার্ড আলাদা হয়ে থাকে, এখানে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ISO 1413 নির্ণয় করা হয়। ঘড়ি গুলোকে অবশ্যই একটি বিশেষ টেস্ট পাস করতে হয়, সেটা হচ্ছে ১ মিটার সমান বা তার চেয়ে বেশি উচ্চতা থেকে শক্ত মেঝেতে ঘড়ি পরে যাওয়ার পরেও যেন সঠিক সময় প্রদান করতে পারে। তাছাড়া শক্ত প্ল্যাস্টিকের হাতুড়ি দিয়ে বারিয়েও ঘড়ির শক রেজিস্টান্ট টেস্ট করা হয়ে থাকে।

তো এই ছিল শক প্রুফ গ্যাজেট নিয়ে কিছু বেসিক তথ্য, আপনি যে গ্যাজেটই কিনুন না কেন সেটা হোক স্মার্টফোন কেস আর পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ অবশ্যই পূর্বে সিদ্ধান্ত নিন কতোটা শক প্রুফিং হওয়া জরুরী আপনার জন্য। যদি মাক্সিমাম প্রোটেকশন চান সেক্ষেত্রে MIL-STD-810 সার্টিফিকেশন থাকা জরুরী হবে, এতে গ্যাজেটটি প্রেসার, টেম্প্রেচার, ভাইব্রেশন সকল প্রকারের ইমপ্যাক্ট সহ্য করতে পারবে। তাছাড়া আপনার কতোটা স্লিম গ্যাজেট চাই সেটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যতোবেশি ড্রপ-রেজিস্টান্ট হবে গ্যাজেটটি ততোটাই মোটা হবে দেখতে।

যদিও আমি এরকম কোন গ্যাজেট এখনো ব্যবহার করে দেখিনি, তবে আপনি যদি চান অন্তত ট্র্যায় করে দেখতে পারেন। স্মার্ট ডিভাইজ গুলো হাত থেকে পরে যাওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক কিছু নয়, আর এই ফিচারটি মজুদ থাকলে আপনার দামী গ্যাজেটটি বেঁচে যেতে পারে।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories