পোর্টেবল সফটওয়্যার কি? সাধারণ অ্যাপকে কি পোর্টেবল অ্যাপ বানানো যাবে?

পোর্টেবল সফটওয়্যার বা পোর্টেবল অ্যাপলিকেশন বা সংক্ষিপ্ত ভাবে পোর্টেবল অ্যাপ হচ্ছে সাধারণ ইন্সটলেবল অ্যাপ গুলোর মতোই, কিন্তু এতে বেশ কিছু সুবিধা মজুদ রয়েছে। ইউএসবি ড্রাইভে করে যেকোনো সফটওয়্যারকে এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে রান করিয়ে নিয়ে বেড়াতে পারবেন, মোটেও ইন্সটল করতে হবে না, সাথে সফটওয়্যার গুলো সেটিংসও ইউএসবি ড্রাইভে সেভড থাকবে। আরেকটি আলাদা সুবিধা হচ্ছে, পোর্টেবল অ্যাপ গুলো একটু লাইটওয়েট হয়ে থাকে, মানে আপনার যায়গাও বেঁচে যাবে খানিকটা। সাধারণ অ্যাপলিকেশন আর পোর্টেবল অ্যাপলিকেশন গুলোর মধ্যে ফ্যাংসনের দিক থেকে তেমন কোন পার্থক্য নেই, তবে অনেক সময় কিছু পার্থক্য থাকে, যাই হোক, পোর্টেবল অ্যাপলিকেশন অবশ্যই ভালো জিনিষ, আর অবশ্যই ট্র্যায় করার মূল্য রাখে!


পোর্টেবল সফটওয়্যার

পোর্টেবল অ্যাপ সম্পর্কে ভালো ধারণা নেওয়ার আগে আপনাকে জানতে হবে সাধারণ ইন্সটলেবল অ্যাপ গুলো কিভাবে কাজ করে, মানে উইন্ডোজ কম্পিউটার সাধারণ অ্যাপ ইন্সটল করার সময় কি কি ঘটে। উইন্ডোজ কম্পিউটারে সফটওয়্যার সেটআপ ফাইল গুলো আসলে .EXE ফাইল হয়ে থাকে, যেটা ওপেন করার মাধ্যমে সফটওয়্যারটি ইন্সটল হতে শুরু করে। আসলে .EXE একটি এক্সিকিউটেবল টাইপের ফাইল হয়ে থাকে, এর মধ্যে সফটওয়্যারের প্রয়োজনীয় ফাইল গুলো আর্কাইভ করা থাকে।

প্রসেস শুরু হয়ে গেলে নানান লোকেশনে ইন্সটলেশন ফাইল গুলো ট্রান্সফার হতে আরম্ভ করে। প্রোগ্রামটির মেইন ফাইল গুলো এক সারিবদ্ধ ভাবে C:\Program Files folder ফোল্ডারে কপি হয়ে যায়, ProgramData folder নামক ফোল্ডারে অ্যাপটির সেটিং ফাইল গুলো জমা হয়, কম্পিউটারের প্রত্যেক ইউজারের জন্য আলাদা আলাদা পারমিশন ওয়ালা সেটিং ফাইল “AppData” নামক একটি হিডেন ফোল্ডারে গিয়ে জমা হয়। তাছাড়া বেশিরভাগ উইন্ডোজ সফটওয়্যার গুলো “Windows Registry” তে নিজের এন্ট্রি ক্রিয়েট করে, যাতে অনেক টাইপের কনফিগারেশন ধরে রাখতে পারে। অনেক অ্যাপ অপারেটিং সিস্টেম থেকে শেয়ারড কোড লাইব্রেরি ব্যবহার করে কাজ করে, যেমন- ডিএলএল ফাইল, ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক, ভিজুয়াল সি++ রিডিট্রিবিউটেবলস।

তো বুঝতেই পারছেন, সাধারণ সফটওয়্যার এক সাথে অনেক লোকেশনে ফাইল পাঠিয়ে নানান সেটিং ধরে রাখে। তবে সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসির জন্য এগুলো আলাদা ফোল্ডারে ফাইল রাখার প্রয়োজন ও রয়েছে।

এখন কথা বলা যাক পোর্টেবল অ্যাপ নিয়ে, এগুলো কিভাবে কাজ করে? — আসলে পোর্টেবল অ্যাপ গুলোর জন্য এক্সিকিউটেবল ফাইলের দরকার হয় না, মানে দরকার হয়, কিন্তু কোন আলাদা ফোল্ডারে ফাইল ফেলে আসতে হয় না। .EXE ফাইলের বদলে এগুলো .ZIP ফাইলের মধ্যে আর্কাইভ করা থাকে, আপনাকে ইউজ করার জন্য জাস্ট আর্কাইভ এক্সট্রাক্ট করার প্রয়োজন পরে, তারপরে সফটওয়্যার EXE ফাইল রান করলেই ইন্সটল না শুরু করে সরাসরি সফটওয়্যারই রান হয়ে যায়।

আপনার সকল সেটিং গুলো ঐ একই ফোল্ডারেই সেভ রাখে, আপনি চাইলে ফোল্ডারটি যেকোনো পোর্টেবল মিডিয়া বা পেনড্রাইভে করে বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারবেন। এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে পেনড্রাইভ লাগাবেন আপনার সফটওয়্যার ঐ কম্পিউটারে ইন্সটল না করেই রান হয়ে যাবে। তাছাড়া সকল সেটিং গুলো পেন ড্রাইভের ফোল্ডারে জমা হবে, ফলে যে কম্পিউটারেই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করুণ না কেন সেটিং গুলো একই থাকবে।

আপনি পেন ড্রাইভে না চালিয়ে যদি নিজের কম্পিউটার থেকেই পোর্টেবল অ্যাপলিকেশন চালান সেটা আসল অ্যাপলিকেশন থেকে একটু লাইটওয়েট হয়ে থাকে, যদি একই ফ্যাংশনালিটি প্রদান করবে। তবে পোর্টেবল অ্যাপের কিছু ডাউন সাইড রয়েছে বিশেষ করে সিকিউরিটির দিক থেকে, এই অ্যাপ গুলো User Account Controls (UAC) সিস্টেমকে বাইপাস করে দেয়, মানে কম্পিউটারের কেউ অ্যাডমিন না হয়েও সকল অ্যাপ চালাতে পারবে, যেখানে আপনি অ্যাডমিন না হলে অনেক অ্যাপ ইন্সটল এবং ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে আপনার কম্পিউটার যদি আপনি ছাড়া আর কেউ ইউজ না করে এবং আপনি যদি ইউএসবি স্টিকে করে সফটওয়্যার বহন করে যেকোনো কম্পিউটারে ইন্সটল ছাড়া রান করাতে চান সেক্ষেত্রে পোর্টেবল অ্যাপের কোন তুলনা হয় না।

তবে একটি কথা, যেহেতু পোর্টেবল অ্যাপ পেনড্রাইভে করে চালাবেন, তাই অ্যাপ চালানোর পরে পেন ড্রাইভ সেফলি ইজেক্ট করে নিতে ভুলবেন না, না হলে আপনার সফটওয়্যারের ফাইল করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে।  তো, উপরের প্যারাগ্রাফ গুলো থেকে নিশ্চয় পোর্টেবল সফটওয়্যারের গুনাগুন গুলো সহজেই বুঝতে পেড়েছেন!

সাধারণ সফটওয়্যার গুলোকে পোর্টেবল সফটওয়্যার তৈরি

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন টাইপের সফটওয়্যার গুলো পোর্টেবল হয়ে থাকে এবং সাধারণ সফটওয়্যার গুলো থেকে কি পোর্টেবল সফটওয়্যার বানানো সম্ভব? আপনি হয়তো ভেবেছে, শুধু ছোট ছোট সফটওয়্যার গুলো বিশেষ করে ইউটিলিটি টাইপের সফটওয়্যার গুলো পোর্টেবল হয়ে থাকে, কিন্তু যেকোনো টাইপের সফটওয়্যার পোর্টেবল হতে পারে, ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার, ইমেজ বা গ্রাফিক্স এডিটিং সফটওয়্যার, অবশ্যই ইউটিলিটি গুলো, প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার গুলো এবং আরো অনেক টাইপের সফটওয়্যার।

হ্যাঁ, আপনি যেকোনো রেগুলার সফটওয়্যারকে পোর্টেবল অ্যাপলিকেশনে পরিণত করতে পারবেন। তবে বড় সাইজের সফটওয়্যার গুলোকে পোর্টেবল বানাতে কিছু ম্যানুয়াল কাজ করার প্রয়োজন পড়তে পারে। ছোট ইউটিলিটি গুলোকে পোর্টেবল বানানো অনেক সহজ, জাস্ট সি ড্রাইভ থেকে সফটওয়্যারটির সকল ফাইল কপি করে পেন্ড্রাইভে নিয়ে নিন, হতে পারে সফটওয়্যারটি পোর্টেবল হিসেবে কাজ করবে। তবে সবসময় এরকমভাবে কাজ নাও করতে পারে, কিন্তু অন্তত ট্র্যায় করতে সমস্যা কোথায়?

যদি আপনারা চান, সেক্ষেত্রে আমি একটি কমপ্লিট গাইড প্রকাশ করতে পারি, যেখানে সকল প্রকারের সফটওয়্যার গুলোকে পোর্টেবল কিভাবে তৈরি করতে হয় লিপিবদ্ধ করা থাকবে, যদি ও কোন গাইড ই সকল সফটওয়্যার গুলোর ক্ষেত্রে কাজ করবে না, কেননা আলাদা টাইপের সফটওয়্যার গুলো কিছু আলাদা আলাদা ব্যাপার থাকে যেগুলোকে ম্যানুয়ালভাবে বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। তবে আরেকভাবে যেকোনো সফটওয়্যারকে পোর্টেবল বানানো যেতে পারে, অ্যাপটি ভারচুয়ালাইজ করে, মানে আপনাকে একটি পোর্টেবল ভার্চুয়াল মেশিন তৈরি করতে হবে যেখানে প্রয়োজনীয় অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা থাকবে এবং ঐ সফটওয়্যারটি সেটআপ করা থাকবে। আপনি যে কম্পিউটারেই ওপেন করুণ না কেন সফটওয়্যারটি ভার্চুয়াল মেশিন থেকে রান করবে, এতে ইন্সটল করার কোন দরকার পড়বে না। এই কাজের জন্য বেস্ট টুলটি হচ্ছে, Portable VirtualBox।

ভার্চুয়াল বক্স নিজে থেকে একটি ফ্রী সফটওয়্যার যেটা ওরাকল এর উপর কাজ করে এবং যেকোনো ডেক্সটপ অপারেটিং সিস্টেম রান করাতে পারে এটি। আর অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে থাকবে নির্দিষ্ট সফটওয়্যার, তারপরে ভার্চুয়াল বক্সটিকে আপনি পেন ড্রাইভ বা পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভে করে রেখে কাজ করতে পারবেন।

এটা কোন ব্যাপার নয়, আপনি কোন অ্যাপকে কিভাবে পোর্টেবল বানিয়েছেন, যদি সেটা পোর্টেবল হয়ে থাকে, তবে আপনি নানান টাইপের সুবিধা পাবেন, বিশেষ করে একটি কম্পিউটার থেকে আরেকটি কম্পিউটারে ইন্সটল না করে করেই ব্যবহার করার সুবিধা। অনেক ওয়েবসাইটে আগে থেকেই অনেক সফটওয়্যারের পোর্টেবল ভার্সন পাওয়া যায় আপনি জাস্ট গুগল সার্চ করেই অনেক সফটওয়্যারের পোর্টেবল ভার্সন ডাউনলোড করতে পারবেন। আর তাছাড়া নিজে থেকেও যেকোনো সফটওয়্যারকে পোর্টেবল বানাতে পারবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories