কেন স্মার্টফোনে ডুয়াল ক্যামেরা বা মাল্টিপল ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়?

ডুয়াল ক্যামেরা বা একের মাল্টিপল ক্যামেরা বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের জন্য একটি ট্রেন্ডে পরিনত হয়ে গিয়েছে। আর স্মার্টফোনের অন্যতম আধুনিক একটি ফিচার হিসেবে আজকাল এই ডুয়াল ক্যামেরা বা মাল্টিপল ক্যামেরা সেটাপ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ১ লক্ষ টাকার অ্যাপেল আইফোন ১০ থেকে শুরু ২০ হাজার টাকা বাজেট রেঞ্জ এর ভেতর শাওমি পর্যন্ত তাদের স্মার্টফোনে ডুয়াল ক্যামেরা এবং ডুয়াল লেন্স মডিউল অফার করে আসছে। অন্যদিকে হুয়াওয়ে পি২০ তে আবার আমরা দেখতে পারব যে তিনটি ক্যামেরা সমৃদ্ধ একটি মাল্টিপল ক্যামেরা সেটাপ।

আজকাল স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে আমরা ডুয়াল ক্যামেরা বা মাল্টিপল ক্যামেরা সমৃদ্ধ ফোনকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই। আর সে ব্যাপারটিকেই উপলব্ধি করে বহু স্মার্টফোন ব্র্যান্ড অনেক কম দামে হাতের নাগালের বাজেটে ডুয়াল ক্যামেরা সমৃদ্ধ ফোন গ্রাহকদের অফার করে আসছে। উদাহরন হিসেবে বলতে পারি শাওমি রেডমি নোট ৫ অথবা আসুস জেনফোন ম্যাক্স প্রো এর নাম। আজ আমি আলোচনা করব স্মার্টফোনে যে কারনে ডুয়াল ক্যামেরা ব্যবহার করা হয় ; আর ডুয়াল ক্যামেরা ব্যবহার করে যেভাবে স্মার্টফোন ফটোগ্রাফিতে সুবিধা পাওয়া যায় সে বিষয়ে।


কয়েকগুণ বেশি ডিটেইলস সমৃদ্ধ ছবি তুলতে

একেক ক্যামেরা সেন্সর এবং লেন্স একেক ধরনের ছবি তোলার জন্য ভালো। সব ক্যামেরা সেন্সর এবং লেন্স দিয়ে সব ধরনের ছবি তোলা যায়না। কোনোটি কম আলোর জন্য ভালো, আবার কোনোটি বেশি আলোর জন্য ভালো। কোনোটি কম দূরত্বে ভালোভাবে অবজেক্টকে ফোকাস করতে পারে, আবার কোনটি বেশি দূরত্বের অবজেক্ট এর জন্য ভালো। উদাহরন হিসেবে কম এপার্চার এবং ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সমৃদ্ধ লেন্স এর ক্যামেরা ছবির অনেক সূক্ষ্ম ডিটেইলস পর্যন্ত ক্যাপচার করতে পারে। তবে যদি চলমান কেনো অবজেক্ট এর ছবি তোলার জন্য ব্যবহার করা হয় তবে এটি কোনোভাবেই ভালো নয়। একইভাবে আবার দীর্ঘ লেন্স সমৃদ্ধ ক্যামেরা কম আলোতেও ছবিকে আরও ফুঁটিয়ে তুলতে পারে।আপনি আরেকটু ভাবলে বুঝবেন দুটি আলাদা রকমের ক্যামেরা দিয়ে একই দৃশ্য ক্যাপচার করে ;ছবি দুইটিকে যুক্ত করলে একেক ক্যামেরা থেকে পাওয়া একেক ডিটেইলস এর ফলে ছবিটির কোয়ালিটি বা মান আরও বেড়ে যাবে। তবে আলাদা আলাদা ক্যামেরা দিয়ে তুলে আবার ছবি এক করার বিষয়টা একটু জটিল এবং কঠিনও বটে। তবে স্মার্টফোনের ডুয়াল ক্যামেরা মডিউলে ব্যাপারটি খুবই সহজভাবে করা যায়। আর এভাবে স্মার্টফোন দিয়ে আরও সূক্ষ্ম, ব্রাইট এবং পরিষ্কার ঝকঝকে একটি ছবি পাওয়া যায়।

স্মার্টফোনে ডুয়াল ক্যামেরা মডিউল এর দুইটি ক্যামেরা সেন্সর থেকে পাওয়া ছবি এক করার কাজটি করে স্মার্টফোনের ইমেজ প্রোসেসিং সফটওয়্যার। আর এখানে ইমেজ প্রোসেসরটি দুটি ক্যামেরা থেকে প্রাপ্ত ডিটেইলসকে এক করে একটি দারুন ছবি প্রস্তুত করে। আপনি হয়ত ক্যামেরার এইচডিআর ফিচার সম্পর্কে অবগত। এখানে যা হয়, ক্যামেরাটি নানারকম এক্সপোসার লিমিটে ছবি তুলে তা কমবাইন্ড করে হাই ডাইনামিক রেঞ্জ তথা এইচডিআর ইমেজ প্রস্তুত করে। যার ফলে অনেক কম আলোতেও ছবি ভালো ফুটে ওঠে। আর এখানে ডুয়াল ক্যামেরার ক্ষেত্রে ইমেজ প্রোসেসিং সফটওয়্যারটি নিছক সেই কাজটিই করে।অনেক ক্ষেত্রে ডুয়াল ক্যামেরা সেটাপের একটি ক্যামেরা কেবল মনোক্রোম বা সাদাকালো ইমেজ অনেক বেশি ডিটেইলস এর সাথে ক্যাপচার করে ; আর আরেকটি ক্যামেরা কেবল কালার গুলো ক্যাপচার করে ; অতঃপর ইমেজ প্রোসেসিং এর মাধ্যমে একটি উচ্চ ডিটেইলস এবং কালার সমৃদ্ধ দারুন একটি ছবি পাওয়া যায়।

ফোকাস এবং জুম উন্নত করার ক্ষেত্র

অনেক সিঙ্গেল ক্যামেরার ফোন সাধারনত আর্টিফিসিয়ালি অবজেক্টকে ফোকাস করে ব্যাকগ্রাউন্ডকে ব্লার করে দেয়। তবে ডুয়াল ক্যামেরা থাকার ফলে একটিকে দিয়ে অবজেক্ট ফোকাস এবং বাকিটা দিয়ে Depth of field নির্নয় করে আর্টিফিসিয়াল নয় বরং প্রকৃতভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড গভীরতা চিহ্নিত করে তা ব্লার(ঘোলা) করা সম্ভব হয়। আর এক্ষেত্রে আধুনিক অনেক ডুয়াল ক্যামেরা সমৃদ্ধ স্মার্টফোনে দেখা যায় যে একটি কম এপার্চারের ক্যামেরা ছবির ফোকাস এবং ছবির গভীরতা মাপার কাজ করে এবং আরেকটি বেশি এপার্চার এর ক্যামেরা ছবির কোয়ালিটি তথা কালার, সার্পনেস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করে।

সহজ ভাষায় এপার্চার হল ক্যামেরার লেন্স এর ফোকাস দূরত্ব এবং ছিদ্র দিয়ে আলো প্রবেশ করার ডায়ামিটার। ডিএসএলআর ক্যামেরায় এপার্চার নিয়ন্ত্রন করা গেলেও, বর্তমান স্মার্টফোনগুলোতে সেই এপার্চার নিয়ন্ত্রন করার সুবিধা এখনও পাওয়া যাবে না। আর এই কারনেই ডুয়াল ক্যামেরা মডিউলে দুটি ভিন্ন ভিন্ন এপার্চারের ক্যামেরা সেন্সর ব্যবহৃত হয়। উদাহরন: স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮, আইফোন ৮ প্লাস ইত্যাদি।

স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে অনেক উন্নত মানের ছবি তোলা গেলেও; জুম করে কোনো দৃশ্য ক্যাপচার করার ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের ক্যামেরার অপর বরাবরই অভিযোগ রয়েছে। সিঙ্গেল ক্যামেরার স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এই ম্যানুয়াল বা অপটিকাল জুম ফিচারটি পাওয়া যায় না এর স্লিম বডির কারনে। যার ফলে স্মার্টফোন প্রথম থেকেই জুম ফটোগ্রাফির জন্য অনেক খারাপ পছন্দ ; আর ডিজিটাল জুম মানে ছবির মান খারাপ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর স্মার্টফোনের এই সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করে ডুয়াল ক্যামেরা। এখানে একটি ক্যামেরার পাশাপাশি আরেকটি ক্যামেরায় ২X জুম লেন্স ব্যবহার করা হয় (একে বলা হয় টেলিফোটো লেন্স) ; যার ফলে স্মার্টফোন দিয়েই অপটিকাল জুম এর স্বাদ পাওয়া যায়। যদিও এই অপটিকাল জুম পয়েন্ট-এন্ড-শুট ক্যামেরা বা ডিএসএলআর ক্যামেরার সাথে তুলনা করার মত নয়; তবে সচরাচর স্মার্টফোনের ডিজিটাল জুম এর চাইতে এখানে অনেক ভালো মানের ছবি পাওয়া যাবে। আর এই সেটআপ অবজেক্ট ফোকাসিং এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লারিং এর ক্ষেত্রেও কাজে আসে।

এইচটিসি ইভো ৩ডি নামক একটি স্মার্টফোন কয়েকবছর আগে ডুয়াল ক্যামেরা সেটআপ নিয়ে বাজারে এসেছিল। আর এই স্মার্টফোনটিতে প্রচলিত দুটি ক্যামেরা নিয়ে একটি ডুয়াল ক্যামেরা সেটাপ প্রস্তুত করা হয়েছিল। তবে সেসময় এই ডুয়াল ক্যামেরা সেটাপকে ব্যবহার করা হত ত্রিমাতৃক বা ৩ডি ভিডিও শুট করার জন্য। এই ইভো ৩ডি স্মার্টফোনের ডুয়াল ক্যামেরা দিয়ে তোলা ৩ডি বা ত্রিমাতৃক ইফেক্ট এর ছবি যেকোন ৩ডি তথা ত্রিমাতৃক টেলিভিশন বা স্ক্রিনে খুবই ভালোভাবেই উপভোগ করা যেত। আধুনিক স্মার্টফোন এর মত ডিভাইসে এই ডুয়াল ক্যামেরা ও মাল্টিপল ক্যামেরা  খুবই উদ্ভাবনী একটি ফিচার তা মানতেই হবে। ইতিমধ্যে স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারার’রা স্মার্টফোনে ডুয়াল ক্যামেরা ও মাল্টিপল ক্যামেরা দেয়ার মাধ্যমে যেভাবে গ্রাহক হৃদয়কে সন্তুষ্ট করতে পারছে ; তেমনই বাজারে অন্যসব প্রচলিত সিঙ্গেল ক্যামেরা স্মার্টফোন এর থেকে প্রতিযোগিতায় অনেকাংশে এগিয়ে থাকতে পারছে।

Images: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories