আইএমইআই নাম্বার কি? এটি আসলে কীসের জন্য? — বিস্তারিত!

মরা সবাই কমবেশি একটা জিনিসের নাম অবশ্যই শুনেছি, তা হল আইএমইআই নাম্বার (IMEI)। মোবাইল বা স্মার্টফোনের প্যাকেজিং এর সাথে আমরা কিছু স্টিকার দেখতে পাই, আর এখানে এইসব IMEI নাম্বার লেখা থাকে। এই IMEI নাম্বার দ্বারা আসলে কি বোঝায় এবং এই IMEI নম্বর এর কাজ কি, সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না।

তবে প্রথমত বলে রাখি, আপনার ফোনের জন্য এই আইএমইআই (iMEI) নাম্বার অতি জরুরী। আর ফোন কেনার পরপরই আপনার উচিত এই আইএমইআই নম্বরটি কোথাও নোট করে রাখা। আপনার বিদ্যালয়ে বা কলেজে আপনার যেমন আলাদা আইডেন্টিটি ছিলো বা আছে, তেমনই আইএমইআই একেকটি মোবাইল ফোন বা সমমানের ডিভাইসের একেকটি ইউনিক আইডেন্টিটি। আর এইসব আইএমইআই (IMEI) নাম্বার থেকে ফোনের ফোনের মডেল থেকে শুরু করে সিরিয়াল নাম্বার সকল কিছুই বের করা সম্ভব।


বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন খুবই প্রচলিত একটি প্রযুক্তি পন্য। আর ধীরে ধীরে এটি আরও ফিচারফুল এবং আরো দামি হয়ে যাচ্ছে। কমবেশি সবাই ইচ্ছা করে অন্তত একটা স্মার্টফোন তো কিনছেনই। আর সেকারনে এইসব স্মার্টফোনের ব্যাপক প্রসারের ফলে চোরদেরও অন্যতম টার্গেট হয়ে দাড়িয়েছে। তো আপনার স্মার্টফোনটি হয়ত আপনি দূর্ঘটনাবশত হারিয়ে ফেললেন; কেউ চুরি করল। তখন সেই স্মার্টফোন কিভাবে ফিরে পাবেন,বা নজর রাখবেন? চোর তো সীমকার্ড খুলেও ফেলতে পারে, এমন কোন নাম্বার আছে, যা পরিবর্তন করা যায় না? এইসময় আপনাকে সাহায্য করবে আপনার ফোনের IMEI নাম্বার। আজ আমরা জানব IMEI সম্পর্কে বিস্তারিত।


আইএমইআই নাম্বার কি?

আইএমইআই(IMEI) এর পূর্নরূপ হলো International Mobile Equipment Identity। এই IMEI প্রতিটি মোবাইল ডিভাইসের জন্য একটি সংখ্যাসূচক পরিচয় বা সংখ্যাসূচক আইডিন্টিটি। আর এই কারনে প্রতিটি আইএমইআই নম্বরই অনন্য তথা একটি আরেকটির থেকে ভিন্ন।

মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানির কাছে আপনার ফোনের সব তথ্য এই আইএমইআই নম্বরের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকে। আর তাই আপনি হয়ত যখন কোন কারনে আপনার ফোন সার্ভিসিং এ নিয়ে গিয়েছেন কাস্টমার কেয়ারে, তারা আপনার ফোন খুলে আইএমইআই নম্বরটি চেক করে ফোনের সব ডাটা বের করেছে ; যেমনঃ ওয়ারেন্টি আছে কিনা, কবে বিক্রি হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

সাধারনত মূল আইএমইআই নম্বরটি হয়ে থাকে ১৪ ডিজিটের। তবে পুরো আইএমইআই নম্বরটি ভেরিভাই এর জন্য এর সামনে আরো একটি সংখ্যা থাকে যা মিলে পুরো আইএমইআই নম্বরটি হয়ে যায় ১৫ ডিজিটের। তবে এখন অনেক আইএমইআই নম্বরে ডিভাইসের সফটওয়্যার ভার্সন সংস্করন এর জন্য আরেকটি সংখ্যা থাকে, যার ফলে আইএমইআই নম্বরটি হয়ে যায় ১৬ ডিজিটের। আর এসব আইএমইআই নম্বরকে IMEISV’ও বলা হয়।

২০০৪ সাল থেকে আইএমইআই (IMEI) নাম্বার AA-BBBBBB-CCCCCC-D ফরম্যাটে বিন্যাস্থ হয়ে আসছে। আর এখানে A এবং B সেকশনকে বলা হয়ে থাকে Type Allocation Code বা TAC। আর IMEI নম্বরের এই TAC অংশ থেকে ফোনটির ম্যানুফ্যাকচারার বা তৈরিকারক এবং ফোনটির মডেল নম্বর সম্পর্কে জানা যায়। যেমনঃ স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭ এর TAC কোড হল 32-930400, গুগল নেক্সাস ৪ বা এলজি E960 এর TAC কোড হল 35-391805 ইত্যাদি।

অর্থাত ১৫ ডিজিট বা ১৬ ডিজিটের সম্পূর্ণ আইএমইআই নম্বরে এই TAC হয়ে থাকে ৮ ডিজিটের, এই ৮ ডিজিট এর ভেতর ২ টি ডিজিট আবারও  ভেরিভাই এর জন্য, তাই মূল TAC হয়ে থাকে ৬ ডিজিটের ।

এবার আসি C সেকশনের কথায়। আইএমইআই নম্বরের ভেতরকার C সেকশনটি মোবাইল ফোনের একটি ইউনিক বা অনন্য সিরিয়াল নম্বর নির্দেশ করে। এখানে স্মার্টফোন তৈরিকারকরা একেকটি স্মার্টফোনে তাদের পছন্দমত ইউনিক নম্বর দিয়ে থাকে। আর এই D সেকশনে যে একটি নম্বর থাকে তা সম্পূর্ণ আইএমইআই নম্বরটি ভেরিফিকেশনের জন্য। ব্যাস! এইসব নিয়ে আপনার স্মার্টফোনের আইএমইআই (IMEI) নম্বর।

আইএমইআই নাম্বার দেখবেন কিভাবে?

আপনি অনেক উপায়ে আইএমইআই(IMEI) নম্বরটি দেখতে পারেন । তবে আমার কাছে ফোনের ডায়ালার অ্যাপ থেকে এই নম্বরটি চেক করা সবচাইতে সহজ লাগে। আপনার ফোনের ডায়ালর অ্যাপে *#06# ডায়াল করলেই ফোনের আইএমইআই নম্বরটি দেখতে পারবেন।

আবার এন্ড্রয়েড ডিভাইসের Settings>About>Phone>Status এ গিয়ে আপনি আপনার IMEI নম্বরটি দেখতে পারবেন। আবার অ্যাপেল ইউজাররা Settings>General>About এ গিয়ে IMEI নম্বর দেখতে পারবেন। আপনার আপনার ফোনের বক্সে এবং ওয়ারেন্টি কার্ডেও আপনি IMEI নম্বরটি খুঁজে পাবেন। যাই হোক,যেখান থেকেই দেখুন না কেন,অবশ্যই নম্বরটি নোট করে রাখবেন।

আইএমইআই নাম্বার কতটা দরকারি

অনেক জাল মোবাইল ফোন, যেমন: নকল আইফোন এগুলোতে IMEI নাম্বার থাকে না। আবার অনেক নকল বা জাল ফোনে খারাপ বা কারাপ্টেড IMEI নম্বর থাকে। তাই আপনার ফোন আসল কিনা, বা IMEI নম্বর ভ্যালিড কিনা তা জানতে IMEI.info এর মত অনলাইন চেকার ব্যবহার করতে পারেন। একটা কথা মনে রাখবেন, যে ফোনে IMEI নেই বা কারাপ্টেড IMEI -এর মানে সে ফোন নকল এবং আপনি কেনার আগে IMEI চেক করে কিনবেন।

এখন অ্যাপেল বা শাওমির মত ওয়েবসাইটে তাদের ডিভাইসের IMEI ভেরিফাই করার অপশন থাকে, তাই কেনার আগে IMEI ভেরিফাই করে আসলটা কিনবেন।

আইএমইআই নাম্বার দিয়ে কি হয়

IMEI হল একটি মোবাইল ডিভাইসের কমপ্লিট আইডেন্টিটি। ধরুন আপনার ফোন হারিয়ে গেছে, তবে আপনি নানা এনড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপ ব্যবহার করে, কেবল IMEI দিয়ে ফোনটি ট্র্যাক করতে পারেন। আবার আপনি আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোনের জন্য থানায় অভিযোগ করতে গেলে, তারাও IMEI নাম্বার চাবে এবং তা দিয়ে আপনার ফোন ট্র্যাক করতে পারবে।


পরিশেষে

গাড়িঘোরার জন্য একটি নম্বর থাকে যাকে বলা হয়, Vehicle Identification Number বা VIN ; আর মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ঠিক একই IMEI। এই নম্বরটি আপনার প্রিয় মোবাইল ফোনের জন্মসনদ। আবার আপনার সীম নম্বরের সাথে এর তুলনা করবেন না, কেননা IMEI নাম্বার সাধারনত পরিবর্তন যোগ্য নয়। IMEI পরিবর্তন বা ক্লোন নিয়ে পরবর্তীতে কোনো আর্টিকেল প্রকাশ করব। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। নিচে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Images: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories