স্মার্টফোন ব্যাটারি সম্পর্কে কিছু তথ্য যেগুলো আপনি জানেন না!

আপনার ফোনে যতই উচ্চ মানের স্পেসিফিকেশন থাকুক না কেন, সেটি কিছুই নয় ব্যাটারি ছাড়া। আর এটিই মূল কারন, সবাই কিভাবে ব্যাটারি পারফর্মেন্স এবং দীর্ঘ লাইফ মেইন্টেইন করা যায় সে বিষয়ে জানতে আগ্রহী। একটি ডিভাইসের প্রান বলে এটি নিয়ে অনেক মানুষের মনে ভুল ধারনাও রয়েছে । চলুন স্মার্টফোন ব্যাটারি সম্পর্কে আমাদের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা উচিত ; সেগুলো জেনে আসি।


‘ব্যাটারির চার্জ সম্পূর্ণ শেষ করে আবার চার্জ দিলে ব্যাটারির লাইফ বাড়ে’ এটা ভুল ধারনা

আমরা অনেকেই আমাদের মনে এই ভুল ধারনাটি পোষন করে থাকি যে; আমাদের স্মার্টডিভাইসগুলোর ব্যাটারি সম্পূর্ণ শেষ করে বা ০% করে ; আবার চার্জ দিলে ব্যাটারির লাইফ বাড়ে। তবে আমরা যারা এই ধারনাটি এখনও পোষন করি তা পুরোপুরিভাবে ভুল।

তবে হ্যা একসময় ঠিক ছিল ; যখন নানারকম পোর্টেবল ডিভাইসে নিকেল ক্যাডমিয়াম বা NiCad ব্যাটারি ব্যবহার করা হত। নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারির একটি খারাপ গুণ ছিল যে ; এটি নিজের কতটুকু ক্যাপাসিটি তা ঠিকঠাকমত মাপতে পারত না। যার ফলে পুরোপুরি ডিসচার্জ না করে আবার চার্জে দিল ; ব্যাটারি ড্রেইন বা তাড়াতাড়ি ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়া সহ নানা সমস্যা দেখা দিত। সেকারনে NiCad ব্যাটারিকে পুরোপুরিভাবে ডিসচার্জ বা ০% করে তারপর চার্জ দেয়া এব্যাটারির জন্য ভালো ছিল।

তবে এখন আর আপনাকে এ বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না, কারন এখন সিংহভাগ ডিভাইসে লিথিয়াম আয়ন এবং লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। মজার ব্যাপার হল নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারির বিপরীতে এসব ব্যাটারির বৈশিষ্ঠ্য পুরোপুরি ভিন্ন। কেননা এসব ব্যাটারি যদি আপনি পুরোপুরি ডিসচার্জ করে ফেলেন বা ০% এ নিয়ে আসেন ; তবে তা আরও ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর হবে। আর সেকারনে লিথিয়াম আয়ন এবং লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারির ক্ষেত্রে উচিত ২০-৩০% হলেই আবার চার্জে লাগিয়ে ফুল চার্জ করা।

অত্যাধিক তাপমাত্রা ব্যাটারি লাইফ কমিয়ে দেয়

আপনি হয়ত খুবই গ্রীষ্মকালে তুখর গরমের সময়ে কোনো বদ্ধ ঘরে বা গাড়ির ভেতর অনেকক্ষন আপনার স্মার্টফোনটি চালাচ্ছেন। যার ফলে হবে কি, আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিটি স্থায়িভাবে এর কিছু পরিমান ক্যাপাসিটি হারিয়ে ফেলবে। আমরা জানি যে ব্যাটারি চেম্বার এর ভেতর খুবই কম জায়গায় নানারকম কেমিকেল থাকে, এখানে সেগুলো তেমন জায়গা পায় না।

সেকারনে অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে এসব জড়সড় হয়ে থাকা কেমিকেল একটু ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ; আর যা ব্যাটারি ক্যাপাসিটিকে একটু কমিয়ে দেয়। তাই মজার ব্যাপার হল, আপনি যদি রুম টেম্পারেচার এর চাইতে আরও একটু ঠান্ডা স্থানে মোবাইল বা এরকম ডিভাইস ব্যবহার করেন; তবে দেখবেন যে আপনার ব্যাটারিটি আরও একটু বেশি ব্যাকআপ দিচ্ছে। ঠান্ডা আবহাওয়ার দেশে একারনেই স্মার্টফোন ব্যাটারি নিয়ে বেশি অভিযোগ থাকে না।

তবে তাই বলে ব্যাটারি ফ্রিজে রাখতে যাবেন না কিন্তু। অতিরিক্ত গরমের যেমন খারাপ দিক আছে ; তেমনি অতিরিক্ত ঠান্ডাও ব্যাটারির জন্য খারাপ ইম্প্যাক্ট বয়ে আনতে পারে।

ব্যাটারি ফুল চার্জড করা উচিৎ নয়

আপনি হয়ত অনেকসময় আপনার ফোনেরই সেকেন্ড আরেকটি ব্যাটারি ফুল চার্জ করে বাসায় বা অন্য কোথাও রেখে দেন। ভাবেন যখন বিপদে বা যেকোনন সময় যখন ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাবে তখন এটি ব্যবহার করবেন। তবে এটিও পুরোপুরি একটি ভুল কর্মকান্ড। কেননা আপনি ধরুন ৯০% চার্জ দিয়ে একটি ব্যাটারি স্টোর করে রাখলেন ; সে ব্যাটারির ক্যাপাসিটি কিন্তু ৯০% থাকবে না- কিছুদিন পর দেখা যাবে সেটি ৬০-৫০% হয়ে গেছে ।

যেহেতু ব্যাটারি পুরোপুরি একটি কেমিকেল পূর্ন পদার্থ ; ফুল চার্জ দেয়া অবস্থায় এর কেমিকেল এর অবস্থা যেমন থাকে – কিছুদিন পর সেইসব কেমিকেল তথা এসিডের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে; পাশাপাশি হ্রাস ঘটে ব্যাটারির ক্যাপাসিটিরও। সুতরাং যতই একটি ফুল চার্জড ব্যাটারি স্টোরড করে রাখেন না কেন তা ড্রেইন করবেই।

চার্জিং এর সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করা ক্ষতির কিছু নয়

অনেকে হয়ত বলে থাকেন যে, চার্জিং এর সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করলে তা আপনার ব্যাটারির খুবই ক্ষতি করবে। তবে বলতে গেলে এটি অনেকটা পুরোটা ভুল ধারনা। কেননা, আপনি যখন আপনার ফোন চার্জিং এ দেন, তখন কি ফোন সুইচড অফ বা বন্ধ করে চার্জ দেন? না, যেহেতু আপনার ফোন চালুই আছে ; সেহেতু ব্যাকগ্রাউন্ডে আপনার স্মার্টফোনটি এমনিতেই নানারকম প্রোসেস রান করাচ্ছে।

আর এভাবেই বলতে গেলে আপনার স্মার্টফোনটি সবসময় চলছেই, স্মার্টফোনকে তৈরি করা হয়েছে সবসময় চলার জন্য।

সুতরাং এখানে আপনি চার্জিং এর সময় ফোন চালালেও তা আপনার জন্য তেমন ক্ষতির কিছু হবে না। তো এবার থেকে চার্জিং এর সময় কোনো চিন্তা ছাড়াই আপনার ফোন ব্যবহার করুন। তবে একটা বিষয় সেটি হল, অবশ্যই একটি মানসম্মত মোবাইল চার্জার ব্যবহার করুন।

‘সারারাত মোবাইল চার্জ দিলে তা ব্যাটারির ক্ষতি করে’ এটা ভুল ধারনা

আমি জানি এই ধারনাটি আমাদের অনেকের মধ্যে কাজ করে। তবে এটি আমাদের মধ্যে প্রযুক্তিগত অন্যতম একটি ভুল ধারনা। আধুনিক স্মার্টফোন গুলো অন্তত এতটা স্মার্ট যে ; যখন ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জড হয়ে যায়  তখন এটি ব্যাটারিতে চার্জ হওয়া অফ করে দেয়।

তাই এরপর  যতই চার্জার কানেক্ট করা থাকুক ব্যাটারি এর সমস্যা হবে না। তবে ব্যাটারির ভালো স্বাস্থ্যের জন্যে আপনি আরেকটি নিয়ম মেনে চলতে পারেন। আপনি যদি আপনার ব্যাটারির চার্জ ৪০-৮০% এর ভেতর রাখেন ; তবে সেটা আপনার ব্যাটারির জন্য অনেক ভালো হবে।

আর এটা আপনার ব্যাটারির দীর্ঘ লাইফ নিশ্চিত করতে পারবে। সুতরাং সারারাত চার্জ না দিয়ে আপনি যখন ব্যাটারি এর চার্জ ৪০% হয়ে যাবে তখনি চার্জ এ লাগান; আবার ৮০% হলে খুলে নিন; আর এভাবে আপনার স্মার্টফোন ব্যাটারি এর লাইফ অনেকদিন হবে- আর এক্ষেত্রে আপনারা একটি পাওয়ারব্যাংক সবসময় সাথে রাখতে পারেন।

গেমস সবচেয়ে বেশি ব্যাটারি খরচ করে

স্মার্টফোনে ভিডিও গেমস খেলার সময় এটি সবচাইতে বেশি পরিমানে ব্যাটারি ড্রেইন করে। কেননা এসময় স্মার্টফোনের সিপিইউ এর সাথে সাথে জিপিইউ বা গ্রাফিক্স প্রোসেসিং ইউনিট; সমান গতিতে একটিভ থাকে। যার ফলে ব্যাটারিকে আরও বেশি এনার্জি খরচ করতে হয়।

সুতরাং গেমিং এর সময় আপনি যদি চান ; ব্যাটারি কম খরচ হোক; তবে ডিসপ্লে ব্রাইটনেস যতটা কম পারেন করে নিতে পারেন। কেবল আপনি চার্জিং এর সময় গেমস খেললে সে সময় ব্রাইটনেস ফুল বা আপনার সহনীয় মাত্রায় করে খেলতে পারেন।

স্মার্টফোন এর ব্যাটারি সঠিক ভাবে চললেই , অনেকক্ষেত্রে আপনি আপনার স্মার্টফোন এর সাথে অনেক বেশি দিন পার করতে পারবেন। স্মার্টফোন সম্পর্কিত নানা রকম সমস্যার বেশিরভাগই কিন্তু এই ব্যাটারি নিয়েই। উপরের আলোচ্য বিষয় থেকে আমরা যদি ছোট ছোট কিছু নিয়ম মেনে চলি তবে আমরা ব্যাটারির দীর্ঘ লাইফ মেইন্টেইন নিশ্চিত করতে পারব।

Images: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories