গুগলের দারুন ৭ টি টুলস! যা প্রতিদিন আপনার নানা কাজে লাগবে

গুগল সবসময় তার ইউজারদের  কথা ভেবে সবসময় নিত্যনতুন নানা সেবা বা আমরা বলতে পারি নানা টুলস নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। গুগল কে বলা হয় দ্যা টেকনোলজি জায়েন্ট, গুগল সমসময় মার্কেট অ্যানালাইস করে মানুষের যে টুলটি দরকার তা নিয়ে আসে।  আজকের আর্টিকেলে আমি এরকমই গুগলের ৭টি দারুন এবং উপকারি টুলস সম্পর্কে জানাব।


গুগল ফন্ট

গুগল ফন্ট ওয়েবসাইট ডিজাইনারদের কাছে অত্যান্ত জনপ্রিয় একটি নাম। ২০১০ সালে গুগলের এই গুগল ওয়েব ফন্ট সার্ভিসটি চালু হয়। এটি গুগলের একটি অ্যাপলিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস যার মানে ইউজাররা এখানকার যেকোনো ফন্ট তাদের ওয়েবসাইটে ব্যবহার করতে পারে।গুগল ফন্ট ওয়েবসাইটে অ্যাড করার অনেক অ্যাডভান্টেজ রয়েছে। ওয়েব ডিজাইনিং এবং ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রে ফন্ট অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কম্পোনেন্ট। ফন্ট ওয়েবসাইটের ডিজাইনকে অনেকটা ফুঁটিয়ে তোলে। যখন আপনি ম্যানুয়ালি কোনো ফন্ট ওয়েবসাইট এর সার্ভারে আপলোড করছেন ; তখন, সেই ফন্টটির ব্যান্ডউইথ আপনার ওয়েব সার্ভার থেকে খরচ হবে। তবে গুগল ফন্ট’স এর যেকোনো ফন্ট আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহার করলে এখানে ব্যান্ডউইথ গুগল থেকেই খরচ হবে, কেননা ফন্টটিকে গুগলই হোস্ট করছে।

আপনি যদি ভেবে থাকেন  গুগল ফন্ট থেকে কম্পিউটারে ফন্ট ইন্সটল করবেন তবে আপনি ভুল, কেননা গুগল ফন্ট কেবল ইন্টারনেটে ইম্প্লিমেন্টযোগ্য ওয়েব ফন্ট সার্ভিস। সুতরাং আপনি যদি ভেবে থাকেন গুগল ফন্টস থেকে ফন্ট ডাউনলোড করে কম্পিউটারে ইনস্টল করবেন, তবে সে ধারনা ভুল হবে।আপনি কেবল গুগল ফন্টস থেকে প্রাপ্ত সিএসএস অথবা জাভাস্ক্রিপ্ট ওয়েবসাইট এর সোর্স কোডে যুক্ত করার মাধ্যমেই গুগল ফন্টকে আপনার ওয়েবসাইটে ইম্প্লিমেন্ট করতে পারবেন। উদাহরন হিসেবে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে Open Sans ফন্টটি যুক্ত করবেন, সেক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটের <head> ট্যাগ এর নিচে নিম্নোক্ত এইচটিএমএল সোর্স কোডটি অ্যাড করবেন।

https://fonts.google.com

ব্লগার

এটি গুগলের অনেক কাজের এবং উপকারী একটি টুল একে আমরা গুগলের জনপ্রিয় একটি সার্ভিসও বলতে পারি। যারা ব্লগিং করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য শুরুর দিকে এটি সেরা প্লাটফর্ম। গুগলের পক্ষ থেকে এটি সম্পূর্ণ ভাবে ফ্রী। এটি গুগলের ফ্রী ব্লগ মেকিং টুল। যখন আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে টাকা খরচ করে একটি ব্লগ বানানোর জন্য তৈরি নন, তখন আপনি গুগল ব্লগার ব্যবহার করতে পারবেন।আপনি যে বিষয়কে ভালোবাসেন এবং যে বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতে চান, তারওপর আপনি সহজেই গুগল ব্লগার ব্যবহার করে একটি ফ্রী সুন্দর ব্লগ তৈরি করতে পারবেন। আর ভালো একটি দিক হল,যদি আপনার ব্লগে ভালো সংখ্যক ভিজিটর থাকে তবে আপনি গুগলের আরেকটি উপকারী টুল গুগল অ্যাডসেন্সকে এখানে ব্যবহার করে মোটামোটি ভালো অঙ্কের টাকা আয় করতে পারবেন। গুগল ব্লগারে আপনি ভালো সাফল্য পেতে পারবেন, নিয়মিত মানসম্মত কনটেন্ট লেখার মধ্য দিয়ে।

যেহেতু এটি ফ্রী সার্ভিস তাই কোনোরকম টাকা দেয়ার চিন্তা করতে হবেনা। গুগলের নিজস্ব থীমসহ থার্ডপার্টি অনেক ফ্রী থীম এখানে ব্যবহার করা যাবে ,খুব সহজে। তবে অনেক পেইড থীমও রয়েছে যা ব্যবহার করতে থীম অনারকে টাকা দিতে হবে। তো,দেরী কেন আপনিও যদি লেখালেখি পছন্দ করেন তবে এখনই গুগল ব্লগারে একটি ফ্রী ব্লগ খুলুন। গুগল ব্লগারের একটি মোবাইল অ্যাপও রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি মোবাইল ব্যাবহার করেই ব্লগ পোস্ট লেখতে পাড়বেন ।

https://www.blogger.com

গুগল কে বলা হয় দ্যা টেকনোলজি জায়েন্ট, গুগল সমসময় মার্কেট অ্যানালাইস করে মানুষের যে টুলটি দরকার তা নিয়ে আসে।

গুগল অ্যাডসেন্স

যাদের নিজের ওয়েবসাইট রয়েছে বা ওয়েবসাইট এর সাথে সংযুক্ত; তারা খুবই ভালোভাবে জানেন যে গুগল অ্যাডসেন্স কি? আর গুগল অ্যাডসেন্স কতটা উপকারী। গুগল অ্যডসেন্স গুগলের একটি বিজ্ঞাপন সার্ভিস। গুগল এখানে নানারকম বিজ্ঞাপন ওয়েবসাইট এর ধরন অনুযায়ী ওয়েবসাইট পাবলিশার্স দের তাদের ওয়েবসাইটে দেখানোর সুযোগ দেয় ; যার বিনিময়ে মাস শেষে পাবলিশার্স গণ টাকা পায়। কি পরিমান ভিজিটর ওয়েবসাইট ভিজিট করল এবং কতজন অ্যাডে ক্লিক করল, তারওপর গুগল পাবলিশার্স দের টাকা দিয়ে থাকে।

ওয়েবসাইটের জন্য অ্যডসেন্স পেতে অবশ্যই ভালো সংখ্যক ট্রাফিক এর ওয়েবসাইট হতে হবে পাশাপাশি ওয়েবসাইটে মানসম্মত এবং পর্যাপ্ত কনটেন্ট থাকতে হবে। কনটেন্ট গুলো অবশ্যই ইউনিক হতে হবে। আর এভাবে সবসময় চললে অবশ্যই অ্যাডসেন্স থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

https://www.adsense.com

গুগল ডকস

অফিস সফটওয়্যার হিসেবে এখনও হয়ত আপনি মাইক্রোসফট অফিসকেই ব্যবহার করে থাকেন। আপনি হয়ত জানেন বা না গুগলের দারুন একটি অফিস টুলস রয়েছে। আর একে বলা হয় গুগল ডকস। গুগল ডকসে আপনি ডকুমেন্ট,স্প্রেডশিট, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি কাজ করতে পারবেন।

গুগল ডকসকে ব্যবহার করে কোন ডকুমেন্টকে কেবল আপনিই নয়,মাল্টিপল ইউজার মিলে ব্যবহার করতে পারবেন। আবার কোন অফিস ফাইল এখান থেকে সরাসরি গুগল ড্রাইভ ক্লাউডেও স্হানান্তর করতে পারবেন। অফিস ফাইল এডিট শেষে এখান থেকে অনেকজনের মাঝে শেয়ারও করতে পারবেন। গুগল ডকসে অফিস ফাইল এডিটিং এ নতুনত্ব আনার জন্য নানারকম এক্সটেনশনও যুক্ত করা যায়।

গুগল ফর্মস গুগল ডকস এর আরেকটি জনপ্রিয় সেবা । এর মাধ্যমে আপনি নানা রকম ওয়েব ফর্ম  তৈরি করে তার লিঙ্ক পাবলিক ভাবে শেয়ার করতে পারবেন । এতে করে আপনি নানা রকম সার্ভে থেকে শুরু করে , ইভেন্ট রেজিস্ট্রেশান এর কাজও করতে পারবেন আরও সহজ ভাবে ।

https://docs.google.com

গুগল ট্রান্সলেটর

গুগল ট্রান্সলেটর গুগলের অন্যতম জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত একটি টুলস। গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করেননি এমন মানুষ খুবই কমই পাওয়া যাবে। গুগল ট্রান্সলেটর এর ল্যাংগুয়েজ অটো ডিটেক্ট ফিচারটি খুব কাজের।

https://translate.google.com

গুগল ওয়েবমাস্টারটুল

ওয়েবসাইট অ্যাডমিনদের জন্য ওয়েবমাস্টার টুলটি খুবই কাজের এবং উপকারী একটি টুল। একটি ওয়েবসাইটের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে এই গুগল ওয়েবমাস্টারটুল থেকে জানা যায়। গুগল ওয়েবমাস্টারটুলে একটি ওয়েবসাইটের সাইটম্যাপ অ্যাড করে, গুগল সার্চ রোবটের কাছে ওয়েবসাইটিকে আরো ভালোভাবে উপস্হাপন করানো যায়।

ওয়েবসাইটের কোনো ইউআরএল যদি ব্রোকেন হয় বা কোনো পেজে যদি সমস্যা থাকে এই টুলসটি সে সম্পর্কে অবগত করে। তা জেনে পরে ওয়েবসাইট অ্যাডমিন তা ঠিক করে ফেলে। যেকোন ওয়েবসাইটের গুগলে এসইও রেজাল্টকে আরও তরান্বিত করতে এই টুলসটি খুবই কাজের। তাছাড়াও ওয়েবপেজগুলোকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ, মোবাইল অপটিমাইজ করার জন্য এই টুলটি সাজেশন দেয়।

https://www.google.com/webmaste

গুগল সিলেক্ট টু স্পিক (অ্যান্ড্রয়েড)

গুগলের এই ফিচারটি আপনার পছন্দ হবে নিশ্চয়ই। ফিচারটি প্রায় সকল অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিল্টইন অবস্হায় রয়েছে। এখানে আপনি যদি কোন টেক্সটকে সিলেক্ট করেন, তবে গুগল আপনাকে সেটি পড়ে শোনাবে। ইংরেজী টেক্সট এটি খুবই নিখুত ভাবে পড়ে শোনাবে, যদিও বাংলা সিলেক্ট টু স্পিক বেটা পর্যায়ে রয়েছে তবুও বাংলা টেক্সটকে এটি অনেক সাবলীলভাবে পড়ে শোনাতে পাড়ে। আপনাদের বোঝার সুবিদার্থে আমি এখানে একটি ভিডিও এম্বেড করে দিলাম।
ফিচারটি আপনার ফোনে আনতে আপনাকে সেটিংস এর এক্সেসবিলিটি থেকে সিলেক্ট টু স্পীক’কে এনেবলড করে দিতে হবে।


আশা করি আজকের গুগল এর ৭ টি দারুন টুলস বা সার্ভিস এর আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেননা। অবশ্যই নিচে আপনার মূল্যবান মতামত  জানাবেন। ফিরব নতুন আরেকটি আর্টিকেল নিয়ে।
Images: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories