অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সিরিজ : ৫ টি বেস্ট এন্ড্রয়েড অ্যাপ ! (পর্ব-৩)

এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

পর্ব-৩


অ্যাপস তো আমরা সবাই চিনি এবং প্রত্যেকদিনই ব্যবহার করি। অ্যাপস ছাড়া একটি অপারেটিং সিস্টেম কল্পনাই করা যায়না। টেকনিক্যালি বলতে গেলে অ্যাপসই হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ। একটি অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রকম অ্যাপস থাকে। নেট ব্রাউজ করার জন্য ব্রাউজার অ্যাপস, গান শোনার জন্য মিউজিক প্লেয়ার অ্যাপস, ডকুমেন্ট এডিট করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা গুগল ডক, ছবি এডিট করার জন্য ফটো এডিটর অ্যাপস এবং এমন শত শত কাজের জন্য হাজারো অ্যাপস থাকে একটি  অপারেটিং সিস্টেমে। আর অপারেটিং সিস্টেমটি যদি হয় অ্যান্ড্রয়েড, তাহলে তো কথাই নেই, প্লে স্টোরে একই কাজের জন্য কমপক্ষে ১০০ রকমের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস পাবেন। যাইহোক, আর বেশি ভূমিকা না করে কাজের কথায় আসি। আজকে আমাদের বেস্ট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস সিরিজের তৃতীয় পর্বে আরো ৫ টি এমন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস শেয়ার করবো যেগুলো আপনার বা আমার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে।


১. Firefox Focus

নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে এটি একটি ব্রাউজার অ্যাপ। এটি বিশ্ববিখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা মজিলার তৈরি ফায়ারফক্সের আরেকটি ভার্শন যেটি স্মার্টফোনের জন্য তৈরি করা। অ্যান্ড্রয়েডের জন্য আগে থেকেই যে অরিজিনাল ফায়ারফক্স ব্রাউজারটি আছে, সেটিও যথেষ্ট ভালো। তবে ফায়ারফক্সের এই ভার্সনটির মেইন ফোকাস হচ্ছে একটি লাইটওয়েট কিন্তু রিলায়েবল ব্রাউজার তৈরি করা যেটি একইসাথে ইউজারদের প্রাইভেসিও নিশ্চিত করবে। এই কারণে এই ব্রাউজারটির নামের সাথে ট্যাগলাইনই দেওয়া হয়েছে, দ্যা প্রাইভেসি ব্রাউজার। এই ব্রাউজারটির সাইজ মাত্র ৪ থেকে ৫ মেগাবাইটের মত। প্রথমত, ফায়ারফক্স দাবী করে যে এই ব্রাউজারটি ওয়েবপেজগুলো অন্যান্য ব্রাউজারের থেকে কিছুটা ফাস্ট লোড করতে পারে এবং আরেকটু বেশি রেস্পন্সিভ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারে। কারন, এটি সব ওয়েবপেজ থেকে অ্যাডস, অ্যাড ট্র্যাকার, সোশ্যাল ট্র্যাকার এবং অ্যানালিটিক্স ট্র্যাকার ব্লক করে। এছাড়া আরেকটি ভালো ব্যাপার হচ্ছে, ফায়ারফক্স ফোকাস আপনার কোনও ব্রাউজিং হিস্টোরি সেভ করে রাখেনা। আপনি ব্রাউজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সাথেশ সাথেই আপনার সকল ব্রাউজিং ডেটা, ক্যাশ এবং হিস্টোরি ক্লিয়ার করে ফেলে। এছাড়া এই ব্রাউজারটির ইউজার ইন্টারফেসও অনেক আকর্ষণীয় এবং মিনিমাল।

২. Androidify

আপনি যদি কখনো Bitmoji ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি এই অ্যাপটির কনসেপ্টটি বুঝতে পারবেন। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি নিজের একটি পার্সোনাল কার্টুন ক্যারেক্টার তৈরি করতে পারবেন, ঠিক যেমন Bitmoji ব্যবহার করে নিজের একটি পার্সোনাল ইমোজি তৈরি করা যায়। এই অ্যাপটি গুগলের নিজের তৈরি। আর নাম শুনেই যেটা ধারনা করতে পারছেন, এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি নিজের কার্টুন ক্যারেক্টার তৈরি করতে পারবেন অ্যান্ড্রয়েড স্টাইলে। আপনি নিশ্চই অ্যান্ড্রয়েডের অফিশিয়াল ঐ গ্রিন কালারের কার্টুনটি দেখেছেন। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি ঐ একই ফিগারের কার্টুন তৈরি করতে পারবেন নিজের ইচ্ছামত। আপনি কার্টুনটির জামা-প্যান্ট, জুতা, মাথার ক্যাপ, গায়ের রঙ, নাক-চোখ-মুখ সবকিছুই নিজের ইচ্ছামত সাজিয়ে চাইলে নিজের চেহারার মতো করেই সাজাতে পারবেন এবং আপনি তৈরি করা ক্যারেকটারের ইমেজ গ্যালারীতে সেভ করে রাখতে পারবেন এবং চাইলে যেখানে ইচ্ছা শেয়ারও করতে পারবেন।

৩. GlassWire

এটি মুলত অ্যান্ড্রয়েডের জন্য একটি ইন্টারনেট ফায়ারওয়াল অ্যাপের মতো। এই অ্যাপটি আপনার ফোনের সকল ইনকামিং এবং আউটগোয়িং ডেটা মনিটর করবে এবং আপনাকে লাইভ দেখাবে যে আপনার ফোনের কোন অ্যাপ কতটুকু ডেটা ব্যবহার করছে এবং কোন প্রোসেস বেশি ডেটা ব্যবহার করছে। আপনি চাইলে ডেটা লিমিট সেট করে দিতে পারবেন এবং কোনও অ্যাপ ডেটা ব্যবহার করতে পারবে নাকি পারবে না তাও সেট করতে পারবেন এই অ্যাপটির সাহায্যে। আপনাকে আপনার মোবাইল  ডেটা এবং ওয়াইফাই এর ইউজেস আলাদা আলাদা ভাবে একটি রিয়ালটাইম গ্রাফে দেখানো হবে। এছাড়া আপনি নিজের ইচ্ছামতো ডেটা প্লান সেট করতে পারবেন যাতে আপনার ডেটা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই আপনি নোটিফিকেশন পেতে পারেন। আমার মতে লিমিটেড ডেটা ইউজারদের জন্য এই অ্যাপটি অনেক কাজের। এই অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেসও অনেক সুন্দর এবং অরগানাইজড। এছাড়া কয়েকটি প্রিলোডেড থিমের সাহায্যে ইউজার ইন্টারফেস চেঞ্জ করারও সুযোগ থাকছে।

৪. KeepSafe

যারা গ্যালারী লকার ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটাই বেস্ট চয়েজ আমার মতে। গ্যালারী লকারের কাজ কি সেটা নিশ্চয়ই আপনারা সবাই ভালোভাবেই জানেন। এই অ্যাপটির সাহায্যে আপনি আপনার স্টোরেজের যেকোনো পিকচার, মিউজিক এবং ভিডিও ফাইল লক করতে পারবেন।  আপনি যেসব ফাইল লক করবেন, সেগুলো আপনার ফোনের অন্য কোথাও আসবে না। আপনার গ্যালারী, ফাইল ম্যানেজার, থার্ড-পার্টি ফাইল ম্যানেজার কোথাও শো করবে না ফাইলগুলো। আপনি এই ফাইলগুলো শুধুমাত্র এই অ্যাপটি ওপেন করে আপনার সিলেক্ট করা পাসওয়ার্ড বা আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর সাহায্যেই অ্যাক্সেস করতে পারবেন। আপনি যেসব ফাইল আনলক করবেন সেগুলোই শুধুমাত্র অন্য জায়গায় শো করবে। এখানে আপনি এসব ফাইল ছাড়াও আপনার আইডি কার্ডের কপি, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদিও লক করে রাখতে পারবেন এখানে যাতে দরকারের সময় অ্যাক্সেস করতে পারেন। আমি মুলত এই অ্যাপটিকে অন্যান্য ফাইল লকারের আগে প্রিফার করি এর স্মার্ট ইউজার ইন্টারফেসের কারণে।

৫. Parallel Space

সহজ কথায় বলতে হলে প্যারালাল স্পেস অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি অন্য অ্যাপগুলোর ক্লোন তৈরি করতে পারবেন। আপনি যদি শাওমি ফোন ব্যবহার করেন অর্থাৎ MIUI রম ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি অবশ্যই ডুয়্যাল অ্যাপস ফিচারটির সাথে পরিচিত। এর সাহায্যে আপনি যেসকল অ্যাপে ইউজার অ্যাকাউন্ট অপশন আছে সেসব অ্যাপ এর একই অ্যাপের দুটি ভার্সন বা হোমস্ক্রিনে দুটি অ্যাপ আইকন তৈরি করবেন যে অ্যাপদুটির ডেটা সম্পূর্ণ আলাদা। যার ফলে, আপনি যদি ফেসবুক অ্যাপের দুটি ভার্সন তৈরি করেন, তাহলে আপনি একই ফোনে দুটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগিন করে রাখতে পারবেন একসাথে। ঠিক এমনটাই আরও অনেক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ এবং মেসেজিং অ্যাপ এবং আরও অনেক অ্যাপের সাথে করতে পারবেন। আর এই প্যারালাল স্পেস অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এই ডুয়াল অ্যাপস ফিচারটি ব্যবহার করতে পারবেন। আপনাকে শুধুমাত্র এই অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে এবং ওপেন করে সিলেক্ট করতে হবে যে আপনি কোন কোন অ্যাপের ক্লোন তৈরি করতে পারবেন। 


তো এই ছিল আরও পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস যেগুলো আপনার কাছে প্রয়োজনীয় হতে পারে। এই সিরিজের আগামী পর্বে আরও পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ শেয়ার করবো। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনও ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। আর আপনার জানামতে যদি এমন ভালো আরও কোনও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ থাকে, তাহলেও নিচে কমেন্ট সেকশনে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। তাহলে আমরা ওই অ্যাপটি নিয়েও পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories