মনেকরুন আপনার স্মৃতিশক্তি ঠিক ততোক্ষণই কাজ করে—যতোক্ষণ আপনি জেগে থাকেন; সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে আগের সবকিছু ভুলে যান আর কিছুই চিনতে পারেন না, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ালো? নিশ্চয় এরকমটা কল্পনাও করতে চাইবেন না! ব্যাট কম্পিউটার মেমোরির সাথে ঠিক একই ব্যাপারটি ঘটে। কম্পিউটারে যতোক্ষণ পাওয়া থাকে আপনার ডাটা গুলো মনে রাখতে পারে কিন্তু পাওয়ার চলে যাওয়ার সাথে সাথে কম্পিউটার সব ডাটা গুলোকে ভুলে যায়। বড় কম্পিউটার গুলোতে ম্যাগনেটিক শক্তির সাহায্যে ডাটা সংরক্ষিত করে রাখা হয়, যাকে হার্ডড্রাইভ বলে; এটি বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরেও ডাটা গুলোকে ঠিকঠাক মনে রাখতে সক্ষম। কিন্তু পোর্টেবল ডিভাইজ যেমন স্মার্টফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা, এমপিথ্রি প্লেয়ার ইত্যাদিতে হার্ডড্রাইভ কানেক্ট করে রাখা সম্ভব হয়, এতে ছোট আর বেশি ক্যাপাসিটির কোন স্টোরেজ মিডিয়া থাকা প্রয়োজনীয়। ফ্ল্যাশ মেমোরি বা ফ্ল্যাশ স্টোরেজের বদৌলতে আমরা ফটোস, মিউজিক, পিডিএফ সহ আর না জানি কতো টাইপের ফাইল সংরক্ষিত করে রাখতে পারি ছোট্ট আকারের কোন স্টোরেজে। এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো ফ্ল্যাশ মেমোরি কীভাবে কাজ করে এবং আপনার ডাটাকে এটি ভুলে যাওয়ার জায়গায় কীভাবে একে স্থায়িভাবে সেভ করে রাখে…
কম্পিউটার ডাটা
কম্পিউটার এবং ইলেক্ট্রনিক ডিভাইজ গুলো ডিজিটাল ফরম্যাটে কাজ করে। আপনি হয়তো আপনার কম্পিউটারে ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে কিছু লিখছেন, কোন ডাটা রীড বা রাইট করছেন, আপনার কাছে প্রত্যেকটি কাজ আলাদা মনে হলেও কম্পিউটার কিন্তু আপনার প্রত্যেকটি আলাদা কাজ সম্পূর্ণ করতে একই পদ্ধতি ব্যবহার করে আসে। অর্থাৎ কম্পিউটারে আপনি যাই করুন না কেন, কম্পিউটার সেটাকে জিরো বা ওয়ানে পরিবর্তন করে কাজ করে। আর এই জিরো বা ওয়ানে কাজ করাকে কম্পিউটারের দুনিয়ায় বাইনারি বলা হয়। মনে করুন আপনি কম্পিউটারে ইংরেজি অক্ষর “A” টাইপ করলেন, এই অক্ষরটি আপনার কাছে “এ”; কিন্তু কম্পিউটার একে দেখতে পায় “০১০০০০০১” ৮টি বাইনারি নাম্বার হিসেবে। এভাবে প্রত্যেকটি বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষরের জন্য আলাদা আলাদা বাইনারি নাম্বার রয়েছে। শুধু মাত্র অক্ষরই নয়, জিরো বা ওয়ান ব্যতিত যেকোনো সংখ্যার জন্যও আলাদা বাইনারি নাম্বার রয়েছে।
অর্থাৎ আপনি কম্পিউটারে যে কম্যান্ড দেবেন বা কোন ডাটা সংরক্ষণ করবেন কম্পিউটার সেটাকে জিরো আর ওয়ানের একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে সাজিয়ে রাখবে। এখন ধরুন আপনি কম্পিউটারে লিখে রাখলেন “ওয়্যারবিডি” আর এটি কম্পিউটার বাইনারিতে লিখে রাখলো “১১১০০০১১১০০০” হিসেবে। কিন্তু আপনি যখন আরেকটি কম্পিউটার থেকে এই ডাটাটি রীড করার চেষ্টা করবেন তখন আরেকটি কম্পিউটার কীভাবে বুঝবে আপনার আগের কম্পিউটারটি কোন পদ্ধতি বা কোন প্যাটার্ন ব্যবহার করে এই বাইনারি নাম্বার গুলো তৈরি করেছে? এখানে আমি বাংলা আর্টিকেলটি লিখছি এবং আপনি একজন বাঙালি বা আপনি বাংলা ভাষা জানেন এবং পড়তে পারেন, আপনি জানেন কোন শব্দের কোন অর্থ আর তাই আপনি এই লেখাটি পড়ে বুঝতে পারছেন। কিন্তু যে বাংলা জানেনা, পড়তে পারে না বা শব্দার্থ জানেনা সে কীভাবে এই লেখাটি পড়ে অর্থ বুঝতে পারবে? ঠিক এইভাবে সকল কম্পিউটারে একই ডাটা একইভাবে বোঝার জন্য একই পদ্ধতি অনুসরন করে বাইনারি প্যাটার্ন তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই সকল কম্পিউটার গুলো এএসসিআইআই (অ্যামেরিকান স্ট্যান্ডার্ড কোড ফর ইনফরমেশন ইন্টারচেঞ্জ) স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে কাজ করে।
ঠিক আছে এতোক্ষণে আমরা জানলাম কম্পিউটার শুধু জিরো বা ওয়ানের কোন নির্দিষ্ট প্যাটার্ন বানিয়ে ডাটা রিপ্রেজেন্ট করে, কিন্তু এই জিরো আর ওয়ানকে কম্পিউটার তার মেমোরিতে কীভাবে সংরক্ষিত করে রাখে? দেখুন আপনি কম্পিউটারের সাথে যাইই করুন না কেন সেটা কম্পিউটার শুধু জিরো বা ওয়ান রূপে দেখবে এবং স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে প্যাটার্ন তৈরি করবে। অর্থাৎ কম্পিউটার ডাটা সেভ করার জন্য প্রয়োজনীয় জিরো আর ওয়ানকে সঠিক প্যাটার্নে সেভ করে রাখা। এই জিরো আর ওয়ান গুলোকে সেভ করে রাখার জন্য কম্পিউটার মেমোরি চিপে থাকে লাখো মাইক্রোস্কোপিক সুইচ যেগুলোকে ট্র্যানজিস্টর বলা হয়। আর আপনি আমি বা সবাই জানি যে, সুইচের কাজ অফ বা অন করা। এখানেও এই সুইচ গুলো একই কাজ করে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি ট্র্যানজিস্টর অন বা অফ হতে পারে, এখানে কোন ট্র্যানজিস্টর অন হলে সেটা ওয়ানকে স্টোর করে এবং অফ থাকলে জিরোকে স্টোর করে। কোন মেমোরিতে ৮টি বাইনারি নাম্বার সেভ করতে চাইলে ৮টি ট্র্যানজিস্টরের অন বা অফ থাকা প্রয়োজনীয় এবং অবশ্যই সঠিক প্যাটার্ন অনুসারে। প্রত্যেকটি জিরো বা ওয়ানকে এক একটি বিট (bit) বলা হয় এবং ৮টি বিটে এক বাইট (byte) হয়ে থাকে। সুতরাং আপনি যে শুনে থাকেন আপনার কম্পিউটার মেমোরি এতো মেগাবাইট বা এতো গিগাবাইট; এর অর্থ হচ্ছে মিলিয়ন বা বিলিয়ন অক্ষর সেখানে সংরক্ষিত করে রাখা সম্ভব। (মেগা মানে মিলিয়ন এবং গিগা মানে বিলিয়ন)।
ফ্ল্যাশ মেমোরি কি?
সাধারন ট্র্যান্সজিস্টর এবং ইলেক্ট্রনিক সুইচ গুলো ইলেক্ট্রিসিটির সাহায্যে অন বা অফ হয়ে থাকে; একে তো এটা এদের সবচাইতে বড় সুবিধা আবার এটি এক ধরনের দুর্বলতাও। এটি সুবিধা, কেনোনা—কম্পিউটার মেমোরিতে জাস্ট সুইচ অন অফ করেই কোন তথ্যকে সেভ করে রাখা সম্ভব। মেমোরি সার্কিটের মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ করালেই কাজ শেষ। আর এটা দুর্বলতাও; কারণ—যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করা হবে ট্র্যানজিস্টর গুলো আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে এবং আপনার সংরক্ষিত করা সকল প্যাটার্ন গুলো ভুলে যাবে।
ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে যে ফ্ল্যাশ মেমোরি সকল ডাটা ভুলে যায় একে র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি বা র্যাম (RAM) বলা হয়। কিন্তু আরেক ধরনের মেমোরিও রয়েছে যাকে রীড অনলি মেমোরি বা রম (ROM) বলে, এটি কিন্তু কোন ডাটাকে ভুলে যায় না। কিন্তু কেন ভোলে না? দেখুন যখন রম বানানো হয় বা ফোনের মেমোরি কার্ড বা এসএসডি জাতীয় ফ্ল্যাশ মেমোরি তৈরির ক্ষেত্রে আগে থেকেই জিরো আর ওয়ানের ইনফরমেশন এতে স্টোর করানো থাকে; সুতরাং বিদ্যুৎ চলে গেলেও এটি কোন তথ্যকে ভুলে যায় না। ধরুন আপনার মেমোরি কার্ড ফ্যাক্টরি থেকে “১১১১০০০০” এই প্যাটার্নে বানিয়ে ছেঁড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আপনি এতে কোন ডাটা রাইট করতে চাচ্ছেন যেটার বাইনারি “১১০০১১০০”; তাহলে আপনার মেমোরি কার্ডের আগের প্যাটার্ন জাস্ট পরিবর্তন হয়ে “১১১১০০০০” এর জায়গায় “১১০০১১০০” হয়ে যাবে। বুঝতে পাড়লেন?
যাইহোক, কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির ফ্ল্যাশ মেমোরি থাকে। যে মেমোরি গুলো আপনার ডাটা বা স্থায়ী ডাটা সংরক্ষিত করে সেখানে রম জাতীয় মেমোরি ব্যবহার করা হয়। যে মেমোরি সবসময় রীড বা রাইট হয় এবং অস্থায়ী ডাটা সংরক্ষিত করে যেমন র্যাম সেখানে ভুলে যাওয়া ফ্ল্যাশ মেমোরি ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটারে বড় বড় ডাটা গুলো মূলত হার্ডড্রাইভে সেভ করে রাখা হয় কিন্তু হার্ডড্রাইভ ফ্ল্যাশ মেমোরির মতো দ্রুত গতিতে ডাটা রীড বা রাইট করতে পারে না। পোর্টেবল ডিভাইজ গুলোতে হার্ডড্রাইভ থাকার বদলে সেখানে ফ্ল্যাশ মেমোরি ব্যবহার করা হয়।
শেষ কথা
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
কম্পিউটার কোন ডাটা মনে রাখার যেমন পটু ভুলে যেতেও ততো ভালো পারে; যদি বিদ্যুৎ প্রবাহ না করানো হয়। প্রি-স্টোর করা ইনফরমেশনের জন্য আপনার ফ্ল্যাশ মেমোরি বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরেও কাজ করে এবং আপনার কাজের এবং পছন্দের সকল ডাটা গুলো সংরক্ষিত করে রাখে। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনার অনেক ভালো লেগেছে এবং অনেক কিছু জানতে পেড়েছেন, আপনার যেকোনো প্রশ্ন বা মতামত জানতে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করুন, আপনার অপেক্ষায় থাকলাম।
Good post
Osadharon……❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
ASCII code ta puro publish korun bhai….
Tutorial kothay bhai??? Aar Video tutorial…..& Community website??? ❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
Logic gate nia lekhen vai. Thanks…
Wow, awesome man.
আপনার আগের পোষ্ট গুলো থেকে আগেই জেনেছি। এই পোস্টে আর গভীর পরিষ্কার হলো!!!
অসাধারণ…।
❤
আমার শুধুমাত্র একটাই প্রশ্ন- যদি ফ্ল্যাশ স্টোরেজগুলোতে বাইনারি কোড আগে থেকে লোড করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা যখন ফ্ল্যাশ মেমোরির স্ট্যাটাস দেখি তখন সেখানে ফ্রি স্পেস দেখায় কেন? এটাতে কি এমন কোড লিখা হয় যেটা কম্পিউটার ফ্রিস্পেস হিসেবে দেখে??! ?
আমার ওওও একইইইই প্রশ্ন ভাইইইই………………………… 😀
কোন ফাইলের পাথ/অ্যাড্রেস না থাকলে সেটিকে কোন ওএস ডিটেক্ট করতে পারেনা। যেমন কোন ফাইল ডিলিট করলে সেটা কিন্তু মেমোরিতে ফিজিক্যালি থেকেই যায় জাস্ট অ্যাড্রেসটা ডিলিট হয় ফলে অপারেটিং সিস্টেম ফ্রী স্পেস শো করে।
বুঝলেন? 🙂
Khub valo legece..
Love you techubs অসাধারন সব পোস্ট এর জন্য। এগিয়ে যাও সামনে ((অনেক কিছু জানলাম এই পোস্ট থেকে))