রিবুট Vs রিসেট : এদের মধ্যের পার্থক্য কি? কেন আপনার জানা দরকার?

রিবুট, রিসেট, রিস্টোর ফ্যাক্টরি, রিস্টার্ট — এই টার্ম গুলো শুনতে অনেকটা একই রকমের। কিন্তু এদের অর্থ গুলো আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকেই রিবুট এবং রিসেট এই দুইটি টার্মকে মিলিয়ে গুলিয়ে একেকার করে ফেলে। তো রিবুট আর রিস্টার্টিং কি এক জিনিষ? অপরদিকে কম্পিউটার, স্মার্টফোন, রাউটার রিসেটিং বলতে কি বুঝানো হয়? — এই আর্টিকেল থেকে সকল বিষয় গুলো পানির মতো পরিস্কার হয়ে যাবে।


রিবুট Vs রিসেট

এই দুইটি টার্ম সম্পর্কে পরিস্কারভাবে জানার গুরুত্ব রয়েছে। আপনি হয়তো আগে থেকেই জানেন, আবার হয়তো ভাবছেন এতো বেসিক জিনিষ নিয়ে আলচনা করার কি রয়েছে, আসলে ওয়্যারবিডিে আমরা সকল বেসিক বিষয় গুলো নিয়েই আলোচনা করি, যাতে সকল প্রকারের মানুষ যেকোনো টার্ম সহজেই বুঝতে পারে। যাই হোক, এই দুইটি টার্মের সঠিক অর্থ বিশ্লেষণ না জানা থাকলে, কোথায় ঠিক কোন অ্যাকশন পারফর্ম করতে হবে সেটা বুঝতে পারবেন না।

শুধু রিসেট বা রিবুট নয়, অনেক সহয় আরো জটিল আর গণ্ডগোল পাকানো শব্দ শুনে থাকবেন হয়তো, যেমন সফট রিসেট এবং হার্ড রিসেট। তবে বেশি চিন্তার কিছু নেই, কেননা এই আর্টিকেলের শেষ পর্যায় পর্যন্ত সকল ব্যাপার গুলো জল হয়ে যাবে আপনার কাছে, আর আপনিও সহজেই যেকোনো ডিভাইজ ট্র্যাবলশুটিং করতে পারবেন।

রিবুট, রিস্টার্ট, সফট রিসেট

রিবুট, রিস্টার্ট, সফট রিসেট — এই আলাদা আলাদা শব্দ গুলো আসলে একই টার্মের ক্ষেত্রে বুঝানো হয়ে থাকে। যখন ফোন বা কম্পিউটার রিবুট করা, রাউটার রিস্টার্ট করা, ট্যাবলেট সফট রিসেট করা ইত্যাদি বাক্য গুলো উচ্চারণ করা হয়, সেক্ষেত্রে সর্বদা বুঝানো হয় আপনার ডিভাইজটি সাধারণ অফ করা এবং কিছুখনের মধ্যে ডিভাইজটি আবার অন করা।

অনেক সময় অনেক ডিভাইজ আজব আচরন করতে শুরু করতে পারে, রিবুট করার মাধ্যমে সহজেই অনেক প্রকারের প্রবলেম ফিক্স হয়ে যেতে পারে। এই আর্টিকেলটি থেকে আরো বিস্তারিত পড়তে পারেনঃ কেন শুধু কম্পিউটার রিবুট করার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব? আপনি যেকোনো টাইপের ডিভাইজ রিবুট বা রিস্টার্ট করতে পারেন, সেটা ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, মোবাইল, ট্যাবলেট, রাউটার, মডেম, ইত্যাদি যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইজ হতে পারে।

আসলে রিবুটিং প্রসেসে ডিভাইজটি পাওয়ার গ্রহণ করা ছেড়ে দেয় এবং আবার পাওয়ার গ্রহণ শুরু করে কাজ করতে আরম্ভ করে। যখন আপনার কম্পিউটারটি বা যেকোনো ডিভাইজ পাওয়ার অফ হয়ে যায় অবশ্যই প্রত্যেকটি চলমান প্রসেস, মানে আপনার প্লে করা ভিডিও, খুলে রাখা ওয়েব পেজ, এডিট করা ডকুমেন্ট — সবকিছু ক্লোজ হয়ে যায় এবং কম্পিউটার অন হওয়ার পরে অপারেটিং সিস্টেম প্রসেস গুলো নতুন করে শুরু হয়, তবে আপনার ওপেন করা প্রোগ্রাম গুলো ম্যানুয়ালভাবে আবার ওপেন করতে হয় কম্পিউটার অন হওয়ার পরে।

তবে ডিভাইজ রিবুট করার ফলে কোন ডাটা ডিলিট হয় না, জাস্ট প্রসেস গুলো অফ হয়ে যায় এবং আবার শুরু হয়। কম্পিউটারকে স্লিপমুডে রেখে দেওয়াকে কিন্তু রিস্টার্ট করা বলা হয় না, কেননা স্লিপমুড বা হাইবারনেশন মুডে কম্পিউটারের মেমোরিতে সকল ডাটা স্টোরড থাকে, ফলে কম্পিউটার অন করার সাথে সাথে আবার আপনার কাজ গুলো রিজিউম হয়ে যায়। কিন্তু কম্পিউটার রিবুট করলে, কম্পিউটার মেমোরি সকল ডাটা ফ্ল্যাশ করে দেয় আবার নতুন করে হার্ড ড্রাইভ থেকে ডাটা লোড করে তবেই কাজ করতে শুরু করে দেয়।

রিসেট, ইরেজ, রিস্টোর

রিসেট আর রিবুট এই দুইটি টার্ম কখনোই এক করতে যাবেন না, কেননা এদের অর্থ সম্পূর্ণ আলাদা। কনফিউশন থাকা স্বাভাবিক, কেননা উপরে সফট রিসেট আর রিবুটকে একই গোত্রে ফেলে দিয়েছি। কিন্তু টার্ম “রিসেট” আলাদা ব্যাপার। যদি সহজেই বুঝতে চান সেক্ষেত্রে টার্ম “রিসেট” মানে সম্পূর্ণ ইরেজ এর সাথে তুলনা করতে পারেন। কোন ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ডেক্সটপ রিসেট করার মানে হচ্ছে ডিভাইজটি ঠিক তখনকার অবস্থানে ফেরত নিয়ে আনা যখন আপনি সেটা কিনেছিলেন। এই জন্য রিসেটকে রিস্টোর ফ্যাক্টরি রিসেট ও বলা হয়ে থাকে, তাছাড়া হার্ড রিসেট, মাস্টার রিসেট নামেও একে ডাকা হয়ে থাকে।

কম্পিউটার বা ফোন রিসেট করে দিলে এটি সম্পূর্ণ সেটিংস, অপারেটিং সিস্টেম ফাইল গুলো ইরেজ করে দেয় এবং সবকিছু নতুন করে ইন্সটল করে একেবারে প্রথম কেনার সময়ের অবস্থায় ফেরত চলে আসে। ধরুন, আপনি আপনার কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড ভুলে গিয়েছেন, সেক্ষেত্রে কম্পিউটার রিবুট করলে পাসওয়ার্ড চাইবে, কিন্তু যেহেতু আপনার কাছে পাসওয়ার্ড নাই তাই আপনার লগইন করার কোন বুদ্ধিও থাকবে না। এরকম সমস্যা সমাধান করতে এই আর্টিকেলটি পড়ুনঃ পিসির পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? যেকোনো উইন্ডোজ (৭, ৮.১, ১০) বা লিনাক্স পিসির পাসওয়ার্ড বাইপাস করে নিন!

এখন আপনি যদি পিসি রিসেট করেন বা নতুন অপারেটিং সিস্টেম রি-ইন্সটল করেন সেক্ষেত্রে আপনার পিসি একেবারেই প্রথম পর্যায়ে ফেরত আসবে, আর আপনি সহজেই নতুন করে পাসওয়ার্ড সেট করতে পারবেন, এভাবে রাউটার, স্মার্টফোন, বা যেকোনো ডিভাইজ এ এরকম ব্যাপার অ্যাপ্লাই করতে পারবেন।

যেহেতু রিসেট করার মাধ্যমে ডিভাইজের সকল ব্যাপার গুলো একেবারে শুরু থেকে করতে হয় তাই শুধু যখন প্রয়োজন, তখনই রিসেট করা উচিৎ। ধরুন আপনি পিসি রিসেট করলেন, মানে আপনারকে প্রথম থেকে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল, সেটিং ঠিক করা এবং প্রয়োজনীয় অ্যাপ গুলো নতুন করে ইন্সটল করতে হবে।

আশা করছি, এতক্ষণে রিবুট Vs রিসেট টার্ম দুইটি আপনার সামনে পরিস্কার হয়ে গেছে। ধরুন, কোন প্রোগ্রাম ইন্সটল করার পরে আপনি যদি কম্পিউটার রিসেট করতে চান, এর মানে প্রোগ্রামটি আনইন্সটল হয়ে যাবে মানে সম্পূর্ণ কম্পিউটারই ফাঁকা হয়ে যাবে, কিন্তু কোন প্রোগ্রাম ইন্সটল করার পরে যদি কম্পিউটার রিবুট করতে চান, এর মানে হচ্ছে প্রোগ্রামটি নতুন করে প্রসেস তৈরি করবে এবং ঠিকঠাক কাজ করতে লাগবে। তো বুঝতেই পাড়ছেন, দুইটি সম্পূর্ণ আলাদা দুইটি বিষয়!

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories