৫টি জিনিষ, যেটা পৃথিবীতে অসম্ভব, কিন্তু আলাদা গ্রহে সম্ভব!

পৃথিবী মানবজাতি এবং অন্যান্য প্রানীর বসবাসের উপযোগী একমাত্র গ্রহ। পৃথিবীতে আমাদের বসবাস উপযোগী বায়ুমন্ডল রয়েছে , রয়েছে আমাদের বসবাস উপযোগী নানা উপাদান । আর এসকল অনেক বিষয় যা পৃথিবীতে সম্ভব তবে অন্য কোথাও নয়, তা সম্পর্কে হয়ত আমরা অবগত। তবে আজকে আমার আলোচনার বিষয় তা নয়। আজ আমি আপনাদের জানাব, এমন কিছু জিনিস সম্পর্কে যা আমাদের পৃথিবীতে সম্ভব নয় ; তবে তা মহাবিশ্বের অন্য কোন গ্রহে সম্ভব এবং যা খুবই আশ্চর্যময়। আশা করছি আজকের এই বিষয়গুলো আপনার ভালো লাগবে এবং কিছুটা হলেও আপনাকে অবাক করবে।

আপনার ছায়া একটি নয় দুটি!

আমরা যখন পৃথিবীতে বিচরন করি, তখন কিন্তু আমরা আমাদের দেহের একটি অবয়ব তথা ছায়াকে সর্বদা আমাদের সাথে বিচরন করতে দেখি। কেবল আমরা না গাছপালা থেকে শুরু করে রাস্তায় হেঁটে চলা কুকুর সবারই ছায়া সবসময় তাদের সাথেই থাকে। তবে আমরা কেবল আমাদের একটি ছায়াই দেখতে পাই। তবে মহাবিশ্বের এমনও অনেক স্হান রয়েছে যেখানে আমরা আমাদের দুইটি ছায়া দেখতে পারব।

আমরা পৃথিবীতে কেবল আমাদের একটি ছায়া দেখতে পাই; কারন আমাদের এই পৃথিবীর একমাত্র আলোকউৎস সূর্য নামক একটি নক্ষত্র। তবে ব্যাপারটি কেমন হত যদি পৃথিবীতে দুই নক্ষত্র থাকত? উদাহরন হিসেবে আমরা বলতে পারি স্টার ওয়্যারস এর ট্যাটোইন প্লানেট এর কথা। যে প্লানেটে রয়েছে দুটি নক্ষত্র ; বা আমরা তাকে বলতে পারি দুটি সূর্য। আর যার ফলে এখানে কোনো প্রানী বা বস্তুর একটির পরিবর্তে দুটি ছায়া দেখা যাচ্ছিলো, তবে স্টার ওয়্যারস এর ব্যাপারটা সায়েন্স ফিকশন এর মত।

সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা Kepler-16b নামক একটি গ্রহ আবিষ্কার করেছে ; যে গ্রহে দুটি নক্ষত্র বিদ্যমান। যদিও মানুষকে এই গ্রহে নিয়ে যাওয়া হলে তারা অত্যাধিক গরমে টিকতে পারবে না ; তবুও পর্যাপ্ত রসদের সাথে স্পেস স্যুট পরিয়ে যদি নিয়েও যাওয়া হয়, তবে সেখানে সে তার দুটি ছায়া দেখতে পারবে।

যে গ্রহ পুরোটাই সমুদ্র

মহাকাশ বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত আরেকটি গ্রহ GJ1214-b একটি গ্রহ যা সম্পূর্ণ ভাবে পানি দ্বারা বেষ্ঠিত ; আর একারনে আমরা এই GJ1214-b গ্রহটিকে বলতে পারি সমুদ্র গ্রহ বা Ocean Planet। আর এই গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর থেকে প্রায় ৫-৬ গুণ বড়। এই গ্রহটির তুলনায় দেখতে গেলে আমাদের পৃথিবীর প্রশান্ত মহাসাগর একটি ছোট্ট পুকুর মাত্র। যদিও আমাদের পৃথিবীর ৭০% অংশ বেষ্ঠন করে আছে সমুদ্র ; তবুও পৃথিবীর সবরকম রিসোর্স বা উপাদান এর তুলনায় আমাদের পানির পরিমান মাত্র ০.০৫%।

অন্যদিকে ১০০% পুরোটাই পানি দিয়ে বেষ্ঠিত থাকা এই গ্রহের অন্যান্য উপাদান এর তুলনায় কেবল পানির পরিমানই ১০%। যার ফলে পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্রতল যেখানে ১১ কিলোমিটার, সেখানে এই গ্রহে তা ১০০ কিলোমিটার। আর বন্ধুরা মজার ব্যাপার হল যে, আমাদের এই সর্বোচ্চ ১১ কিলোমিটার গভীরতা নিতে আমরা আমাদের সমুদ্রের নিচে নীল তিমির মত বিশাল কিছু থেকে শুরু করে আরও যা যা সন্ধান পেয়েছি; সেখানে এই বিশাল ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরতার গ্রহে আরও কি কি পাওয়া যেতে পারে? কে জানে, হয়ত আমাদের চেয়েও ১০ গুণ বেশি গভীর এই গ্রহে নীল তিমির চাইতেও আরও বিশাল বিশাল দৈত্যের অস্তিত্ব রয়েছে!

এই গ্রহে পানির নিচের দিকের চাপ এত বেশি যে, তা এক প্রকার বিশেষ বরফ বা পানির ক্রিস্টালে পরিনত হয়েছে, আর একে বলা হয় “আইস ৭“। এই আইস ৭ বা বিশেষ রকমের এই বরফ পানির একটি কঠিন অবস্থা মাত্র। বরফ মানেই আমরা জানি খুবই শীতল কোনো কিছু ; তবে এই “আইস ৭” বরফ এর মত কঠিন হলেও ঠান্ডা না! বলা যায় এটি পানির পাথরের মত একটি কঠিন অবস্থা।

পাথরের বৃষ্টির গ্রহ

পৃথিবীর আবহাওয়া যেকোন সময় পরিবর্তনশীল ; মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ঝড়,জলোচ্ছ্বাস এর মাধ্যমে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। পৃথিবী বৃষ্টির মাধ্যমে পুরো শহর ও জনজীবন’কে পানির জালে আটকে দেয়। তবে বিশ্বাস করুন, মহাকাশ এর অারো অন্যান্য জায়গার তুলনায় এই পৃথিবীর আবহাওয়া অনেক ভালো; পরবর্তী কতগুলো বিষয় পড়লে আপনি ব্যাপারটি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। যেখানে আমাদের পৃথিবীতে পানির বৃষ্টি হয়, ঠিক সেখানে COROT-7b নামক একটি গ্রহে হয় পাথরের বৃষ্টি!

কারন এই গ্রহটি তার নক্ষত্রের অত্যান্ত কাছে অবস্হিত ; আর যে অংশ নক্ষত্র এর দিকে মুখ করে থাকে ; তার তাপমাত্রা তখন প্রায় ২৬০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যার ফলে পৃথিবীতে যেমন পানি বাষ্প হয়ে মেঘে রূপান্তরিত হয়, সেখানে এই গ্রহটির পৃষ্টে থাকা পাথর বাষ্প হয়ে পাথরের মেঘ তথা ‘রক ক্লাউড‘ এ রূপান্তরিত হয়। তারপর সেই মেঘ গ্রহটির বিপরীতে একটু ঠান্ডা পাশে গেলে প্রথমে বৃষ্টির পানির মত ম্যাগমা নিক্ষেপ করতে থাকে ; সেই ম্যাগমা পরতে পরতে ঠাণ্ডা আবহাওয়া পেয়ে, একটু পর কঠিন পাথরে পরিনত হয়ে বৃষ্টির বর্ষনের মত নিচে পড়তে থাকে।

এই COROT-7b গ্রহটির ঠান্ডা অংশের তাপমাত্রা ১৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর এই তাপমাত্রাই আমাদেরকে খুবই খারাপ অবস্থায় ফেলে দেবে ,তাহলে এর আলোক পৃষ্ঠে আমাদের কি অবস্থা হবে তা বুঝে নিন!

কাঁচের ঝড় হয় যে গ্রহে!

আমাদের এই প্লানেট আর্থ থেকে ৬৩ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত আরেকটি গ্রহ রয়েছে যার নাম HD189773-b। গ্রহটি আমাদের সোলার সিস্টেমের সবচেয়ে বড় গ্রহ জুপিটার এর চাইতে একটু বড়। মহাকাশে এই গ্রহটি দেখতে অত্যান্ত সুন্দর, তবে এই সৌন্দর্যের পিছে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর এক প্রাকৃতিক অবস্থা। গ্রহটির সৌন্দর্যের আসল রহস্য হল এর সিলিকন পার্টিকেল দিয়ে তৈরি এর বায়ুমন্ডল।

গ্রহটিতে থেকে থেকে প্রায় ৫৪০০ মাইল পার ঘন্টা বেগে ঝড় বয়ে যায় , তাও যে সে ঝড় না ‘কাঁচের ঝড়‘ ; যা হিসেবে শব্দের গতির থেকে ৭ গুন বেশি এবং সেকেন্ডে প্রায় ২ কিলোমিটার গতি। আর তাপমাত্রা এখানে ৯৩০ ডিগ্রী পর্যন্ত বেড়ে যায়। এখানে সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে বালুর মূল উপাদান তথা সিলিকন বায়ুমন্ডলের গ্রহ হওয়ার কারনে এটি ঝড়ের সাথে বাতাসের ভেতর ২ কিলোমিটার পার সেকেন্ড বেগে কাঁচও বর্ষন করে নিয়ে যায়, যা আমাদের পক্ষে খুবই ভয়ানক অবস্থা! এই রকম কিছু যদি পৃথিবীতে হয়, তবে তা পুরো পৃথিবীকে মাত্র ৫ ঘন্টায় এক ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে দিতে পারবে।

গ্যাস এবং তেলের ভান্ডার

এবার বলব একটি গ্রহ নয়, উপগ্রহ সম্পর্কে। যেখানে আমরা আমাদের পৃথিবিতে গ্যাস এবং তেল এর জন্য বিশেষ করে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর নির্ভর করে বসে আছি,ঠিক সেখানে আমাদের নিকটতম শনি গ্রহের অন্যতম উপগ্রহ টাইটানে রয়েছে গ্যাস এবং তেলের বিশাল ভান্ডার। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই টাইটানের কেবল ২০% শতাংশ অংশ ম্যাপ করতে পেরেছেন, আর গবেষনায় থেকে দেখা গিয়েছে যে, কেবল এই ২০% অংশেই পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বেশি এরূপ খনিজ মূল্যবান সম্পদ বিদ্যমান রয়েছে। তেল, গ্যাসের এই লোভ আমেরিকার মত দেশকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি।

অনেক স্পেসমিশন, স্যাটেলাইট ইত্যাদি পরিচালিত করে নাসা এই টাইটান এর পৃষ্ঠের আসল ছবিও তুলতে সক্ষম হয়েছে। টাইটান এর কিছু অংশের তৈরি ম্যাপে দেখা যায় যে, এতে পৃথিবীর মত কিছু হৃদ বা লেক রয়েছে । টাইটান উপগ্রহটিতে পৃথিবীর মত বৃষ্টিও হয়। তবে এসব হৃদ বা লেকে পানির বদলে রয়েছে লিকুইড মিথেন এবং বৃষ্টিতে পানির বদলেও পরে লিকুইড মিথেন ; আর আমরা জানি যে মিথেনই হলো প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল উপাদান।

আর এটিই মূল কারন , যা নাসা সহ আরও অন্যান্য দেশের স্পেস এজেন্সিগুলোকে আকৃষ্ঠ  করেছে, হাজার হলেও একটা তেল গ্যাস এর উপগ্রহ মহাকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে, ছেড়ে তো দেয়া যায়না ????। এ কারনে টাইটানকে আখ্যায়িত করা হয় ‘ দ্যা নেক্সট ফ্রন্টিয়ার ‘ হিসেবে।


তাছাড়াও টাইটানের বায়ুমন্ডল এতটা পুরু যে, আপনি যদি কখনও এই গ্রহে যাওয়ার সুযোগ পান, তবে আপনার একটি স্বপ্ন পূরন করার সুযোগ পাবেন, আর সেটি হল ‘পাখির মত ওড়া‘। টাইটানের পুরু বায়ুমন্ডলের কারনে আপনি এখানে পাখির মত উড়তে পারবেন ; তবে অবশ্যই স্পেসস্যুট পরিহিত অবস্থায়। যদিও সম্ভব না হয়ত,তবুও যদি আপনি কোনদিন এই সুযোগ পান তবে পাখির মত উড়ে উড়ে বিশাল এই তেল গ্যাস এর সাম্রাজ্য ঘুরে দেখতে পারবেন আপনার মনের মত করে।

Images: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories