ফেস আনলক : যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সেট করুণ! (৫.০+)

আমরা সবাই জানি এ বছরের রিলিজ হওয়া নতুন দুটি ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনে একটি নতুন ফিচার দেওয়া হয়েছে যার নাম, “ফেসিয়াল রিকগনিশন” বা সহজভাবে বলতে হলে ” ফেস আনলক “। অ্যাপলের আইফোন এক্সের সবথেকে হাইলেইটেড ফিচারই ছিল এই ফেসিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজি। আইফোন এক্সের পরে ওয়ানপ্লাসের নতুন ফ্ল্যাগশিপ ওয়ানপ্লাস ফাইভ টি-তেও এই ফেস রিকগনিশন সুবিধা দেওয়া হয়, যদিও এই ফিচার ইমপ্লিমেন্ট করার ক্ষেত্রে ওয়ানপ্লাস এবং অ্যাপল দুটি আলাদা ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। কিন্তু, যে প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হোক, এই দুটির কাজ সম্পূর্ণ একই।

এই ফিচারটির সাহায্যে মূলত আপনাকে ফোনের স্ক্রিন আনলক করার জন্য পাসওয়ার্ড বা পিন কোড ব্যবহার করতে হবেনা এবং আপনার ফোনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরও ব্যাবহার করার প্রয়োজন হবেনা। আপনি আপনার ফোনের ফ্রন্ট  ক্যামেরা সেন্সর ব্যবহার করে আপনার ফেস স্ক্যান করে আপনার ফোনটি আনলক করতে পারবেন। যার ফলে, অন্য কেউ যদি আপনার ফোনটি হাতে নেয়, তাহলে সে ফোনটি আনলক করতে পারবে না। কারণ, ফোনটি ফেস স্ক্যান করে যদি বোঝে যে এটা আপনি, শুধুমাত্র তখনই ফোনটি আনলক হবে। উল্লেখ্য, এই সুবিধাটি দেওয়ার জন্য অ্যাপলের তাদের ক্যামেরাতে নতুন কিছু সেন্সর এবং ফিচারস অ্যাড করার প্রয়োজন হয়েছিল, কিন্তু ওয়ানপ্লাসের তেমন কিছুর দরকার হয়নি।

এবার জানা যাক, কেনো দরকার হয়নি? কারণ, আইফোনের ক্ষেত্রে এই ” ফেস আনলক ” বা অ্যাপল যেটিকে নাম দিয়েছে ” ফেস আইডি ” সেটা নতুন একটি ফিচার হলেও, অ্যান্ড্রয়েডের জন্য এটি কোন নতুন জিনিস নয়। অ্যান্ড্রয়েডে ফেস আনলক আরো অনেক আগে থেকেই ছিল। অ্যাকিউরেটলি বলতে হলে, অ্যান্ড্রয়েড আইসক্রিম স্যান্ডুইচ এবং জেলি বিনের সময় থেকেই এই ফেস আনলক ফিচারটি ছিল অ্যান্ড্রয়েডে। কিন্তু তখনকার সময় সেটা খুব বেশি বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। আর তাই, গুগল খুব দ্রুত নতুন অ্যান্ড্রয়েড রিলিজগুলোতে এই ফিচারটি ডিজেবল করে দেয়। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ৫.০ এর রিলিজের পরে গুগল আবার এই ফিচারটি নিয়ে কাজ করে এবং এটিকে কিছুটা ইম্প্রুভ করতে সক্ষম হয়। এরপর এই ফিচারটিকে আবারও অ্যান্ড্রয়েডে ইমপ্লিমেন্ট করা হয়। আর ঠিক এই কারনেই ওয়ানপ্লাস এত সহজেই আরো কিছু ইম্প্রুভমেন্টের সাথে তাদের নতুন ফোনে এই ফিচারটি দিতে পেরেছে।

এবার আসা যাক পরের বিষয়ে। এই ফিচারটি যখন অ্যান্ড্রয়েড ৫.০ এর পরে থেকে সব অ্যান্ড্রয়েডেই রাখা হয়েছে, তাহলে আমার ফোনে কেন নেই? কারণ, এই ফিচারটি বা আনলক অপশনটি এখন আর সরাসরি স্ক্রিন লক সেটিংসে দেওয়া হয়না। বরং এই ফিচারটিকে গুগল তাদের তাদের স্মার্ট লক অপশনগুলোর মধ্যে ইনক্লুড করে দিয়েছে। আপনি যদি স্টক বা ক্লোজ টু স্টক অ্যান্ড্রয়েড ইউআই ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি হয়ত ” গুগল স্মার্ট লক ” টার্মটির সাথে পরিচিত। গুগল স্মার্ট লক অপশনগুলোর মধ্যেই আপনি ফেস আনলকের অপশনটি খুঁজে পাবেন।

আবারো বলছি, এটি শুধুমাত্র স্টক অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোনগুলোতেই কাজ করবে। কারণ, অধিকাংশ স্মার্টফোন ব্র্যান্ড যারা তাদের ফোনে কাস্টম ইউআই ব্যবহার করে, তারা এই স্মার্ট লক ফিচারটিকে ডিজেবল করে রেখেছে। তাই, আমার জানামতে আপনি যদি MIUI বা EMUI বা এই ধরনের কোন কাস্টম ইউআই ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি খুব সম্ভবত এই ফিচারটি পাবেন না। তবুও, আপনি নিচের টিউটোরিয়াল অনুযায়ী আপনার ফোনে খুঁজে দেখতে পারেন। হতেই পারে, আপনি যে স্মার্টফোনটি ইউজ করেন তাতে ফেস আনলক ডিজেবল করা নেই। কিন্তু, যেসব ফোন স্টক অ্যান্ড্রয়েড বা ক্লোজ টু স্টক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে, এবং যদি অ্যান্ড্রয়েড ভার্শন ৫.০+ হয়, সেগুলোতে আপনি ফেস আনলক অন করতে পারবেন। উল্লেখ্য, সিম্ফোনি বা ওয়ালটন এবং অন্যান্য অধিকাংশ দেশীয় ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনে স্টক অ্যান্ড্রয়েড ব্যাবহার করা হয়। যারা দেশীয় ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন ব্যাবহার করেন, তাদের জন্য এটি একটি অ্যাডভান্টেজ বলা যেতে পারে। তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখা যাক, কিভাবে অন করবেন ফেস আনলক।


যেকোনো অ্যান্ড্রয়েডে ফেস আনলক

  • প্রথমেই আপনার ফোনের সেটিংস পেজ অন করে সিকিউরিটি সেটিংসে চলে যান।
  • এরপরে সিকিউরিটি অপশনে একটি অপশন পাবেন যার নাম ” স্মার্ট লক “। সেটিতে ক্লিক করুন।
  • এরপর স্মার্ট লক সেটিংস এর মধ্যে কয়েকটি নতুন স্ক্রিন আনলক সেটিংস পাবেন। যেমন, লোকেশন আনলক, ব্লুটুথ আনলক, ফেস আনলক এবং ভয়েস আনলক। এই অপশনগুলোর থেকে ভয়েস আনলক অপশনটি সিলেক্ট করুন।
  • এবার এই অপশনের ভেতরেই আপনি ফেস আনলক করার সব যাবতীয় সেটিংস পেয়ে যাবেন এবং আপনার প্রয়োজনমত সেট করে নিতে পারবেন।

এবার আপনাকে শুধুমাত্র আপনার ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা ব্যাবহার করে আপনার ফেস স্ক্যান করতে হবে। আপনার ফোনের স্ক্রিনে একটি সার্কেল দেওয়া হবে এবং আপনাকে আপনার ফেস ওই সার্কেলের ভেতরে রেখে স্ক্যান করতে হবে। স্ক্যান করা শেষ হলে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে যে ফেস আনলক সফলভাবে সেট করা হয়েছে।

এটি সেট করার পরে ফোন আনলক করার সময় আপনাকে আর পাসওয়ার্ড বা পিন কোড ইন্টার করতে হবেনা। আপনাকে শুধুমাত্র আপনার ফোনের পাওয়ার বাটন প্রেস করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতে হবে। সাথে সাথেই আপনার ফোন আপনার ফেস স্ক্যান করা শুরু করবে এবং যদি সফলভাবে স্ক্যান করতে সক্ষম হয় তাহলে স্ক্রিনের নীচে একটি লক আইকন দেখতে পাবেন যেটি আনলক হয়ে যাবে। লক আইকনটি আনলক হওয়ার পরে আপনি সাধারনভাবে সোয়াইপ করে স্ক্রিন আনলক করে নিতে পারবেন কোন ধরনের পাসওয়ার্ড বা পিন বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছাড়াই। আর হ্যাঁ, আনলক স্পীড নির্ভর করবে আপনার ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা কোয়ালিটির ওপরে এবং এভেইলেবল লাইটের ওপরে। যেমন, অন্ধকারে এই ফেস আনলক ফিচারটি একেবারেই কাজ করবে না।

মনে রাখা ভালো, এই ফেস আনলক প্রোসেসটি কিন্তু অ্যাপলের ব্যাবহার করা এত উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করেনা এবং ওয়ানপ্লাসে ব্যাবহার করা ফেস আনলক – এর মত এত বেশি ইম্প্রুভডও নয়। তাই এটি পাসওয়ার্ড বা পিন কোড অথবা ফিঙ্গারপ্রিন্টের থেকে অনেক কম সিকিওর। তাই আমার মতে, এই ফেস আনলক সুবিধাটি খুব বেশি নিশ্চিন্তে ব্যাবহার না করাই ভালো।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আজকের লেখা নিয়ে আপনার কোনো ধরনের মতামত বা প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ভালো থাকবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories