উইন্ডোজ ১০ স্প্রিং ক্রিয়েটরস আপডেট : নতুন যা যা থাকছে !

গত ২০১৫ এর জুলাই মাসে উইন্ডোজ ১০ এর ফাইনাল রিলিজ করার পরে প্রায় প্রতি ৬ মাস পরপরই মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ এর একটি করে মেজর আপডেট রিলিজ করে আসছে। প্রথমত উইন্ডোজ ১০ নভেম্বর আপডেট। এরপর উইন্ডোজ ১০ অ্যানিভারসারি আপডেট, এরপর উইন্ডোজ ১০ ক্রিয়েটরস আপডেট এবং তারপরে উইন্ডোজ ১০ ফল ক্রিয়েটরস আপডেট যেটি এখনও পর্যন্ত উইন্ডোজ ১০ এর লেটেস্ট বিল্ড। মাইক্রোসফটের এরপরের উইন্ডোজ ১০ আপডেটটির নাম হচ্ছে মাইক্রোসফট স্প্রিং ক্রিয়েটরস আপডেট। নাম শুনেই বুঝতে পেরেছেন, এই আপডেটটির নাম এমন রাখা হয়েছে কারণ, এই আপডেটটি এবছর বসন্তকালে রিলিজ করার কথা। যার মানে হচ্ছে আর কয়েকদিনের মধ্যেই এই আপডেটটির পাবলিক রিলিজ করবে মাইক্রোসফট। যদিও মাইক্রোসফট তাদের প্রত্যেকটি উইন্ডোজ ১০ আপডেটে নতুন কোন বড় ধরনের পরিবর্তন বা যুগান্তকারী পরিবর্তন করেনা, তবে প্রত্যেকটি আপডেটেই কিছু না কিছু ইম্প্রুভমেন্ট এবং নতুন ফিচার থাকেই।

এখন, আপনি যদি সেই ধরনের উইন্ডোজ ইউজারদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, যে কখনোই ভুলেও উইন্ডোজ আপডেট করেনা, তাহলে আপনার আর এর নিচে পড়ার দরকারই নেই। তবে আপন যদি উইন্ডোজ ১০ এর লেটেস্ট বিল্ড ব্যাবহার করেন এবং যত নতুন আপডেট আসে, সবগুলো আপডেটই ইন্সটল করেন, তাহলে আপনার জন্য আজকের লেখাটি উপকারী হতে পারে। আজকে আলোচনা করবো, উইন্ডোজ ১০ এর এই আপকামিং স্প্রিং ক্রিয়েটরস আপডেটে কি কি নতুন ফিচার এবং ইম্প্রুভমেন্ট থাকছে সেগুলো নিয়ে।


উইন্ডোজ টাইমলাইন

মাইক্রোসফটের মতে, এটাই সবথেকে বড় ইম্প্রুভমেন্ট যা তারা উইন্ডোজ ১০ স্প্রিং ক্রিয়েটরস আপডেটে আনছে। মাইক্রোসফটের মতে উইন্ডোজ টাইমলাইন হচ্ছে তাদের নতুন গ্লোরিফাইড রিসেন্ট অ্যাপস স্ক্রিন। এটিকে আমাদের স্মার্টফোনের রিসেন্ট অ্যাপস স্ক্রিনের মতোই বলতে পারেন। অর্থাৎ, এই স্ক্রিনে আপনার রিসেন্টলি ওপেন করা সব অ্যাপস এবং অ্যাক্টিভিটি শো করা হবে এবং কোন অ্যাপসের ঠিক কোন জায়গা থেকে আপনি অ্যাপটি ক্লোজ করেছিলেন, সেটিও দেখানো হবে। এর ফলে আপনি রিসেন্ট অ্যাপস আরও ভালভাবে ম্যানেজ করতে পারবেন।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই রিসেন্ট অ্যাপস স্ক্রিনটি ক্লাউড বেজড। এর মানে হচ্ছে, আপনার একই মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের সাথে যতগুলো পিসি বা ল্যাপটপ তথা উইন্ডোজ ডিভাইস কানেক্টেড আছে, সেই সবগুলোর রিসেন্ট অ্যাপ এবং অ্যাক্টিভিটি আপনি প্রত্যেকটি ডিভাইসে একইসাথে দেখতে পাবেন এবং রিস্টোরও করতে পারবেন। অর্থাৎ, এই টাইমলাইন আপনার প্রত্যেকটি উইন্ডোজ ডিভাইসের সাথে সিংক হবে। এটি হবে একটি ইউনিভারসাল টাইমলাইন যার সাহায্যে আপনি আপনার পিসিতে অর্ধেক শেষ করে রাখা একটি কাজ আপনার ল্যাপটপে বসে বাকিটা করে ফেলতে পারবেন, বা ল্যাপটপে অর্ধেক লিখে রাখা একটি ডকুমেন্ট পিসিতে বসে বাকিটা কমপ্লিট করে ফেলতে পারবেন (উদাহরনস্বরূপ)।

মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার ইম্প্রুভমেন্ট

মাইক্রোসফট এজ আমরা সবাই চিনি। এটা মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের নতুন রিডিজাইনড ব্রাউজার, যেটি এখনও কেউ ব্যাবহার করেনা। খুব কম মানুষ এটি ব্যাবহার করলেও মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ ১০ এর প্রত্যেকটি নতুন আপডেটে এজ ব্রাউজারের জন্য নতুন কিছু ছোট ছোট ফিচারস এবং ইম্প্রুভমেন্টস ইনক্লুড করে। যেমনটা এই বিল্ডেও করেছে। উইন্ডোজ ১০ এর এই বিল্ডে আপনি মাইক্রোসফট এজ এর যেকোনো একটি ট্যাবের অডিও নিজের ইচ্ছামত মিউট করতে পারবেন, যা এর আগে করা সম্ভব হত না। এই ফিচারটি অন্যান্য প্রায় সব থার্ড পার্টি ব্রাউজারে সম্ভব হলেও মাইক্রোসফট এজে সম্ভব ছিল না।

এছাড়া এখন থেকে মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারে অটোমেটিক ফর্ম ফিল এবং অ্যাড্রেস ফিল করাও সম্ভব হবে যেমনটা আগে ছিল না। এছাড়া মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারের ইউজার ইন্টারফেসেও যথেষ্ট ইম্প্রুভমেন্ট আনা হয়েছে। এছাড়া এবার থেকে মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারে কোন বই বা কোন পিডিএফ ফাইল পড়ার সময় লাইট এবং ডার্ক মোডে সুইচ করার সুযোগ থাকছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, এজ ব্রাউজারে কি ইম্প্রুভমেন্ট থাকছে এবং কি থাকছে না, সে বিষয়ে অধিকাংশ উইন্ডোজ ইউজারের কিছুই যায়-আসে না।

উইন্ডোজ ফন্ট সেটিংস

উইন্ডোজ ১০ এর এই বিল্ডে উইন্ডোজ ফন্ট ম্যানেজ করার জন্য কিছু ডেডিকেটেড অপশন রাখা হয়েছে উইন্ডোজ ১০ এর ইউনিভারসাল সেটিংস মেনুতে। এর আগে উইন্ডোজে ইন্সটল করা কোন ফন্ট নিয়ে কোন সেটিংস অ্যাক্সেস করার জন্য উইন্ডোজের ট্রেডিশনাল কনট্রোল প্যানেলে ঢুকতে হতো। কিন্তু ফন্ট কাস্টোমাইজেশনের জন্য উইন্ডোজের ডিফল্ট সেটিংস অপশনে কোন আলাদা সেটিংস মেনু রাখা হয়নি। এখন থেকে উইন্ডোজের সেটিংস অপশন থেকেই ফন্ট  সম্পর্কিত সব সেটিংস ম্যানেজ করা সম্ভব হবে। এছাড়া এখন থেকে উইন্ডোজে ফন্ট ইন্সটল করার জন্য থার্ড পার্টি সোর্স থেকে ফন্ট ফাইল ডাউনলোড করে তারপর ইন্সটল করার দরকার পড়বে না। উইন্ডোজ ১০ এর থিমসের মতো বিভিন্ন ফন্ট প্যাকেজও পাওয়া যাবে উইন্ডোজ স্টোরে এবং সেখান থেকেই ডাউনলোড এবং ইন্সটল করা সম্ভব হবে।

মাল্টি জিপিইউ সেটিংস

আমাদের মধ্যে অধিকাংশ উইন্ডোজ ইউজারের পিসিতেই একটি ইনটাগ্রেটেড ইন্টেল জিপিইউ এর পাশাপাশি একটি ডেডিকেটেড এনভিডিয়া গ্রাফিক্স কার্ড থাকে। বিশেষ করে যারা গেমস খেলেন, তাদের পিসিতে তো ডেডিকেটেড পাওয়ারফুল জিপিইউ থাকেই। এবার উইন্ডোজ ১০ এর এই বিল্ডে নিজের সুবিধামতো ইনটাগ্রেটেড জিপিইউ এবং ডেডিকেটেড জিপিইউ এর মধ্যে সুইচ করতে পারবেন। যখন যে কাজের জন্য যে জিপিইউটি ব্যাবহার করতে চান। নিজের ইচ্ছামত সেটিকে অ্যাক্টিভ করে নিতে পারবেন।

এই সুইচ করার অপশনটি পাবেন উইন্ডোজ সেটিংসের অ্যাডভান্সড গ্রাফিক্স সেটিংস অপশনে। আপনি যদি ল্যাপটপ ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে ব্যাটারি লাইফ সেভ করার জন্য যথেষ্ট দরকারি একটি ফিচার হতে পারে এটি। যেমন- আপনি গেম খেলার সময় বা ভিডিও এডিটিং এর মতো গ্রাফিক্স ইন্টেনসিভ কাজ করার সময় ডেডিকেটেড জিপিইউতে সুইচ করে নিতে পারবেন যা বেশি পাওয়ার ব্যাবহার করবে। আবার দরকার হলে কোন লাইট টাস্ক যেমন নেট সার্ফিং, ডকুমেন্ট এডিটিং ইত্যাদি কাজের সময় ডেডিকেটেড জিপিইউ ডিঅ্যাক্টিভ করে ইনটাগ্রেটেড জিপিইউ অ্যাক্টিভ করে নিতে পারবেন, যেটি অনেকটা কম পাওয়ার ব্যাবহার করে।

প্রোগ্রেসিভ ওয়েব অ্যাপ (PWA) সাপোর্ট

ওয়েব অ্যাপ কি টা নিশ্চই আপনি এতদিনে জানেন। ওয়েব অ্যাপ হচ্ছে সেই ধরনের ওয়েবসাইট যেগুলো একটি ফুল ফিচারড অ্যাপের মতো বিহেভ করে। যেমন, আপনি স্মার্টফোন থেকে টুইটার ভিজিট করলে যে সাইটে ঢুকবেন, সেটি একটি ওয়েব অ্যাপ, যার নাম টুইটার লাইট। এছাড়া আপনি স্মার্টফোন থেকে ইন্সটাগ্রামের মোবাইল সাইটে  ঢুকলে যা পাবেন,  সেটিও একটি ওয়েব অ্যাপ। এই ধরনের সব ওয়েব অ্যাপগুলোকেই মুলত বলা হয় প্রোগ্রেসিভ ওয়েব অ্যাপস। আর উইন্ডোজ ১০ এর এই লেটেস্ট বিল্ডে এই প্রোগ্রেসিভ ওয়েব অ্যাপগুলোকে ট্রেডিশনাল উইন্ডোজ ১০ ইউনিভারসাল অ্যাপ হিসেবে ব্যাবহার করার সুযোগ করে দিয়েছে।

এর ফলে, আপনি সহজেই উইন্ডোজ স্টোর থেকে আপনার প্রয়োজনমতো এভেইলেবল ওয়েব অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন এবং সেগুলোকে সাধারন উইন্ডোজ অ্যাপের মতোই ব্যাবহার করতে পারবেন। ইতোমধ্যেই টুইটারের প্রোগ্রেসিভ ওয়েব অ্যাপটি উইন্ডোজ স্টোরে এভেইলেবল আছে এবং আপনি উইন্ডোজ ১০ এর এই স্প্রিং ক্রিয়েটরস বিল্ডে আপগ্রেড করলে এই অ্যাপটি ব্যাবহার করতে পারবেন। টুইটারের এই ওয়েব অ্যাপটি উইন্ডোজ ১০ এর এখন যে ন্যাটিভ টুইটার অ্যাপ আছে, তার থেকে অনেক বেশি ভালো, মডার্ন এবং রেসপনসিভ। উইন্ডোজ ১০ এর এই বিল্ড পাবলিক রিলিজ হওয়ার সাথে সাথেই সামনের দিনগুলোতে আরো অনেক অনেক ওয়েব অ্যাপ আমরা দেখতে পাবো উইন্ডোজ স্টোরে।


তো এগুলোই ছিল মুলত উইন্ডোজ ১০ স্প্রিং ক্রিয়েটরস আপডেটের মেজর কয়েকটি ফিচারস এবং ইম্প্রুভমেন্ট। এছাড়াও এই বিল্ডে আরও অনেক অনেক ছোট ছোট ফিচারস এবং ইম্প্রুভমেন্টস এবং ইউআই চেঞ্জ আছে যেগুলো আপনি আপগ্রেড করার পরেই দেখতে পাবেন। এই আপডেটটি পাবলিকলি রিলিজ করা হবে কবে টা সঠিকভাবে জানা যায়নি, তবে আশা করা যায়, যেহেতু এটির সর্বশেষ ইনসাইডার প্রিভিউ বিল্ড রিলিজ হয়ে গিয়েছে, তাই এই মাসের মধ্যেই এই আপডেটটির পাবলিক রিলিজ করবে মাইক্রোসফট। আপডেট এভেইলেবল হলে আপনি উইন্ডোজের সেটিংস থেকেই আপডেট করে নিতে পারবেন। এছাড়া চাইলে উইন্ডোজ মিডিয়া ক্রিয়েশন টুলের সাহায্যে অথবা আইএসও ফাইল ডাউনলোড করেও ক্লিন ইন্সটল করতে পারবেন।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।
Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories