লজিক বোমা কি? কিভাবে এটি মূল্যবান ডাটা সমূহ ধ্বংস করে দিতে পারে?

কম্পিউটিং জগতে কতো প্রকারের অ্যাটাক বা কতো প্রকারের কম্পিউটার ভাইরাস থাকতে পারে, সেগুলো কল্পনা করতে গেলেও আপনি হয়রান হয়ে যাবেন। যেহেতু ওয়্যারবিডি সবসময় সাইবার সিকিউরিটির উপর ফোকাস প্রদান করে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমার সর্বদা চেষ্টা থাকে, সম্ভাব্য সকল টাইপের সাইবার অ্যাটাক সম্পর্কে আপনাদের সঠিক ধারণা দেওয়া এবং প্রতিকার খুঁজে বেড় করা। আজকের আলোচনার বিষয় লজিক বোমা (Logic Bomb); হ্যাঁ, জানি এটি এক অদ্ভুত নাম! কম্পিউটারের সাথে বোমা নামের সম্পর্ক কি, এই তো ভাবছেন তাই না? ঠিক আছে, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন, যেখানে আমি বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করেছি।


লজিক বোমা

সময় এসে গেছে এই লজিক বোমাকে কম্পিউটিং টার্মের সাথে যুক্ত করে আপনাকে বুঝানোর। দেখুন, লজিক বম্ব হলো এক টাইপের ম্যালওয়্যার বা একটি ম্যালিসিয়াস কোড বলতে পারেন। তবে এটি আলাদা সকল প্রকার ম্যালওয়্যার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা প্রকৃতির হয়ে থাকে। এটি কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করে সাথে সাথে কাজ করতে শুরু করে দেয় না। বরং প্রথমে এটি কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করে, তারপরে এটি কবে ঐ সিস্টেমের উপর অ্যাটাক করবে তার একটা তারিখ এবং সময় সেট করে দেয়। ব্যাস্তব লাইফের অনেকটা টাইম বোমার মতো এটি কাজ করে, যেমন টাইম বোমাতে একটি সময় লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং ঐ সময় পরে বোমাটি বিস্ফরিত হয়ে যায়, ঠিক লজিক বোমা একই স্টাইলে সাইবার অ্যাটাক চালিয়ে থাকে।

 

মূলত কোন অ্যাপ্লিকেশন বা ট্রজান ম্যালওয়্যারের মধ্যে লজিক বম্ব কোড এম্বেড করিয়ে দেওয়া হয়। ম্যালওয়্যারটি সিস্টেমে প্রবেশ করে, কিন্তু কোন অ্যাক্টিভিটি দেখায় না, চুপ মেরে সাইলেন্ট কিলার হিসেবে বসে থাকে। ঠিক যখন সময় হয়ে যায় ম্যালওয়্যারটি তার কাজ করতে আরম্ভ করে দেয়। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে আক্রমণকারী কোন কম্পিউটারে লজিক বোমা সেট করতে পারে। হয়তো কোন ম্যালওয়্যারের সাথে যোগ করিয়ে দিতে পারে এমনকি ফেইক সফটওয়্যার তৈরি করেও তার মধ্যে লজিক বম্ব ফিট করতে পারে।

লজিক বোমা একসাথে অনেক টাইপের ম্যালওয়্যারকে সময়ের সাথে স্টার্ট করিয়ে দিতে পারে যাতে সিস্টেমের যতোদুর সম্ভব ক্ষতি করা সম্ভব হয়। লজিক বম্ব এক টাইপের কোন অ্যাটাক নয়, অ্যাটাকার যেরকম চায় সেরকম টাইপের অ্যাটাক চালাতে পারে, এই লজিক বম্ব ব্যবহার করে। ধরুন, আপনার কম্পিউটারে লজিক বম্ব কি-লগার ইন্সটল করিয়ে দেওয়া হলো, এর মানে আপনি যখন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কোন ওয়েবসাইট ওপেন করবেন তখন ঐ কি-লগার ম্যালওয়্যারটি আপনার সিস্টেমে চালু হয়ে যাবে এবং আপনি কি কি টাইপ করবেন (ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড) সমস্ত কিছু হ্যাকারের কাছে চলে যাবে। তবে বিশেষ করে লজিক বোমাকে কম্পিউটার ডাটা গুলো ধ্বংস করার জন্য প্ল্যান্ট করানো হয়।

এই ম্যালওয়্যার অ্যাটাক সবচাইতে ভয়ংকর হতে পারে, কেনোনা এটি আপনার সিস্টেমে চুপ করে বসে থাকে। আপনাকে টেরও পেতে দেয় না, এটি ইন্সটল হওয়ার সাথে সাথে কাজ শুরু করে না। যদি সাথে সাথে কাজ শুরু করে সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো প্রতিরোধ করার জন্য উপায় বেড় করে ফেলবেন এবং ডাটা গুলোর প্রয়োজনের সময় ব্যাকআপ থেকে বা যেকোনো উপায়ে ডাটা গুলো পেয়ে যাবেন। কিন্তু ধরুন আপনাকে কোন কোম্পানির সামনে কিছু প্রেজেন্টেশন দেখাতে হবে, আপনার কম্পিউটার সম্পূর্ণ ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু প্রেজেন্টেশন দেখানোর সময়ই হঠাৎ করে সকল ডাটা গুলো ফরম্যাট হয়ে গেলো, এতে আপনি তৎক্ষণাৎ কিছুই করতে পাড়বেন না।

প্রতিকার

ব্যাপারটি শুনতে অনেকটা কৌতুক মনে হলেও, অনেক কোম্পানি আরেক কোম্পানির শেয়ার মার্কেট নামিয়ে দেওয়ার জন্য এবং বিশাল ডাটা লস করিয়ে দেয়ার জন্য অনেক টাকা খরচ করে লজিক বোমা ফিট করানোর চেষ্টা করে। হঠাৎ করেই আক্রান্ত কোম্পানিটি ডাটা লসের শিকার হয়ে যায়। কোম্পানি কর্মচারীদের সকল ডাটাবেজ এবং প্রয়োজনীয় ডাটাবেজ গুলো রিমুভ হয়ে যায়। ধরুন ঐ কোম্পানিটি আজ বিকাল ৪ঃ৩০ মিনিটে কোন আরেক কোম্পানির সাথে মিলিয়ন ডলার ডিল সাইন করার কথা ছিল, কিন্তু ৪ঃ০০ টা বাজতেই যদি কোম্পানির সকল কম্পিউটার একসাথে ফরম্যাট হয়ে যায়, তাহলে চিন্তা করে দেখুন কতোটা বিরাট জরুরী অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।

অনেক সময় অনেক সফটওয়্যারের মধ্যে ভালনেরাবিলিটি থাকে, এবং হতে পারে ঐ সফটওয়্যারের মধ্যেই একটি লজিক বম্ব কোড প্ল্যান্ট করিয়ে দেওয়া হয়। কোডটি জাস্ট সময় মতো আপনার কম্পিউটারে একটি টাস্ক ক্রিয়েট করে দেয়, আর সময় আসলে কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি সম্পূর্ণ করে, এটি অনেক সময় কোন ভাইরাসও হয় না, জাস্ট একটি টাস্ক তৈরি করে দেয় ব্যাস। অনেক সময় লজিক বোমা তৈরি করা, ভাইরাস তৈরি করার চেয়েও সহজ কাজ হয়ে থাকে।

যদিও এই টাইপ অ্যাটাকের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেকবেশি, কিন্তু এর প্রতিকার গুলো একেবারেই সহজ, আর আপনি যদি ওয়্যারবিডি নিয়মিত পড়েন এর মানে এর প্রতিকার গুলোর সাথে আপনি আগে থেকেই বেশ ভালোভাবে পরিচিত। জাস্ট নিচের অপশন গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমেই লজিক বোমা অ্যাটাক থেকে বাঁচা সম্ভব।

  • ক্র্যাক সফটওয়্যার ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন;— বেশির ভাগ সময় এই টাইপের অ্যাটাক গুলো জাস্ট র‍্যান্ডম হয়ে থাকে। অর্থাৎ অ্যাটাকার’রা চায় যতোবেশি ততো কম্পিউটার অ্যাটাক করতে। আর উইন্ডোজ ইউজারদের অ্যাটাক করা আরো অনেক সহজ হয়ে যায়, যখন পাইরেটেড বা ক্র্যাক সফটওয়্যার পিসিতে ডাউনলোড করে ইন্সটল করেন। অ্যাটাকার’রা অনেক সহজেই এই টাইপের সফটওয়্যার গুলোর মধ্যে ম্যালিসিয়াস কোড এমবেড করিয়ে রাখে, আর এগুলো ইন্সটল করার মাধ্যমে সহজেই আপনার সিস্টেম অ্যাটাকের আয়তায় চলে আসে। তাই যতোদুর সম্ভব ক্র্যাক সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন। যদি ফ্রী সফটওয়্যারও ডাউনলোড করেন, অবশ্যই অফিশিয়াল লিঙ্ক ব্যবহার করে ডাউনলোড করবেন, সাথে পেইড সফটওয়্যার গুলো অবশ্যই অফিশিয়াল সাইট থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করবেন। অনেক সময় আপনি আলাদা সোর্স থেকে ফ্রী সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময় আসলে ফেক সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ফেলেন, যেগুলো অনেক টাইপের ম্যালওয়্যার আপনার সিস্টেমে প্ল্যান্ট করিয়ে দিতে পারে।
  • লিঙ্ক ওপেন করার আগে ভেবে দেখুন;— অ্যাটাকার সর্বদা চেষ্টা করে আপনার কাছে কোন ম্যালিসিয়াস ওয়েবসাইট লিঙ্ক সেন্ড করার, আর যেখানে ক্লিক করার মাধ্যমেই আপনার সিস্টেমে ম্যালওয়্যার ডাউনলোড হয়ে যেতে পারে। তারা বিশেষ করে ফেইক ইমেইল সেন্ড করে বা বিভিন্ন টাইপের সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে আপনাকে ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক ক্লিক করাতে ব্যাধ করতে পারে। কখনোই না পরীক্ষা করে মেইলে থাকা কোন লিঙ্ক ক্লিক করবেন না বা মেইলে থাকে কোন অ্যাটাচমেন্ট ফাইল হুট করে খুলে ফেলবেন না। ক্লিক না করেই কিভাবে ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক চিনতে পাড়বেন, জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
  • আপডেট;— সম্ভাব্য অনেক টাইপের অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য বেস্ট পন্থা হচ্ছে জাস্ট আপনার কম্পিউটারের সবকিছুকে আপডেটেড রাখুন। আপনার প্রত্যেকটি সফটওয়্যার আপডেটেড রাখুন, অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম নিয়মিত আপডেটেড রাখুন এবং অবশ্যই উইন্ডোজকে অবশ্যই আপডেটেড রাখুন। যেকোনো সিকিউরিটি প্যাচ যখনই প্রদান করবে সাথে সাথে সিস্টেমে অ্যাপ্লাই করে নিন, এতে বড় বড় টাইপের অ্যাটাক থেকে বেঁচে যেতে পারেন।

লজিক বোমা অনেক খারাপ ভাবে আপনার পার্সোনাল কম্পিউটার বা কোম্পানিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই অবশ্যই আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে, আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই আপনাকে সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে, কেনোনা কেউই জানেনা সামনে আপনিই এর শিকার হতে চলেছেন কিনা।

আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক উপকারি ছিল, কেনোনা এটি সত্যিই একটি ভয়াবহ ব্যাপার। এই টপিক সম্পর্কে বা সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে যেকোনো প্রশ্নে আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories