৩ডি গ্লাস কি? | ২.৫ডি গ্লাস বনাম ৩ডি গ্লাস | প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

পেছনের কয়েকমাস থেকে মোবাইল প্রস্তুতকারী কোম্পানিগন তাদের ফোনের ডিসপ্লে স্পেসিফিকেশনে ৩ডি গ্লাস বা ২.৫ডি গ্লাস হাইলাইট করা শুরু করেছে। এই অবস্থায় আপনার অবশ্যই জানা দরকার আসলে এই ৩ডি গ্লাস বা ২.৫ডি গ্লাস কি জিনিষ, এদের থাকাতে সুবিধাগুলো কি কি এবং এটি থাকার গুরুত্ব কতটুকু। চলুন আজ এই সকল বিষয় নিয়েই আজকের প্রযুক্তি আলোচনা শুরু করা যাক। আলোচনা শুরু করার আগে বলতে চাই, কাল তো পবিত্র ঈদ 🙂 তাই আমার পক্ষ থেকে সকল ভাই ও বোনদের জানাই ঈদের হাজারো শুভেচ্ছা এবং শুভ কামনা। কাল হয়তো আপনাদের সামনে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে আসতে পারবো না, কারন একটু ব্যস্ত থাকতে হতে পারে। কিন্তু তারপর থেকে আবারো নিয়মিত হয়ে যাব।

 


২.৫ডি গ্লাস

দেখুন একটি সাধারন গ্লাসের সম্পর্কে তো আপনি অবশ্যই জানেন। আপনার জানালাতে যা লাগানো আছে সেই গ্লাস আপনি সকালে জেগে যাতে আপনার চেহারা দেখেন সে গ্লাস। তো এই ধরনের গ্লাস একটি চারকোনা টুকরা হয়ে থাকে এবং এর কোনা গুলো একদম খাঁড়া এবং ধারালো হয়ে থাকে এবং একে আমরা বলে থাকি সাধারন ২ডি গ্লাস। এবং আজ থেকে কিছু বছর আগে আপনার ফোনে ২ডি গ্লাস ব্যবহার করতে দেখা যেতো।

কিন্তু যেভাবে যেভাবে স্মার্টফোনের ডিজাইনের উন্নতি হয়ে চলেছে যেভাবে আপনার ফোনের ইউজার ইন্টারফেস উন্নত হয়ে চলেছে সে অনুসারে ফোনে  ২ডি গ্লাস ব্যবহার ফোনের আধুনিক ডিজাইনের বাঁধা স্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারন ধারালো কোনা ওয়ালা গ্লাস ব্যবহার করে বাঁকানো ডিসপ্লে বা বডি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছিলো না। তো এই সমস্যার অবসান করার জন্য আমরা বেড় করলাম এক নতুন প্রযুক্তি যা হলো ২.৫ডি গ্লাস। ২.৫ডি গ্লাসে উপরের দিন এবং নিচের দিক ২ডি গ্লাসের মতোই কিন্তু এর কিনারা গুলো হালকা বাঁকানো বা রাউন্ড ফিগার।

দেখুন ২.৫ডি গ্লাসের রাউন্ড ফিগার হওয়াতে অনেক সুবিধা হয়েছে। একে তো এর রাউন্ড ফিগারের জন্য আপনার ফোন দেখতে এক ভালো ডিজাইন লাভ করে এবং কোন কোন ওএস যেমন অ্যান্ড্রয়েডে বর্তমানে কোনার দিকে মেন্যু অপশন থাকে। ২.৫ডি গ্লাস কোনার দিকে হালকা বাঁকানো থাকার ফলে আপনি বিশেষ মেন্যু স্মুথ ভাবে ন্যাভিগেশন করতে পারেন। তাছাড়া ফোনের ডিসপ্লে এবং মেটাল বডি বা প্ল্যাস্টিক বডির সাথে স্মুথভাবে মিলিয়ে যাওয়া লখ্য করা যায়। যেটা ২ডি গ্লাসের ধারালো খাঁড়া কোনগুলো দ্বারা কখনোই সম্ভব হয়ে উঠতো না। আর আজকের দিনে যেকোনো ভালো ফোনেই আপনি ২.৫ডি গ্লাস দেখতে পাবেন।

৩ডি গ্লাস

এখন বন্ধুরা প্রশ্ন হলো ৩ডি গ্লাস কি জিনিষ? ২.৫ডি গ্লাসে উপরের এবং নিচের সার্ফেস ফ্লাট ছিল শুধু কোনা গুলো হালকা বাঁকানো ছিল। কিন্তু ৩ডি গ্লাসে এর কোনার সাথে সাথে পুরো গ্লাসটি বাঁকানো থাকে। এর উপরের তল নিচের তল কোনা গুলো ইত্যাদি সবকিছুই সম্পূর্ণ বাঁকানো থাকে। উদাহরণ স্বরূপ গ্যালাক্সি নোট এজ। এটি স্যামসাং এর একটি ফোন ছিল এবং এটি একদিকে পুরা গ্লাস বাঁকানো ছিল। এবং এই বাঁকানো অংশ থেকে মেন্যু বেড় হয়ে আসত। তো ঐটি হলো ৩ডি গ্লাস। অথবা স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৬ এজ বা স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭ এজ ইত্যাদি সকল ফোনে ৩ডি গ্লাসের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।

এই ফোনের গ্লাস গুলো উপরের দিক থেকে বেকিয়ে এসে কোনা গুলোও বাঁকানো থাকে। এবং সর্বোপরি আপনি একটি অত্যন্ত সুন্দর রাউন্ড ফিগার দেখতে পান আর এটিই হলো ৩ডি গ্লাস। আবার সাওমি এমআই৫ এর ব্যাক প্যানেল, এমআই নোট এর ব্যাক প্যানেল তো এই সবগুলোই কিন্তু ৩ডি গ্লাসের সমন্বয়ে প্রস্তুতকৃত।

সামনের দিন গুলোতে হয়তো ৪ডি, ৫ডি, ৬ডি গ্লাস আসবে কিনা তা জানিনা কিন্তু ২.৫ডি গ্লাস এবং ৩ডি গ্লাসে আজকের দিনে প্রস্তুত করা ফোনে আপনি প্রিমিয়াম ফিল অনুভব করতে পারবেন। এবং আপনার ফোনে যদি কোনার দিকে মেন্যু থাকে তবে তা বড়য় আরামে আপনি সয়াপ করে ন্যাভিগেট করতে পারবেন। তাছাড়া ফোনের স্ক্রীন টাচ করে আপনি ভালো গ্রিপ পেতে পারেন। এই সুবিধা গুলো ছাড়া আজকের দিনে এই গ্লাসের আর বিশেষ কোন তেমন সুবিধা নেই। কিন্তু আপনার ফোনে যদি ৩ডি গ্লাস থাকে তবে সেটি একটি সুবিধা হতে পারে আপনার জন্য। আগামী দিনে আরো কি উন্নতি করা হবে তা দেখার জন্য অবশ্যই আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।

শেষ কথা

তো এই ছিল আজকের ছোট পোস্টটির মূল বিষয় বস্তু। আশা করছি বিভিন্ন প্রকারের গ্লাস সম্পর্কে জেনে আপনার ভালো লেগেছে। তাই পোস্টটি শেয়ার করার সাথে সাথে আপনার মতামত বা যেকোনো প্রশ্ন করতে নিচে কমেন্ট করুন। তাছাড়া আমি ডিসপ্লে প্রযুক্তি এবং টাচ স্ক্রীন সম্পর্কে আগেই অনেক বিস্তারিত আলোচনা করে পোস্ট করেছি, আপনি সেগুলোও চেক করতে পারেন। সকলকে আবারো ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories