ওয়েব আরটিসি বলতে কি বুঝায়? ব্রাউজারের মধ্যে রিয়েল টাইম ভয়েস এবং ভিডিও কমিউনিকেশন যেভাবে সম্ভব হয়!

ওয়েব আরটিসি এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ‘ওয়েব রিয়েল টাইম কমিউনিকেশন’। আর নাম থেকেই হয়ত একটু ধারনা করতে পেয়েছেন যে ‘ওয়েব আরটিসি’ কোনসেপ্টটা আসলে কি হতে পারে। বর্তমানে ওয়েব আরটিসি হল একটি উন্মুক্ত এবং ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট; যা এপিআই বা অ্যাপ্লিকেশান প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস এর মাধ্যমে দুটি ডিভাইস এর ওয়েব ব্রাউজার বা মোবাইল অ্যাপলিকেশন এর মধ্যে রিয়েল টাইম কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারে। ওয়েব আরটিসি এপিআই ব্যাবহার করে আপনি আপনার ডিভাইস এর ব্রাউজার দিয়েই সরাসরি ভিডিও বা অডিও মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন। আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচনা করব এই ওয়েব আরটিসি নিয়ে।


ক্লায়েন্ট-সার্ভার মডেল কমিউনিকেশন

ইন্টারনেটে ডাটা পারাপার এর মাধ্যমেই সাধারণত ভার্চুয়াল কমিউনিকেশন হয়ে থাকে। আর সাধারণত প্রচলিত ইন্টারনেট কমিউনিকেশন সংঘটিত হয়ে থাকে ক্লায়েন্ট-সার্ভার মডেল এর মাধ্যমে। তবে প্রথমে আপনাদের অনেকের প্রশ্ন  থাকতে পারে, ক্লায়েন্ট-সার্ভার মডেলটা কি? তাদের জন্য, আপনি যখন ইন্টারনেটে সরাসরি ভিডিও বা ভয়েস/অডিও এর মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন; তখন আপনাদের মাঝে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে একটি সার্ভার। আর এই সার্ভার এখানে আপনার ডিভাইস এবং আপনি যে ডিভাইস এর সাথে যোগাযোগ করতে চাচ্ছেন তাদের মধ্যে কনট্যাক্ট ঘটিয়ে দিচ্ছে। আর এখানে আপনি যে ভিডিও বা অডিও ডাটা পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান করছেন তা মাঝখানে একটি সার্ভার দিয়ে যাচ্ছে। এখানে দুইটি যোগাযোগকারী ডিভাইস এর ভেতর এই সার্ভারটি ক্লাউড বা একটি মেইন মেশিন হিসেবে কাজ করছে। আর একে বলা হচ্ছে মূলত ‘ক্লায়েন্ট-সার্ভ

তবে ক্লায়েন্ট-সার্ভার মডেল কমিউনিকেশন এর বিপরীতে ওয়েব রিয়েল টাইম কমিউনিকেশন বা ওয়েব আরটিসি এক যুগান্তকারী এবং বিকল্প সেরা মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ওয়েব আরটিসি ক্লায়েন্ট-সার্ভার মডেল কমিউনিকেশন এর পুরো সিস্টেমকেই যেন পুরোপুরিভাবে বদলে দিয়েছে। ওয়েব আরটিসি এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি এমন যে, দুটি ডিভাইস এর মধ্যে যেন একদম সরাসরি যোগাযোগ হচ্ছে আর মাঝখানে কোন মাধ্যম কাজ করছে না। আর এটি ব্রাউজারেও কাজ করে আলাদা করে কোনকিছু ডাউনলোড বা ইন্সটল করার প্রয়োজন পরেনা।

ওয়েব আরটিসি যেভাবে কাজ করে

খুবই সহজভাবে বলতে গেলে ওয়েব আরটিসি অনলাইন যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে খুবই সহজতর একটি প্রক্রিয়া । আর ওয়েব আরটিসি প্রথমে আপনার কাছে মনে হবে অনেকটা যাদুর মত। ধরুন ওয়েব আরটিসি এর মাধ্যমে আপনি আপনার বন্ধুর সাথে ভিডিও কমিউনিকেশন করবেন , সেক্ষেত্রে আপনিও একটি লিঙ্কে ক্লিক করবেন , সেও একই লিঙ্কে ক্লিক করবে ; বুম! আপনারা একজন আরেক জনকে দেখতে পারছেন এবং লাইভ কথাও বলতে পারছেন।

উপরে ব্যাপারটি একটু সহজ মনে হলেও এর ভেতরটা একটুখানি ব্যাতিক্রমি। যদিও ওয়েব আরটিসি এর ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন এর জন্য এখানে কোন সার্ভার ব্যাবহার হয় না। তবে প্রথমে এক ব্রাউজার থেকে আরেকটি ডিভাইস এর ব্রাউজার এর সাথে যোগাযোগ করতে এদের লোকেশন লোকেটিং করতে হয়, আর যাকে বলা হয় সিংনালিং।  সিংনালিং একবার সম্পন্ন হয়ে গেলে দুই ব্রাউজার এর মধ্য দিয়ে সরাসরি কমিউনিকেশন শুরু হয়ে যায়। আর যেহেতু ব্রাউজার এখানে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে; তাই একে পিয়ার-টু-পিয়ার কমিউনিকেশন বা পি২পি কমিউনিকেশনও বলা হয়ে

ওয়েব আরটিসিতে দুটি বিষয় কাজ করছে ; এখানে একটি আমরা জানলাম সেটি হল সিংনালিং আর অপর যে বিষয় টা ঘটে তা হল দুটি ব্রাউজার এর ওয়েব পেজ দুটির ভেতর মিডিয়া এর ট্রান্সফারিং। এখানে মূলত আপনি এই রিয়েল টাইম মিডিয়া তথা অডিও,ভিডিও আদান-প্রদান এর মাধ্যমেই যোগাযোগ বিনিময় করছেন। আর এখানে দুটি ব্রাউজার এর মধ্যে অডিও-ভিডিও ফাইল যাচ্ছে কোডেক এর মাধ্যমে। প্রশ্ন, কোডেক কি? এখানে কোডেক হল এক প্রকার এনকোডিং ও ডিকোডিং টুল বা সফটওয়্যার; যা ডিজিটাল মিডিয়া ফাইলকে ডিজিটাল সিংনালে রূপান্তরিত করে ফেলে। আর এই কোডেক ডিজিটাল মিডিয়া ফাইলকে আবার কম্প্রেস অথবা ডি-কম্প্রেসও করতে পারে। আর এই সুন্দর সিস্টেমকে ব্যাবহার করে ওয়েব আরটিসিতে দুটি ডিভাইস এর মধ্যে ভিডিও বা অডিও এর মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায়।

ওয়েব আরটিসি এর অন্যতম একটি এপিআই গ্রুপ হল getUserMedia। আর এটি ওয়েব আরটিসি  এর  খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আর এটিই ওয়েব পেজকে আপনার ডিভাইস এর মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা এর অ্যাক্সেস নিতে নির্দেশ করে ;আর যা-কিনা ব্রাউজার ডিজিটাল স্ট্রিম হিসেবে সংগ্রহ করে আরেক ডিভাইসে পাঠিয়ে থাকে। এখানে rtcDataChannel এপিআই গ্রুপ কোডেক দ্বারা সিংনালে রূপান্তরিত করা বাইনারি কোডকে আরেক ডিভাইসে পাঠিয়ে থাকে। WebRTC এর জন্য ব্যাবহার করা ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেজকে এর এপিআই SSL এবং TLS দ্বারা সুরক্ষিত হয়ার জন্য নির্দেশ করে, আর এর পিছে কাজ করে এর Peer2Peer এপিআই গ্রুপ । এখানে getUserMedia,rtcDataChannel এবং  Peer2Peer এপিআই গ্রুপ গুলো মিলেই সম্পূর্ণ WebRTC এপিআই কাজ করে।

গুগল ২০১০ সালে GIPS তথা গ্লোবাল আইপি সলিউশনস নামে একটি কোম্পানি কিনে নেই। আর এই গ্লোবাল আইপি সলিউশনস কোম্পানিটির কাছে আরটিসি সম্পর্কিত অনেক প্রযুক্তি আগে থেকে ছিল। গুগল ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্ক ফোরস (IETF) এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসর্টিয়াম (W3C) এর স্ট্যান্ডার্ড মেনে ২০১১ সালের মে মাসে একে ব্রাউজার ভিত্তিক রিয়েল টাইম কমিউনিকেশন সিস্টেম হিসেবে রিলিজ করে; আর তৎকালীন সময়ে যার নাম দেয়া হয় ওয়েব আরটিসি। গুগল ওয়েব আরটিসি এর প্রটোকলকে IETF এর সাথে এবং ব্রাউজার এপিআই’কে W3C এর নির্দিষ্ট মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে।

মূলত আইওটি ডিভাইস,মোবাইল প্ল্যাটফর্ম এবং ব্রাউজার এর ভেতর একটি সুন্দর আরটিসি ভিত্তিক কমিউনিকেশন তৈরির জন্য গুগল এর ডেভেলপাররা এই ওয়েব আরটিসি প্রোজেক্ট চালু করে। ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট হয়ার কারনে এই প্রযুক্তিটি ব্যাবহারও ছিল একদম ফ্রি। জদ্য গুগল এই প্রযুক্তিটি অনেক সপ্ন দেখেছিল তবে এই ওয়েব আরটিসি প্রোজেক্ট ততটা জনপ্রিয় হয়নি। এর পিছনে দায়ি ছিল অনেক প্রযুক্তিগত কিছু সীমা-বদ্ধতা।  জাভাস্ক্রিপ্ট এবং এইচটিএমএল ভিত্তিক এই প্রযুক্তি গুগল ক্রোম ডেভেলপারদের পরিচালিত হলেও, এটি কিছুদিনের মধ্যে কেবল ক্রোম নয় ফায়ারফক্স, অপেরা,সাফারি সহ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস প্ল্যাটফর্মেও সাপোর্টটেড হতে শুরু করেছিল।

Images: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories