কিছু টেক ইনোভেশন : যেগুলো আমাদের অনলাইন লাইফকে আরও উন্নত করেছে!

বর্তমান সময়ে এসে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের অনলাইন উপস্থিতি আমাদের বাস্তব উপস্থিতির মতোই উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠছে যুগের অগ্রগতির সাথে সাথেই। বর্তমানে ইন্টারনেট এবং আমাদের অনলাইন উপস্থিতি অনেকের কাছে তাদের বাস্তব উপস্থিতির থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ভাবলে অবাক হবেন যে গত কয়েক বছরের মধ্যে ইন্টারনেটের কতটা যুগান্তকারী উন্নতি এসেছে। ইন্টারনেট দিনদিন যত বেশি উন্নত হচ্ছে, আমরা ইন্টারনেটের ওপরে আস্তে আস্তে ততই বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। তবে ইন্টারনেটের এই উন্নতির পেছনে রয়েছে বিশেষ কয়েকটি আবিষ্কার এবং ইনোভেশন। আজকে ইন্টারনেটের এমন কয়েকটি ইনোভেশন নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আমাদের অনলাইন লাইফকে আরও বেশি উন্নত করেছে এবং করে যাচ্ছে।


ক্লাউড সার্ভার এবং ক্লাউড কম্পিউটিং

আপনি হয়তো খুব ভালোভাবে জানেন না যে ক্লাউড কম্পিউটিং কি, তবে নিশ্চিতভাবেই আপনি এটা নিজেই ব্যবহার করেছেন এবং এমনকি এখনও ব্যবহার করছেন। ক্লাউড কম্পিউটিং হচ্ছে কিছু হাই এন্ড হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের ওপরে রান করা হাই এন্ড কম্পিউটার যেটি ক্লাউডে বা সহজ ভাষায় বললে ইন্টারনেটে এভেইলেবল করা হয় যাতে আপনি ইন্টারনেটের সাহায্যেই কম্পিউটারটিকে অ্যাক্সেস করতে পারেন এবং এর সাহায্যে আপনার প্রয়োজনীয় কাজটি করে ফেলতে পারেন বা দরকার হলে এর সাহায্যে আপনার পার্সোনাল সার্ভারও তৈরি করতে পারেন।

যেমন, এই যে আপনি ওয়্যারবিডিে এই আর্টিকেলটি পড়ছেন, এই ওয়্যারবিডিের সব ধরনের ডেটাই আপনাকে কোন না কোন সার্ভার গ্রেডের ক্লাউড কম্পিউটার থেকে সার্ভ করা হচ্ছে। যে ক্লাউড সার্ভারে ওয়্যারবিডি ওয়েবসাইটটি হোস্ট করা আছে, সেই সার্ভার থেকেই আপনাকে সবকিছু সার্ভ করা হচ্ছে যখন আপনি এই সাইটটি অ্যাক্সেস করার রিকুয়েস্ট করছেন। পৃথিবীর প্রত্যেকটি ওয়েবসাইট এবং ওয়েব সার্ভিসের পেছনেই আছে ক্লাউড সার্ভার এবং ক্লাউড কম্পিউটিং। ক্লাউড কম্পিউটিং আবিস্কার না হলে কোন ওয়েবসাইট ক্লাউড সার্ভারে হোস্ট করা সম্ভব হতনা। তাই এটি ইন্টারনেটের বিশেষ কয়েকটি ইনোভেশনের মধ্যে অন্যতম।

সোশ্যাল মিডিয়া

এর ব্যাপারে নতুন করে কিছুই বলার নেই। সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে অধিকাংশ ইন্টারনেট ইউজারের অনলাইন লাইফের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে বর্তমানে অনেক সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের জীবনের এতটাই কাছে চলে এসেছে যে সেটি আক্ষরিক অর্থেই অনেক মানুষের রিয়াল লাইফকেই একধরনের সিমুলেট করে। যেমন -ফেসবুক। ইন্টারনেটে এই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোই একমাত্র বড় প্লাটফর্ম যেগুলো বিভিন্ন রিজিয়নের এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন মানুষকে একে অন্যের সাথে কানেক্টেড রাখে।

স্ট্যাটাস আপডেটস, লাইকস, কমেন্টস, শেয়ারস, চেন-ইনস, চ্যাটিং ইত্যাদি সবকিছুই মানুষের লাইফের সাথে এতটাই মিশে গিয়েছে যে বর্তমানে অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার এগুলো ছাড়া এক মুহূর্তও চলতে পারেনা। পৃথিবীকে একটি গ্লোবাল ভিলেজ বলার পেছনে প্রায় ৯০% ক্রেডিটই ফেসবুকের মতো এইসব বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোর এবং অবশ্যই এটি ইন্টারনেটের একটি অন্যতম ইনোভেশন।

ইন্টারনেটের পরিকাঠামো

এখন এইযে আপনি ওয়্যারবিডিে এই আর্টিকেলটি পড়ছেন, এর জন্য অবশ্যই আপনার একটি ওয়েব ব্রাউজার দরকার হচ্ছে। আর আপনি ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে পারছেন যে টেকনোলজি ব্যবহার করে তার নাম হচ্ছে TCP/IP। আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন অনেক ধরনের হাইপারলিংক এবং ইউআরএল ব্যবহার করে। এগুলোই মুলত ইন্টারনেটের ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা পরিকাঠামো।

এই সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের সম্পূর্ণ কনসেপ্টটির উদ্যোক্তা ছিলেন স্যার টিম বার্নার্স লি। এছাড়া আপনি ইন্টারনেটের এই সমস্ত ইনফরমেশন দেখছেন বিভিন্ন ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে। যেমন- HTML। এই সবকিছু হচ্ছে ইন্টারনেট এবং ওয়েবের একেবারে বেসিক কয়েকটি কাঠামো যেগুলো ছাড়া ওয়েবের কোন অস্তিত্বই থাকতো না।

ফ্রি ইনফরমেশন সার্ভিস

এখন যদি আপনি কোন জিনিস বা কোন বিখ্যাত ব্যক্তি বা কোন প্রাণী কিংবা এই ধরনের যেকোনো কিছু সম্পর্কে কিছু  বিস্তারিত জানতে চান তাহলে কি করবেন? আপনি জাস্ট ব্রাউজারে গিয়ে অ্যাড্রেস বারে সেটির নাম লিখে ইন্টার বাটন প্রেস করবেন এবং সেটির উইকিপিডিয়া পেজে ঢুকে আপনার যা যা জানার সবকিছু জেনে নেবেন। কিন্তু কখনো চিন্তা করেছেন যে উইকিপিডিয়ার কোন ফ্রি ইনফরমেশন সোর্স না থাকলে কি হত? তখন আপনাকে কোনকিছু জানতে হলে সম্পূর্ণ একটি ৫ কেজি ওজনের এনসাইক্লোপিডিয়া বই নিয়ে বসতে হত।

এখন যদি আপনার কোন শব্দের অর্থ জানার দরকার হয়, আপনি জাস্ট গুগল ট্রানস্লেট ওপেন করবেন এবং শব্দটি লিখেই তার অন্য ভাষার অর্থ বা শাব্দিক অর্থ পেয়ে যাবেন। যদি গুগল ট্রানস্লেটের মতো ফ্রি সার্ভিস না থাকতো? তাহলে আপনাকে একটি মোটা ডিকশনারি নিয়ে বসে পড়তে হত শব্দটি খুঁজতে। প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরে খোঁজাখুজির পরে গিয়ে আপনি শব্দটি পেতেন। এখন আমাদের সব ধরনের ইনফরমেশন দ্রুত পাওয়ার জন্য কোন না কোন অনলাইন সোর্স আছেই যেখানে মুহূর্তের মধ্যেই আমরা যা সার্চ করবো টাই পেয়ে যাবো। আমি বলবো ইন্টারনেটের সবথেকে বড় ইনোভেশন এটাই।

অনলাইন ওয়ালেট এবং অনলাইন শপিং

এটাও আর বলার অপেক্ষা রাখেনা যে অনলাইন ব্যাংকিং এবং ওয়ালেট সার্ভিসগুলো যেমন পেপাল এবং এমনকি ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড মানুষের জীবনকে কতটা সহজ করেছে। ফিজিক্যাল মানি এর থেকে ডিজিটাল মানি কতটা উপযোগী তা আমরা সবাই জানি। টাকা চুরি হওয়ার বয় নেই, হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই এবং টাকা হিসাব করারও কোন প্রয়োজন থাকেন অনলাইন ব্যাংকিং এবং ওয়ালেট সার্ভিসগুলোর কারনে।

এছাড়া এই অনলাইন ব্যাংকিং সার্ভিসগুলোর কারনেই কাউকে টাকা সেন্ড করার ব্যাপারটি অনেক অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও অনলাইন শপিং আমাদের লাইফকে আরও কতটা সহজ করেছে তা আমরা সবাই জানি। বর্তমানে কোন জিনিস কিনতে চাইলে নিজে মার্কেটে গিয়ে জিনিসটি না কেনার অপশনও আছে আমাদের কাছে। অ্যামাজনের মতো ইন্ডাসট্রি থাকার কারনে আমাদের শপিং হ্যাবিটও দিনদিন অনেকটা অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ছে। এবং এই অনলাইন ব্যাংকিং সার্ভিসগুলো থাকার কারনে অনলাইন শপিং আরও বেশি সহজ এবং কনভেনিয়েন্ট হয়ে গিয়েছে।


তো এই ছিল ইন্টারনেটের কয়েকটি ইনোভেশন যেগুলো আমাদের অনলাইন লাইফকে আরও বেশি উন্নত এবং সহজ করেছে ও করে চলেছে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে।  কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। আপনার মতে ইন্টারনেটের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ইনোভেশন কোনটি? আপনার মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচে কমেন্ট সেকশনে।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories