ইলেকট্রনিক্স এবং সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তি, আমাদের জীবন আর চলাফেরার মান নাটকীয় ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। ব্যাংকে গিয়ে একগাঁদা কাগজে লিখে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকে টাকা উত্তোলন করার দিন শেষ করে দিয়েছে, প্ল্যাস্টিকের এক টুকরা ইলেক্ট্রনিক কার্ড। আবার আপনার পরিচয় কাউকে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই, এক টুকরা প্ল্যাস্টিকের কার্ড আপনার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধারণ করতে সক্ষম এবং সবচাইতে বড় ব্যাপার হলো, এটি অত্যন্ত নিরাপদ। আপনারা সকলেই জানেন, বর্তমানে বাংলাদেশে পুরাতন কাগজের এনআইডি’র বদলে স্মার্ট আইডি কার্ড প্রদান করা হচ্ছে, এই অবস্থায় আপনার অবশ্যই জানা প্রয়োজনীয়; স্মার্ট কার্ড (Smart Card) কি এবং কিভাবে কাজ করে? —ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড রূপে আমরা এতোদিন স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে আসলেও, যেহেতু এনআইডি কার্ড এই টাইপে চলে এসেছে, তাই অনেক তথ্য রয়েছে যেগুলোর জানার অনেক মূল্য রাখে। তো চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক…
স্মার্ট কার্ড
স্মার্ট কার্ড দেখতে এবং আকারে সম্পূর্ণ সাধারন ক্রেডিট কার্ডের মতো হলেও এর ভেতরের কাজ করার প্রক্রিয়া একটু ভিন্ন ধরনের। ক্রেডিট কার্ডের মতো এটিও সাধারনত প্ল্যাস্টিকের তৈরি হয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ডে তথ্য সংরক্ষন করার জন্য চৌম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করা হয়, অনেকটা অ্যানালগ অডিও ক্যাসেট টেপের মতো। যেখানে একটি ম্যাগনেটিক টেপে সকল তথ্য রীড এবং রাইট করা হয়। ক্রেডিট কার্ডের কাজ করার ধরণ হচ্ছে, এর বেশিরভাগ তথ্য কোন দৈত্যাকার সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে, তাই কার্ড অ্যাক্সেস করার সময় অবশ্যই অনলাইনে যাওয়া প্রয়োজনীয় এবং সেখানে কার্ড ফেরিফাই আর প্রসেস সম্পূর্ণ করা হয়।
অন্যদিকে স্মার্ট কার্ডে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র না থেকে সেখানে ডাটা স্টোর করার জন্য মাইক্রো প্রসেসর লাগানো থাকে। স্মার্ট কার্ডের নিরাপত্তা তথ্য এবং সংরক্ষিত তথ্য যাচায় করার জন্য কোন সার্ভারের সাথে কানেক্টেড হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই, কার্ডের মাইক্রো চিপে সবকিছু বিল্ডইন থাকে। যখন রিডার কার্ডটিকে অ্যাক্সেস করার চেষ্টা করে, কার্ডে থাকা মাইক্রো প্রসেসর কার্ডটির মেমোরি থেকে সকল সেভড তথ্য বেড় করে নিয়ে আসে। কার্ডে এই মাইক্রো প্রসেসর নিরাপত্তার খাতিরে ব্যবহার করা হয়, একে কার্ডটির ছোট্ট ব্রেইনও বলতে পারেন। রিডার বা হোস্ট কম্পিউটার কার্ডটি থেকে তথ্য পাওয়ার জন্য এই মাইক্রো প্রসেসরের সাথেই কথা বলে। প্রসেসর সমস্ত নিরাপত্তা বিষয় এবং অনুমতি বিবেচনা করে হোস্ট কম্পিউটারকে তথ্য’র অ্যাক্সেস প্রদান করে।
এখানে মজার ব্যাপার হলো, আপনার স্মার্ট কার্ডে তিন ধরনের মেমোরি থাকে, এর মধ্যে দুই ধরনের মেমোরি হলো রম (ROM) এবং কার্ড থেকে র্যান্ডম ডাটা অ্যাক্সেস করার জন্য থাকে র্যাম (RAM)। এর র্যামের সাইজ ৮ কিলোবাইট, এবং রমের সাইজ ৩৪৬ কিলোবাইট হয়ে থাকে। এখানে আরেক প্রকারের রম থাকে যেটা রি-প্রোগ্রামেবল এবং এর সাইজ ২৫৬ কিলোবাইট হয়। আর এতে থাকা মাইক্রো প্রসেসরটি একটি ১৬-বিট মাইক্রো প্রসেসর। কার্ডটি স্ক্যান করার সময় বা কার্ড রিডারে লাগানোর সময় এটি রিডার থেকে পাওয়ার নিয়ে কাজ করে, প্রসেসর এনক্রিপশনের বিষয় গুলোর দিকে বিশেষ ধ্যান রাখে।
স্মার্ট কার্ডের প্রকারভেদ
স্মার্ট কার্ডের প্রকারভেদের প্রয়োজনীয়তা আসে, কার্ডটি কিভাবে রীড বা রাইট করা হবে এবং কি কাজের জন্য বিশেষ করে কার্ডটিকে তৈরি করা হয়েছে তার উপরে। তাই প্রয়োজনীয়তার সিস্টেমের উপর স্মার্ট কার্ড তিন প্রকারে দেখতে পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে কন্টাক্ট কার্ড (Contact Card) (যেটা রীড বা রাইট করার জন্য রিডারের সাথে ফিজিক্যালি স্পর্শ করাতে হয়), আরেকটি হচ্ছে কন্টাক্টলেস কার্ড (Contactless Card) (যেটা রীড রাইট করার জন্য ফিজিক্যালি রিডারের সাথে স্পর্শ করানোর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই), এবং আরেকটি হচ্ছে, মাল্টি কম্পোনেন্ট কার্ড (Multi Component Card)। কন্টাক্ট এবং কন্টাক্টলেস উভয় কার্ডেই র্যাম, রম, প্রসেসর ইত্যাদি লাগানো থাকে। তবে কন্টাক্টলেস কার্ডে আরো কিছু প্রোটোকল এবং হাই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে মাল্টি কম্পোনেন্ট কার্ডে আলাদা অনেক সিকিউরিটি ফিচার এবং কম্পোনেন্ট যুক্ত করানো থাকে, যেমন- ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্ড, ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড ডিসপ্লে কার্ড, প্রোগ্রামেবল ব্যায়ো কার্ড (যেখানে ব্যায়ো ন্যানো চিপ লাগানো থাকে)। আপাতত এই আর্টিকেলে মাল্টি কম্পোনেন্ট কার্ড নিয়ে আলোচনা করছি না, তবে নিচে কন্টাক্ট কার্ড এবং কন্টাক্টলেস কার্ড নিয়ে আলোচনা করা হলো।
কন্টাক্ট স্মার্ট কার্ড
কন্টাক্ট কার্ড হলো সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত এবং বহুল পরিচিত স্মার্ট কার্ড। এতে সেলফোন সিমের মতো হুবহু দেখতে একটি চিপ লাগানো থাকে যেটা কার্ড রীড বা রাইট করার সময় রিডারের সাথে ফিজিক্যালি লেগে থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কন্টাক্ট কার্ড বিশেষ করে কন্টাক্ট কার্ড রিডার দ্বারাই রীড করার প্রয়োজন পড়ে। আগেই উল্লেখ করেছি যে, এতে বিভিন্ন প্রকারের মেমোরি লাগানো থাকে। কন্টাক্ট কার্ডে লাগানো মেমোরি নিজে থেকে ফাইল ম্যানেজ বা প্রসেস করতে পারে না, ডাটা প্রসেস করার জন্য মেমোরিকে অবশ্যই রিডারের সাথে কানেক্টেড হতে হয় এবং সিংক্রোনাইজ প্রোটোকল ব্যবহার করে ডাটা প্রসেস করে।
কন্টাক্টলেস কার্ড
আগেই উল্লেখ করেছি যে, কন্টাক্টলেস কার্ড রীড বা রাইট করার জন্য ফিজিক্যালি রিডারের সাথে স্পর্শ করানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। চিপে সাথে স্পর্শ করে কাজ করার বদলে এই কার্ডে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (RF) ব্যবহার করা হয়। এই কার্ডে একটি সুরক্ষিত মাইক্রো কন্ট্রোলার অথবা সমতুল্য বুদ্ধিমত্তার চিপ, ইন্টারনাল মেমোরি, এবং একটি এন্টেনা লাগানো থাকে যাতে সেটা রিডারের সাথে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে। কন্টাক্টলেস স্মার্ট কার্ডের কাজ করার পদ্ধতি অনেকটা কন্টাক্ট স্মার্ট কার্ডের মতোই। কন্টাক্ট কার্ডের মতো কন্টাক্টলেস কার্ডেও একটি চিপের মধ্যে সকল তথ্য গুলো স্টোর করা থাকে। কিন্তু কন্টাক্ট কার্ডের অসদৃশ এটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ডের সাহায্যে কার্ড পাওয়ার গ্রহন করে, রিডারের সাথে কানেক্টেড হয় এবং ডাটা এক্সচেঞ্জ করে।
কন্টাক্টলেস কার্ডের প্ল্যাস্টিকের ভেতর একটি বিল্ডইন এন্টেনা থাকে, যখন কার্ডটি কার্ড এবং রিডারের ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ডের মধ্যে আনা হয়, কার্ডটি সাথে সাথে পাওয়ার পেয়ে যায়। আর কার্ডটির পাওয়ার অন হওয়ার সাথে একটি ওয়্যারলেস কমুনিকেসন প্রোটোকল কার্ড এবং রিডারের মধ্যে ডাটা ট্র্যান্সফার করতে আরম্ভ করে দেয়।
স্মার্ট কার্ডের ব্যবহার
ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ, কম্পিউটার সিকিউরিটি সিস্টেম, ওয়্যারলেস কমুনিকেসন, আনুগত্য সিস্টেম, ব্যাংকিং, স্যাটেলাইট টিভি, সরকারি আইডি’তে বিস্তারভাবে স্মার্ট কার্ড ব্যবহৃত হয়। এমনকি আপনার মোবাইল ফোনের সিম কার্ড ও স্মার্ট কার্ডের প্রকারের মধ্যে পড়ে। তাছাড়া কম্পিউটার লক আনলক করার জন্য বড় বড় অফিসে স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করতে দেখা যায়। কম্পিউটারের সাথে একটি রিডার লাগানো থাকে যেটা কোন কার্ড রীড করে বলে দিতে পারে কম্পিউটারে ইউজারটির অ্যাক্সেস রয়েছে কিনা। তাছাড়া ওয়েব ব্রাউজার গুলো স্মার্ট কার্ড টেকনোলজি ব্যবহার করে এসএসএল সিকিউরিটি সম্পূরণ করতে পারে। তাছাড়া এখনকার দিনে মোবাইল ফোনেও স্মার্ট কার্ড রীড করার জন্য রিডার বিল্ডইনভাবে লাগানো থাকে। কন্টাক্টলেস কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করার জনপ্রিয়তা দিনদিন বেড়েই চলেছে।
শেষ কথা
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
স্মার্ট কার্ড যেকোনো ডাটা এক্সচেঞ্জ, আইডি ভেরিফিকেসন, ট্র্যানজাকসনে নিরাপত্তা আর অনেক সুবিধা প্রদান করে। আশা করা যায় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অবশ্যই সকল ক্ষেত্রে এর ব্যবহার দ্রুতই আরম্ভ হয়ে যাবে। শুধু এনআইডি কার্ড হিসেবে নয়, স্মার্ট কার্ড টেকনোলজিকে সকল খাতে ব্যস্তবায়িত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, এবং অদূর ভবিষ্যতে আমরা হয়তো সেগুলো উপভোগ করতে পারবো। তো এই কার্ড সম্পর্কে আপনার মতামত কি? আপনি কি এই নতুন এনআইডি হাতে পেয়েছেন? নিচে কমেন্ট করে আমাদের বিস্তারিত জানান।
Awesome post bhai…………………………..
❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
Excel er tutorial chai………………………….
Post er jonno abar ❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
আরেকটা অসাধারণ পোষ্ট। তবে ক্রেডিট কার্ড এবং কার্ড সিকিউরিটি নিয়ে সম্পূর্ণ একটি পোষ্ট কামনা করছি ভাই। ভালো থাকবেন।
Ntun kicu sikhlam. Awesome.
ধন্যবাদ ভাই 🙂 স্মার্টকার্ড কবে দেবে জানিনা। সুনলাম দুই এক মাসেই পাওয়া যেতে পারে ব্যাট সিওর নয়। আর্টিকেল টি ভালো লাগলো।
vai apnar lekha gulo ke copy korte pari…apnake credit debo
লেখা কপি করতে চাইলে প্রপার ক্রেডিট দিতে হবে।
১)আর্টিকেল লিঙ্ক
২) TecHubs ফেসবুক পেজ লিঙ্ক
৩) TecHubs ইউটিউব চ্যানেল লিঙ্ক
যোগ করে দিতে হবে। অ্যান্ড ইমেজ গুলো ব্লগ থেকে সরাসরি লিঙ্ক করা যাবে না, আপনি ডাউনলোড করে আপনার সাইটে আপলোড করতে পারেন।
পেয়েছি ভাইয়াthengs
চরম আর্টিকেল তথ্যেে ভরপুর। ধন্যবাদ তাহমিদ বোরহান ভাই।
আমি আজকে স্মার্ট কার্ড পাইসি ওটা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা তো আর জানিনা,একটু জানালে উপকৃত হতাম