ডাটা প্যাকেট কি? এই ব্লক গুলোই ইন্টারনেটে আপনার ডাটা পরিবহন করে!

যদি কথা বলি ইন্টারনেট নিয়ে, তো অবশ্যই টার্ম আসে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে ডাটা আদান প্রদান করার। যদি কথা বলি ডাটা নিয়ে, তো অবশ্যই ডাটা প্যাকেট টার্মটি চলে আসে—মানে সম্পূর্ণ ইন্টারনেটই ডাটা প্যাকেট বা নেটওয়ার্ক প্যাকেট এর উপর নির্ভরশীল। আপনি ইন্টারনেট যে ডাটাই সেন্ড বা রিসিভ করুণ না কেন, সেটা প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে, আপনার নেটওয়ার্কে ছড়ানোর সময় আপনার ডাটাটি কিন্তু একটি সিঙ্গেল পিস ডাটা থাকে না, হাজারো বা লাখো টুকরাতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আর এই আর্টিকেলে সেই ডাটা প্যাকেট গুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করবো, যে  ব্লক গুলোই ইন্টারনেটে আপনার ডাটা পরিবহন করে!


ডাটা প্যাকেট

আপনি যখন ইন্টারনেট থেকে কোন ফটো ডাউনলোড করেন বা ওয়েব সার্ভার থেকে কোন ওয়েব পেজ ডাউনলোড করেন, আপনার ডাটা গুলো কিন্তু সিঙ্গেল ওয়ান পিস হিসেবে আপনার ব্রাউজারে লোড হয় না। আসলে ওয়েব পেজের অসংখ্য টুকরা আপনার কম্পিউটারে রিসিভ হয় এবং প্রত্যেকটি টুকরা একসাথে জোড়া লেগে তারপরে আপনার কাছে একটি পুরনাঙ্গ ওয়েব পেজ প্রদর্শিত হয়। যে নেটওয়ার্কে এই ডাটা গুলো টুকরা টুকরা হয়ে আপনার কাছে পৌছায় বা আপনি সেন্ড করতে পারেন, একে প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক বলা হয়। তাহলে ডাটা প্যাকেট কি? — বলতে পারেন, ডিজিটাল নেটওয়ার্কে কোন কমিউনিকেশনের জন্য নেটওয়ার্ক প্যাকেট বা এই ডাটা প্যাকেট গুলো হচ্ছে বেসিক ইউনিট। ইন্টারনেটে ডাটা ট্র্যান্সমিট হওয়ার পূর্বে ডাটা গুলো অসংখ্য টুকরাতে বিভক্ত হয়ে যায় এবং গন্তব্যের জন্য ছড়িয়ে পড়ে, এই টুকরা হওয়া ডাটা গুলোকে ডাটা প্যাকেট বা নেটওয়ার্ক প্যাকেট বলা হয়ে থাকে।

ইন্টারনেট প্যাকেট নিয়ে ইন্টারনেট কি এবং কিভাবে কাজ করে? — এই আর্টিকেলে ব্যস্তব উদাহরণের সাথে ব্যাক্ষা করেছিলাম, চাইলে পড়ে নিতে পারেন। যাই হোক, একটি সিঙ্গেল ডাটাকে সম্পূর্ণ ডাটা রুপে নেটওয়ার্কে সেন্ড করার চাইতে একত্রে অনেক গুলো প্যাকেট রুপে সেন্ড করাতে অনেকবেশি দক্ষ নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়। এতে আপনার ডাটা গুলো অনেক দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে পৌঁছান সম্ভব হয়। ইন্টারনেটে প্যাকেট সুইচিং কিভাবে কাজ করে সেটা বুঝানোর জন্য পূর্বে একটি উদাহরণ দিয়েছিলাম, সেটা এখানেও দিচ্ছি, যাতে ডাটা প্যাকেট কেন প্রয়োজনীয়, সে ব্যাপারে ভালো ধারণা পেতে পারেন।

মনে করুন আপনি অ্যামেরিকাতে থাকেন এবং বাংলাদেশে চলে আসার প্ল্যান করলেন। মনে করুন আপনি শুধু আপনার মালপত্র নয় বরং সাথে আপনার বিল্ডিং ও তুলে নিয়ে আসার কথা ভাবছেন। তবে ভেবে দেখুন একটি দুঃস্বপ্নের কথা যেখানে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আপনার গোটা বাড়ি বহন করে নিয়ে আসছেন। তাহলে আপনাকে কি করতে হবে? প্রথমত একটি এমন রাস্তা দেখতে হবে যা দিয়ে সহজে আপনি ভ্রমন করতে পারবেন। তারপরে আপনার কিছু ট্রাকের প্রয়োজন পড়বে এবং সমুদ্র পার করার জন্য আপনার প্রয়োজন পড়বে একটি স্পেশাল জাহাজ। ভেবে দেখুন পুরা ব্যাপারটা কতটা কঠিন হয়ে পড়লো। আর এতো কিছু একসাথে বহন করার জন্য আপনি কয়েকদিন পিছিয়ে যাবেন। কারন আপনার গন্তব্য অনেক স্ল্যো হয়ে যাবে। আবার ঐ একই রাস্তায় যদি অন্যকেউ আসার চেষ্টা করে তবে সেও বাঁধাগ্রস্থ হয়ে পড়বে। আসলে সার্কিট সুইচিং পদ্ধতি এই একইভাবে কাজ করে এবং এই পদ্ধতিতেই টেলিফোন কল হয়ে থাকে।

এখন আরেকটি অবস্থা কল্পনা করুন, মনে করুন, আপনি আপনার বিল্ডিংটি খুলে ফেললেন এবং প্রত্যেকটা ইট নাম্বারিং করলেন। প্রত্যেকটি ইটকে একেকটি খামে ভরলেন এবং একেকটি পথে তা আপনার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলেন। কোন গুলো গেলো হয়তো জাহাজে আবার কোন গুলো গেলো হয়তো আকাশ পথে। তারপর যখন সব ইটগুলো একত্রে পৌঁছে গেলো তখন ইটগুলোর নাম্বার গুলো মিলিয়ে আবার আগের বিল্ডিং তৈরি হয়ে যাবে। যেহেতু ইটগুলো আলাদা আলাদা রাস্তা দিয়ে ভ্রমন করে এসেছে তাই রাস্তায় কোন জ্যামের সৃষ্টি করবে না এবং অন্যরা একই সময়ে একই রাস্তা ব্যবহার করতে পারবে।

ব্যাস এভাবেই ডাটা গুলোকে প্যাকেট আকারে সেন্ড করাতে সার্ভার লোড কমে যায় এবং সেগুলো অনেক দ্রুত গন্তব্যে পৌছাতেও পারে। যখন আপনি আপনার বন্ধুকে কোন ইমেইল ম্যাসেজ পাঠান, সেটা একসাথে টুকরা অনেক কিছু বাইট আকারে ভেঙ্গে যায় এবং গন্তব্যের দিকে রওনা দেয়। এরপরে এই প্যাকেট গুলো বিভিন্ন রুটে গমন করে অবশেষে আসল রিসিভারের কাছে গিয়ে পৌছায়। রিসিভারের কম্পিউটারে প্যাকেট গুলো আবার একত্রিত হয় এবং পূর্বের ডাটায় ফেরত আসে।

ডাটা প্যাকেটের স্ট্র্যাকচার

এখন প্রত্যেকটি ডাটা প্যাকেটের বিশেষ গঠন থাকে, এতে নানান টাইপের তথ্য এম্বেড করা থাকে, বিভিন্ন প্রোটোকলের প্যাকেট গুলো আলাদা গঠনে প্রস্তুত হয়ে থাকে। সাধারণত প্রত্যেকটি প্যাকেটে দুইটি বিশেষ বিষয় থাকে, প্যাকেট হেডার এবং পেলোড। প্যাকেট হেডারের মধ্যে মূল ডাটাটির কিছু তথ্য, সার্ভিস তথ্য এবং ট্র্যান্সমিশন তথ্য যুক্ত করা থাকে। তাছাড়া ডাটা প্যাকেটে সোর্স আইপি অ্যাড্রেস ও এনকোড করা থাকে, এতে সহজেই বোঝা যায় ডাটাটি কোন কম্পিউটার বা সার্ভার থেকে সেন্ড করা হয়েছে। সাথে প্যাকেটে এর গন্তব্য আইপি অ্যাড্রেসও যুক্ত করে দেওয়া হয়, না হলে ডাটাটি কই পৌঁছাবে, সেটা কিভাবে নির্ধারিত হবে।

এরপরে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে প্যাকেট গুলোর মধ্যে নিজে থেকে জোড়া লেগে সম্পূর্ণ প্যাকেট তৈরি করার তথ্য এনকোড করা থাকে। ফলে আপনার কম্পিউটারে ডাটা গুলো টুকরা হিসেবে রিসিভ হলেও সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের আগের অবস্থানে ফেরত আসতে পারে এবং আপনাকে চিন্তাই করতে হয় না, ডাটাটি কিভাবে এসেছে।

ডাটা প্যাকেটের স্ট্র্যাকচার নির্ভর করে, সেটা কোন প্রোটোকলে ট্র্যান্সমিট করা হবে তার উপরে। উদাহরণ স্বরূপঃ ভিওআইপি কল আইপি প্রোটোকলের উপর কাজ করে। ইথারনেট নেটওয়ার্কে ডাটা ইথারনেট ফ্রেমের মাধ্যমে ট্র্যান্সমিট করানো হয়। আইপি প্রোটোকলে, নেটওয়ার্ক প্যাকেট গুলো বিভিন্ন নোডের মধ্যদিয়ে গন্তব্যে গিয়ে পৌছায়। এখানে নোড বলতে ডিভাইজ এবং রাউটার গুলোকে বোঝানো হচ্ছে। আইপি প্রোটোকলে বর্তমানে রাউটার অনেক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। রাউটার নিজের অধীনে অনেক গুলো ডিভাইজ আড়াল করে রাখে, সার্ভার থেকে প্রথমে রাউটার ডাটা প্যাকেট গুলো রিসিভ করে তারপরে তার সাথে কানেক্টেড থাকা ডিভাইজ গুলোকে দক্ষতার সাথে প্যাকেট গুলো বন্টন করে। অপরদিকে টিসিপি ব্যবহার করেও ডাটা প্যাকেট গুলোকে সেন্ড হয়। আমরা বিশেষ করে একে টিসিপি/আইপি হিসেবে চিনে থাকি। এই প্রোটোকলে ডাটা প্যাকেটের উপর নিয়ন্ত্রন রাখা হয়, অনেক সময় ডাটা সেন্ড হওয়ার পরে অনেক প্যাকেট হারিয়ে যায়, তখন ডুপ্লিকেট প্যাকেট সেন্ড করা হয়।


তো বুঝতেই পাড়ছেন, ইন্টারনেট বা যেকোনো ডিজিটাল নেটওয়ার্কে ডাটা গুলোকে প্যাকেট রুপে সেন্ড করা হয়, সেটা টেক্সট, কল, ইমেজ, ভিডিও, অডিও যাই হোক না কেন। প্রত্যেকটি ডাটা আবার আমাদের ডিভাইজে পৌঁছে একত্রিত হয়, এজন্য দেখে থাকবেন, যখন আপনি স্লো ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন আর কোন বড় সাইজের ইমেজ লোড করবেন, ইমেজ গুলো একটু একটু করে ওপেন হয়, তারপরে একসময় সম্পূর্ণ ইমেজ জোড়া লেগে যায়।

আশা করছি, এই বেসিক আর্টিকেলটি থেকে আপনি সহজেই ধারণা পেয়ে গেছেন, ডাটা প্যাকেট বা নেটওয়ার্ক প্যাকেট কি এবং এটি সত্যই কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাপারে যেকোনো প্রশ্ন থাকলে আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories