কার্নেল কি? | কার্নেল কতটা প্রয়োজনীয়? – বিস্তারিত

বন্ধুরা লিনাক্স নিয়ে পোস্ট করার সময় আমি বলেছিলাম যে কার্নেল নিয়ে একদিন একটি বিস্তারিত পোস্ট লিখবো। তো আজই সেই দিন এবং আমি চলে এসেছি এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করতে। বন্ধুরা আজ সেই কার্নেল নিয়ে মোটেও আলোচনা করবো না যে থাকে কোন আর্ম ফোর্সে এবং নিয়ন্ত্রন করে কোন সেনা বাহিনীকে 😛 । বরং আজ আলোচনা করবো সেই কার্নেল নিয়ে যা দেখতে পাওয়া যায় আপনার স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা যেকোনো কম্পিউটিং ডিভাইজে। তো চলুন শুরু করা যাক।


কার্নেল নিয়ে বিস্তারিত

আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সেটিংস অপশন থেকে নিশ্চয় কার্নেল নামটি দেখেছেন। সেখানে শুধু নামই না বরং এর ভার্সন, রিলিজ ডেট ইত্যাদি সকল তথ্যই থাকে। বন্ধুরা এটি শুধু আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোন পর্যন্তয় সীমিত নয়। বরং আপনার উইন্ডোজ ফোন, আইফোন, উইন্ডোজ ট্যাবলেট, ম্যাক ইত্যাদি সহ সকল কম্পিউটিং ডিভাইজে যেখানে আপনি কোন অপারেটিং সিস্টেম রান করাচ্ছেন কোন হার্ডওয়্যারের উপর সেখানেই কার্নেল প্রয়োজনীয়। তো চলুন আরো বিস্তারিত জানা যাক।

বন্ধু আপনি যদি উদাহরণ নেন আপনার স্মার্টফোনের তবে সেখানে বহুত প্রকারের আলদা আলদা হার্ডওয়্যার রয়েছে। যেমন ধরুন আপনার ফোনের প্রসেসর, র‍্যাম, ডিসপ্লে, ভাইব্রেটিং মোটর, স্পীকার, ক্যামেরা ইত্যাদি। তো এরকম অনেক হার্ডওয়্যার যন্ত্রাংশ আপনার ফোনে দেখতে পাওয়া যায়। ঠিক একইভাবে আপনার কম্পিউটারেও অনেক প্রকারের হার্ডওয়্যার রয়েছে। তো বন্ধুরা এই অবস্থায় আমাদের এমন এক সিস্টেমের প্রয়োজন যার মাদ্ধমে হার্ডওয়্যার গুলোকে ঠিকঠাক মতো ব্যবহার করা যায় এবং তা সফটওয়্যার পর্যন্ত পৌঁছানো যায়।

উদাহরণ স্বরূপ মনে করুন আমার কাছে একটি ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে এবং আমি সেটি আমার ফোনে ইন্সটল করলাম। এখন যখনই আমি অ্যাপ্লিকেশনটি অন করবো, ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশন সর্বপ্রথম আমার ফোনের ক্যামেরা অ্যাক্সেস করতে চাইবে। এখন এই অ্যাপ্লিকেশনকে আমার ফোনের ক্যামেরা অ্যাক্সেস দেবার জন্য নিশ্চয় এক অথোরিটির প্রয়োজন পড়বে যা অনুমতি প্রদান করতে পারে। যদি কথা বলি ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশন ক্লিক করে ফটো তোলার তবে ঐ অ্যাপ্লিকেশনটির এলইডি ফ্ল্যাশ ব্যবহার করারো প্রয়োজন পড়বে। তাছাড়া যখন ফটো উঠে যাবে তখন অ্যাপটির এটাও অনুমতির প্রয়োজন পড়বে যে সে যেন ফটোটি আপনার ফোনের মেমোরিতে সেভ করতে পারে। তো এ যে সকল অনুমতি প্রদানের সিস্টেম আমরা আলোচনা করলাম এটাই হচ্ছে কার্নেল।

সাধারণভাবে বলতে গেলে কার্নেল হলো একটি সফটওয়্যার যা আপনার ডিভাইজের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সাহায্য করে থাকে। আপনার সফটওয়্যারের প্রয়োজন অনুসারে যে যে হার্ডওয়্যার ব্যাবহারের প্রয়োজন পড়ে তা সফটওয়্যার কার্নেলকে অনুরোধ করে। এবং কার্নেল সেই অনুরোধ গ্রহন করে সফটওয়্যারকে তার প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রদান করতে থাকে। কোন অ্যাপকে যদি ব্যাকগ্রাউন্ড রান হতে হয় বা কোন অ্যাপ যদি সিপিইউ ব্যবহার করতে চায় বা র‍্যাম ব্যবহার করতে যায় তবে এসকল কাজ প্রথমে কার্নেলের হাতেই থাকে। আপনার ফোন অন করার সাথে সাথে যে বুট অ্যানিমেশন দেখতে পাওয়া যায় এবং ধিরেধিরে সকল প্রসেস রান হতে শুরু করে তো এসকল কাজ শুধু কার্নেলের মাধ্যমেই হতে পারে।

বন্ধুরা যদি কথা বলি অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে তবে এটিতে ব্যবহার করা হয় লিনাক্স কার্নেল যেটি আপনার কম্পিউটারের লিনাক্স কার্নেলের মতো একই জিনিষ। তবে ফোনের কার্নেলে কিছু পার্থক্য থাকে। উইন্ডোজ ফোনে ব্যবহার করা হয় এনটি কার্নেল এবং আইওএস বা অ্যাপেল ম্যাক ওএস এ ব্যবহার করা হয় ডার্বিন কার্নেল। উইন্ডোজ এবং আইওএস একটি ক্লোজড অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু যেহেতু লিনাক্স একটি ওপেন সোর্স তাই এতে আপনি অপশন পেয়ে যান কার্নেল পরিবর্তন করার। মানে আপনি চাইলে আপনার ফোনে কোন তৃতীয়পক্ষ কার্নেল স্থাপন করতে পারবেন। কেনোনা এটি মূলত একটি সফটওয়্যার তাই অনেক সহজে পরিবর্তনও করা সম্ভব। কিন্তু এটি করার জন্য আপনার ফোনে প্রয়োজন পড়বে রুট অ্যাক্সেস এবং ফোনের বুট লোডার আনলক থাকারও বিশেষ প্রয়োজন।

যদি আপনি এই দুই কাজ করেন আপনার ফোনে তবে আপনি চাইলেই আপনার ফোনের কার্নেল পরিবর্তন করতে পারবেন। এখন প্রশ্ন হলো আপনি পরিবর্তনই বা করতে চাইবেন কেন? দেখুন বহুত তৃতীয়পক্ষ কার্নেল রয়েছে যা আপনার ফোনের ভালো ব্যাটারি লাইফ প্রদান করতে সাহায্য করে থাকে এবং অপরদিকে আপনাকে অনেক ভালো পারফর্মেন্স দিতেও সক্ষম। কেনোনা কোন অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর কম্পিউটিং ডিভাইজের ক্ষেত্রে কার্নেলই আসল কোর সিস্টেম হয়ে থাকে। এবং সিস্টেমের সকল প্রসেস নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা থাকে।

কার্নেল পরিবর্তন করার মাধ্যমে সিপিইউ ভোল্টেজ কমিয়ে ফোনের ব্যাটারি সেভ করতে পারেন আবার সিপিইউ ওভার ক্লক করিয়ে পারফর্মেন্স বাড়াতে পারেন। এরকম আরো অনেক কাজ কার্নেল পরিবর্তন করার মাধ্যমে করা সম্ভব হতে পারে। আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য রয়েছে বহুত প্রকারের কার্নেল। আপনি সহজেই সেগুলো খুঁজে বেড় করে আপনার ফোন ইন্সটল করতে পারেন।

কিন্তু মনে রাখবেন কার্নেল পরিবর্তন করা একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রসেস। আপনি যদি ঠিকঠাক ভাবে সকল স্টেপ না করতে পারেন তবে আপনার ফোন ব্রিক হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এবং যখনই আপনি কোন তৃতীয়পক্ষ কার্নেল ফোনে ইন্সটল করবেন তখন মনে রাখবেন সেটি যেন কোন ভালো ডেভেলপারের ডেভেলপ করা হয়। কেনোনা বেকার কার্নেল ইন্সটল করলে ফোন একদম কোন বাক্স সমতুল্য হয়ে যেতে পারে।

শেষ কথা

আশা করছি বন্ধুরা আজকের পোস্ট থেকে আপনারা অনেক কিছু জেনেছেন এবং পছন্দ করেছেন। আপনার যেকোনো প্রশ্ন এবং উত্তরে দয়া করে নিচে কমেন্ট করুন। এবং পোস্টটি দয়াকরে বেশি বেশি শেয়ার করুন। ধন্যবাদ 🙂

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories