ইকোসিস্টেম কি? কেন আইফোন ইউজাররা অ্যান্ড্রয়েড ব্যাবহার করতে চায় না?

আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন যে আইফোন বা অন্য যেকোনো অ্যাপল ডিভাইস ইউজাররা কখনোই কোন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বা অন্য কোন অপারেটিং সিস্টেমই ইউজ করতে চায়না? কখনো ভেবে দেখেছেন, একজন আইফোন ইউজার যখন নতুন একটি স্মার্টফোন কেনার চিন্তা করে তখন কেন সে নতুন মডেলের আইফোনটিই প্রিফার করে? শুধুমাত্র বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলে হবেনা। আমি সম্পূর্ণ পৃথিবীর সমস্ত অ্যাপল ডিভাইস ইউজারদের কথা বলেছি। অ্যাপল ডিভাইস ছাড়তে না চাওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে ইকোসিস্টেম!

এটা হয়তো সবসময়ই খেয়াল করেছেন যে কেউ অ্যাপলের কোন ডিভাইস ব্যবহার করলে এরপর থেকে অন্য কোন ডিভাইস কেনার কথা ভাবলেও অ্যাপলের ডিভাইসই কিনতে চায়। এর প্রথম এবং প্রধান কারন হচ্ছে, অ্যাপলের ইকোসিস্টেম। হতে পারে আপনি আগে থেকেই জানেন ইকোসিস্টেম কি অথবা আপনি এই প্রথম শুনছেন যে টেকনোলজির ভেতরেও ইকোসিস্টেম বলে একটা ব্যাপার আছে। যাইহোক, আজকে এই ইকোসিস্টেম জিনিসটি নিয়েই আলোচনা করতে চলেছি।


ইকোসিস্টেম কি?

টেকনোলজির বাইরে ইকোসিস্টেম জিনিসটির অন্য মিনিং আছে। তবে প্রযুক্তির দুনিয়ায় ইকোসিস্টেম হচ্ছে, কিছু ডিভাইস এবং কিছু অ্যাপস/সার্ভিসের একটি ফ্যামিলি যেগুলো একে অন্যকে অনেকটা বেঁধে রাখে। একটি ইকোসিস্টেমের যত বেশি ডিভাইস এবং যত বেশি অ্যাপস এবং সার্ভিস আপনি ব্যবহার করবেন, ততটাই কঠিন হয়ে যাবে ওই ইকোসিস্টেমটি থেকে বেরিয়ে যাওয়া। একজন ইউজার যখন একটি ইকোসিস্টেমের একটির বেশি দুটি বা তিনটি বা তিন ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করে ফেলে তখন সঙ্গত কারনেই সেই ইকোসিস্টেম থেকে বের হওয়া সম্ভব হয়না।

এখানেই মুলত চলে আসে অ্যাপলের ইকোসিস্টেমের ব্যাপারটি। তবে ইকোসিস্টেম যে শুধুমাত্র অ্যাপলেরই আছে এমনটা নয়। প্রযুক্তির দুনিয়ায় ইকোসিস্টেম অনেক আছে। যেমন- অ্যাপলের ইকোসিস্টেম, মাইক্রোসফটের ইকোসিস্টেম, স্যামসাঙের ইকোসিস্টেম এবং এমন ছোট ছোট অনেক ইকোসিস্টেম আছে। তবে সত্যি কথা বলতে, নিশ্চিতভাবেই সবথেকে বড় এবং সবথেকে স্ট্রং হচ্ছে অ্যাপলের ইকোসিস্টেম যার কারনে অ্যাপল ডিভাইস ইউজাররা এই ইকোসিস্টেম থেকে বের হতে চায়না বা পারেনা। এবার জানা যাক,

ইকোসিস্টেম কীভাবে কাজ করে?

ধরুন, আপনি একটি অ্যাপল ডিভাইস কিনলেন। ধরুন আপনি নতুন আইফোনটিই কিনলেন। অ্যাপলের এই একটি ডিভাইস আইফোন ব্যবহার শুরু করার মাধ্যমেই আপনি অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে পা দিলেন। আপনি আপনার নতুন আইফোনটি ব্যবহার করতে করতে অ্যাপলের হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার অপটিমাইজেশন, রেসপনসিভনেস, অ্যাপ কোয়ালিটি এসব দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন (যেটা সকল নতুন আইফোন ইউজারদের সাথেই হয়ে থাকে)। আপনি আইফোন ব্যবহার করছেন এর মানে হচ্ছে অ্যাপলের ন্যাটিভ স্পেশাল অ্যাপ এবং সার্ভিসগুলো যেমন আইমেসেজ, ফেসটাইম, অ্যাপল মিউজিক, আইক্লাউড, অ্যাপল পে এসবও ব্যবহার করা শুরু করেছেন। তবে আপনি ইকোসিস্টেমে আটকে পড়বেন যখন আপনি নতুন কোন একটি ডিভাইস কিনতে যাবেন। যেমন- হেডফোন বা ল্যাপটপ বা স্মার্ট স্পিকার বা স্মার্টওয়াচ ইত্যাদি।

এখন আপনাক হেডফোন কিনতে হলে এমন কোন হেডফোন কিনতে হবে যেটি আপনার আইফোনের সাথে সবথেকে ভালোভাবে কাজ করবে। এর জন্য সবথেকে ভালো হচ্ছে অ্যাপল এয়ারপডস। কারন, এটি আইফোনের সাথে সবথেকে ভালোভাবে কাজ করবে। W1 চিপ থাকার ফলে এটি ইনস্ট্যান্টলি আপনার আইফোনের সাথে সিংক হতে পারবে এবং এর স্পেশাল ফিচারগুলো শুধুমাত্র আইফোন এবং অ্যাপল মিউজিকের সাথেই কাজ করবে। তাই সঙ্গত কারনেই আপনি অন্যান্য হেডফোনের চেয়ে অ্যাপল এয়ারপডসই প্রিফার করবেন।

এরপর ধরুন আপনি একটি ল্যাপটপ কেনার কথা ভাবলেন। এখন আপনার যেহেতু আপনার আগে থেকেই একটি আইফোন এবং অ্যাপল এয়ারপডস আছে, তাই স্বভাবতই আপনি প্রথমেই ম্যাকবুক নেওয়ার কথা ভাববেন। কারন আপনার সকল অ্যাপল মিউজিক লাইব্রেরি, ফেসটাইম, কন্টাক্টস এবং বিশেষ করে আইমেসেজ শুধুমাত্র ম্যাকবুক এবং আইম্যাক ছাড়া অন্য কোন ডেক্সটপ বা ল্যাপটপের সাথে ইজিলি সিংক হবেনা। এছাড়া এয়ারড্রপ শেয়ারিং তো আছেই। এছাড়া অ্যাপল এয়ারপডে W1 চিপ থাকার ফলে এটা আইফোনের মত ম্যাকবুকের সাথেও এক ক্লিকে কানেক্ট হতে পারে। আর আমরা সবাই চাই আমাদের হাতের স্মার্টফোন এবং আমাদের ডেক্সটপ এবং ল্যাপটপ সবসময় কানেক্টেড থাকুক। আর এইজন্য আইফোনের ক্ষেত্রে ম্যাকবুক এবং আইম্যাক ছাড়া আর কোন অপশন নেই।

এরপর ধরুন আপনি একটি স্মার্টওয়াচ কিনতে চাইলেন। তখনও ঠিক এই একই কারনে আপনার প্রথম পছন্দ হবে অ্যাপল ওয়াচ। কারণ আইফোনের সাথে সবসময় কানেক্টেড রাখার জন্য অ্যাপল ওয়াচের কোন বিকল্প নেই। এছাড়া অ্যাপল ওয়াচের সাহায্যে আপনি আপনার আইফোনের আইমেসেজে রিপ্লাইও দিতে পারছেন ফোন ব্যবহার না করেই। এইসকল কনভেনিয়েন্ট ফিচারসের জন্য অ্যাপল ইউজাররা স্মার্টওয়াচ কিনতে চাইলে সবসময়ই অ্যাপল ওয়াচ প্রিফার করে। ঠিক এমনটাই হবে যখন আপনি স্মার্ট স্পিকার কিনতে চাইবেন। কারণ অ্যাপল ডিভাইসের সাথে কোন স্মার্ট স্পিকার ব্যবহার করতে চাইলে অ্যাপলের হোমপড ছাড়া আর কোন বিকল্পই নেই।

এবার নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে, অ্যাপল ঠিক কিভাবে তাদের ইউজারদেরকে এসব সার্ভিস এবং সিংক এবং শেয়ারিং এর সাহায্যে এই ইকোসিস্টেম বা ডিভাইস ফ্যামিলিতে অনেকটা বেঁধে রাখে। তবে এখন আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন যে আমি,

অ্যাপলের ইকোসিস্টেম নিয়েই কেন বলছি?

আমি আগেই বলেছি, ইকোসিস্টেম শুধুমাত্র অ্যাপলেরই নেই। গুগল, মাইক্রোসফট এবং স্যামসাং এর ও নিজের ইকোসিস্টেম আছে। তবে এখানে অ্যাপলের কথাই বলছি কারন, যেমনটা প্রথমেই বলেছিলাম, কোন ইকোসিস্টেমই অ্যাপলের ডিভাইস ফ্যামিলির মত এত বেশি ক্লোজড এবং স্ট্রং নয়। হ্যা, মাইক্রোসফট, গুগল এবং স্যামসাঙ এরও ইকোসিস্টেম আছে তবে সেগুলো অ্যাপলের মত এত বেশি ইফেক্টিভ না। এখন হয়তো আপনি বলতে পারেন যে, আমি হয়তো অ্যাপল ফ্যানবয় তাই এমন বলছি। কিন্তু না, আমি অ্যাপল ফ্যানবয় না। তবে অ্যাপলের ডিভাইস লাইনাপ, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম সবই আমার ভালো লাগে।

যাইহোক, অ্যাপলের ইকোসিস্টেমের সবথেকে মজার ব্যাপারটি হচ্ছে, অ্যাপল ইকোসিস্টেমে একবার ঢুকে পড়লে সেটার থেকে বেরিয়ে আসা কষ্টকর, যদি আপনি অনেকদিন যাবত অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে থাকেন। এখানে ব্যাপারটি হচ্ছে, গুগলের ইকোসিস্টেমে থাকার জন্য আপনাকে গুগলের ডিভাইসই ব্যবহার করতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করছেন মানেই আপনি গুগলের ইকোসিস্টেমে আছেন।

এখানে কোন ম্যানুফ্যাকচারারের ডিভাইস ব্যবহার করছেন সেটি কোন ব্যাপার নয়। আপনি ৫০ টি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস সুইচ করলেও আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট, আপনার পারচেজ করা অ্যাপস, সাবসক্রিপশনস, ইউজার ডেটা সবকিছুই থাকবে। তবে আপনি সম্পূর্ণ অ্যাপলের ইকোসিস্টেম থেকে বেরিয়ে গেলে এসব কিছুই থাকবেনা। কারন অ্যাপলের ইকোসিস্টেম ব্যবহার করতে হলে আপনাকে শুধুমাত্র অ্যাপলের ডিভাইসই ব্যাবহার করতে হবে। ঠিক এই কারনেই অধিকাংশ অ্যাপল ইউজার অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহার করলে কখনো অন্য কোন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে সুইচ করতে চায় না।


আশা করি এতক্ষনে বোঝাতে পেরেছি যে অ্যাপলের ইকোসিস্টেম কি এবং কিভাবে কাজ করে। যদি বুঝে থাকেন, তাহলে এই সবকিছু না বুঝেই প্রত্যেকবার একজন অ্যাপল ডিভাইস ইউজার দেখলেই তার দিকে হেট স্পিচ ছড়ানো বন্ধ করুন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশ করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories