ফাস্ট ইথারনেট বনাম গিগাবিট ইথারনেট | এই দুটির ভেতর পার্থক্য কি?

যার মাধ্যমে একটি কম্পিউটার সাধারনত একটি নেটওয়ার্ক তথা ইন্টারনেট এর সাথে যুক্ত হয় তাকে বলা হয় ইথারনেট। ইথারনেট ল্যান বা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এর সাথে আপনার ডিভাইস বা কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে। বলা যায় ইথারনেট হল একপ্রকার ল্যান বা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক।  কেননা এটা আপনাকে একটা নেটওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত করে দিচ্ছে। নানাস্থানে নানা জায়গায় এই ইথারনেট আপনাকে একটি নেটওয়ার্কে কানেক্ট হতে সাহায্য করে। অনেকসময় কম্পিউটার তো মোবাইল এর মত তারবিহীন ভাবে নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারে না, তাই এটি ইথারনেট পোর্টে ইথারনেট কেবলের সহযোগে একটি নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়। একইভাবে ইথারনেটের মত ওয়াইফাইও একটি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ; অনেক সময় কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ওয়াইফাই এর মাধ্যমেও নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে থাকে। তবে আজকে ওয়াইফাই নয়, ইথারনেট নিয়ে আলোচনা করব।

ইথারনেট এর কাজ যে কেবল আপনার কম্পিউটার ডিভাইসকে ইন্টারনেট এর সাথে যুক্ত করা না কিন্তু নয়। ইথারনেট ব্যবহার করে অফিস, স্কুল বা আরো অনেক জায়গায় আন্তঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্কও তৈরি করা যায়। এখানে একটি ওয়ার্কপ্লেসে সকল কম্পিউটার একসাথে এক অবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কে যুক্ত থেকে একসাথে নানা কাজ ও যোগাযোগ রক্ষা করে। অনেকক্ষেত্রে অনেকগুলো কম্পিউটার একটি সেন্ট্রাল বা কেন্দ্রীয় কম্পিউটার এর সাথে ইথারনেট ব্যবহার করে যুক্ত হয়ে থাকে।

ইথারনেট এর যেরকম অনেক ব্যবহার রয়েছে ; তেমনইভাবে ইথারনেট এর অনেক প্রকারও রয়েছে। তবে মূলত ইথারনেটকে প্রধান দুইটি শ্রেনিতে ভাগ করা যায়; আর এই দুইটি শ্রেনিই সকলে বেশি বেশি করে ব্যবহার করে। আর বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় ইথারনেট এর এই দুটি শ্রেনি হল : ফাস্ট ইথারনেট এবং গিগাবিট ইথারনেট। এই ফাস্ট ইথারনেট এবং গিগাবিট ইথারনেট দুটির ভেতর বেশ কিছু মিল এবং অমিল রয়েছে। আর আমরা আজকের আর্টিকেলে সেসকল বিষয় নিয়েই জানব। আপনি হয়ত বাজারে নেটওয়ার্ক সুইচ কিনতে গিয়েছেন, হয়ত এই ভেবে যে আপনি যে সুইচটি কিনবেন তাতে হয়ত সেরা এবং লেটেস্ট ইথারনেট কানেক্টিভিটি থাকবে। আপনি দেখলেন এখানে নেটওয়ার্ক সুইচটির সাথে লেখা ‘ফাস্ট ইথারনেট’ হয়ত ভাবলেন এটিই ভালো এবং সেরা। তবে আপনি এখানে ভুল; কেননা আপনি জানেন না ফাস্ট ইথারনেট এবং গিগাবিট ইথারনেট এর ভেতর অনেক পার্থক্য রয়েছে।

বর্তমান সময়ে এই দুটিকে বলা হয় দুটি ইথারনেট স্ট্যান্ডার্ড। আর আমাদের এই ফাস্ট এবং গিগাবিট ইথারনেট স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে অবশ্যই জানা উচিত। আর এই দুটি ইথারনেট স্ট্যান্ডার্ড এর ভেতর সবচাইতে সহজ যে পার্থক্যটা তা হল এদের স্পীড। আরও সহজভাবে বলতে গেলে গিগাবিট ইথারনেট এর চাইতে ফাস্ট ইথারনেট এর স্পিড প্রায় ৯০% কম। তাছাড়াও এদের কাজ করার টেকনোলজি নিয়ে কিছু পার্থক্য রয়েছে।

ফাস্ট ইথারনেট গিগাবিট ইথারনেট
সর্বোচ্চ গতি ১০০ এমবিপিএস ১০০০-১০০০০০ এমবিপিএস
বিলম্ব অনেক বেশি কম
পরিসর ১০ কিমি ৭০ কিমি
সম্পর্ক গিগাবিট ইথারনেট হিসেবে কাজ করতে পারেনা ফাস্ট ইথারনেট হিসেবে কাজ করতে পারে।

ফাস্ট ইথারনেট

বর্তমান সময়ে অনেক ইন্টারনেট রাউটার কাম(/) মডেমে ইথারনেট পোর্ট দেখা যায় ; আর অনেকগুলোতেই গিগাবিট ইথারনেট পোর্ট দেয়া থাকে। আপনার বাসার রাউটার বা মডেম এর প্যাকে যদি লেখা থাকে ৩০০ এমবিপিএস বা ১৫০ এমবিপিএস তবে নিঃসন্দেহে তা গিগাবিট ইথারনেট ব্যবহার করছে। কেননা ফাস্ট ইথারনেট কেবল সর্বোচ্চ ১০০ এমবিপিএস পর্যন্ত ডাটা ট্রান্সফার সামলাতে পারে। ১০০ এমবিপিএস এর ওপর গতিতে ডাটা ইন্টারনেট বা যেকোন নেটওয়ার্কে ট্রান্সফার করার ক্ষমতা ‘ফাস্ট ইথারনেট’ রাখে না। ফাস্ট ইথারনেট এর সর্বোচ্চ দূরত্ব ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

গিগাবিট ইথারনেট

যেখানে ফাস্ট ইথারনেট এর ডাটা ট্রান্সফার লিমিট ১০০ এমবিপিএস পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। ঠিক সেখানে গিগাবিট ইথারনেটে সেই লিমিট সর্বোচ্চ ১০০০ এমবিপিএস পর্যন্ত। আর এটা ফাস্ট ইথারনেট এর তুলনায় বলতে গেলে অনেক বেশি। আর ১০০০ এমবিপিএস বা অনেকসময় তারও বেশি স্পীড লিমিট বলে একে বলা হয় গিগাবিট। গিগাবিট ইথারনেট এর সর্বোচ্চ দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। গিগাবিট ইথারনেট এর কতগুলি ভার্সন রয়েছে। আর এগুলো হল ১,১০,৪০ এবং ১০০ গিগাবিট। বস্তুত ১০ গিগাবিট এর ইথারনেটে সেকেন্ডে ১০ জিবিপিএস করে স্পীড দিবে। একইভাবে ৪০ গিগাবিট এর ইথারনেটে সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ৪০ জিবিপিএস করে স্পীড পাওয়া যাবে। টেকনিক্যাল কারনেই ফাস্ট ইথারনেট গিগাবিট ইথারনেট এর মত কাজ করতে না পারলেও ; গিগাবিট ইথারনেট কিন্তু ফাস্ট ইথারনেটের মত করে কাজ করতে সক্ষম।

বর্তমান সময়ে অনলাইনে এবং বাজারে নানারকম নেটওয়ার্ক সুইচের ভীরে গিগাবিট এর জায়গায় ফাস্ট ইথারনেট সুইচ কেনা অসম্ভব কিছু নয় ; আপনি হয়ত কম দামে পেয়ে বেশি খেয়াল না করে এটি কিনতেও পারেন। তবে ব্যাপারটা হল এটা আপনার জন্য কতটা ভালো হবে? বাংলা দেশের হিসেবে ১০০ এমবিপিএস এর মত নেটওয়ার্ক স্পীড তো আমরা আশা করতে পারি না। তবুও আপনার কাছে ফাইবার অপটিক ব্যাতিত এমনি ক্যাট৬ লাইন থাকে ; তবে আপনার কোন সমস্যা হবেনা ; কেননা এখানে সর্বোচ্চ ডাটা পারাপারই হয় ১০০ এমবিপিএস এর মত। তবে যদি আপনি অপটিক এর লাইন ব্যবহার করে থাকেন, যাতে অনেক বেশি স্পীড এর ডাটা আসতে পারে তবে আপনার জন্য সমস্যা হবে। কেননা আপনি কেবল ১০০ এমবিপিএস ওপরে স্পীড পাবেন না।

তো এখানে গিগাবিট ও ফাস্ট ইথারনেট এর ভেতর মূল পার্থক্যগুলি হল:

  • গিগাবিট ইথারনেট ফাস্ট ইথারনেট প্রযুক্তির থেকে অনেক অ্যাডভান্স ; আর এটি ১০ গুণ বেশি স্পীডে তথা ১০০০ এমবিপিএস গতিতে ডাটা বা ট্রাফিক পারাপার করতে পারে।
  • অনেক বেশি ট্রান্সফার স্পীড থাকার কারনে বস্তুতই ফাস্ট ইথারনেট এর চাইতে গিগাবিট ইথারনেট এর পারফর্মেন্স অনেক বেশি।
  • গিগাবিট ইথারনেট এর কনফিগারেশন ফাস্ট ইথারনেট থেকে অনেক জটিল এবং ম্যানুয়াল। অন্যদিকে ফাস্ট ইথারনেট এর কনফিগারেশন খুবই সহজ ; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কানেক্টেড ডিভাইসগুলি অটোমেটিক্যালি নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়।
  • সর্বপ্রথম ফাস্ট ইথারনেট দেখা গিয়েছিল ১৯৯৫ সালে; সর্বপ্রথম গিগাবিট ইথারনেট পরিচিত হয় ১৯৯৯ সালে।

তো বন্ধুরা অনেকক ক্ষেত্রে হয়ত কিছু টাকা বাচানোর জন্য নেটওয়ার্কিং ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে ভুলেতে ফাস্ট ইথারনেট ডিভাইস কিনবেন না। অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যে, আপনার নেটওয়ার্কিং সুইচ থেকে শুরু করে ইন্টারনেট মডেম এমনকি আপনার কম্পিউটার মাদারবোর্ড ইথারনেট পোর্ট গিগাবিট ইথারনেট সাপোর্টেড কিনা। আর এভাবে ফাস্ট ইথারনেট এবং গিগাবিট ইথারনেট এর সহজ পার্থক্য থেকে আশা করি কোনটা আপনার জন্য ভালো তা আপনি বুঝতে পেরেছেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories