ডিডিআর২ বনাম ডিডিআর৩ বনাম ডিডিআর৪ র‍্যাম | কোনটি উপযুক্ত?

আপনাদের মনে অবশ্যই কনফিউশন হয় ডিডিআর২ (DDR2), ডিডিআর৩ (DDR3), ডিডিআর৪ (DDR4) ইত্যাদি র‍্যাম নিয়ে যা আপনার আলাদা আলদা মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে লাগানো থাকে। আজ আপনাদের সকল কনফিউশন আমি দূর করতে চলেছি। বন্ধুরা র‍্যাম নিয়ে আমি একটি পোস্ট এর আগেই লিখেছি। সেখানে আপনি জানতে পারবেন, র‍্যাম কি? আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে র‍্যামের কাজ কি? এবং কতটুকু র‍্যাম আপনার ফোনের জন্য প্রয়োজনীয়? তো আপনি যদি সেই পোস্টটি না পড়ে থাকেন তবে অবশ্যই পড়ে নেবেন। কিন্তু এখন আমি আলোচনা করবো র‍্যামের বিভিন্ন জেনারেশন নিয়ে। তো চলুন শুরু করা যাক।

 


ডিডিআর২, ডিডিআর৩, ডিডিআর৪ | কে সর্বউত্তম?

বন্ধুরা দেখুন, আমি যদি এই বিষয়টি টেকনিক্যাল বিষয় দ্বারা বোঝাবার চেষ্টা করি তবে পোস্টটি বোঝা আপনার জন্য অনেক মুশকিল হয়ে যেতে পারে। তো সবচেয়ে প্রথমে আলোচনা শুরু করি যে, সবচেয়ে ভালো কে তা নিয়ে। এতে মনে কোন সন্দেহ নেই যে ডিডিআর৪ র‍্যাম ডিডিআর৩ র‍্যামের চেয়ে বেশি ভালো। এবং ডিডিআর৩ র‍্যাম ডিডিআর২ র‍্যাম থেকে বেশি ভালো। আজকাল আপনি যতগুলো ল্যাপটপ দেখতে পান বা যতগুলো কম্পিউটার দেখতে পান সেখানে সর্বনিম্ন ডিডিআর৩ মেমোরি অবশ্যই পাবেন। কেনোনা ডিডিআর২ মেমোরি আজকের দিনে পাওয়া যায়না। পিছনের কয়েক বছর ধরে আপনারা ডিডিআর৩ মেমোরিই ব্যবহার করে আসছি।

তবে আপনি যদি চান এবং যদি আপনি একটি হাই টেক মেশিন বানান তবে ডিডিআর৪ মেমোরিও ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আজকের দিনে কমন ভাবে ব্যবহার করা হয় ডিডিআর৩। ঠিক একইভাবে আপনি যেসব সাধারন স্মার্টফোন দেখতে পান সেখানে কমনভাবে ব্যবহার করা হয় ডিডিআর৩ মেমোরি। মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে একে বলা হয়ে থাকে এলপিডিডিআর৩ (LPDDR3) অর্থাৎ লো পাওয়ার ডিডিআর৩। লো পাওয়ার হওয়ার কারন হলো এটি একটি মোবাইল ফোন এবং এটি ব্যাটারিতে কাজ করে তাই প্রয়োজন কম পাওয়ার ক্ষয়ের। কিন্তু যেসকল হাই এন্ড ফোন বা ফ্ল্যাগশিপ ফোন অর্থাৎ প্রত্যেকটি কোম্পানির যে সবচাইতে ভালো ফোন হয় সেখানে ডিডিআর৪ মেমোরি দেখতে পাওয়া যায় [বারবার মেমোরি বলতে কিন্তু আমি র‍্যামকে বুঝাচ্ছি]।

এদের মধ্যে পার্থক্য কি?

 

বন্ধুরা এখন প্রশ্ন হলো এই যে আলাদা আলদা র‍্যাম জেনারেশন গুলো রয়েছে এদের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য গুলো কি কি? আমি প্রসেসরের উপর লেখা পোস্টে আগেই বলেছি যে, যখনই সময়ের সাথে সাথে উন্নতিকরনের কোন নতুন জেনারেশনের চিপ আসে তো সেখানকার অবস্থিত ট্রানজিস্টারের সাইজ ধিরেধিরে ছোট হয়ে যায় [কম্পিউটার প্রসেসর i3, i5, i7 এর বৃত্তান্ত জানুন – আপনি কোনটা কিনবেন?]। ট্রানজিস্টারের সাইজ ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে এর গতি অনেক বেশি ফাস্ট হয়ে যায়। এবং ফাস্ট হওয়ার সাথেসাথে এটি অনেক কম পাওয়ার ক্ষয় করার ক্ষমতা অর্জন করে। তো র‍্যামের ক্ষেত্রেও এই একই তত্ত্ব চলে আসে।

মোবাইল ফোনে যে এলপিডিডিআর২ মেমোরি ছিল তারপরে যে এলপিডিডিআর৩ মেমোরি তৈরি করা হয়েছিলো তো সেখানে কাজ করার গতিও বেশি ছিল এবং পাওয়ার ক্ষয়ও অনেক কম। এরপরের ডিডিআর৪ মেমোরিতে স্পীড আরো বেশি এবং পাওয়ার ক্ষয় আরো কম। তো এই ভাবে যখন কোন নতুন জেনারেশনের উন্নতি করা হয় তখন একসাথে দুটি সুবিধা থাকে। আপনি স্পীডও বেশি পাবেন এবং সাথেসাথে পাওয়ারও অনেক কম ক্ষয় হবে।

আপনাকে যদি একটি ল্যাপটপ কম্পিউটার বা একটি ডেক্সটপ কম্পিউটারের উদাহরণ দেয় তবে সেখানে যদি একটি ডিডিআর৩ মেমোরি লাগানো থাকে তবে তার যে সর্বশেষ পারফর্মেন্স হবে একটি ডিডিআর৪ মেমোরির পারফর্মেন্স ঠিক সেখান থেকে শুরু হবে। ডিডিআর৪ প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সিঙ্গেল র‍্যাম স্টিকে ২৫৬ জিবি বা ৫১২ জিবি র‍্যাম বানানো সম্ভব। অর্থাৎ একটি সিঙ্গেল স্টিকে এতো হাই ক্যাপাসিটি দেখাতে পাওয়া যাবে। আবার মোবাইল ফোনেও একই বিষয়। আজকের দিনে আপনি যদি একটি নরমাল বা মিড রেঞ্জ ফোন কেনেন তবে সেখানে ডিডিআর৩ মেমোরি দেখতে পাবেন এবং আপনি যদি কোন ফ্ল্যাগশিপ ফোন কেনেন তবে ডিডিআর৪ মেমোরি পাবেন।

তো বন্ধুরা, এতো শুধু কথা হলো ডিডিআর৩ বা ডিডিআর৪ নিয়ে যা একটি র‍্যাম প্রজন্ম। কিন্তু এগুলো ছাড়াও একটি র‍্যামে আরো কিছু প্যারামিটার থাকে যেগুলো আপনার নজর রাখতে হবে। কোনটাতে থাকে ডুয়েল চ্যানেল মেমোরি, কোনটাতে থাকে সিঙ্গেল চ্যানেল মেমোরি আবার ক্লক স্পীডেরও বিষয় থাকে। কোন মেমোরির ক্লক স্পীড থাকে ৮৩৩ মেগাহার্জ আবার কোনটার হয় ১,৩৩৩ মেগাহার্জ ইত্যাদি। প্রসেসরের যেমন ক্লক স্পীড থাকে র‍্যামেও একই ভাবে এটি কাজ করে থাকে। অর্থাৎ আপনার ক্লক স্পীড যতো বেশি হবে ততো দ্রুতভাবে র‍্যাম কাজ করবে।

আপনার মোবাইল ফোনে হয়তো র‍্যাম পরিবর্তন করার কোন অপশন থাকে না। কিন্তু কম্পিউটারে আপনি করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ মনে করেন আপনার কম্পিউটারের বর্তমান মেমোরি হলো ডিডিআর৩ মেমোরি এবং এর ক্লক স্পীড হলো ৮৩৩ মেগাহার্জ। এখন আপনি যদি এটা আপগ্রেড করতে চান তবে ডিডিআর৩ তেই আপগ্রেড করতে পারেন। ডিডিআর৪ মেমোরির জন্য আলাদা স্লট থাকে। একটি সাধারন ডিডিআর৩ ওয়ালা মাদারবোর্ডে ডিডিআর৪ মেমোরি আপনি ধুকাতে পারবেন না। কিন্তু ডিডিআর৩ তেই র‍্যামটিকে আপনি আরো হাই ক্যাপাসিটি বানাতে পারবেন। যেমন ১,০০০ মেগাহার্জ লাগালেন বা ২,১৩৩ মেগাহার্জ লাগালেন। এই ক্ষেত্রে আপনার র‍্যাম হয়তো ডিডিআর৩ প্রযুক্তিতেই থাকবে কিন্তু এর পারফর্মেন্স অনেক বেড়ে যাবে।

এছাড়াও র‍্যামে হয়তো আরেকটি টার্ম শুনে থাকবেন, সেটি হলো ডুয়েল চ্যানেল। এখন এই ডুয়েল চ্যানেল কি জিনিষ হয়? মনে করুন আপনার কম্পিউটারে একটি ৮ জিবির র‍্যাম লাগানো আছে। এখন যদি আপনি আপনাকে দুইটি উদাহরণ দেই, মনে করুন ৪ জিবির দুটি র‍্যাম লাগানো আছে অথবা ৮ জিবির একটি র‍্যাম লাগানো আছে তবে কোনটা বেশি ভালো হবে? দেখুন এক্ষেত্রে আমি বলবো ৪ জিবির দুটি স্টিক একটি ৮ জিবির স্টিক লাগানো থেকে বেশি ভালো হবে। তো এমনটা কেন? দেখুন র‍্যামের আসল কাজ হলো ডাটার দ্রুত থেকে দ্রুততর ট্রান্সফার করা। যে তথ্য গুলো সিপিইউ থেকে বাহিরে আসছে বা সিপিইউ এর কাছে যাচ্ছে তার প্রবাহ আলট্রা ফাস্ট হওয়া প্রয়োজনীয়।

এখন দুইটি স্টিক থাকার সুবিধা বুঝতে চলুন একটি ভালো উদাহরণ দেওয়া যাক। মনে করুন আপনার কাছে একটি ১ হাজার লিটারের পানির ট্যাঙ্ক আছে। এবং সেখানে নিচে পানি বের করার জন্য একটি টুটি রয়েছে। মনে করুন ট্যাঙ্কটি সম্পূর্ণ পানি শুন্য করতে সময় লাগে ১০ মিনিট। কিন্তু আপনার কাছে যদি ৫০০ লিটারের দুটি ট্যাঙ্ক থাকে এবং দুটি ট্যাঙ্কে তো অবশ্যই দুটি টুটি থাকবে ফলে ট্যাঙ্কটি ১০ মিনিটের জায়গায় ৫ মিনিটে খালি করা সম্ভব হবে। এবং আপনার ক্যাপাসিটিও অপরিবর্তিত থাকবে। তো ডুয়েল চ্যানেল মেমোরি থাকারও অনেকটা এই রকমই সুবিধা। মেমোরি ডিডিআর৩ বা ডিডিআর৪ হওয়ার আসল সুবিধা তো আপনি পাবেনই এবং ডুয়েল চ্যানেল হওয়ার কারণে ডাটা আরো দ্রুত আদান প্রদান করাও সম্ভব হবে। এবং এটি আপনার কম্পিউটিং পারফর্মেন্স অনেক বাড়িয়ে দেবে।

শেষ কথা

আশা করছি পোস্টটি অনেক সাধারন ছিল, এবং অনেক সহজ করে আপনি সকল টার্ম গুলো বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। তারপরেও যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট করুন। পাশাপাশি প্রসেসর এবং র‍্যাম নিয়ে আমার আরো লেখা কিছু পোস্ট রয়েছে আপনি সেগুলোও চাইলে চেক করতে পারেন। তাছাড়া ক্যাশ মেমোরি নিয়ে লেখা পোস্টটি অবশ্যই পড়া উচিৎ আপনার। আপনার ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করুন।

 

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories