কয়েকটি প্রশ্ন যেগুলোর উত্তর বিজ্ঞান এখনও দিতে পারেনি!

আমরা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির এমন একটি যুগে বসবাস করছি, যেখানে বিজ্ঞান প্রায় আমাদের অধিকাংশ সমস্যার সমাধান দিতে পারে এবং প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন সকল কাজের সাথে গভীরভাবে জড়িত। বর্তমানে এটা কোন গোপন কথা নয় যে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ওপরে আমরা দিনদিন অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি এবং ভবিষ্যতে হয়তো প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। যাইহোক, তবে বিজ্ঞান কিন্তু সত্যিকারেই আমাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা এবং সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারেনা। পৃথিবীতে এখনও এমন অনেক প্রশ্ন এবং রহস্য আছে যেগুলোর উত্তর সায়েন্স এখনও দিতে পারেনি এবং হয়তো কখনোই দিতে পারবে না। আজকে এমন কয়েকটি প্রশ্ন এবং রহস্য নিয়েই আলোচনা করবো যেগুলোর উত্তর বিজ্ঞান এখনও দিতে পারেনি।


কেন আমরা স্বপ্ন দেখি?

আপনি, আমি এবং আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি। হয়তো আপনি রাতে ঘুমানোর পরে দেখলেন যে আপনি হিটলারের সাথে যুদ্ধ করছেন এবং তাকে প্রায় পরাজিতই করে ফেলেছেন। অথবা দেখলেন যে আপনি কোন এক গভীর জঙ্গলের মধ্যে বিশাল এক হিঙ্গস্র জন্তুর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে বুঝলেন যে সেটি শুধুমাত্র আপনার দেখা একটি স্বপ্ন ছিল। সাইনটিস্ট এবং স্লিপ এক্সপার্টরা জানে যে মানুষ কখন স্বপ্ন দেখে। সাধারনত, আমরা আমাদের ঘুমের এমন একটা পর্যায়ে স্বপ্ন দেখি, যে পর্যায়টিকে বলা হয় র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট।

ঘুমের এই পর্যায়টি শুধুমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই আসে এমনটা নয়। র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট প্রায় সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীর ঘুমের সময়ই ঘটে থাকে। অর্থাৎ, স্বপ্ন শুধু আপনিই দেখেন না, আপনার পোষা বিড়াল বা পোষা কুকুরটিও স্বপ্ন দেখে। সায়েন্স এটা ব্যাখ্যা করতে পেরেছে যে ঘুমের কোন সময়টাতে মানুষ স্বপ্ন দেখে। তবে এটার এখনও কোন নিশ্চিত ব্যাখ্যা দিতে পারেনি যে কেন মানুষ স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন তৈরিই বা হয় কিভাবে এবং স্বপ্ন দেখার সময় মানুষের ব্রেইনে কি ঘটতে থাকে। হ্যা, এমন হয়তো শুনে থাকবেন যে মানুষ সারাদিন যা করে বা যা ভাবে তারই একটি প্রতিচ্ছবি স্বপ্নের মাধ্যমে দেখতে পায়। তবে সেটাই বা মানুষ কেন দেখে তা এখনও বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারেনি।

আমরা কি এই বিশ্বজগতে একা?

এটা আরেকটি রহস্য যেটির সমাধান বিজ্ঞান এখনও করতে পারেনি। কিছু কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে। তবে অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করেন যে এলিয়েন বলতে কিছু নেই, এগুলো শুধুই মানুষের অসম্ভব কল্পনা। তবে আমাদের এই সম্পূর্ণ ইউনিভার্সে এলয়েন বা এই ধরনের অন্য কোন প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়েও দেওয়া যায়না। আমরা যে গালাক্সিতে বসবাস করি, সেই গালাক্সিতেই প্রায় ৪০ বিলিয়নেরও বেশি প্ল্যানেট আছে এবং সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশ প্ল্যানেটই পৃথিবীর তুলনায় বড়। এটা চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে আমরা এই ইউনিভার্সের ঠিক কতটুকু সামান্য জায়গাজুড়ে বসবাস করছি।

তাই এইটুকু একটা জায়গায় বসবাস করে আমরা সম্পূর্ণ ইউনিভার্স এক্সপ্লোর না করেই এটাও বলতে পারিনা যে এই সম্পূর্ণ বিশ্বজগতে আমরা একাই আছি। এমনকি নাসার কয়েকজন রিসার্চার এটা বিশ্বাস করেন যে, আমরা আগামী কয়েক যুগের মধ্যেই এই বিশ্বজগতের অন্য কথাও প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পেতেও পারি। তবে এই সব যুক্তির পরেও বিজ্ঞান এখনও আমাদেরকে নিশ্চিতভাবে কোন তথ্য দিতে পারেনি এই সম্পর্কে। বিজ্ঞান কোনরকম যুক্তির সাহায্যেই এটা নিশ্চিতভাবে প্রমান করতে পারেনি যে আমরাই এই ইউনিভার্সে একা বা আমরা এই ইউনিভার্সে একা নই। হয়তো এই প্রশ্নের বিশ্বাসযোগ্য উত্তর খুঁজতে হলে মানুষকে আরও হাজার হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে।

পৃথিবীতে মোট কত প্রজাতির প্রাণী আছে?

পৃথিবীতে মানুষ এক প্রজাতির হলেও অন্যান্য ছোটবড় অনেক প্রাণীর অনেকরকম প্রজাতি আছে। মাছ থেকে শুরু করে, পোকামাকড় থেকে শুরু করে গাছপালা এবং বড় প্রাণীগুলোরও অনেকরকম প্রজাতি আছে। অনেক প্রাণীর এমনও অনেক প্রজাতি আছে যেগুলো আমরা এখনও জানিনা এবং খুজেও পাইনি এখনো। প্রায় প্রত্যেক বছরই নতুন অনেক প্রজাতির প্রাণী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে এবং সেগুলোর নামকরন করা হচ্ছে। কিন্তু এই প্রাণীগুলোর নতুন প্রজাতি খুঁজে পাওয়ার শেষ কোথায় তা আমরা কেউ জানিনা।

শুরু এখনো পর্যন্ত আমরা প্রায় ১.৫ মিলিয়ন প্রজাতির প্রাণী খুঁজে পেয়েছি এবং ধারনা করা হয় যে আমরা সব প্রজাতির জীবের মাত্র ১৫% খুঁজে পেয়েছি এখনও পর্যন্ত। অর্থাৎ, এখনও জীবের প্রজাতির অনেক অনেক জানা বাকি আমাদের। ধারনা করা হয়, যেসব প্রজাতির জীব আমরা এখনো খুঁজে পাইনি সেগুলোর সবই প্রায় মাটির নিচে এবং সমুদ্রের গভীর তলদেশে বসবাস করে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ প্রজাতির জীবই হয়তো আমরা কখনোই খুঁজে পাবোনা অথবা সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে ডাইনোসরের মতো। তবে এটিই হচ্ছে আরেকটি রহস্য যার সমাধান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি এখনও দিতে পারেনি।

টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব?

সায়েন্স ফিকশনগুলোর মধ্যে টাইম ট্রাভেল জিনিসটি সম্ভবত সবথেকে বেশি এক্সাইটিং এবং একইসাথে সবথেকে বেশি কোনফিউজিং বিষয়। টাইম ট্রভেল সম্ভব নাকি অসম্ভব, সম্ভব হলে কেন সম্ভব, কিভাবে সম্ভব আর সম্ভব না হলে কেনই বা সম্ভব নয় এই নিয়ে অনলাইন এবং অফলাইন সবজায়গাতেই অনেক বেশি আর্গুমেন্ট আছে। অনেক বিজ্ঞানী মনে-প্রানে বিশ্বাস করেন যে টাইম ট্রাভেল সম্ভব এবং অনেকরকম যুক্তি এবং সুত্রের সাহায্যে সেটি প্রমান করারও চেষ্টা করেছেন। আবার যারা বিশ্বাস করেন যে টাইম ট্রাভেল সম্ভব না, তারাও অনেকরকম যুক্তি দেখিয়েছেন এটার পেছনে।

অনেক বিজ্ঞানী ওয়ার্মহোল বিশ্বাস করেন যেটি ফিউচারে যাওয়ার একটি ব্রিজ হিসেবে কাজ করতে পারে। আবার অনেকে এইসবকিছুকেই মিথ্যা বলে প্রমান করারও চেষ্টা করেছেন। অনেক বিজ্ঞানী এটাও বলেছেন যে আমরা যদি আলোর সমান গতিতে ট্রাভেল করতে পারি, তাহলে এর সাহায্যে টাইম ট্রাভেলিং সম্ভব। অনেক বিজ্ঞানীর মতে আমরা ওয়ার্মহোল ব্যবহার করে টাইম ট্রাভেল করতে পারি অথমা কসমিক স্ট্রিং ব্যবহার করেও টাইম ট্রাভেল করতে পারি। তবে এই যুক্তিগুলোর কোনটাই খুব বেশি প্র্যাক্টিকাল সল্যুশন নয়। এছাড়া টাইম ট্রাভেলিং এর কিছু সমস্যা বা প্যারাডক্সও আছে যেগুলোর সম্মুখীন হতে হতে পারে আমাদের। তবে সবশেষে, এই টাইম ট্রাভেল বিষয়টিও অন্যতম একটি রহস্য যেটির ব্যাখ্যা আধুনিক বিজ্ঞান এখনও দিতে পারেনি এবং কখনো দিতে পারবে তাও নিশ্চিতভাবে বলা যাবেনা।

আমাদের ইউনিভার্সের কি সত্যিই কোন শেষ নেই?

আপনি, আমি এবং আমরা সবাই জানি এবং শুনেছি যে মহাকাশের কোন শেষ নেই এবং আমাদের বিশ্বজগৎ সবসময়ই প্রসারিত হচ্ছে এবং এর কোন শেষ নেই। তবে আমরা অএঙ্ক আগে থেকেই আমাদের পৃথিবীর সাইজ, আমাদের আশেপাশের অন্যান্য গ্রহের সাইজ, আমাদের সৌরজগতের প্রান, সূর্যেরও সাইজ জানতে পেরেছি। তবে আমরা এখনো যেটি সঠিকভাবে জানতে পারিনি তা হচ্ছে আমাদের সম্পূর্ণ ইউনিভার্সের সাইজ কত। এটিকি সত্যিই ইনফিনিট নাকি জাস্ট অনেক বিশাল? বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সুত্র এবং যুক্তির সাহায্যে প্রমান করার চেষ্টা করা হয়েছে যে আমাদের ইউনিভার্স আসলে ইনফিনিট। অর্থাৎ এর কোন শেষ নেই।

তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীরই এই তথ্যটি নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে। আপনি সাধারনভাবেই চিন্তা করুন, আমরা আমাদের ইউনিভার্সের কতটুকুই বা এক্সপ্লোর করতে পেরেছি? আমরা তো আমাদের ইউনিভার্সের ১% ও এখনও এক্সপ্লোর করতে পারিনি। তাহলে এইটুকু এক্সপ্লোর করেই কিভাবে বলতে পারি যে ইউনিভার্সের কোন শেষই নেই? হয়তো ইউনিভার্সের শেষ আছে তবে আমরা এখনো ততদূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। আবার এটাও হতে পারে যে ইউনিভার্সের সত্যিই কোন শেষ নেই। এটাই আরেকটা প্রশ্ন যেটির উত্তর বিজ্ঞান এখনও খুঁজে চলেছে। কিছু থিওরি এবং সুত্র দিতে পারলেও এখনও নিশ্চিতভাবে সমাধান দিতে পারেনি।


তো এই ছিল কয়েকটি প্রশ্ন যেগুলোর উত্তর এখনো বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি আমাদেরকে দিতে পারেনি এবং কখনো দিতে পারবে কিনা তাও নিশ্চিতভাবে বলা যায়না। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। আপনি এমন আরও কোন প্রশ্নের বাপারে জানেন যেগুলোর উত্তর বিজ্ঞান আমাদেরকে দিতে পারেনি? চাইলে সেগুলোও কমেন্ট সেকশনে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories