কম্পিউটারের র‍্যাম ফুল হয়ে রয়েছে? — চিন্তার কিছু নেই, এটা ভালোর জন্যই!

যারা একটু পুরাতন কম্পিউটার ইউজার তারা লক্ষ্য করলে দেখেবেন যে, উইন্ডোজ এক্সপি বা সেভেন চালানোর সময় যতোটা র‍্যাম ইউজ হতো, কিন্তু উইন্ডোজ ১০ বা মডার্ন যেকোনো অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স, বা অ্যান্ড্রয়েডে এখন বর্তমানে অনেক বেশি র‍্যাম ইউজ হয়। আপনার পিসির র‍্যাম হয়তো ৪জিবি কিন্তু উইন্ডোজ ১০ এর সাথে লক্ষ্য করে দেখবেন আপনি কি না করেও ৫০%+ র‍্যাম ইউজ হয়ে বসে আছে। এরকম কেন হচ্ছে?

ওয়েল, চিন্তা করার কিছু নেই, আসলে এতে আপনার কম্পিউটার আরো বেটার পারফর্ম করবে, মডার্ন অপারেটিং সিস্টেম গুলো আপনার র‍্যামকে ফাইল ক্যাশ হিসেবে ব্যবহার করে, আর আপনি কম্পিউটার মেমোরি এবং র‍্যাম কিভাবে কাজ করে এই দুইটি আর্টিকেল পড়ে থাকলে অবশ্যই জানেন যে, র‍্যাম অনেক ফাস্ট একটি মেমোরি হয়ে থাকে — তাই র‍্যামে কোন ফাইল থাকলে সেটা নিমিষেই প্রসেসরের কাছে চলে যেতে পারবে, এতে কম্পিউটার অনেক দ্রুত কাজ করতে পারবে।

এই আর্টিকেলে আমি বর্ণনা করেছি, কেন মডার্ন অপারেটিং সিস্টেমে র‍্যাম ফুল হয়ে থাকা ভালো ব্যাপার এবং কেন ফাঁকা থাকা র‍্যাম স্পেস শুধুই ফালতু আর বেকার!


র‍্যাম ফুল থাকা সর্বদা কিন্তু ভালো নয়

আপনার অপারেটিং সিস্টেম আপনার কম্পিউটারের স্পীড বাড়ানোর জন্য হাই র‍্যাম ইউজ করছে সেটা ভালো ব্যাপার, কিন্তু সর্বদা বেশি র‍্যাম ইউজ হওয়া কিন্তু ভালো ব্যাপার নাও হতে পারে। আপনার গুড মেমোরি ইউজ এবং ব্যাড মেমোরি ইউজ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। যখন আলাদা কারণে আপনার কম্পিউটার র‍্যাম ফুল হয়ে যায়, সাধারণত আপনার কম্পিউটার আগের তুলনায় অনেক স্লো কাজ করতে আরম্ভ করবে এবং হার্ড ড্রাইভ ১০০% ইউজ হওয়া শুরু করে দেবে, কেননা র‍্যাম ফুল হয়ে গেলে কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভকে ক্যাশিং হিসেবে ব্যবহার করবে, এতে হার্ড ড্রাইভ লাইট ঘনঘন জ্বালা নেভা আরম্ভ করবে।

এই রকম অবস্থায় বুঝাই যাচ্ছে, আপনার কম্পিউটারে প্রোগ্রাম গুলো রান করতে যতোটুকু র‍্যাম প্রয়োজনীয় সেটা মোটেও পিসিতে মজুদ নেই, আর এতে র‍্যাম বেশি লাগানোর প্রয়োজন পড়বে, কেননা কম্পিউটার তার প্রোগ্রাম গুলোকে যথেষ্ট রিসোর্স দিতে পারছে না। আর এটা মোটেও কোন ভালো লক্ষণ নয়। আপনার কম্পিউটার স্লো হয়ে যাবে এবং নানান প্রোগ্রাম গুলো ক্রাশ করতে থাকবে। র‍্যাম বাড়ানো না পর্যন্ত এই সমস্যা দূর করা মুশকিল। তবে নতুন র‍্যাম কেনার পূর্বে আমি এই দুইটি আর্টিকেল পড়ার জন্য রেকমেন্ড করবোঃ র‍্যাম স্পীড নাকি র‍্যাম টাইমিং, কোনটি পারফর্মেন্সের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ? | যতোবেশি র‍্যাম = ততো ফাস্ট পিসি?

ব্যাড র‍্যাম ইউজেস আপনি সহজেই বুঝতে সক্ষম হবেন, হয় আপনার কম্পিউটার অনেক স্লো কাজ করবে। অথবা আপনার কম্পিউটার স্টার্ট করার পরে ঠিকঠাকই থাকবে, কিন্তু যেই না আপনি দুই বা তিনটি প্রোগ্রাম ওপেন করবেন আপনার কম্পিউটার হিউজ র‍্যাম খেয়ে নিতে শুরু করবে এবং কম্পিউটার অনেক স্লো হয়ে যাবে।

ডিস্ক ক্যাশিং

কম্পিউটারে প্রোগ্রাম গুলো কিভাবে কাজ করে এবং আপনি যখন কোন প্রোগ্রাম ওপেন করেন তখন কম্পিউটারের ভেতরে কি টাইপের প্রসেস চলে এই ব্যাপারের উপর ধারণা থাকলে আপনার অনেক কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। যখন আপনি কোন প্রোগ্রাম ওপেন করেন, সেটা ডিস্ক থেকে র‍্যামে লোড হয় এবং র‍্যাম প্রয়োজনীয় ফাইল গুলোকে প্রসেসরে সেন্ড করতে থাকে প্রসেস করানোর জন্য। কিন্তু র‍্যাম এবং সাধারণ হার্ড ড্রাইভ বা এসএসডির মধ্যে স্পীডের ক্ষেত্রে রাত দিনের পার্থক্য রয়েছে। হার্ড ড্রাইভ আর এসএসডি গুলো যেখানে কেবল সেকেন্ডে কয়েকশত মেগাবাইট ব্যান্ডউইথ ট্রান্সফার করতে পারে, সেখানে র‍্যাম প্রত্যেক সেকেন্ডে কয়েক গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ ট্রান্সফার করতে পারে, তো বুঝতে পারলেন আসল পার্থক্য?

এখন হয়তো আপনি উইন্ডোজ এক্সপি ইন্সটল করলেন, দেখবেন যে মাত্র কয়েকশত র‍্যাম ইউজ করেছে, কিন্তু সেম মেশিনে উইন্ডোজ ১০ বা লেটেস্ট উবুন্টু ইন্সটল করে দেখুন, কয়েক গিগাবাইট র‍্যাম ইউজ করবে। তাহলে ব্যাপার কি দাঁড়ালো? নতুন অপারেটিং সিস্টেম একই কাজের জন্য কেন বেশি র‍্যাম ইউজ করছে, তাহলে কি উইন্ডোজ এক্সপি মানে পুরাতন অপারেটিং সিস্টেমই বেস্ট?

আসলে নতুন অপারেটিং সিস্টেম গুলো আপনার র‍্যামের আরো বেটার ইউজ করছে, র‍্যাম ফাঁকা হিসেবে ফেলে রাখলে কোনই লাভ নেই, সেটা জাস্ট বেকার হয়ে পরে থাকে। কম্পিউটারে যতো র‍্যাম ফাঁকা থাকবে সেটা কখনোই আপনার কম্পিউটার টাস্ককে ফাস্ট করবে না। কম্পিউটার তখন ফাস্ট কাজ করবে, যখন প্রোগ্রাম গুলো রান করানোর জন্য যথেষ্ট র‍্যাম ক্যাপাসিটি থাকবে এবং র‍্যামে ফাইল গুলো ক্যাশ হিসেবে জমা থাকবে।

উইন্ডোজ কম্পিউটারে সুপার ফেচ মানে একটি ফিচার রয়েছে, যেটার সাহায্যে আপনার কমন ইউজ করা প্রোগ্রাম গুলো ডাটা ফাইল আপনার প্রোগ্রামটি ওপেন করার আগেই অপারেটিং সিস্টেম র‍্যামে ক্যাশ করে রাখে, এতে আপনি যখন প্রোগ্রামটি ওপেন করেন আপনার কম্পিউটার সেটাকে সরাসরি র‍্যাম থেকেই ওপেন করতে পারে, যদি ডিস্ক থেকে ওপেন করতে হতো তাহলে সেটাতে বেশি টাইম লেগে যেতো। শুধু উইন্ডোজ নয়, লিনাক্স এবং অ্যান্ড্রয়েডে ও এই সেইম জিনিষ একই ভাবে কাজ করে।

এমন কি আজকের মডার্ন অ্যাপলিকেশন গুলোও ক্যাশিং ম্যাথড ইউজ করে বেটার কম্পিউটিং এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করে থাকে, উদাহরণ সরূপ আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার গুলো যেমন- মোজিলা ফায়ারফক্স বা গুগল ক্রোম, এগুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি র‍্যাম ইউজ করে। এতে অসুবিধার কিছুই নেই, বরং এর ফলে ব্রাউজার গুলো আগের থেকে অনেক বেশি দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা পেয়েছে। আরো বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেনঃ ওয়েব ব্রাউজার অনেক র‍্যাম খেয়ে নিচ্ছে? বিশ্বাস করুণ এটা ভালোর জন্যই!

ফাঁকা র‍্যাম শুধুই বেকার!

আপনি উপরের প্যারাগ্রাফ থেকে হয়তো ভাবছেন, র‍্যাম ক্যাশিং ভালো জিনিষ, কিন্তু হয়তো আপনি র‍্যাম ফুল হয়ে থাকা পছন্দ করেন না। আপনি চাচ্ছেন, আপনি যখন কোন প্রোগ্রাম ওপেন করবেন তখন শুধু র‍্যাম ইউজ হবে বাকী সময় র‍্যাম ইউজ হওয়ার কোন দরকার নেই। দেখুন, সবকিছু আপনার ইচ্ছা কতো কাজ করবে না, আপনার কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম তার নিজের প্রয়োজন অনেক ভালো করেই জানে।

তাছাড়া র‍্যামকে ক্যাশ মেমোরি হিসেবে ব্যবহার করাতে কোনই সমস্যা নেই, এতে আপনার কম্পিউটারের স্পীড বুস্ট হবে, সাথে ফাঁকা র‍্যামে নতুন করে ডাটা রাইট করে কখনোই ক্যাশিং এর সমতুল্য স্পীড পেতে পারবেন না। ফাঁকা র‍্যাম কম কম্পিউটার পাওয়ার নেবে আর ফুল র‍্যাম বেশি কম্পিউটার পাওয়ার নেবে এমনটাও নয়। র‍্যাম ক্যাশ সত্যিই দরকারি জিনিষ, আর আপনার কম্পিউটারের জন্য যখন আলাদা র‍্যাম স্পেস দরকারি হবে অপারেটিং সিস্টেম স্বয়ংক্রিয় সেই স্পেস ফাঁকা করে ফেলবে, এতে মোটেও চিন্তার কোন কারণ নেই।

এই জন্যই অ্যান্ড্রয়েডে র‍্যাম কিলার অ্যাপ গুলো ব্যবহার করা অনেক ব্যাড আইডিয়া — এবং আপনার এতে মোটেও চিন্তা করার কিছু নেই কম্পিউটারে র‍্যাম ফুল হয়ে রয়েছে। র‍্যাম ইউজ করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে, ফাঁকা র‍্যামে কোনই উপকারিতা নেই। তবে যদি সিস্টেমে র‍্যামের অভাব থাকে সেক্ষেত্রে বেশি র‍্যাম লাগাতেই হবে।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories