কেন মঙ্গল গ্রহ? কেন এই লাল গ্রহেই যাত্রা? কেন সৌরজগতের আলাদা গ্রহ গুলোতে নয়?

মানব ইতিহাসে সবচাইতে অবিস্মরণীয় দিন ছিল যেদিন আমরা চাঁদকে জয় করেছিলাম—চাঁদে মানুষের পদার্পণের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছিল যে, মানুষকে পৃথিবীর বাইরে ভ্যাকুয়াম স্পেসে পাঠানো সম্ভব এবং সেখান থেকে নিরাপদে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব। চন্দ্র অভিযানের পর থেকেই মানুষের নজর ছিল ঐ লাল গ্রহের দিকে। এরপরে আজ পর্যন্ত ডজন খানেক মিশন পাঠানো হয়েছে মঙ্গল গ্রহ উদ্দেশ্য করে। আবার কয়েক বছরের মধ্যে সেখানে যাওয়ার জন্য আমরা উঠে পরে লেগেছি, কিন্তু কেন? কেন মঙ্গল গ্রহ? কেন এই লাল প্ল্যানেটেই যাত্রা? কেন সৌরজগতের আলাদা প্ল্যানেট গুলোতে নয়?


কেন মঙ্গল গ্রহ?

মঙ্গল গ্রহ বা মার্স বা লাল গ্রহ নিয়ে মানুষের কল্পনা আজকের নয়। শুধু সেখানে যাওয়া নিয়েই উন্মাদনা নয়, গত শতাব্দীতে মার্স নিয়ে বেড় হয়েছে অনেক মুভি, লেখা হয়েছে অনেক সায়েন্স ফিকশন বই। প্রত্যেকটি গল্পে, প্রত্যেকটি কল্পনায় এই লাল গ্রহকে দেখা হয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা ভাবে, আর আশা করা হয়েছে এই লাল গ্রহে এগুলো অস্তিত্ব থাকতে পারে। সৌরজগতের নানান প্ল্যানেট গুলোতে ইতিমদ্ধেই আমরা নানান টাইপের প্রোব সেন্ড করেছি, অনেক প্ল্যানেট নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছি, কিন্তু যাত্রার জন্য কেবল মঙ্গল গ্রহই কেন? — এই লাল প্ল্যানেট (এর নাম লাল প্ল্যানেট হওয়ার কারণ, এর সার্ফেসে আইরন অক্সাইড রয়েছে) কেন আমাদের যাত্রার জন্য আকৃষ্ট করেছে?

আসলে এই প্রশ্নের উত্তর একটু ট্রিকি! মানে এর সঠিক উত্তর ঐভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেভাবে কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমরা আশা করে থাকি। তবে এই আর্টিকেলে সম্ভাব্য সকল কারণ গুলো খুঁটিয়ে তদন্ত করার চেষ্টা করবো। চাঁদে যাওয়ার মাত্র কয়েক বছর পরেই মার্সে কিভাবে মানুষ পাঠানো যাবে তার সম্পূর্ণ প্ল্যান তৈরি করা হয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয় এরপরে অনেক স্পেস এজেন্সি অনেক সায়েন্সটিস্ট একেরপর এক প্ল্যানশিট তৈরি করেছে, “কিভাবে মানুষ মঙ্গল গ্রহে পাঠানো যেতে পারে” তার উপরে। সর্বপ্রথম মার্স ২ এবং মার্স ৩ মঙ্গল গ্রহে পাঠানো হয়, কিন্তু সেই মিশন সাকসেসফুল ছিল না, তবে বলতে পারেন ঐ এটাই প্রথম মানুষের তৈরি কোন অবজেক্ট ছিল যেটা মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠকে স্পর্শ করেছিল, আবার বলতে পারেন মানুষের পাঠানো প্রথম অবজেক্ট যেটা এই লাল প্ল্যানেটের বুকে বিধ্বস্ত হয়েছিল।

এরপরে ভাইকিং ১ মার্সে পাঠানো হয়, যেটা আসলেই মার্সের সার্ফেসে ল্যান্ড করে তার নিজের মিশন পূর্ণ করে এবং আমাদের কাছে মার্সের সর্বপ্রথম সার্ফেসের পিকচার তুলে সেন্ড করে। এর মধ্যে আরো অনেক টাইপের রোবট পাঠানো হয় মার্সে কিন্তু এবার কথা বলি আমাদের সেন্ড করা রিসেন্ট যান্ত্রিক রোবট কিউরিওসিটি নিয়ে, এই যান্ত্রিক রোবটিকে কতিপয় বছর কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে আর এটি সোলার পাওয়ারের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং একটি নিউক্লিয়ার জেনারেটর এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, বলতে পারেন এতে লিমিটলেস ইলেক্ট্রিসিটি পাওয়ার রয়েছে। অপারচুনীটি রোভার ১৩ বছরের মতো কাজ করেছে একে ডিজাইন করা হয়েছিল আরো ৫০ গুন টাইম কম কাজ করার জন্য। কিন্তু এখানে ইন্টারেস্টিং ফাক্ট হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে যান্ত্রিক রোবট’টি কেবল ৪১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে। যদি মানুষের কাজের সাথে তুলনা করেন সেক্ষেত্রে রোবটটি ৬ মাসে যতোটুকু কাজ করতে পারবে কোন মানুষ সেটা কেবল ২ ঘণ্টার মধ্যেই সমাপ্ত করে ফেলবে।

আরো বেটার জ্ঞান অর্জন

যদি প্রশ্ন করা হয়, মার্সে মানুষ কেন পাঠানো হচ্ছে, তবে এটার বেস্ট উত্তর হতে পারে আরো বেটার অনুসন্ধানের জন্য আরো বেটার নলেজ অর্জন করার জন্য। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন মার্স? তবে এর উত্তর নিচের প্যারাগ্রাফ গুলোতে দেওয়ার চেষ্টা করবো। রোবট ব্যবহার করে পৃথিবী থেকে নির্দেশনা সেন্ড করে বিশেষ করে ৪০১ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে থেকে নিয়ন্ত্রণ এতোটা সহজ ব্যাপার নয়। যেহেতু কোন কমিউনিকেশন সিস্টেমই আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিশীল হতে পারে না, তাই শতশত মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে কোন রোবটকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা ডাটা আদান প্রদান করতে মাঝখানে অনেক রেস্পন্স টাইম লেগে যায়। রোবট প্রত্যেকটা পদক্ষেপে কি করবে বা তার কোন বাহু নাড়াবে বা কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবে সেটা পৃথিবী থেকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করে।

আর মঙ্গলে থাকা রোবটকে পৃথিবী থেকে কম্যান্ড গ্রহণ করতে বা রোবট পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে ২৬ মিনিটের দেরি সবসময় ফেস করতে হয়। প্রত্যেকটা কম্যান্ডে ২৬ মিনিটের দেরি সহ্য করে তারপরে কাজ করতে হয়। কিন্তু এখানে যদি কথা বলে হয় মানুষ নিয়ে, সেক্ষেত্রে মানুষকে পৃথিবী থেকে আসা কোন কম্যান্ডের জন্য দেরি করতে হবে না। হ্যাঁ রোবট অনেক কিছুই করতে পারে, যেমন বায়ুমন্ডলে কোন কোন গ্যাস মজুদ রয়েছে সেগুলো এক্সপ্লোর করতে পারে, তাপমাত্রা পরিমাপ করতে পারে, মানুষের জন্য যে পরিবেশ প্রতিকূল সেখানেও রোবট কোন সমস্যা ছাড়ায় টিকে থাকতে পারে, রেডিয়েশন পরিমাপ করতে পারে যাতে সেখানে কোন রিস্ক ছাড়ায় মানুষ পাঠানো যায়, কিন্তু সার্ফেস এক্সপ্লোর করার ক্ষেত্রে বলতে পারেন রোবট শুধু মঙ্গলের গায়ে সামান্য আঁচর কাঁটা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা। বড় বড় পাথরের সামনে রোবট আঁটকে যেতে পারে বা বালুতে রোবটের চাকা পুঁতে যেতে পারে। কিন্তু মানুষের কাছে এগুলো সমস্যা কোন সমস্যাইয় নয়, সহজেই মানুষ আরো অনেক বেশি এক্সপ্লোর করতে পারবে।

মানুষকে ৮-৪৮ (মার্স এবং পৃথিবীর দূরত্ব অনুসারে) মিনিটের দেরি সহ্য করতে হবে না, এমনকি কিউরিওসিটি তার ১৩ বছরের মিশনকালে যতোটুকু করতে পারবে মানুষ সেটা ১দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ করে ফেলবে। রোবটের ক্ষেত্রে এখানে কেবল কম্যান্ড সেন্ড রিসিভের সময়ই আসল সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে বেস্টভাবে রোবটটিকে পরিচালনা করা, প্রত্যেকটি পদক্ষেপ বেস্টভাবে গ্রহণ করা। কিন্তু আগেই বলেছি মানুষকে এরকম কোন কম্যান্ড দিতে হবে না, পাথরের উপর উঠলে কম্যান্ড দিয়ে অ্যাঙ্গেল বুঝিয়ে বুঝিয়ে নামাতে হবে না। যখন কথা আসবে ম্যান বনাম রোবট নিয়ে, অবশ্যই মানুষ রোবটের চাইতে ভালো রোবট হিসেবে কাজ করতে পারবে। মানুষ ১ মাসে যতোটা কাজ করবে, রোবট ১০০ বছরেরও সেটা করতে পারবে না। আর এই জন্যই মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

কিন্তু কেন আলাদা গ্রহ নয়?

সৌরজগতে আমাদের সবচাইতে বড় সন্ধান হচ্ছে জীবনের, আমরা যে এই মহাবিশ্বে একা নয় এটা প্রমান করার জন্যই এতোটা এক্সপ্লোর করা। যেহেতু আমাদের বর্তমান টেকনোলোজির সাথে অন্য স্টারের প্ল্যানেট গুলো এক্সপ্লোর করা সম্ভব নয় তাই বেটার হবে প্রথমে আমাদের নিজেদের সৌরজগতটাকে এক্সপ্লোর করা। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় “কেন মঙ্গল গ্রহ?” — সেক্ষেত্রে অনেক বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে। মঙ্গল গ্রহের পূর্বে ভেনাস এক্সপ্লোর করা কিন্তু অনেক সহজ মিশন হতে পারতো। পৃথিবী থেকে ভেনাসের দূরত্ব ২৬১ মিলিয়ন কিলোমিটার যেটা মঙ্গল গ্রহ থেকে প্রায় অর্ধেক দূরত্ব, যদিও এই দূরত্ব কোন প্ল্যানেটের বর্তমান অবস্থান কোথায় সেই অনুসারে নির্ভর করে, কিন্তু তারপরেও মঙ্গলের তুলনায় আমাদের কাছে ভেনাস অনেক কাছের।

তাছাড়া ভেনাসকে পৃথিবীর বোন প্ল্যানেট বলা হয়, এরা দেখতে একেবারেই একই রকম। তাহলে কেন ভেনাস নয়? কেন মঙ্গল? — যেখানে পৌছাতে কিনা ডাবল পথ অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু ভেনাসের সাথে সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে এটি সম্পূর্ণ গরমের জাহান্নাম, ভেনাসের সম্পূর্ণ সার্ফেস জুড়ে গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ৮৬৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ৪৬২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, মানে এর গড় তাপমাত্রায় কতিপয় ধাতু গলে তরলে রুপ নিয়ে নেবে, যেখানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবার পৃথিবীর সার্ফেস প্রেসার যদি ১ বার ধরা হয় সেক্ষেত্রে ভেনাসের সার্ফেস প্রেসার ৯২ বার, এর মানে ভেনাসের সার্ফেসে ল্যান্ড করা মাত্রই সোডা ক্যানের মতো আপনাকে দুমড়ে মুচরে ফেলবে। এই পর্যন্ত ভেনাসের সার্ফেসে যতো টাইপের প্রোব পাঠানো হয়েছে, সেগুলো খুবই কম সময় লাস্টিং করেছে, সবচাইতে সর্বাধিক টিকে থাকা প্রোবের সময়কাল কেবল ২ঘণ্টা, এর মধ্যেই ভেনাসের জাহান্নাম প্রকৃতির আবহাওয়ায় ধ্বংস করে দিয়েছে প্রোবটিকে।

তবে ভেনাসকে একেবারেই রিজেক্ট করে দেওয়ার পূর্বে একটু অপেক্ষা করুণ, কেননা ভেনাসের বায়ুমন্ডলের উপরদিক মোটামুটি সার্ফেস থেকে ৩১ কিলোমিটার উপরে রেডিয়েশন প্রোটেকশন, গ্রাভিটি, প্রেসার এতোটাও খারাপ নয়, বরং অনেক ইন্টারেস্টিং। এর উপর ভিত্তি করে ন্যাসার একটি প্রোজেক্ট রয়েছে HAVOC –  High Altitude Venus Operational Concept; বা সহজ বাংলাউ বলতে পারেন ভেনাসের আকাশে উড়ন্ত ল্যাব এবং উড়ন্ত শহর তৈরি করার একটি প্রকল্প। এখন এটি কতোটা সম্ভব হবে সেটাই বিশাল প্রশ্ন বোধক চিহ্ন।

এখন যদি সোলার সিস্টেমের বাকী প্ল্যানেট গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় মঙ্গলকে বাদ রেখে, সেক্ষেত্রে কোন প্ল্যানেট অত্যন্ত গরম যেখানে কোন মতেই প্রবেশ সম্ভব নয় আবার অনেক প্ল্যানেট অত্যন্তবেশি ঠাণ্ডা মানে সেখানে প্রবেশের পূর্বেই জমে ম্যান আইস্ক্রিমে পরিণত হয়ে যেতে হবে। তাছাড়া বুধ, শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল গ্রহ ব্যাতিত সৌরজগতের আর কোন গ্রহেই সার্ফেস নেই। বৃহস্পতি, শনি, বা নেপচুনে কোন পাথুরে পৃষ্ঠ নেয় যেখানে আমরা দাঁড়াতে পাড়বো। চারটি গ্রহ ব্যাতিত সৌরজগতের সকল গ্রহ গুলো গ্যাস জায়েন্ট, মানে এগুলোতে জাস্ট গ্যাস ছাড়া আর কিছুই নেই। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুসারে কোন কোন গ্যাস জায়েন্টের সলিড কোর রয়েছে, কিন্তু কোন গ্রহের কোরে পৌঁছানর চিন্তা মোটেও স্বাভাবিক আর বেঁচে ফেরার মতো কল্পনা নয়। আলাদা গ্রহ গুলোতে অক্সিজেনের বিশেষ অভাব রয়েছে সেই ব্যাপার নিয়ে আর নাইবা আলোচনা করলাম।

তো সকলদিক বিবেচনা করে দেখলে মঙ্গল গ্রহ অবশ্যই সবার আগে চলে আসে যেখানে আমরা যাত্রা করতে পারি, এছাড়া বর্তমান টেকনোলজিতে আমাদের কাছে বেটার তেমন কোন অপশন নেই।

মঙ্গলে মানুষ এবং তার সম্ভবনা

মঙ্গলে সলিড সার্ফেস থাকলেও সেখানে মানুষ সরাসরি বসবাস করতে পারবে না, এর নানান কারণ রয়েছে। বিশেষ করে মঙ্গলের লো তাপমাত্রা, যেখানে অত্যন্ত ভালো স্পেস সুট প্রয়োজনীয় হবে, না হলে ঠান্ডায় জমে আইসক্রিম হয়ে যেতে হবে। তারপরে মঙ্গল গ্রহের দুর্বল গ্রাভিটি, যেটা হিউম্যান ম্যাসলস এবং বোন্স এর জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া মার্সে ল্যান্ডিং করায় বিশেষ এক চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীতে ল্যান্ডিং করা অনেক সহজ কেননা এর গভীর বায়ুমন্ডল রয়েছে, ল্যান্ডিং করার সময় বায়ুমন্ডলের ঘর্ষণে ল্যান্ডিং স্পীড কমে যায়, কিন্তু মার্সের বায়ুমন্ডল অত্যন্ত পাতলা আর প্রত্যেক সেকেন্ডে এর বায়ুমন্ডল লিক হয়ে স্পেসে সকল গ্যাস বেরিয়ে যাচ্ছে। তাই ল্যান্ডিং স্পীড কমানোর জন্য এতে প্রভাবক হিসেবে কিছুই নেই।

অপরদিকে মঙ্গলের ম্যাগনেটিক ফিল্ড অনেক দুর্বল হওয়াতে সোলার রেডিয়েশন আটকাতে পারে না গ্রহটি সাথে উইক ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কারণে সার্ফেস থেকে লিকুইড পানি হারিয়ে ফেলেছে গ্রহটি। আপনি যদি স্পেস সুট ছাড়া কয়েক মিনিট মঙ্গলে অবস্থান করেন, সেক্ষেত্রে স্কিন ক্যান্সার থেকে আপনাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। সাথে মঙ্গলের বায়ু প্রচণ্ডভাবে বিষাক্ত, এতে মুক্তভাবে নিশ্বাস নিতে পারবেন না।

এখন সকল বিষয় গুলোর উপর বিবেচনা করে স্পেশাল সুট, স্পেশাল টিকে থাকার ট্রেনিং, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সহকারে যদি মঙ্গলে মানুষ যেতে পারে, সেক্ষেত্রে অকল্পনীয় এক্সপ্লোরেশন সম্ভব হতে পারে। চিন্তা করে দেখুন, মানুষ কতোটা সহজেই কোন কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে পাড়বে। সহজেই জমে থাকা বরফের উপর ড্রিলিং করতে পাড়বে এবং অনুসন্ধান চালাতে পাড়বে আসলে মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা পানি গুলো কোথায় চলে গেছে। সম্ভাব্য যেকোনো টাইপের জীব যদি থাকে, সেগুলোকে খুঁজে বেড় করা সম্ভব হবে, হোক সেই জীব কোন মাইক্রোস্কোপিক সাইজের। সাথে মঙ্গলের ভূগর্ভে পানির সমুদ্র আর সেখানে কোন জীব রয়েছে কিনা সেই ব্যাপারেও জ্ঞান অর্জন করা যাবে। যদিও মার্সকে এতো সহজে পৃথিবীর মতো মুক্ত বসবাসের যোগ্য তৈরি করা সম্ভব নয়, কিন্তু সেখানে জ্ঞান অর্জন করার জন্য রয়েছে অনেক কিছু। মার্সে উন্মুক্তভাবে নিশ্বাস নেয়ার জন্য অক্সিজেন জেনারেট করতে বর্তমান টেকনোলোজিতে ১ লক্ষ্য বছর সময় লেগে যাবে, কিন্তু এতোটা টাইম রয়েছে কার কাছে?

তাই বিজ্ঞানীরা বিশেষ ঘর বা তাম্বু খাটানোর চেষ্টা করবেন মার্সের সার্ফেসে, যখন আমরা ছাদ তৈরি করতে পাড়বো, তাহলে কেন আকাশের ভরসায় থাকা, তাই না? প্রথমেই হয়তো এরকম বিশাল আকৃতির বাসস্থান নির্মাণ করা সম্ভব হবে না, তবে প্রথম মিশনে হয়তো মাটির নিচে গবেষণাগার তৈরি করা হবে।


এখন চলে আসি আমাদের আর্টিকেল টাইটেল প্রশ্নে! — “কেন মঙ্গল গ্রহ?” — আগেই বলেছিলাম, এর উত্তর এতোটা সহজ হবে না। তবে যদি কল্পনা করেন আমাদের সোলার সিস্টেমের মধ্যে পৃথিবী ব্যাতিত আলাদা কোন গ্রহ এক্সপ্লোর করা বা জীবনের অনুসন্ধান চালানো, সেক্ষেত্রে হয়তো প্রশ্নটি পরিস্কার হয়ে উঠতে পারে। আমাদের জীবনের লক্ষ্য কি? — অবশ্যই জীবনের অর্থ খুঁজে বেড় করা, আমরা কেন এবং কিভাবে এই বিশাল রহস্য উন্মোচন করা, আর এক্ষেত্রে মঙ্গল গ্রহ এক্সপ্লোর আমাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। চিন্তা করে দেখুন এমন আবিস্কারের কথা যেটা সম্পূর্ণ হিউম্যান হিস্টোরিতে কেউ কল্পনাও করে দেখেনি কখনো!

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories