এনএফসি কি? | NFC | এর সেরা ৫টি ব্যবহার

বন্ধু আপনি আজ পর্যন্ত কোথাও না কোথাও এনএফসি সম্পর্কে নিশ্চয় শুনেছেন। হতে পারে আপনি আপনার ফোনের বাক্সের গায়ে লেখে থাকতে দেখেছেন বা আপনার ফোনের সেটিংসে দেখেছেন অথবা হয়তো আপনি অনলাইন থেকে অলরেডি এ ব্যাপারে পড়েছেন। আমি আজ এই আর্টিকেলে আপনাকে এনএফসির সম্পর্কে বলবো এবং এর ৫টি সেরা ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করবো। তো চলুন ঝাঁপিয়ে পড়া যাক 🙂

আরো কিছু পোস্ট

  • মেশিন লার্নিং | আপনি শিক্ষা দিন কম্পিউটারকে | বিস্তারিত
  • ইন্টারনেট অফ থিংগস | কি এর ভবিষ্যৎ? | বিস্তারিত
  • লিনাক্স কি? | কেন লিনাক্স ব্যবহার করবেন? | বিস্তারিত

এনএফসি

এনএফসির পূর্ণ নাম হলো নেয়ার ফিল্ড কমুনিকেশন (Near Feild Communication)। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা কম দূরতের মধ্যে কমুনিকেশন করতে পারে। কম দূরত্ব মানে ৪ সেন্টিমিটার বা ৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব বা একদম একসাথে লেগে থেকে। যখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুইটি ডিভাইজের মধ্যে কমুনিকেশন করা হয় সেটি অনেক ফাস্ট হয়ে থাকে। এনএফসির ব্যাবহারে অনেক কম ব্যাটারি ক্ষয় হয় এবং এটি ব্যবহার করা প্রচুর সহজ হয়ে থাকে।

এখন দেখুন বন্ধুরা আপনি যখনই কোন কমুনিকেশন করেন তখন কোন এন্টেনার প্রয়োজন তো অবশ্যই পড়ে। সেটা রেডিও হোক আর আপনার মোবাইল ফোন হোক আর স্যাটালাইট হোক, সব কিছুতেই অ্যান্টেনা প্রয়োজন পড়ে। এনএফসির অ্যান্টেনা আলাদা আলাদা ফোনে আলাদা আলাদা জায়গায় হয়ে থাকে। যেমন কিছু কিছু স্যামসাং ফোনে এনএফসির অ্যান্টেনা থাকে ব্যাটারির নিচে, আবার কিছু ফোনে ফোনের পেছনের ঢাকনাতে এর অ্যান্টেনা থাকে। তো এই অ্যান্টেনা আসলে করে টা কি? অ্যান্টেনা আসলে কিছু তথ্য পাঠাতে পারে এবং কিছু তথ্য গ্রহন করতে পারে। তো এই হলো মোটামুটি এনএফসি সম্পর্কে কিছু ধারণা।

এনএফসির পাঁচটি সেরা ব্যবহার

চলুন এবার এর ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক যার মাধ্যমে আপনি মোবাইল ফোন ব্যাবহারের লাইফকে আরো ভালো বানাতে পারবেন। এবং সাথে সাথে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য পেয়ে যাবেন।

১। ডাটা ট্র্যান্সফার– প্রথমত আপনি এনএফসির সাহায্যে ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারবেন অনেক সহজে। মনে করুন আপনার কাছে দুটি এনএফসি অ্যানাবল ফোন রয়েছে। এই অবস্থায় আপনার দুই ফোনটিকে একে অপরের অনেক কাছে নিয়ে আসুন এবং টাচ করান। এবার টাচ করার সাথে সাথেই আপনার দুই ফোনেই অপশন চলে আসবে। এবার যে ফোন থেকে আপনি কিছু পাঠাতে চান সেখান থেকে জাস্ট ফাইলটি পাঠিয়ে দিন। এবং ফাইলটি চলে যাবে আরেকটি ফোনে। ব্লুটুথের মতো আপনাকে কোন পেয়ারিং বা কোন কোড প্রবেশের প্রয়োজন একদমই পড়বে না। জাস্ট ফোন দুটি টাচ করানোর মধ্য দিয়েই পেয়ারিং নিজে থেকেই হয়ে যাবে এবং আপনি ডাটা অনেক সহজেই পাঠাতে পারবেন।

২। ডিভাইজ পেয়ারিং– এটি এনএফসির সবচাইতে ভালো একটি ব্যবহার, একটি ডিভাইজের সাথে আরেকটি ডিভাইজ পেয়ারিং করা। মনে করুন আপনি একটি ব্লুটুথ স্পীকার কিনলেন অথবা আপনি একটি ব্লুটুথ হেডফোন কিনলেন বা এই রকমেরই আপনি অন্য কোন গ্যাজেট কিনলেন। তো আগে কি হতো দেখুন প্রথমে আপনার ঐ ডিভাইজটির ব্লুটুথ অন করতে হতো তারপর আপনার ফোনের ব্লুটুথ সেটিংসে গিয়ে ডিভাইজ অনুসন্ধান করতে হতো। তারপর ডিভাইজটিতে একটি নির্দিষ্ট পিন প্রবেশ করিয়ে পেয়ার করতে হতো। তো এটি অনেক লম্বা একটি প্রসেস ছিল। এবং যখন কোন নতুন ইউজার কানেক্ট করতে চাইবে তখন অনেক সময় লেগে যাবে। কিন্তু এনএফসি এই কাজটি অনেক সহজ করে দিয়েছে। মনে করুন আপনার সামনে একটি ব্লুটুথ স্পীকার রয়েছে এবং তার পাওয়ার অন করা আছে। এখন জাস্ট আপনার ফোনের এনএফসি অন করুন এবং স্পীকারটির সাথে আপনার ফোন টাচ করার ব্যাস যতো প্রকারের পেয়ারিং আছে ডিভাইজ দুইটি এখন তা নিজে থেকেই সম্পূর্ণ করে নেবে। তো এনএফসির সাহায্যে দুটি সমর্থনকারী ডিভাইজের মধ্যে আপনি অনেক সহজেই পেয়ারিং করতে পারবেন তাও আবার শুধু টাচ করিয়ে।

৩। মোবাইল পেমেন্টস– তৃতীয় সুবিধাটি হচ্ছে আপনি এনএফসির মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন। আজকাল অ্যান্ড্রয়েড পে অনেক জনপ্রিয় এবং স্যামসাং পে ও অ্যাপেল পে ও অনেক জনপ্রিয়। তো এই সকল পেমেন্ট সিস্টেম এনএফসির উপরই কাজ করে। আপনি যখন শপিং করতে যান এবং সেখানে ক্রেডিট কার্ড সয়াইপ করার জন্য যে টার্মিনাল থাকে তা আজকাল এনএফসি অ্যানাবল্ড হয়ে থাকে। এখন যদি আপনি আপনার ফোনে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ইনফরমেশন সেভ করে রাখেন তবে ফোনে অ্যাপ্লিকেশন অন করে ব্যাস টার্মিনালের উপর ধরেন, আপনার পেমেন্ট হয়ে যাবে। আপনার একদমই কোন ফিজিক্যাল প্ল্যাস্টিক কার্ড বহন করার প্রয়োজন পড়বে না। শুধু ফোন সাথে থাকলেই হবে।

৪। এনএফসি ট্যাগ– চতুর্থ নাম্বার ব্যবহার হলো এনএফসি ট্যাগ। এটি অনেক ছোট একটি ডিভাইজ হয়ে থাকে কিন্তু বিভিন্ন আকারের হতে পারে। এবং এই ট্যাগে আপনি অনেক ছোট পরিমানের ডাটা সংরক্ষন করে রাখতে পারেন। অনেক ছোট ডাটা। মনে করুন আপনার কন্টাক্ট তথ্য অবথা ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড হতে পারে আবার আপনার ফোনের সেটিংস ব্যাকআপ হতে পারে। এই ট্যাগ কার্ড গুলো অনেক সহজেই পাওয়া যেতে পারে এবং আপনি বড়ই আরামে এগুলো কনফিগার করতে পারেন। এখন মনে করুন আপনি একটি এনএফসি ট্যাগে আপনার ঘরের ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড সেভ করে রেখেছেন এবং দেওয়ালে কোথাও চিপকে লাগিয়ে রেখেছেন। এখন যদি আপনার ঘরে কোন বন্ধু আসে এবং আপনাকে বলে যে আপনার ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড বলতে। তো আপনি জাস্ট তাকে ঐ ট্যাগটি দেখিয়ে দিন এবং যদি যে ঐ ট্যাগে তার এনএফসি অ্যানাবল ফোন টাচ করে তবে সাথেসাথে তার ফোনে পাসওয়ার্ড চলে যাবে এবং আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্ককের সাথে কানেক্ট হয়ে যাবে। আপনার বন্ধুকে পাসওয়ার্ড বলারও প্রয়োজন পড়বে না আপনার। আবার হয়তো অনেকে গাড়ীতে এনএফসি ট্যাগ লাগিয়ে রাখে। যখন সেখানে ফোন টাচ করা হয় তখন হয়তো আপনার ফোনে ন্যাভিগেশন অ্যাপ ওপেন হয়ে যাবে অথবা আপনার গাড়ীর মিউজিক সিস্টেমের সাথে আপনার ফোন পেয়ার হয়ে যাবে। এসকল বিষয় কাজে লাগতে পারে এনএফসি ট্যাগের মাধ্যমে।

৫। এনএফসি বিজনেস কার্ড– আজকের শেষ ব্যবহারটি হলো এনএফসি বিজনেস কার্ড। এটি অনেক জনপ্রিয় একটি ব্যবহার আজকের দিনে। এটি দেখতে একদম আপনার নরমাল বিজনেস কার্ড বা ভিসিটিং কার্ডের মতোই হয়ে থাকে কিন্তু তা এনএফসি অ্যানাবল হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে আপনি আপনার কার্ডে যা তথ্য লিখবেন তা তো থাকলোই এবং সাথে আপনি এনএফসি চিপে অনেক তথ্য সংরক্ষন করে রাখে পারবেন। সেখানে আপনার কন্টাক্ট নাম্বার, আপনার বিজনেস ওয়েবসাইট লিঙ্ক, ফেসবুক ফ্যান পেজ লিঙ্ক, টুইটার লিঙ্ক, লিঙ্কডইন লিঙ্ক ইত্যাদি রাখতে পারবেন। এবং এটি এনএফসি অ্যানাবল্ড মোবাইল যখনই ঐ কার্ডে টাচ করানো হবে তখন সেখানকার সংরক্ষিত সকল তথ্য আপনার মোবাইল ফোনে চলে আসবে। এবং তা আপনি সেভ করে রাখতে পারবেন।

শেষ কথা

তো বন্ধুরা এই ছিল এনএফসির পাঁচটি সুবিধা এবং ব্যবহার। আশা করছি আপনি এই প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছেন। এই পোস্টটি বিশেষ করে তাদের জন্য যারা আমাকে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করতে থাকেন যে ভাই অমুক ফোনে এনএফসি আছে ব্যাট এটা কি জিনিষ। আশা করি আপনারা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। আর হাঁ, আরেকটি বিষয় রয়েছে আজ শেয়ার করার জন্য। আমি খুব শীঘ্রই আপনাদের জন্য একটি কমিউনিটি সাইট খুলতে যাচ্ছি এবং সাথেই একটি ইউটিউব চ্যানেল। যেখানে এখন থেকে প্রযুক্তি ব্যাখ্যা করবো একদম আপনাদের সামনে লাইভ এসে। এব্যাপারে আপনাদের মতামত কামনা করছি। যাই হোক, যদি এই পোস্টটি ভালো লাগে তবে অবশ্যই শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। তাছাড়া আমাকে জানাতে পারেন যে আপনি কোন বিষয়ের উপর পোস্ট চাচ্ছেন। ভালো থাকুন, ধন্যবাদ 🙂

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories