অগমেন্টেড রিয়্যালিটি : যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ! (৫.০+)

আজকের যুগে অগমেন্টেড রিয়্যালিটি নামটি বেশ জনপ্রিয় এবং প্রযুক্তির দুনিয়ায় এটি একটি ইন্টারেস্টিং টপিক। বর্তমানে রিলিজ করা নতুন কয়েকটি ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের রীতিমতো একটি হাইলাইটেড ফিচার ছিল এই অগমেন্টেড রিয়্যালিটি। যেমন, গুগল তাদের নতুন স্মার্টফোন পিক্সেল ২ এবং অ্যাপল তাদের নতুন আইফোন এক্সেও হাইলাইট করেছে তাদের নতুন অগমেন্টেড রিয়্যালিটি ফিচারটি। আপনাদের মধ্যে অনেকেই বেশ ভালভাবেই জানেন যে অগমেন্টেড রিয়্যালিটি কি এবং এটি কি কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অনেকেই আবার জানেন না। অনেকে মনে করেন যে ভারচুয়াল রিয়্যালিটি এবং অগমেন্টেড রিয়্যালিটি দুটি একই জিনিস বা একই ধরনের জিনিস। কিন্তু আসলে তা নয়। অগমেন্টেড রিয়্যালিটি কি এবং ভারচুয়াল রিয়্যালিটির সাথে এর পার্থক্য কি সেটি বিস্তারিতভাবে জানতে চাইলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন। আর যদি আগে থেকেই জেনে থাকেন, তাহলে আর পড়ার দরকার নেই।

অল্প কথায় একটু ভারচুয়াল রিয়্যালিটি এবং অগমেন্টেড রিয়্যালিটির পার্থক্যটি বলি। ভারচুয়াল রিয়্যালিটির মাধ্যমে আপনি কিছু কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বিশেষ ধরনের যন্ত্র (যেমনঃ ভিআর হেডসেট) ব্যবহার করে কোনো ভিআর সাপোর্টেড ভিডিও দেখে বা কোনো গেম খেলে বা অন্য কোনো ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে এমন একটি অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারবেন, যার ফলে আপনার মনে হবে আপনি নতুন একটি দুনিয়ায় প্রবেশ করেছেন। কিন্তু, অগমেন্টেড রিয়্যালিটির ক্ষেত্রে আপনি আপনার স্মার্টফোনের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনার ঘরের ভেতরেই বিভিন্ন ধরনের জিনিস বা বিভিন্ন অসম্ভব জিনিসও আনতে পারবেন এবং আপনার ফোনের স্ক্রিনে এক্সপ্লোর করতে পারবেন। অবশ্যই জিনিসটির কোন শারীরিক অস্তিত্ব থাকবে না, তবে আপনি আপনার ফোনের স্ক্রিনে জিনিসটিকে এমনভাবে এক্সপ্লোর করতে পারবেন যেন মনে হয় যে সেটি আপনার সামনেই আছে। বিষয়টিকে আরো ভালোভাবে বুঝাতে হলে বলতে হবে যে, ভারচুয়াল রিয়্যালিটি ব্যবহার করে আপনি চাইলে নিজের ঘরে বসেই ডাইনোসরের যুগে ঘুরে আসতে পারবেন। আর অগমেন্টেড রিয়্যালিটি ব্যবহার করে আপনি ডাইনোসরকেই আপনার ঘরে এনে স্মার্টফোনের সাহায্যে ডাইনোসরটিকে এক্সপ্লোর করতে পারবেন। যেমন, Pokemon GO একটি অগমেন্টেড রিয়্যালিটি বেসড গেম।

এই অগমেন্টেড রিয়্যালিটি ফিচারটিই বর্তমানে নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোতে ইমপ্লিমেন্ট করা হচ্ছে এবং অনেকক্ষেত্রে অগমেন্টেড রিয়্যালিটির জন্য স্পেশাল হার্ডওয়্যারও ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু, আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়টি হচ্ছে কিভাবে আপনার হাতের অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিতেই অগমেন্টেড রিয়্যালিটির স্বাদ নিতে পারবেন। না, এর জন্য আপনার ফোনটিকে ২০১৭ এর হাই এন্ড ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। আপনার ফোনে যদি মোটামুটি ভালো একটি ক্যামেরা থাকে এবং অ্যান্ড্রয়েড ভার্শন ৫.০+ হয়, তাহলেই আপনি অগমেন্টেড রিয়্যালিটি ব্যবহার করতে পারবেন। হ্যাঁ, এটি অবশ্যই এখনকার নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোর মত পারফেক্ট হবে না, কিন্তু যতটুকু হয় তা আমার মতে যথেষ্ট। আমরা এক্ষেত্রে যে অ্যাপটি ব্যবহার করব সেটি হচ্ছে, Holo। এই অ্যাপটি আগে শুধুমাত্র অগমেন্টেড রিয়্যালিটি ফিচারসমৃদ্ধ স্পেশাল স্মার্টফোনগুলোতেই ব্যবহার করা যেত, কিন্তু কিছুদিন আগে এটি সাধারন সব অ্যান্ড্রয়েড ৫.০+ ডিভাইসে ব্যবহার করার  জন্য রিলিজ করা হয়। তো চলুন দেখা যাক, কি কি করা যাবে এই অ্যাপটির সাহায্যে। আর হ্যাঁ, আপনার স্মার্টফোনের হার্ডওয়্যার যতটা শক্তিশালী হবে বা আপনার ফোনটির কনফিগ যত উন্নত হবে, এই অ্যাপটির পারফরমেন্সও তত ভালো পাবেন। কারন, এটি অনেক ভারী একটি অ্যাপ। তাই, আপনার ফোনের র‍্যাম যদি ১ জিবির কম হয় এবং আপনার ফোনের প্রোসেসর, চিপসেট যদি অনেক লো এন্ড হয়, তবে আমি বলব আপনার এই অ্যাপটি ইন্সটল না করাই ভালো। যাইহোক, এবার দেখা যাক কি কি আছে এই অ্যাপে।

অ্যাপটি ইন্সটল করে ওপেন করার পরে আপনাকে এই অ্যাপটির দরকারি সব পারমিশনগুলো দিতে হবে। উল্লেখ্য, এই অ্যাপটি আপনার ক্যামেরা, স্টোরেজ এবং লোকেশন ছাড়া আর কোনো পারমিশন চাইবে না। তাই আপনি নির্ভয়ে এই অ্যাপটির সব পারমিশন অ্যালাউ করে দিতে পারেন। এরপরে আপনার সামনে আপনার ফোনের ক্যামেরা ওপেন করা হবে। স্ক্রিনের নিচের দিকে দেখতে পাবেন যে আপনাকে অ্যাপের সাথে একটি স্পাইডারম্যান ক্যারেক্টার প্রি ইন্সটল করে দেওয়া হয়েছে। স্পাইডারম্যান ক্যারেক্টারটিকে ক্লিক করলেই এটি আপনার স্ক্রিনে চলে আসবে এবং আপনি আপনার ইচ্ছামত আপনার ক্যামেরা সামনে যেকোনো জায়গায় প্লেস করতে পারবেন ক্যারেক্টারটিকে। এবং খেয়াল করলে দেখবেন যে এটি কোন স্টিল ক্যারেক্টার নয়। এই ক্যারেক্টারটি একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে মুভ করবে। এবং আপনি চাইলে এটিকে দুই আঙ্গুল দিয়ে জুম ইন করে বড় করতে পারবেন এবং চাইলে হাত দিয়ে সোয়াইপ করে যেকোনো জায়গায় মুভ করতে পারবেন। স্ক্রিনশট দেখলে বিষয়টি আরেকটু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

এই ক্যারেক্টারটিকে এতটাই অ্যাকিউরেটলি প্লেস করা হয়, যাতে আপনার দেখে মনে হবে যে এটি আপনার সামনে আপনার ঘরেই আছে। আপনি চাইলে ভিডিও আইকনে ক্লিক করে এই মুভিং ক্যারেক্টারটির একটি শর্ট ভিডিও তৈরি করতে পারবেন এবং চাইলে ক্যামেরা আইকনে ক্লিক করে একটি স্টিল ছবিও তুলতে পারবেন। এবং এই ক্যারেক্টারটির সাথে কিছু সাউন্ড ইফেক্টও পাবেন যেগুলো ভিডিও করার সময় রেকর্ড হবে ভিডিওর সাথে। আপনি চাইলে আপনি ক্যামেরার সামনে গিয়ে ক্যারেক্টারটির সাথে নিজেও একটি ছবি তুলতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে অন্য কাউকে আপনার ছবি তুলে দিতে হবে। এবং, আপনি চাইলে ক্যারেক্টারটিকে নিয়ে করা ভিডিও বা ছবি ইত্যাদি গ্যালারীতে সেভ করে রাখতে পারবেন এবং যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়াতেও শেয়ার করতে পারবেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যদি স্ক্রিনের নিচের ওই ক্যারেক্টারটির রাউন্ডেড আইকনের পাশে ( > ) এই চিহ্নে ক্লিক করেন তাহলে একটি ( +) আইকন পাবেন স্ক্রিনের ডানদিকে। ওই আইকনে ক্লিক করে আপনি ক্যারেক্টার স্টোরে ঢুকতে পারবেন এবং সেখান থেকে অনেক নতুন নতুন ক্যারেক্টার ইন্সটল করতে পারবেন। আপনি একই ক্যারেক্টার এর বিভিন্ন রূপ এবং বিভিন্ন মুভমেন্ট ডাউনলোড করতে পারবেন এবং চাইলে অনেক নতুন ক্যারেক্টার ডাউনলোড করতে পারবেন। এই অ্যাপের এই ক্যারেক্টার স্টোরটি কিন্তু অনেক বড়। আপনি এখানে ইতোমধ্যেই প্রায় ৫০+ নতুন ক্যারেক্টার পাবেন। এছাড়া প্রায় প্রত্যেকদিনই এখানে নতুন নতুন ক্যারেক্টার যোগ করা হয়।

এই স্টোরে আপনি অনেক পপুলার কার্টুন ক্যারেক্টার সহ আরও অনেক ধরনের মজার মজার ক্যারেক্টারও পাবেন। ক্যারেক্টার গুলো ক্যাটেগরি অনুযায়ী ব্রাউজ করে যেটি ভালো লাগে সেটি ডাউনলোড করতে পারবেন এবং ডাউনলোড করা ক্যারেক্টারগুলো ব্যবহার করা হয়ে গেলে ডিলিট করে দিতে পারবেন। এখানে ক্যারেক্টার গুলো তিনটি ক্যাটেগরিতে পাবেন। প্রথম সেকশনে ফিচারড ক্যারেক্টারগুলো পাবেন, পরের সেকশনে সব ধরনের ক্যারেক্টারগুলো তাদের টাইপ অনুযায়ী খুঁজে পাবেন এবং তার পাশের ক্যাটেগরিতে সবথেকে পপুলার ক্যারেক্টারগুলো পাবেন এবং ইচ্ছামত সব ডাউনলোড করে নিতে পারবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন।

তো এটাই ছিল Holo অ্যাপটির একটি শর্ট রিভিউ যার সাহায্যে আপনি আপনার নিজের অ্যান্ড্রয়েড ফোনেও অগমেন্টেড রিয়্যালিটির স্বাদ নিতে পারবেন।

ডাউনলোড : এখানে।

এই অ্যাপটি অগমেন্টেড রিয়্যালিটি বেসড হলেও শুধুমাত্র মজার জন্য তৈরি করা। তাই অ্যাপটি এবং অ্যাপে জেনারেটেড ছবিগুলো শুধুমাত্র মজার উদ্দেশেই ব্যবহার করুন। আপনি যদি কোন কাজের আর্টিকেল ভেবে এই লেখাটি পড়তে এসে থাকেন, তাহলে আপনার সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত। আর হ্যাঁ, এই অ্যাপটি অগমেন্টেড রিয়্যালিটির জন্য আলাদা কোনো হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার ফিচার ব্যবহার করেনা। তাই এটি এখনো পারফেক্ট নয়। অ্যাপে ছোট ছোট কিছু নরমাল বাগস বা ইমেজ স্কেলিং ইস্যু থাকতেই পারে। তবে একটি ভালো ব্যাপার হচ্ছে, অ্যাপটি সম্পূর্ণ অ্যাডফ্রি।


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে। অ্যাপটি সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories